আমাদের সবারই উজ্জ্বল হতে বেশ লাগে। উজ্জ্বল গায়ের রঙ হলে যে কোনো পোশাকই আমরা পরি না কেন, তা মানিয়ে যায়। আবার মেকআপ করার সময়েও তেমন ভাবতে হয় না আর। যা মেকআপই করি না কেন, তাতেই মানিয়ে যায়। কিন্তু জানেন কি, এই উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার আসল রহস্য লুকিয়ে আছে কোথায়? মাত্র দুটি উপাদান ব্যবহার করলেই আপনি বুঝবেন আপনার স্কিন টোনের পার্থক্য।
এই দুটি উপাদান হল বেসন আর দই। সেই কবে থেকেই তো ব্যবহার হয়ে আসতে দেখেছেন বেসনকে রূপচর্চায়। সঙ্গে নিয়ে নিন এবার দই।দেখবেন আপনার রূপের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ হয়ে যাবে।
এই তিনটি উপকরণ একসঙ্গে ব্যবহার করলে আপনি আপনার আকাঙ্ক্ষিত ত্বক পেয়ে যাবেন কয়েক দিনের মধ্যেই।
৩ চামচ বেসন, ২ চামচ দই, ৫ চামচ মধু।
তিনটি উপকরণ ভালো ভাবে মেশান। এবার মুখে, হাতে আর গলায় মাখুন। মিনিট ২০ রাখুন। দেখবেন তাড়াতাড়ি শুকিয়ে আসছে। এরপর গরম জল দিয়ে হাল্কা হাতে আগে ম্যাসাজ করুন কয়েক মিনিট। তারপর ধুয়ে নিন পরিষ্কার জল দিয়ে।দেখবেন এক সপ্তাহ পর থেকেই আপনার ত্বক কথা বলবে।
হলুদ যে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে তা তো আপনারা জানেনই। যদি কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আরও ভালো। এর সঙ্গে বেসন আর দই হলে তো কথাই নেই।
৪ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই আর পরিমাণ মতো হলুদ গুঁড়ো বা কাঁচা হলুদ বাটা।
সবকটি উপকরণ ভালো ভাবে মেশান। এই মিশ্রণটি আপনি আপনার মুখে, হাতে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ২ সপ্তাহ পর থেকেই ফল পেতে শুরু করবেন।
ত্বক উজ্জ্বল করতে হলে তাকে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। শীতকালে তো এটা আরও প্রয়োজন। ভাবুন তো আপনার সাদা বিবর্ণ চামড়া ওঠা স্কিন যতই ফর্সা হোক, ভালো লাগবে কি? লাগবে না তো। অ্যালোভেরা এই ময়েশ্চারাইজ করার কাজটাই করবে। সঙ্গে তো রইলই বেসন আর দই।
২ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই আর অ্যালোভেরা জেল।
খুব ভালো হয় যদি বাড়ির অ্যালোভেরা গাছ থেকে পাতা নিয়ে তার থেকে রস নিতে পারেন। না হলে বাজার থেকে যে কোনো ভালো অ্যালোভেরা জেল নিন। এর সঙ্গে বেসন আর দই মেশান। মিশ্রণটি মুখে মাখুন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। তফাৎ বুঝতে পারবেন।
ফর্সা ত্বক পেতে হলে আপনাকে আপনার মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। লেবুর রস ন্যাচারাল ব্লিচ হিসাবে কাজ করে। তাই ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে পারে স্কিন। তাই বেসন আর দইয়ের সঙ্গে লেবুর রসও মেশান।
পরিমাণ মতো বেসন, দই আর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস।
উপকরণগুলি মিশিয়ে মুখে, হাতে ভালো করে মাখুন আর মিনিট ১৫ অপেক্ষা করুন।এরপর অল্প গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনি সপ্তাহে তিনবার করুন ভালো উপকার পেতে।
মুখ উজ্জ্বল আর সতেজ দেখানোর জন্য মুখের তেলতেলে ভাব দূর করা খুবই দরকার।তবেই আসল কমপ্লেকশনটা খুলবে।আর মুখ থেকে তেলতেলে ভাবটা দূর করবে চন্দন।সঙ্গে ব্রণ বা তার দাগ থাকলে তাও কমাবে।
২ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই আর ২ চামচ চন্দন গুঁড়ো।
উপকরণগুলো ভালো করে মেশান। মিশ্রণটি মুখে মেখে রাখুন মিনিট ১০ মতো। তারপর হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনি সপ্তাহে দু’বার করুন। খুব বেশি করবেন না, কারণ চন্দন খুব বেশি ব্যবহার করলে স্কিন ড্রাই হয়ে যেতে পারে।
আপনার স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এই শীতে আপনি ব্যবহার করুন কমলালেবুকেও কারণ স্কিন টোন ব্রাইট করতে কমলালেবুও দারুণ কাজ দেয়।
৫ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই আর পরিমাণ মতো কমলালেবুর রস।
সবকটি উপকরণ ভালো ভাবে মেশান।মিশ্রণটি মেখে ফেলুন মুখে,হাতে,গলায়।তারপর শুকাতে দিন।শুকিয়ে গেলে আগে জল নিয়ে হাল্কা হাতে ঘষে নিয়ে তুলে ফেলুন।সপ্তাহে তিন-চার দিন করতে পারেন।
জাফরান আপনার স্কিন টোন ফেয়ার করতে খুবই উপকারী। জানি, দাম একটু বেশি।কিন্তু একটু না হয় খরচা করলেনই। বিশ্বাস করুন, বাজার চলতি প্রোডাক্ট মেখে যে টাকা খরচা করেছেন, তার থেকে কম খরচা হবে।
৩ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই, পরিমাণ মতো দুধ আর জাফরান।
দুধে আগে জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। এবার বেসন আর দইয়ের মধ্যে সেই দুধ জাফরান সমেত দিয়ে দিন। মিশ্রণটা এবার ভালো ভাবে মিশিয়ে মুখে, হাতে মাখুন। তারপর ৩০ মিনিট মতো রাখুন। দেখবেন শুকিয়ে আসছে। তখন তুলে ফেলুন পরিষ্কার জল দিয়ে।সপ্তাহে দু’দিন করলেই হবে।
জাফরানের মতো কেশরও ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই বেসন আর দইয়ের সাথে কেশরও মিশিয়ে নিন।
পরিমাণ মতো বেসন, দই আর দুধে ভেজানো কেশর।
বেসন আর দইয়ের মধ্যে দুধে ভেজানো কেশর দিয়ে দিন দুধ সহ। এই মিশ্রণটি এবার মুখে মেখে নিন। মিনিট ১৫ রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন পরিষ্কার জল দিয়ে। সময় পেলে রোজই করতে পারেন। না হলে যত বেশিদিন পারবেন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন।
টম্যাটোর রস কিন্তু আপনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহার করতেই পারেন।টম্যাটোর মধ্যেও ন্যাচারাল ব্লিচিং এলিমেন্ট আছে, যা আমাদের মুখ পরিষ্কার করে। তাই স্কিন উজ্জ্বল হতে থাকে।
৩ চামচ বেসন, ২ চামচ দই আর টম্যাটোর রস বা বাটা।
এই সবকটি উপকরণ খুব ভালো করে মেশান। এটা আপনি গরম জল দিয়েও বানাতে পারেন। মিশ্রণটা মুখে মেখে রাখুন মিনিট ৩০ মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ইন্সট্যান্ট একটা গ্লো পাচ্ছেন। সপ্তাহে একদিন করলেই হবে।
মুলতানি মাটি তো সেই কবে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে আমাদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে।এবার বেসন আর দইয়ের সঙ্গে যোগ করে এই তিনের কামাল দেখুন।
পরিমাণ মতো বেসন, দই আর মুলতানি মাটি।
তিনটি সমপরিমাণে নিয়ে মিশিয়ে ভালো করে মুখে মাখুন। মিনিট ১০ রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন মতো করুন ভালো ফল পেতে।
গোলাপজল তো একটা বেস্ট টোনার হিসাবে আমরা কবে থেকেই ব্যবহার করে আসছি।তাহলে বেসন আর দইয়ের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাবেন।
পরিমাণ মতো বেসন, দই, গোলাপজল।
বেসন আর দই মিশিয়ে তাতে দিন গোলাপজল। দাশবাসের সৌজন্যে আপনারা জেনেই গেছেন ঘরেই কিভাবে গোলাপজল বানাতে হয়। তাই মিশিয়ে নিয়ে মুখে মেখে রাখুন।শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন গুলাবি নিখার কয়েক দিনেই পাচ্ছেন।
আগেকার দিনে মা-ঠাকুমারা কিন্তু দুধের সর মেখেই নিজেদের সুন্দর করে তৈরি করতেন। তাই সেই পন্থা আপনিও নিন।বেসনের সাথে এবার দুধের সর ব্যবহার করুন।
৪ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই আর পরিমাণ মতো দুধের সর।
সবকটি উপকরণ মিশিয়ে মুখে মেখে রাখুন ২০ মিনিট মতো। তারপর প্রথমে দুধ দিয়ে পারলে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিন। কয়েক দিনেও ফল পাবেন।
স্কিন চকচকে করার জন্য দরকার স্ক্রাবিং। আমন্ড গুঁড়ো খুব সুন্দরভাবে ভেতর থেকে ময়লা বের করে দেয়। তাই স্কিন হয়ে ওঠে নারিশিং আর হেলদি।
পরিমাণ মতো বেসন, দই আর আমন্ড গুঁড়ো।
এই মিশ্রণটি মুখে, হাতে মেখে ভালো করে ম্যাসাজ করতে থাকুন মিনিট ৫ মতো। রাখতে হবে না। তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সঙ্গে সঙ্গেই দেখবেন স্কিনের গ্লো। রোজই এটা করতে পারেন।
পাকা পেঁপে খেতে যেমন ভালো, তেমনি খুবই ভালো ত্বকের জন্য। এটা স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করে, নারিশ করে। তাই বেসনের আর দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিন পাকা পেঁপের পাল্প।
৪ চামচ বেসন, ৪ চামচ দই, ৪-৫ টুকরো পাকা পেঁপে বাটা।
সবকটি উপকরণ মিশিয়ে নিন। সঙ্গে পারলে মধুও দিতে পারেন। এবার মিশ্রণটি মুখে মেখে ফেলুন। ১৫ মিনিট রেখে ঘষে তুলে ফেলুন। আপনার স্কিনে আসা জেল্লা দেখে আপনিই চমকে যাবেন।
অ্যাভোকাডো ব্যবহার করেছেন স্কিনের জন্য? না করলে এবার করুন। এটা একটা খুব ভালো ফেস প্যাক।
৫ চামচ বেসন, ৩ চামচ দই, অর্ধেকটা অ্যাভোকাডো।
অ্যাভোকাডো আগে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এই পাল্পটা এবার বেসন আর দইতে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ৩০ মিনিট মতো। তারপর হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
শশার রস যে আপনার ত্বকের জন্য ভালো তা তো জানেনই। শশার রস কালো দাগ বা ট্যান দূর করে। জেল্লা বাড়াতেও কিন্তু এর জুড়ি মেলা ভার!
পরিমাণ মতো বেসন, দই,কয়েক টুকরো শশার রস আর মধু।
সবকটি উপাদান মিশিয়ে মুখে, হাতে মেখে রাখুন প্রায় ২০ মিনিট। তারপর হাল্কা হাতে ঘষে তুলে ফেলুন পরিষ্কার জল দিয়ে। সপ্তাহে তিন দিন মতো করুন।
তাহলে দেখুন তো, কতভাবে আপনি বেসন আর দইকে ব্যবহার করতে পারছেন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে। শুধু দইটা যেন ঘরে পাতা হয়। তাহলেই ফল ভালো হবে। আর আপনি ভালো থাকলে এর থেকে খুশির খবর দাশবাসের পক্ষে আর কিই বা হতে পারে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…