চিনি – শর্করা জাতীয় এই খাদ্যবস্তুটি অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু চিনি খেলে হতে পারে শরীরের অনেকরকম ক্ষতিও। মানবদেহের ওজন ও চর্বি বৃদ্ধির অন্যতম কারন হচ্ছে এই দানাদার চিনি খাদ্য হিসেবে গ্রহন।
হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া, কিডনির রোগসহ আরো অনেক রকমের শারীরিক সমস্যার পেছনে রয়েছে চিনির অবদান। এটি শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, হরমোনের সমস্যা তৈরি করে। এতে থাকা ইউরিক এসিড বাতের ব্যথা বাড়ায়। মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, চিনি মানুষের ব্রেইনের জন্যেও অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এসব তো গেলো চিনির অপকারী দিক, কিন্তু চিনির রয়েছে অনেক উপকারিতাও। স্বাস্থ্যের জন্য চিনি ক্ষতিকর হলেও ত্বকের জন্য চিনি খুবই উপকারী। আপনার ত্বক ও চুলকে সুন্দর রাখতে এই চিনিই হতে পারে প্রধান নিয়ামক।
চিনি ত্বকের প্রাকৃতিক স্ক্রাবার। খুবই সামান্য পরিমান নারকেল তেলের সাথে চিনি মিশিয়ে মুখে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করুন। চিনি একেবারে গলে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মৃত কোষ ও বাহ্যিক ময়লা উঠে আসবে।
বডি স্ক্রাবার হিসেবেও চিনি ব্যবহার করতে পারেন। পাঁকা কলা অথবা পাঁকা পেঁপে চটকে নিন। এতে চিনি মিশিয়ে হাত, পা ও শরীরে স্ক্রাব করুন। চিনি গলে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন নিয়মিত ব্যবহার করে দেখুন। পার্থক্য নিজেই বুঝবেন।
মুখে অনেক ব্রণ? তাড়ানো যাচ্ছে না কিছুতেই? লেবু টুকরো করে কেটে নিন। লেবুর টুকরোর উপর চিনি দিয়ে আলতো ভাবে সারা মুখে ততক্ষন ম্যাসাজ করুন যতক্ষন পর্যন্ত চিনি পুরোপুরি না গলে যায়। ব্রণ তো দূর হবেই সাথে হোয়াইট হেডস আর ব্ল্যাক হেডসও দূর হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরা জেলের সাথে চিনি মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন। চিনি গলে গেলে ম্যাসাজ করা বন্ধ করে মুখটা শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে পুরো মুখে বরফ ঘষে নিন। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ, বলিরেখা, মেছতার দাগ দূর কর সম্ভব এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
কারন চিনি হচ্ছে এক ধরনের প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট। এটি ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং কোষের ভেঙ্গে যাওয়া আটকে দেয়। তাই নিয়মিত চিনি ব্যবহারে ত্বকের দাগ দূর হয় এবং বয়সের ছাপ পরে না।
চিনি ত্বককে এক্সোফোলিয়েট করে যার ফলে ত্বক তার হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পায় সহজেই। মধু ও শসার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে মুখে স্ক্রাব করুন। আধ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করবে এবং ডার্ক সার্কেলস কমাবে।
ঠোঁট নরম ও সুন্দর কর তুলতে চিনির জুড়ি নেই। সামান্য পরিমান চিনি হাত নিয়ে আলতো করে ঠোঁটে ম্যাসাজ করতে থাকুন। চিনি গলে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁটের মরা চামড়া দূর হয়ে ফাটা স্থান দ্রুতই ভরাট হয়ে যাবে। সেই সাথে ঠোঁটে ফিরে আসবে গোলাপী আভা।
কেউ হঠাৎ করেই মোটা থেকে চিকন হলে, শুকিয়ে গেলে কিংবা প্রেগন্যান্সির পরে মেয়েদের শরীরে স্ট্রেচ মার্ক দেখা যায়। এটি দূর করতে চিনি খুবই কার্যকর। সামান্য কফির গুড়ো ও কয়েক ফোঁটা মধুর সাথে চিনি মিশিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে স্ট্রেচ মার্ক কমে যায় নিমিষেই।
চুলে খুশকির সমস্যা খুবই অশান্তির বিষয়। চুল থেকে খুশকি দূর করতে চাইলে সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পুর সাথে চিনি মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে কিছুক্ষন রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি তো পালাবেই, সেই সাথে পাবেন প্রাণবন্ত ও ঝলমলে চুল।
সামান্য তরল কাঁচা দুধ, বেকিং সোডা ও চিনি মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। আধ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক হেয়ার স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করবে। স্ক্যাল্পের মরা চামড়া দূর করে চুলের গোড়াকে করবে আরো শক্ত ও মজবুত। ফলে চুলের ঝরে পরাও কমে যাবে।
অনেকেই চুল কালার করতে ভালোবাসেন। কিন্তু চুলে কালার দীর্ঘ দিন থাকে না বা হালকা হয়ে যায়। কালার করা চুলের কালার ধরে রাখতে শ্যাম্পু করা পর কন্ডিশনারের সাথে চিনি মিশিয়ে ব্যবহার করুন। চুলের রং দীর্ঘস্থায়ী হবে। মেহেদী দিয়ে চুল রঙ করার সময় চাইলে মেহেদী পেস্টের সাথে চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে করে মেহেদীর জন্য চুলে যে রঙটা হবে, সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এক চামচ পানিতে যতখানি চিনি গোলানো সম্ভব গুলিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পরিষ্কার ত্বকে এই মিশ্রণ লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে বরফ ঘষুন।
অথবা আলুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ দুটি আপনার ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করবে এবং ত্বকের কোষগুলোকে রিল্যাক্স হতে সহায়তা করবে।
দেখলেন তো, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক চিনিই কিভাবে ত্বক আর চুলের উপকার করছে! তো আর দেরি কেন? আপনিও রুপচর্চায় ব্যবহার করুন চিনি, আর পেয়ে যান লাবণ্যময় ত্বক ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…