আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে ভক্ত-সাধকের পাশাপাশি এমন বহু নারী আছেন, যারা তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ঈশ্বর নিষ্ঠার দ্বারা সাধনার উচ্চস্তরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। কিন্তু সাধিকার নাম মনে করতে বললেই আমাদের সবার আগে এবং সবার শেষে একটিই নাম মনে আসে, তিনি হলেন মীরাবাঈ। কিন্তু মীরাবাঈ ছাড়াও অগণিত নারীরা তাদের নিষ্ঠার দ্বারা সাধিকার স্তরে পৌঁছে গিয়েছেন।
এই রকমই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা পশ্চিম ভারতের এক ভক্তের কথা আজ আপনাদের বলবো। বাড়ির পরিচারিকা থেকে ঈশ্বর নিষ্ঠার দ্বারা যিনি হয়ে উঠেছিলেন সাধিকা, পেয়েছিলেন সাক্ষাৎ ঈশ্বর দর্শন। দূরদূরান্ত অবধি ছড়িয়ে গিয়েছিলো তাঁর নাম সন্ত হিসেবে, তিনি হলেন ‘জনা বাঈ’।
কথায় বলে ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস’-এই কথাটি জনাবাঈ এর জীবনে প্রকৃত অর্থেই সত্যি হয়ে উঠেছিল। ভক্ত ‘নাম দেবে’র বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন জনা। নামদেবের বাড়িতে রোজই ভক্ত সমাগম থেকে নাম কীর্তন, হরি লীলাপ্রসঙ্গ, সদ্ গ্রন্থ পাঠ, শাস্ত্র ব্যাখ্যান ইত্যাদি হতো আর ঝাড়ু দেওয়া, বাসন মাজা, কাপড় ধোওয়ার মতো নিত্যকর্মের মাঝে অতিথিদের সেবা করতে করতে জনার মন পড়ে থাকতো সেই সংসারাতীতের দিকে।
সংসারের মধ্যে থাকা সমস্ত খুঁটিনাটি কাজ করতে করতে কবে যে তার মন সেই ভগবানের পাদপদ্মে সমর্পিত হয়ে গিয়েছিল তা তিনি নিজেও সচেতনভাবে লক্ষ্য করেননি, তবে নাম দেবের বাড়িতে হওয়া ভজন কীর্তন শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতেন জনা, কেমন যেন ঘোর লেগে যেত তাঁর।
এই রকম ভাবেই চলছিল জনার নিত্য দিন, সংসারের মধ্যে থেকেই জনা ভগবানকে অনুভব করার চেষ্টা করতেন। এরপর আসে বৈষ্ণবদের প্রিয় তিথি একাদশী, নাম দেবের বাড়িতে কীর্তন শুনে বাড়ি ফিরে আসেন জনা। বাড়ি ফিরেও তাঁর ঘোর কাটেনি, মাদকতার মতো আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকেন তিনি।
যখন তার হুশ ফেরে তখন ভোর হয়ে গিয়েছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। অন্যদিকে গত রাত্রে একাদশীতে ভক্ত সমাগমের পর আজ নাম দেবের বাড়িতে কাজের চাপ একটু বেশি থাকার কথা তাঁর, তাই দ্রুত নাম দেবের বাড়ি গিয়ে কাজ শুরু করে দেন জনা। অন্যান্য দিনের তুলনায় কাজে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে একটা কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রয়োজন অনুসারে অন্য কাজে হাত দিতে হচ্ছিলো জনাকে।
ঠিক সেইরকম ভাবেই জনা যখন কাপড় ধোওয়ার জন্য চন্দ্রভাগা নদীর তীরে উপস্থিত হন, তখন তার মনে পড়ে যে একটি দরকারি কাজ তখন না করলে নামদেব জীর অসুবিধা হবে। তাই কাপড়গুলি সেখানে রেখে নামদেব জীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন জনা। রাস্তায় একজন অপরিচিতা বৃদ্ধা মহিলা তাঁর পথ আটকিয়ে শুধোন,“এত ব্যস্ত হয়ে কোথায় চলেছ মা?” জনা তাঁর কাজের কথা বললে স্নেহ কোমল কন্ঠে বৃদ্ধা বলেন,“মা চিন্তা করো না, তুমি গিয়ে ঘরের কাজ সারো আমি এদিকে তোমার কাপড় গুলো কেচে দিচ্ছি।”
জনা বলেন, “ না, না, মা, আপনি কেন কষ্ট করবেন, আমি এক্ষুনি ফিরে এসে এগুলি ধুয়ে ফেলবো।” মুচকি হেসে বৃদ্ধা বলেন, “ কোনো কাজেই আমার কোনো কষ্ট হয় না। সব রকম কাজ করার অভ্যাস আমার আছে। তবুও যদি তুমি চাও তো, আমার কোন কাজে তুমি কোনদিন আমায় সাহায্য করো।” কাজের তাড়া থাকায় জনা আর কথা না বাড়িয়ে নামদেবজীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তবে মনে মনে ভাবতে থাকেন বৃদ্ধার অযাচিত স্নেহের কথা।
বাড়ির কাজ সেরে যখন ফিরে আসেন জনা, তখন দেখেন সমস্ত কাপড় কাচা হয়ে গেছে অন্যান্য দিনের তুলনায় কাপড়গুলি একটু বেশি পরিষ্কার মনে হচ্ছে। কী বলবেন জনা এই পরোপকারিণীকে! ভেবে পান না, তাই মুখে বলেন, “ মা আপনার খুব কষ্ট হলো এই মেয়েটার জন্য, আপনাদের মত মানুষেরাই ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রতিভূ।”
বৃদ্ধা হাসতে হাসতে বলেন, “ নাও তুমি দেখি আমাকে ঈশ্বরের প্রতিভূ বানিয়ে ছাড়লে, আরো কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো আমার মধ্যেই ঈশ্বরকে দেখবে। কাজেই চলি আমি, তোমার কাপড় ধুতে আমার কোন কষ্ট হয়নি।” জনা কাপড় গুছিয়ে নিতে থাকলে তার খেয়াল হয় বৃদ্ধার নাম ঠিকানা কিছুই জানা হয়নি, কীভাবে ভবিষ্যতে যোগাযোগ করবেন? এই কথা ভেবে মুখ তুলে তাকাতেই দেখেন বৃদ্ধা কোথাও নেই! এত দ্রুত এক বৃদ্ধা মহিলা কীভাবে দৃষ্টিপথের বাইরে চলে যেতে পারেন ভেবে অবাক হন জনা!
জনা বাড়ি ফিরে আসেন ধৌত বস্ত্র নিয়ে। বাড়ি এসে তিনি দেখেন নামদেব বসে আছেন প্রসন্ন মুখে। তবে কি তিনি কিছু দেখতে পেয়েছেন ধ্যান নেত্রে? মালিকের কাছে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করতে থাকেন জনা, বলতে বলতে তার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে, চোখে আসে জল। নামদেব সব শুনে খুশি হয়ে হর্ষোৎফুল্ল স্বরে বলেন, “ ধন্য জনা, ধন্য তুমি। স্বয়ং ভগবান তোমার কষ্ট দেখে তোমার কাজ করে দিয়ে গিয়েছেন।” এবার কাঁদতে শুরু করেন জনা, এই অভাগীর জন্য এত কষ্ট করলে তুমি প্রভু! এই দুঃখ আমি রাখি কোথায়! নাম দেব তাঁকে সান্ত্বনা দেন, উঠোনে থাকা ভক্তবৃন্দেরা জয়ধ্বনি করে ওঠেন।
এরপর ‘সন্ত জনাবাঈ’ এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র কিন্তু নামদেবের বাড়ির গৃহপরিচারিকার কাজটি তিনি ছাড়েননি। কারণ এই কাজের থেকেই তো তিনি তার ভগবানের সন্ধান পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে এমনও শোনা যায় যে, জনার ভগবত লীলা বিষয়ক পদ শুনতে ভগবান এসে জনার হয়ে যাতা ঘুরিয়ে শস্য চূর্ণ করে দিয়ে যেতেন। মহারাষ্ট্রের অনেক কবির রচনায় এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে আর এই ভাবেই পরিচারিকার পরিচয় থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘সন্ত জনাবাঈ’।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…