কোনও জিনিস নিয়ে জেদ করে না বা বায়না করে না, এমন শিশু খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। অল্প-বিস্তর জেদ সব শিশুর মধ্যেই থাকে। তবে কিছু কিছু শিশুর মাত্রাছাড়া জেদ বা বায়নার কারণে বাবা-মায়েরা মাঝে মাঝে হিমশিম খেয়ে যান।
কেন জেদ করে বাচ্চারা
- প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বাচ্চাদেরও রাগ, চাহিদা, অভিমান, হতাশা ইত্যাদি থাকে।
- বড়রা চাইলেই নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, কিন্তু ছোটরা তা করতে পারে না। যার ফলস্বরূপ মারাত্মক জেদি হয়ে ওঠে বাচ্চারা।
- সময় থাকতেই এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিন্তু ভবিষ্যতে গিয়ে আপনার সন্তানের আচার-আচরণের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কীভাবে সামলাবেন শিশুর জেদ?
অনেকেই আছেন বাচ্চারা জেদ করলে বকে বা মেড়ে তা কমানোর চেষ্টা করেন। এই কাজটি ভুলেও করবেন না। তাতে বাচ্চার মানসিক বিকাশ খারাপ হতে পারে মারধর বা বকাবকির ফলে। ওদেরকে ওদের মত করে বোঝানোর কিছু টিপস আজকের প্রতিবেদনে বলা হল। যা আপনাদের সাহায্য করবে শিশুদের সামলানোর ক্ষেত্রে।
১) সবার প্রথমে জেদের কারণ জানার চেষ্টা করুন
- আপনার ছোট্ট সোনাটির রাগের কারণ কী, সেটা কিন্তু আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
- অনেকসময়ে খিদে পেলে বা ঘুম পেলে বা ন্যাপি ভিজে গেলেও ছোটরা কান্নাকাটি করে থাকে।
- এমন অবস্থায় আপনি কিন্তু তাকে কিছুই বোঝাতে পারবেন না, আর বোঝালেও সে বুঝবে না, তাই সবার আগে জেদের কারণ জানাটা দরকার।
- তা জেনে গেলে আপনি দ্রুত তা সমাধান করে শান্তি পাবেন নিমেষের মধ্যে।
- না হলে অশান্ত বাচ্চা সামলানোর ঝক্কি তো আপনারা ভালো ভাবেই জানেন!
২) উপেক্ষা করুন
- আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, আপনার সন্তান ক্ষুধার্তও নয়, তার ঘুমও পায়নি, এমনিই সে নিজের দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এইভাবে কান্নাকাটি করছে, তাহলে অবশ্যই আপনার তাকে উপেক্ষা করা উচিত।
- প্রথম প্রথম সে খুব কাঁদবে, ঘ্যান-ঘ্যান করবে, কিন্তু যেই সে বুঝে যাবে যে আপনি তাকে এই বিষয়ে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না আস্তে আস্তে সে আর এইরকম করবে না।
- বার কয়েকবার এরকম করে দেখুন সে আর জেদ করবে না অযথা।
৩) ভালোবেসে জড়িয়ে ধরুন
- শিশুর রাগ কমানোর খুব ভালো ওষুধ হল তাকে আদর করে জড়িয়ে ধরা।
- মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে দস্যি শিশুরও কিন্তু মন গলে জল হয়ে যায়।
- এতে যেমন তার রাগও কমবে আপনি মানসিকভাবে আপনার শিশুর অনেক কাছে চলে আসতে পারবেন।
- সে আপনাকেও বুঝতে শুরু করবে। তাই আপনার কথা শোনার মানসিকতা জন্মাবে তার মধ্যে।
৪) শিশুকে কোনও কাজে ব্যস্ত রাখুন
- কথাতেই আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। তাই আপনার শিশুকে সবসময়ই কোনও কাজে ব্যস্ত রাখুন।
- পাজ়েল গেম, আঁকার খাতা-রঙপেন্সিল ইত্যাদি দিয়ে তাকে বসিয়ে রাখুন।
- দেখবেন সে আর রাগ-জেদ করার সময়ই পাবে না। তবে তাই বলে মোবাইল ফোন হাতে থামিয়ে দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৫) শিশুর কাজের প্রশংসা করুন
- কাজ যতই সামান্য হোক না কেন আপনার শিশুকে প্রশংসা করুন।
- এই যেমন তার আঁকা ছবিটা কত সুন্দর হয়েছে, সে খুব সুন্দর পাজ়ল সলভ্ করতে পারে ইত্যাদি।
- এতে আপনার শিশুর মনোবল বাড়বে এবং রাগ, জেদের মতো আবেগ ক্রমশ দূর হবে।
৬) চাহিদা বাড়াবেন না
- বিশেষ করে ওয়ার্কিং পেরেন্টসদের এই সমস্যাটা খুব হয়ে থাকে।
- কারণ তাঁরা মনে করেন তাঁরা যেহেতু সন্তানকে বেশি করে সময় দিতে পারছেন না, তাই অফিস থেকে ফেরার সময়ে তাঁদের জন্য খেলনা বা চকোলেট নিয়ে আসেন।
- এতে করে শিশুদের মনে একটা চাহিদা তৈরি হয়। ওরা ভেবে নেয় যা চাইবে তাই সে পাবে মা বাবার থেকে। যা পরে ডেকে আনতে পারে বিপদ।
- এরপর তাদের মনের মতো জিনিস এনে দিতে না পারলে তারা জেদ করে, কান্নাকাটি করে, তখন সামলানো মুশকিল হয়ে যায়,তাই এই বিষয়টি বিশেষভাবে মাথায় রাখা দরকার।
কী কী করবেন না
- কখনওই মাথা গরম করে বাচ্চার গায়ে হাত তুলবেন না। কথায় কথায় বাচ্চার গায়ে হাত তুললে সে কিন্তু আরও জেদি আর একরোখা হয়ে উঠবে।
- বাচ্চা যখন যেটা চাইছে, তখনই সেটা তাকে দেবেন না। সেই জিনিসটি যদি আপনার সামর্থের মধ্যও হয় তাহলেও দেবেন না। এতে করে অল্প বয়সে সবকিছু পেয়ে গেলে তাদের মধ্যে অবাধ্য হওয়া, রেগে যাওয়ার মতো প্রবণতা দেখা দেয়।
- ভালো কাজের জন্য উপহার দিন। আপনার সন্তান যদি স্কুলের পরীক্ষায় ভালো ফল করে তাহলে তাকে ফুল বা চকোলেট-বা সে যেটা খেতে ভালোবাসে সেই উপহার দিন।
- ব্যর্থতা আসবেই কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নিতে শেখান, কিন্তু অন্যের সাফল্যের সঙ্গে কখনওই তার তুলনা করবেন না। এতে তার মনোবল ভেঙে যেতে পারে এবং সে আরও জেদি হয়ে উঠতে পারে।