Most-Popular

ব্যোমকেশের এই অজানা ১০টি জিনিস খেয়াল করেছেন কখনো সিনেমা দেখার সময়!

বাংলা সাহিত্যে ব্যোমকেশ বক্সী হলো এক অবি স্মরণীয় নাম। গোয়েন্দা চরিত্রে তিনি জয় করে নিয়েছেন পাঠক ও দর্শকদের হৃদয়। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর অসামান্য সৃষ্টি মানুষ তার অনবদ্য পর্যবেক্ষণ দক্ষতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়ে সবার তারিফ ও বাহবা কুড়িয়েছেন। বাঙালীর কাছে ফেলুদা যতটা আপন ঠিক ততটাই ব্যোমকেশ যার মগজাস্ত্র যেকোনো রহস্যের জট ছাড়াতে প্রস্তুত থাকে। তো চলুন আজ এনাকে নিয়েই রাখলাম আপনাদের কাছে দশটি অজানা তথ্য যা হয়তো আপনার গোচরে আসেনি।

রচনার নেপথ্য কাহিনী:

  • লেখার সময় অনুযায়ী ব্যোমকেশের প্রথম গল্প ‘পথেরকাঁটা’ (১৩৩৯বঙ্গাব্দ, আষাঢ়), কিন্তু ওই বছরেরই মাঘ মাসে ‘সত্যান্বেষী’ লেখেন এবং সেই গল্পই সবার সামনে প্রথমে আত্মপ্রকাশ করে।
  • তাই এটিকে প্রথম গল্প বলে ধরা হয়। এরপর পরের চারবছর ১০টি গল্প পাঠকদের মনোরঞ্জন করে। তারপর পাঠকদের ভালো লাগবেনা ভেবে লেখা বন্ধ করে দেন।
  • এরপর ১৫বছর পর ব্যোমকেশ ফিরে আসেন ‘চিত্রচোর’ গল্পে পরিমল গোস্বামীদের বাড়ির ছেলে মেয়েদের অনুরোধে।মজার ব্যাপার সেটা নিয়ে ২০১২ সালে অঞ্জন দত্ত এই গল্পের অবলম্বনে তৈরি করেন ছায়াছবি “আবারব্যোমকেশ”।

ব্যক্তি হিসেবে ব্যোমকেশ:

  • আমরা ব্যোমকেশ এর মাথা খাটানোর নানা টেকনিক এর উপরে এত নজর দি কিন্তু ওনার পার্সোনাল লাইফ এর ব্যাপারে জানি কজন? সেটা সিনেমাতে দেখানো হলেও অভারলুক করে যাই।
  • ব্যোমকেশকে আমরা মোটা কালো ফ্রেমের চশমা, ধুতি পাঞ্জাবি ও ক্লিনশেভে দেখে ক্রাশ খেতে অভ্যস্ত। ব্যোমকেশকে ফর্সা গায়ের রং, মুখেচোখে বুদ্ধির ছাপ যুক্ত শিক্ষিত ভদ্রলোক বলে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেটা আমরা আবীর বা যীশুকে দেখলেই বুঝি।
  • ব্যোমকেশ এর বাবা ছিলেন অঙ্কের মাস্টারমশাই আর মা কড়া বৈষ্ণবভক্ত।কিন্তু মাত্র সতেরো বছর বয়সেই ওদের দুজনকেই হারান তিনি।
  • হ্যারিসন রোডে ব্যোমকেশ তিনতলা বাড়ি নিয়ে থাকেন। তার পরিচারকের নাম পুঁটিরাম। পরে অবশ্য দক্ষিণ কলকাতায় কেয়াতলায় বাড়ি করে উঠেযান।
  • পেশা গোয়েন্দাগিরি হলেও ব্যোমকেশের কিন্তু নিজেকে গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ বলাতে বেজায় আপত্তি!নিজেকে সত্যান্বেষী বলতেই ভালোবাসেন তিনি।

ব্যোমকেশের সেকেন্ড:

  • দাবা খেলায় প্রত্যেক গ্র্যান্ডমাস্টার এর সেকেন্ড থাকে বা যেমন ফেলুদার তোপসেতে মনি আমরা জানি ব্যোমকেশের প্রতি কেসে তার হরিহর আত্মা হলো অজিত।
  • আমরা এটাও জানি যে ব্যোমকেশের সব কেসের ঘটনা লেখেন অজিতই।কিন্তু এটা জানেন কি যে রুমনম্বরটু, সজারুর কাঁটা, বেণী সংহার, লোহার বিস্কুট, বিশুপাল বধ এই গল্প গুলো অজিত লেখেন নি?
  • কারণ তিনি বড্ড সেকেলে হয়ে পড়েছিলেন। চলতি ভাষা রপ্ত করতে পারেননি। কিন্তু গল্প গুলো তবে লিখলো কে? হুহু ব্যোমকেশ বাবু নিজেই! যে আজ্ঞে।

সিনেমার গোড়া পত্তন:

  • ব্যোমকেশের প্রথম সিনেমার উদ্যোগনেন সত্যজিৎরায়। ১৯৬৭ সালে তিনি নির্দেশনা দেন “চিড়িয়াখানা” মুভি। যার লিড হলেন মহানায়ক উত্তমকুমার।
  • এটা ২ টো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিল

ব্যোমকেশ ও তার গল্পকারের মিল:

  • এটা তো সবাই জানেন যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর আদলে ব্যোমকেশ সৃষ্টি।কিন্তু ১৯৬৯ সালের একটি ইন্টারভিউতে শরদিন্দু বলেন ব্যোমকেশ নাকি তার চেয়ে দশ বছরের সিনিয়ার। তাহলেই ভাবুন লেখক এর চেয়ে চরিত্রের বয়সের পার্থক্য।
  • ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় ব্যোমকেশ এর শেষ গল্প বিশু পাল বধ। কিন্তু ওটা অসম্পূর্ণ রেখেই মারা যান তিনি। যেটা পরে সম্পূর্ণ করেন নারায়ণ সান্যাল।

ব্যোমকেশের ছদ্মনাম:

  • ব্যোমকেশ এর এত সিনেমা তো দেখলেন কিন্তু জানেন কি তার ছদ্মনাম কি? জিহু জুর সত্যান্বেষী গল্পেই ভিলেন কে ধোকা দিতে উনি নাম ভাঁড়িয়ে ছিলেন।
  • ওনার নাম ছিল – অতুলচন্দ্র মিত্র।

প্রপ ডিজাইনিং:

  • শরদিন্দু তার গল্পে চমক ও বিস্ময়কর মোড় আনার জন্য বা কখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো গুরুগম্ভীর প্লট এনে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
  • কিন্তু “পথেরকাঁটা” গল্পে বাইসাইকেলের বেলের মধ্যে গ্রামফোনের পিন দিয়ে খুনের কারসাজি সত্যি এক অভিনব কায়দা ছিল এটা স্বীকার করতেই হয়।
  • কিন্তু এই আইডিয়া উনি কোথায় পেয়েছিলেন জানেন কি? এটি উনি পেয়েছিলেন ১৮০০ সালে বিখ্যাত হওয়া ড্রেইসিনিডিল গানের থেকে।যার রেঞ্জ – ৩-৪ মিটার।

শার্লক হোমস এর সাথে মিল :

  • দুটি গোয়েন্দা চরিত্রই মৌলিক ও স্বতন্ত্র হলেও আর্থারকোনানডয়েল এর শার্লকহোমস ও ব্যোমকেশের তুলনা এসেই পড়ে সিনেমায়।
  • দুজনেরই একটি বন্ধু ছিল যারা সব কেসে তাদের হেল্প করতো শার্লকের ওয়াটসন আর ব্যোমকেশের অজিত।
  • দুজনেই নিউজ পেপার খুঁটিয়ে পড়তেন। পথের কাঁটাও হোমসের ‘ইঞ্জিনিয়ার্সথাম্ব’ গল্পে মিল আছে।
  • দুজনেই মূল্যবান পাথর উদ্ধারের কেসে জড়ান। দুটি গল্পেই স্ট্যাচুর আড়ালে লুকানো ছিল পাথরটি। নটরাজ এর মূর্তি সীমান্ত হীরা গল্পে আর নেপোলিয়ন এর মূর্তি “দাসিক্সনেপোলিয়নস” গল্পে।

ব্যোমকেশের খোকা কে?

  • আগেই বলেছি ব্যোমকেশকে ধরা হয় শরদিন্দুর অল্টারইগোবানিজের আদলে গড়া প্রতিভূ – টিকালো নাক, দোহারা চেহারা, শানিত বুদ্ধি ইত্যাদিতে।
  • “অর্থমনর্থম” গল্পে আমরা ব্যোমকেশের সাথে সত্যবতীর বিয়েও দেখতে পাই।পরে তাদের একটি খোকাও হয়। কিন্তু এই খোকাকে? কিএর পরিচয়?
  • আসলে এটির পেছনে রয়েছে শরদিন্দুর কনিষ্ঠপুত্র শান্তনু ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণা।

পরিসংখ্যান:

  • ব্যোমকেশ একদীর্ঘ পথ চলেছে বাঙালির চিত্তে ও বিনোদনে। প্রায় ৩৩টি গল্পজুড়ে এবং অনেক সিনেমা নিয়ে এই জার্নি।
  • এই ব্যোমকেশ নিয়ে ১৪ জন অভিনেতা অভিনয় করেছেন মুখ্য ভূমিকায়।সেখানে উত্তম থেকে আবীর, যীশু থেকে সুশান্ত সবাই আছেন।
  • ১৯৯৩ বাসু চ্যাটার্জিরপরিচালনায় প্রথম হিন্দি জগতে দুরদর্শনে পা রাখে ব্যোমকেশ। এরপর অনেক হিন্দি বাংলা ছবি তৈরি হয়েছে। সত্যজিৎ, ঋতুপর্ণঘোষ, অরিন্দমশীল, অঞ্জন দত্ত সবাই সিনেমা বানিয়েছেন।
  • পরে টেলি সিরিজও তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের এক টেলিসিরিজ এ অভিনয় করেন গৌরব চক্রবর্তী যিনি আবার ফেলুদা সব্যসাচীর ছেলে।
  • হালফিলে২০১৫ এর দিবাকর ব্যানার্জির ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী সাফল্য পায় সুশান্ত সিংহ রাজপুত এর অভিনয়ে। সম্প্রতি অনির্বান ভট্টাচার্য ওয়েবসিরিজও করছেন এটি নিয়ে।
Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago