চুলে তেল লাগানো বলতে আমরা কমবেশি সবাই চপচপে করে তেল লাগানোকে বুঝি। তাতে হয় কি, তেল বেয়ে বেয়ে পড়ে মুখ, পরিধেয় জামাকাপড়, বিছানা, বালিশ একদম চটচটে করে ফেলে ঠিকই, কিন্তু চুলের খুব একটা পরিবর্তন হয় না। চুলে তেল ব্যবহার করার কিছু নিয়ম আছে যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। তাই আজকে কথা বলব চুলে তেল মাখানোর ধাপে ধাপে পদ্ধতি নিয়ে। আপনি যদি এভাবে তেল লাগান তাহলে তেল লাগালে সম্পূর্ণ উপকার পাবেন। তাহলে দেরি না করে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
প্রথমে নারিকেল, বাদাম, জলপাই, তিল, আর্গন, জোজোবা, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদির মধ্য থেকে যেকোন একটি তেল বাছাই করুন। আপনি তেলটা ঠান্ডা অবস্থাতেও ব্যবহার করতে পারেন বা হালকা গরম করেও ব্যবহার করতে পারেন। তবে ঠান্ডা তেলের চাইতে উষ্ণ তেল মাসাজে মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কয়েকটি তেল একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করেন। তার জন্য একটি স্পেশাল কম্বিনেশন অয়েল রেসিপি বর্ণনা করছি।
এসেনশিয়াল অয়েল বাদে সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। ঠান্ডা হলে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিবেন, এটি আসলে মিশ্রণটি থেকে আসা উটকো গন্ধ কমানোর জন্য দিতে হবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেলো স্পেশাল কম্বো হেয়ার অয়েল। এই তেল স্ক্যাল্প ও চুলের সব রকমের সমস্যার সমাধান করার সাথে সাথে চুলকে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করবে।
তেল লাগানোর আগে অবশ্যই হালকা হাতে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়িয়ে নিবেন। নয়তো জট ধরা চুলে তেল মাখার সময়ে আরো জট লেগে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে। আঁচড়ানোর পরে চুলটা ছোট ছোট কয়েকটা খোঁপা করে আটকে নিতে পারেন, এতে তেল মাসাজ করতে সুবিধা হবে।
চুল ভাগ করা শেষ হলে তেলে আঙুলের ডগা ডুবিয়ে সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগান। লাগানোর পরে একেকটা সিঁথি ২-৩ সেকেন্ড মাসাজ করে নিন। চুল খুলে এর ডগাতেও একটু তেল মাখবেন, তাতে ডগায় বাড়তি পুষ্টি পৌঁছাবে। এসময়ে চুলের ডগা হালকা ব্রাশ করতে পারেন চাইলে, তবে সাবধানে করবেন যাতে চুলে জট লেগে ছিঁড়ে না যায়।
স্ক্যাল্প আর ডগায় তেল লাগানোর পরে আঙুলের ডগা দিয়ে পুরো মাথা আলতো করে ১০-১৫ মিনিট সার্কুলার মোশনে মাসাজ করুন। স্ক্যাল্পে ডিট্যাঙ্গলার ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন হালকা করে যাতে চুলের গোড়ায় টান না পড়ে। কিন্তু ব্রাশটা স্ক্যাল্পে বেশিক্ষণ ব্যবহার করা যাবেনা।
তেল মাসাজের পরেও মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ে নিন এবং হালকা করে খোঁপা বেঁধে নিন। তেল লাগানোর পরে চুলের গোড়া একটু দুর্বল হয়ে যায়, তখন টাইট করে বাঁধলে চুল উঠে আসবে।
তেল মাসাজের পরে স্ক্যাল্পকে তেল শোষণ করতে দিতে হবে। তাই খোঁপাটা কুসুম গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে নিন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর্যন্ত এভাবে জড়িয়ে রাখতে হবে। তোয়ালে ঠান্ডা হয়ে গেলে পুনরায় পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে মাথায় জড়াবেন।
সবশেষে মাইল্ড শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন৷
পানিতে চুল ভিজিয়ে স্ক্যাল্প ও হেয়ার স্ট্র্যান্ডে তেল ব্যবহার করুন। ইচ্ছামতো সময় পর্যন্ত রেখে তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলটা বেশ ফুরফুরে লাগবে।
গোসলের সময়ে শ্যাম্পু করার পরে কন্ডিশনারে কয়েক ফোঁটা হেয়ার অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণ স্ক্যাল্প বাদে চুলে মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। আলাদা করে তেল লাগানোর সময় না থাকলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
১ কাপ পানিতে ১ টেবিল চামচ হেয়ার অয়েল মিশিয়ে তাতে ১৫-২০ মিনিট চুল ভিজিয়ে রাখুন। তারপর বড় একটি তোয়ালে দিয়ে চুল ঘন্টাখানেকের জন্য জড়িয়ে রাখুন। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
একটি স্প্রে বোতলে পরিমাণমতো পানি ও কয়েক ফোঁটা হেয়ার অয়েল মিশিয়ে একসাথে মিশিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। তারপর ভেজা চুলে মিশ্রণটি স্প্রে করে নিন। এটি চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাবে। তার সাথে হিট স্টাইলিংয়ের ক্ষতি থেকেও চুলকে বাঁচাবে।
তেল লাগানোর সময়ে সবসময় স্ক্যাল্পে তেল লাগাবেন। স্ক্যাল্প থেকেই পুরো চুল পুষ্টি পায়, তাই অযথা পুরো চুলে তেল লাগানোর দরকার নেই। হাত দিয়ে চিকন সিঁথি কেটে কেটে পুরো স্ক্যাল্পে তেল মাসাজ করে নিবেন।
অয়েল মাসাজে কখনোই নখ ব্যবহার করবেন না। নখের আঁচড়ে গোড়া থেকে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে। সম্পূর্ণ মাসাজটাই করতে হবে আঙুলের ডগা দিয়ে। এমনকি হাতের তালু ব্যবহার করলেও তালুর ঘষায় চুল ছিঁড়ে যেতে পারে, তাই তালুর ব্যবহার একদমই এড়িয়ে চলুন। ভালো হয় যদি চুলে তেল মাখানোর আগে হাতের নখ কেটে নেন। চাইলে তুলা দিয়েও অয়েল মাসাজ করতে পারেন, এটা সবথেকে নিরাপদ।
শুধুমাত্র একটি তেল ব্যবহার করে যতোটা উপকার পাবেন, কম্বিনেশন তেল ব্যবহারের উপকার পাবেন তার চাইতে বেশি। কম্বিনেশন তেল একসাথে অনেকগুলো কাজ করবে এবং এটা যেকোন ধরণের চুলের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
আপনার চুল যে ধরণেরই হোক না কেন, সপ্তাহে দুইবারের বেশি তেল একদমই ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে স্ক্যাল্পে তেল ট্র্যাপড হয়ে যাবে। সেটা পরিষ্কার করার জন্য ঘন ঘন শ্যাম্পুও করতে হবে। বারবার তেল ও শ্যাম্পুর ব্যবহারে চুল ও স্ক্যাল্প দুটোরই ক্ষতি হবে।
চুল ধোয়ার পরে তেল লাগাতে চাইলে স্ক্যাল্প এড়িয়ে মাখুন। কারণ ভেজা স্ক্যাল্পে তেল মাসাজ করলে চুলটা ন্যাতানো দেখাবে।
যেহেতু তেল খুব সহজে ধুলাবালি আটকে ফেলে, সেহেতু চুলে তেল মাসাজের পরে বাইরে বের হবেন না। অতিরিক্ত রুক্ষ, শুষ্ক, নিষ্প্রাণ চুলে তেল ব্যবহার করার সর্বোত্তম সময় হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে। তাতে সারারাত বসে তেল স্ক্যাল্পের ভিতর প্রবেশ করতে পারবে। যদি দিনের বেলা অয়েল মাসাজ করেন, তাহলে চেষ্টা করবেন মাসাজ আর শ্যাস্পু করার মধ্যে অন্তত এক ঘন্টা গ্যাপ রাখার৷
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…