কলকাতা

কলমি শাকের ৬টি ইউনিক রেসিপি জিভে জল আনবেই!

পানিতে জন্মানো কলমি শাকে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং ভিটামিন সি। হাড়ের গঠন শক্ত করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, রক্তশূন্যতা কমাতে এবং বুকের দুধ উৎপাদনে কলমি শাকের জুড়ি মেলা ভার। কলমি শাক আর আখের গুড়ের শরবত সকাল-বিকাল নিয়ম করে খেলে পেট থাকে ঠান্ডা।

প্রতিদিন গরম ভাতের সাথে ডাল আর যেকোন একটি ভাজি থাকলেই বাঙালির ভোজন হয় পরিপূর্ণ। সবসময় মাছ, বেগুন বা আলু ভাজি খেতে তো ইচ্ছা করে না, তখন কলমি শাক ভাজি হয়ে উঠতে পারে চমৎকার একটি বিকল্প। কিন্তু অনেকে হয়তো বহু গুণে গুণান্বিত কলমি শাক খেতে পছন্দ করেন না, বা ছোটদের রুচির কাছে এই শাক বিরক্তিকর ঠেকে। অথচ সাধারণ কলমি শাককে যদি একটু ভিন্নভাবে রান্না করা যায়, তাহলে সহজেই ছোট-বড় সবার রুচি ফেরানো সম্ভব।

আজকে থাকছে কলমি শাকের ৬টি মজাদার রেসিপি, যা আপনার খাবার টেবিলে তো বৈচিত্র্য আনবেই, সাথে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাবে। এমন স্বাদের রেসিপি একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে। তো চটজলদি জেনে নিন কি সেই ৬টি সুস্বাদু রেসিপি।

১. কলমি শাকের ঘন্ট

যা যা লাগবেঃ

  • কলমি শাক – ১ মুঠো
  • মুগ ডাল – ৩ টেবিল চামচ
  • কাঁচামরিচ – ৫/৬ টি (ফালি করা থাকবে)
  • ঝিঙে – ১টি
  • আলু – ১টি
  • টমেটো – ১টি
  • রসুন – ৪/৫ টি কোয়া (থেঁতো করা থাকবে)
  • হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • ধনিয়া গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ
  • শুকনা মরিচ – ১টি
  • চিনি – ১ চিমটি
  • লবণ – স্বাদমতো

যেভাবে রাঁধবেনঃ

প্রথমে কলমি শাক, ঝিঙে, আলু, টমেটো বড় বড় টুকরা করে কেটে ধুয়ে নিন। তারপর ডালটা ভেজে (শুকনা কড়াইতে) ধুয়ে নিন এবং অল্প পানির সাথে চুলায় বসিয়ে দিন। যখন ডালটা ফুটে উঠবে তখন শাক বাদে বাকি সবজি, লবণ, হলুদ গুঁড়া, এবং কাঁচামরিচ দিয়ে মিশিয়ে নিন।

এরপর চুলার আঁচ কমিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখেন। ৫ মিনিট পরে ঢাকনা তুলে শাক দিয়ে একটু নেড়ে আবারও ঢেকে নিন। মাঝে মাঝে ঢাকনা তুলে দেখবেন সবজি আর ডাল সিদ্ধ হয়েছে কিনা। সব সিদ্ধ হয়ে আসলে ধনিয়া গুঁড়া আর চিনি দিয়ে নামিয়ে নিন।

এবার আরেকটা কড়াইতে রসুন আর শুকনা মরিচ ফোড়ন দিয়ে ভেজে তারপর শাক ও সবজির মিশ্রণটা ঢেলে দিন। ২ মিনিট ভালমতো নেড়েচেড়ে রান্না করে নামিয়ে ফেলুন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মজাদার কলমি শাকের ঘন্ট।

২. কলমি শাকের বড়া

যা যা লাগবেঃ

  • কলমি শাক – ১ কাপ (কুচি করা থাকবে)
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
  • মসুর ডাল – ১ কাপ (বেটে রাখতে হবে)
  • আদা বাটা – ১ চা চামচ
  • রসুন বাটা – ১ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – সামান্য
  • কাঁচামরিচ – ১ চা চামচ (কুচি করা থাকবে)
  • ডিম – ১টি
  • বেকিং পাউডার – সামান্য
  • লবণ – স্বাদমতো
  • তেল – ভাজার জন্য (যতটুকু লাগে)

যেভাবে রাঁধবেনঃ

তেল বাদে সমস্ত উপকরণ একসাথে মাখিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর পছন্দমতো শেপ দিয়ে কড়াইতে ডুবো তেলে ভেজে নিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার কলমি শাকের বড়া। যদি মিশ্রণটি একটু পাতলা হয় তাহলে বড় চামচে করে সরাসরি তেলে ঢেলে ভাজবেন। এই বড়া গরম ভাতের সাথেও খেতে পারবেন আবার স্ন্যাকস হিসেবেও সস বা চাটনির সাথে খেতে পারবেন।

৩. কলমি শাকের চচ্চড়ি

যা যা লাগবেঃ

  • কলমি শাক – ১ আঁটি
  • আলু – ১টি (মাঝারি সাইজের হতে হবে)
  • কালো সরিষা বাটা – ২ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • কাঁচামরিচ – ৫টি (বেটে রাখতে হবে)
  • শুকনা মরিচ – ১টি (আগে থেকে ভেজে রাখতে হবে)
  • পাঁচফোড়ন – আধা চা চামচ
  • সরিষার তেল – আধা কাপ
  • রসুন – ১০ কোয়া (থেঁতো করে রাখতে হবে)
  • চিনি – ১ চিমটি (চাইলে না-ও দিতে পারেন)
  • লবণ – স্বাদমতো

যেভাবে রাঁধবেনঃ

শাক আর আলু লম্বা লম্বা করে কেটে নিন। এরপর কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ, রসুন দিয়ে ফোড়ন দিয়ে ভেজে নিন। এবার এতে শাক আর আলু দিয়ে একটু নেড়ে নিন, তারপর তাতে লবণ ও হলুদ গুঁড়া দিয়ে আরেকটু নেড়ে দশ মিনিট ঢেকে রাখুন।

দশ মিনিট পরে ঢাকনা খুলে দেখুন সিদ্ধ হয়েছে কিনা, না হলে আরো কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। যখন শাক-আলু সিদ্ধ হবে, তখন সরিষা বাটা, কাঁচামরিচ বাটা, ও চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। যতক্ষণ না শাকের পানি শুকিয়ে ভাজা ভাজা না হচ্ছে ততক্ষণ নাড়তে থাকুন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন। গরম ভাত বা রুটির সাথে পরিবেশন করুন।

৪. কলমি চিংড়ি

যা যা লাগবেঃ

  • কলমি শাক – ২ আঁটি
  • চিংড়ি মাছ – ৮/১০ টি (মাঝারি সাইজের)
  • পেঁয়াজ কুচি – ২ টেবিল চামচ
  • রসুন কুচি – ২ টেবিল চামচ
  • তেজপাতা – ১টি
  • কাঁচামরিচ – ৩/৪ টি (ফালি করা)
  • শুকনা মরিচ – ২/৩ টি
  • মরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
  • কারি পাউডার – সামান্য
  • লবণ – স্বাদমতো
  • তেল – পরিমাণমতো

যেভাবে রাঁধবেন

প্রথমে কলমি শাক ধুয়ে কুচি করে রাখুন। একটি কড়াইতে তেল গরম করে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, শুকনা মরিচ, তেজপাতা ভেজে নিন। তারপরে তাতে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, কারি পাউডার, এবং লবণ দিয়ে একটু কষিয়ে নিন। তারপর চিংড়ি মাছ ও কাঁচামরিচ দিয়ে আরেকবার একটু কষিয়ে নিন। সবশেষে কলমি শাক দিয়ে মশলার সাথে ভালো করে মিশিয়ে ভাজা ভাজা করে ভেজে নামিয়ে ফেলুন। গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন জিভে জল আনা কলমি চিংড়ি।

৫. তিল কলমি

যা যা লাগবেঃ

  • কলমি শাক কুচি – ২ কাপ
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ টেবিল চামচ
  • তিল – ১ টেবিল চামচ
  • রসুন – ১ টেবিল চামচ
  • শুকনা মরিচ কুচি – ৩/৪ টি
  • কাঁচা মরিচ – ১০টি (ফালি করা)
  • লবণ – স্বাদমতো
  • তেল – প্রয়োজনমতো

যেভাবে রাঁধবেনঃ

প্রথমে একটি প্যানে তেল গরম করে কলমি শাক কুচি অল্প কাঁচামরিচ, রসুন, লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে তুলে রাখুন। এবার ঐ তেলেই বাকি রসুন, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ লাল করে ভেজে তাতে শাকটা ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ নেড়ে উপরে তিল ছড়িয়ে দিন এবং নামিয়ে ফেলুন।

৬. রুই কলমির বিরিয়ানি

যা যা লাগবেঃ

  • রুই মাছ – ১টি
  • পোলাও চাল – ২ কাপ
  • কলমি শাক – ১ মুঠো (ভাপ দেয়া থাকবে)
  • পেঁয়াজ বাটা – ২ চা চামচ
  • পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ
  • আদা বাটা – ২ চা চামচ
  • বেরেস্তা – এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ
  • কাঁচামরিচ – ১০/১২ টি
  • কাঁচামরিচ – ৩/৪টি (বাটার জন্য)
  • ধনে পাতা – ১ মুঠো
  • পুদিনা পাতা – ৪/৫ টি
  • টকদই – আধা কাপ
  • তেল/ঘি – আধা কাপ
  • দারচিনি – ২ টুকরা
  • তেজপাতা – ১টি
  • এলাচ – ৪টি
  • লেবুর রস – ২ টেবিল চামচ
  • চিনি – ১ চা চামচ
  • লবণ – পরিমাণমতো
  • কাজুবাদাম – সাজানোর জন্য

যেভাবে রাঁধবেনঃ

প্রথমে রুই মাছ বড় বড় টুকরা করে কেটে ধুয়ে রাখুন ও পোলাও চাল ধুয়ে নিন। এরপরে সামান্য পেঁয়াজ বাটা ও আদা বাটার সাথে লেবুর রস, ধনেপাতা, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, ও কাঁচামরিচ একসাথে বেটে নিন। এবার এই বাটা মিশ্রণ, টকদই, ও লবণ দিয়ে মাছের টুকরা মেখে ৩০ মিনিট রেখে দিন।

যে হাঁড়িতে পোলাও রান্না করবেন, সেই হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে নিন, তারপর বাকি বাটা মসলা দিয়ে মাছ অল্প আঁচে ১৫ মিনিট রান্না করুন। মাছ মাঝে মাঝে উল্টে দিবেন। তেল যখন উপরে উঠে আসবে তখন মাছ উঠিয়ে নিন, তারপর ওতে ৪ কাপ গরম পানি ও গরম মশলা দিয়ে দিন।

পানি ও মশলা ফুটে উঠলে তাতে চাল ও লবণ দিয়ে ঢেকে দিন, অল্প আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন এভাবে। মাঝে একবার লেবুর রস ও চিনি দিয়ে কয়েকবার নেড়ে দিন। ২০ মিনিট পরে হাঁড়ি থেকে অর্ধেকের মত পোলাও তুলে মাছ, কাঁচামরিচ, কাজুবাদাম, বেরেস্তা দিন। তারপর তুলে রাখা পোলাও দিয়ে ঢেকে দিন।

১০ থেকে ১৫ মিনিট দমে রাখুন। নামানোর আগে উপরে ঘি ছড়িয়ে দিন। তৈরি হয়ে গেল অতুলনীয় স্বাদের রুই কলমির বিরিয়ানি।

আফরোজ হেলাল

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago