আমের আঁচার, লেবুর আঁচার, কুলের আঁচার, জলপাইয়ের আঁচার–কি জিভে জল আসছে? ভাবছেন হঠাৎ আঁচারের নাম বলছি কেন? এই সব রকমের আঁচার তো সহজেই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
কিন্তু ছোটবেলায় যখন ঠাকুমা দিদিমারা আঁচার বানাতেন তখন সেখানে বসে সেগুলো দেখা আর সব ভাই বোন মিলে আঁচার বানানোর সময় সেগুলো টেস্ট করার মজাই আলাদা ছিল। আজকালকার ছোটো পরিবার এবং নানা কাজ কর্মের ব্যস্ততার ফলে বাড়িতে বানানো আঁচারের স্বাদ খুব কম জনেরই ভাগ্যে জোটে।
ছোটবেলার সেই আনন্দ না হোক কিন্তু ঠাকুমা দিদিমাদের বানানো সেই আঁচারের স্বাদ আপনি আজকের লেখাটি পড়লে কিন্তু পেয়ে যাবেন। আজ থাকছে তিনটি অত্যন্ত টেস্টি জিভে জল আনা আঁচারের রেসিপি।
১. কাঁচা লঙ্কার আঁচার
উপকরণ:
- কাঁচা লঙ্কা ১৫ থেকে ২০ টি
- ১.১/২ চা চামচ গোটা জিরা
- ২ বড় চামচ সর্ষে দানা
- ১.১/২ চা চামচ গত ধনে
- ১/২ চা চামচ মেথি দানা
- ১.১/২ চা চামচ মৌরি
- ১ চা চামচ জোয়ান
- ২ চা চামচ হলুদ
- লবন স্বাদ অনুযায়ী
- ১/২ কাপ সর্ষের তেল
- হিং এক চিমটে
- ২ বড় চামচ ভিনিগার
- লেবু একটি
প্রণালী:
- প্রথমে লঙ্কা গুলিকে ধুয়ে মাথার দিকে বোঁটা অংশটি বাদ দিয়ে সব গুলি লঙ্কা একই মাপের টুকরো করে কেটে নিতে হবে। একটি পাত্র গরম করে তাতে পরিমান মত জিরা, সর্ষে দানা, গোটা ধনে, মেথি দানা, মৌরি এবং জোয়ান ভেজে নিতে হবে কম আঁচে ১ থেকে ২ মিনিট।
- পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে মিক্সিতে বেটে পাউডার মত বানিয়ে নিতে হবে। এবার পাউডার করা মশলা কাঁচা লঙ্কার সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে তার সাথে হলুদ গুঁড়ো, একটি লেবুর রস ও স্বাদ অনুযায়ী লবন ভালো করে মিশিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে ভরে নিন।
- এবার একটি পাত্রে ১/২ কাপ সর্ষের তেল গরম করতে হবে। তেল পুরোপুরি গরম হলে তাতে এক চিমটে হিং দিয়ে দিতে হবে। তেল ঠান্ডা হয়ে গেলে লঙ্কা ভরা বোতলে ঢেলে দিতে হবে।
- আঁচার বেশি দিন ভালো রাখার জন্য ওতে ভিনিগার মিশিয়ে দিন। তেল, মশলা লঙ্কা ভালো করে মিশিয়ে কাঁচের বোতল টিকে মুখ খোলা অবস্থায় ৩ থেকে ৪ দিন টানা ২ ঘন্টা করে রোদে রেখে দিতে হবে। পুরোপুরি রোদ পাওয়া হয়ে গেলে রুটির সাথে বা ভাতের সাথে এর মজা নিন।
২. কুলের আঁচার
উপকরণ:
- টোপা কুল ২ কেজি
- আখের গুড় ২ কেজি বা স্বাদ অনুযায়ী
- পাঁচ ফোঁড়ন গোটা ২ বড় চামচ
- গোটা জিরে ১ চা চামচ
- শুকনো লঙ্কা ২-৩ টি
- শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ১/২ চা চামচ
- লবন স্বাদ অনুযায়ী
- সর্ষের তেল ৩ বড় চামচ
প্রণালী:
- কুল ভালো করে ধুয়ে ৩ দিন ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার কুল গুলিকে মাঝখান থেকে অল্প চিরে একটু টিপে দিয়ে আরো একদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার একটি পাত্র গরম করে তাতে ১ বড় চামচ পাঁচ ফোঁড়ন দানা হালকা আঁচে ভেজে নিতে হবে।
- পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে মিক্সিতে বেটে পাউডার মত বানিয়ে নিন। একই রকম ভাবে গোটা জিরে ও একটি শুকনো লঙ্কা কম আঁচে একটি পাত্রে শুকনো করে ভেজে নিয়ে পাউডার বানিয়ে নিতে হবে।
- এবার একটি পাত্রে সর্ষের তেল গরম করে তাতে ১ বড় চামচ পাঁচ ফোঁড়ন ও ১-২ টি শুকনো লঙ্কা ফোঁড়ন দিয়ে তাতে সমস্ত কুলগুলি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। স্বাদ মত লবন ও শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ২-৩ মিনিট হালকা আঁচে রেখে দিন। এবার এতে গুড় মেশাতে হবে।
- গুড় গলিয়েও মেশানো যেতে পারে বা গ্রেড করেও মেশানো যেতে পারে। ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে গুড় কুলের সাথে| ৫ থেকে ৬ মিনিট হালকা আঁচে রেখে দিতে হবে। মিশ্রন টি ঘন গ্রেভির মত হয়ে আসলে টেস্ট করে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে। পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে আঁচার একটি কাঁচের বোতলে ভরে জারের মুখ বন্ধ করে দিন।
- এবার ১৫ দিন আঁচার রোদে রেখে দিলেই আঁচার পুরোপুরি তৈরী হয়ে যাবে।সপ্তাহে একদিন রোদে রাখলে আপনার আঁচার অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
৩. টক ঝাল মিষ্টি আমের আঁচার
উপকরণ:
- কাঁচা আম ৫ থেকে ৬ টি
- কাঁচা লঙ্কা ৪ থেকে ৫ টি
- পাঁচ ফোঁড়ন ৫ বড় চামচ
- শুকনো লঙ্কা ৭-৮ টি
- আদা কুঁচি(জুলিয়ান কাট)২ চা চামচ
- হিং ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো ১.১/২ চামচ
- লবন স্বাদ অনুযায়ী
- চিনি ১ চামচ
- সর্ষের তেল
প্রণালী:
- প্রথমে আম গুলি খোসা না ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন। আঁটি অংশটি বাদ দিয়ে দিতে হবে। আমের টুকরো গুলি হলুদ, লবন মাখিয়ে আদার টুকরোর সাথে মিশিয়ে রোদে রেখে দিতে হবে টানা ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। ইতিমধ্যে শুকনো লঙ্কা ও পাঁচ ফোঁড়ন শুকনো করে ভেজে ঠান্ডা করে পাউডার বানিয়ে নিতে হবে।
- একটি পাত্রে ৫ বড় চামচ তেল গরম করে তাতে আম এবং আদার মিশ্রন দিয়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট নাড়াচাড়া করে নিতে হবে। ৫-৬ মিনিট পর হিং ও কাঁচা লঙ্কা আমের সাথে ভালো করে মিশিয়ে তাতে চিনি ও ভাজা মশলা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিষ্টির পরিমান আপনার স্বাদের ওপর নির্ভর করে।
- একটু ঠান্ডা হলে এই মিশ্রন কাঁচের বোতলে ঢেলে সর্ষের তেল বোতলে ভরে একটি চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এবার এই বোতল ৫ থেকে ৭ দিন রোদে রেখে দিতে হবে। ব্যাস আপনার আঁচার তৈরী।
ঠাকুমা দিদিমারা আরো অনেক ধরনের আঁচার বানাতেন। আপনি আপাতত এই তিন ধরনের আঁচার বানিয়ে সেই পুরনো স্বাদ ও স্মৃতি রোমন্থন করুন আর বাড়ির সকলের মন জয় করে নিন। আরো কয়েক ধরনের আঁচারের রেসিপি নিয়ে আমি না হয় আরেক দিন হাজির হব।