ঘি বা ক্ল্যারিফাইড বাটার হচ্ছে মাখনের পরিশোধিত রূপ। প্রাচীনকাল থেকেই ঘি রান্নাবান্না থেকে শুরু করে রূপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আছে। খাঁটি ঘিয়ে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড দেহে পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি ত্বকেও এনে দেয় আর্দ্রতা এবং উজ্জ্বলতা। ঘি-তে আছে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে, যা ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে অতীব জরুরি।
ঘি-এর উপকারিতা যত বলব ততই কম হবে। ঘিয়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রুক্ষতা ও শুষ্কতা থেকে ত্বককে বাঁচায়, বলিরেখা ও কালচে ছাপ দূর করে, ত্বককে করে উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, নরম, এবং লাবণ্যময়। প্রাচীন আয়ুর্বেদে মুখের ঘা সারাতে, চুলের যত্ন, ওজন কমানোর পাশাপাশি ত্বক ঠিক রাখার জন্য ঘি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আজকে থাকছে দ্রুত ত্বকে জেল্লা ফেরানোর জন্য কিভাবে ঘি ব্যবহার করবেন তার বিস্তারিত৷
মুখের ত্বকের জন্য শুধু ঘি ব্যবহার করতে পারেন, আবার ঘি দিয়ে নানা ধরণের ফেসপ্যাকও তৈরি করতে পারেন।
শুধু ঘি ব্যবহার করলে এর সাথে অল্প একটু পানি মিশিয়ে মসৃণ করে নিবেন, চাইলে একটু জাফরানও নিতে পারেন সাথে। সপ্তাহে ২-৩ বার এভাবে ঘি তৈরি করে মুখে আলতো করে মাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে সব ঋতুতে।
অল্প বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে কয়েক ফোঁটা ঘি নিয়ে ৫ মিনিট মাসাজ করুন, এক পলকে বয়সের ছাপ কমে যাবে কয়েক গুণ।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে ১ চা চামচ মধুর সাথে ১ চা চামচ ঘি মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। তারপর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অথবা ১ চামচ মধু, ১ চামচ টকদই, ৩ চামচ ওটস, এবং ১ চামচ ঘি একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ২০ মিনিট মুখে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল আর ৫-৬ ফোঁটা একসাথে মিশিয়ে মুখে যেসব স্থানে কালো ছোপ ছোপ দাগ আছে সেখানে আলতো হাতে ভালো করে মাসাজ করুন ২০ মিনিট ধরে। এরপরে স্বাভাবিক পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। কয়েকদিন ব্যবহার করলে মেছতার দাগ চলে যাবে।
২ চা চামচ কাঁচা দুধ, ১ টেবিল চামচ মসুর ডাল বাটা, এবং আধা চা চামচ দিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিন যেটা একইসাথে ফেসপ্যাক, ফেসমাস্ক, এবং স্ক্রাবারের কাজ করবে। সপ্তাহে ৩ দিন ১০ মিনিট ধরে এই প্যাক দিয়ে মুখ মাসাজ করুন৷ এতে ত্বকের ডেড সেল পরিষ্কার হবে, দাগ হালকা হয়ে যাবে, ত্বক নরম ও উজ্জ্বল থাকবে।
ঘি আর বেসনের ফেসপ্যাকে দুটোই সমপরিমাণ থাকতে হবে। ২ টেবিল চামচ বেসনের সাথে ২ টেবিল চামচ ঘি মিশিয়ে ঘন থকথকে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এটা গোসলের আগেও ব্যবহার করতে পারেন, আবার যেকোন সময় ব্যবহার করতে পারেন। মোটা করে এই মিশ্রণটা মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন এবং ধুয়ে ফেলুন। এটা ব্যবহারে রোদে পোড়া চেহারা উজ্জ্বল হবে। চাইলে এই প্যাকের সাথে অল্প হলুদ গুঁড়া আর লেবুর রসও দিতে পারেন।
৩ টেবিল চামচ ময়দা, ৩ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ, ২ চা চামচ গোলাপজল, ২ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ ঘি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ১০ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। যারা রয়্যাল বিউটি ট্রিটমেন্ট পছন্দ করেন তাদের জন্য এই ফেসপ্যাকটি সেরা।
১ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া, ২ চা চামচ গোলাপজল, ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ চা চামচ ঘি মিশিয়ে সপ্তাহে ২দিন ব্যবহার করুন আর পেয়ে যান মোহনীয় ব্রাইডাল গ্লো।
ঘি প্রাকৃতিক আন্ডারআই ক্রিমের কাজ করে। একটু ঘি নিয়ে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে চোখের চারপাশে আলতো করে মাসাজ করলে ডার্ক সার্কেল ও চোখের ক্লান্তি ভাব দূর করতে পারবেন। ঘি মাসাজ করে সেটা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ুন, সকালে উঠে পরিষ্কার করে ফেলবেন। নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে আস্তে আস্তে ডার্ক সার্কেল হালকা হতে থাকবে। মুখের ত্বকের যত্নে ঘিয়ের যেসব ফেসপ্যাক ব্যবহার করছেন, সেগুলো দিয়েও চোখের পরিচর্যা করতে পারবেন।
শুষ্ক, ফাটা ঠোঁটে লিপবামের বিকল্প হিসেবে ঘি ব্যবহার করে দেখুন, ঠোঁট সুন্দর, কোমল, ও গোলাপি থাকবে। প্রতিদিন আঙ্গুলের ডগায় অল্প একটু ঘি নিয়ে ঠোঁটে ব্যবহার করুন। আস্তে আস্তে ঠোঁটের ফাটা দাগ মিলিয়ে যাবে, মরা চামড়া উঠে যাবে, কালো ছোপ দূর হয়ে ফিরে আসবে গোলাপি আভা।
হবু কনের জন্য বডি পলিশিংয়ে ঘি দারুণ চমক আনবে। বাইরে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ না করে ঘরেই ঘি দিয়ে ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, বডিপ্যাক তৈরি, মাসাজিং করা যায়। আর তাতে পার্লারের চাইতে দ্বিগুণ জেল্লা আসবে। দেখুন কীভাবে করবেন ঘি দিয়ে করবেন বডি পলিশিং।
বডি পলিশিংয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে ক্লিনজিং। দেড় কাপ কাঁচা দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ ঘি আর পরিমাণমতো বেসন মিক্স করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার এই পেস্ট সারা শরীরে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে আসলে গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে প্যাকটা তুলে নিন। শরীরের ময়লা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় ধাপে স্ক্রাবিংয়ের জন্য আধা কাপ চালের গুঁড়া, ৩ চা চামচ টকদই (পানি ঝরানো), ১ চা চামচ করে কমলালেবুর খোসা বাটা ও গোলাপের পাপড়ির গুঁড়া, ৩-৪ টি জাফরানের সুতো, ২ চা চামচ ঘি, এবং পরিমাণমতো গোলাপজলের মিশ্রণ লাগবে। মিশ্রণ বানিয়ে প্রথমে সারা শরীরে লাগিয়ে নিন, শুষ্ক ও কালো হয়ে যাওয়া জায়গায় বেশি করে লাগাবেন। লাগানোর পরে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে এক্সফোলিয়েট করা শুরু করুন। মিশ্রণটা যাতে সবসময় ভেজা থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্য মাঝে মাঝে গোলাপজল দিতে থাকবেন।
তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ বডিপ্যাকে লাগবে এক কাপ মসুর ডাল বাটা, ২ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া, ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এবং ৩ টেবিল চামচ ঘি। মুখে,গলায়, হাতে, পায়ে, পিঠে মিশ্রণটা লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। গোসলের সময় শরীর ভালো করে ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে ১০ মিনিট বিশ্রাম নিন।
সবশেষে বডি মাসাজিংয়ের পালা। ৪ টেবিল চামচ ঘি প্রথমে একটু গরম করে নিন, একটু ঠান্ডা হলে সেটা দিয়ে বডি মাসাজ করুন। পেয়ে গেলেন সুন্দর, মোলায়েম, আকর্ষণীয় সৌন্দর্য। বডি পলিশিংয়ের কাজটা প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে করালে ভালো ফল পাবেন।
এছাড়াও প্রতিদিন গোসলের আগে সমপরিমাণ নারিকেল তেল আর ঘি একসাথে মিশিয়ে শরীরে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে এরপরে গোসল করে ফেলুন। চমৎকার এই বডি অয়েল ব্যবহারে গোসলের পরে পাবেন কোমল ও পেলব ত্বক।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…