Most-Popular

সঙ্গোপনে

তোরা বরাবরই একটু দুষ্টু মিষ্টি স্বভাবের। আবার অনেকটা ইমোশনালও বটে। যদিও সেটা বাইরে থেকে বোঝার জো নেই কারুর। এতোটাই হাসি, ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখে সবাইকে। আর এটা একমাত্র জানে বাবাই। যদিও ওদের আলাপটা হয়েছিল একদম অন্যরকম। আর ওরা কখনওই ভাবেনি যে দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে যাবে। কারণ বাবাই ছিল তার ট্রেনিং কলেজের লেকচারার। ওদের দেখাটাও হয়েছিল একদম অন্যরকম ভাবে ইন্সটিটিউটের প্রথম দিনের ক্লাসে।

তোরাঃ মে আই কাম ইন?

বাবাইঃ ইয়েস, বাট একটু দেরী হয়ে গেছে।

তোরাঃ একটা প্রবলেমের জন্য দেরী হয়ে গেল।

বাবাইঃ ও.কে, কাল থেকে যেন না হয়।

ক্লাস শেষে তোরা ভাবলো, উফ!কি বদমেজাজি রে বাবা, যেন হাসতে মানা। একে এখন রোজ সহ্য করতে হবে। ধুর! এইভাবে ক্লাস তো চলতে লাগলো। কিন্তু একসপ্তাহ পরই স্যারের সাথে ক্লাসের সবার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। তোরা মনে মনে ভাবলো, যাক যেরকম ভেবেছিলাম অতটাও ওরম নয়। আসলে ক্লাসে ও সবার সাথে এতোই ফ্র্যাঙ্কলি মিশত যে সবাই একেবারে বড় দাদার মত সম্মান দিত ওকে। তাই স্যারের থেকে দাদা ডাকটাই শুনতে বেশী পছন্দ করত সে। আর স্পেশালি তোরার থেকে,স্যার ডাকটা শোনার ক্ষেত্রে মনে মনে বেশ অনেকটাই আপত্তি ছিল বাবাইয়ের। কারণ বয়সটাও কম। তাই তোরার সাথে বয়সের ফারাকটাও অনেকটা কম। যদিও অন্যরা যাই ডাকুক তাতে কোনো আপত্তি লাগত না। কিন্তু তোরার ক্ষেত্রেই যে কেন এরম আপত্তি সেটা সে নিজেও বুঝতে পারত না।

এইভাবে ক্লাসের যতদিন এগোতে থাকলো ততই এই আপত্তিগুলো অজান্তেই বেড়ে যেতে থাকে বাবাইয়ের মনে। তোরার সাথে কথা বলার সময় মুখের ভাবটাই বদলে যেত বাবাইয়ের। এই স্পেশাল ব্যাপারগুলো ক্লাসের অন্যরা বুঝতে পারত, একদিন তোরা ক্লাসে না এলে, বাবাইয়ের উষ্কখুষ্ক মুখ দেখে। আসলে তোরা বরাবরই একটু বেশী কথা বলে, সবাইকে হাসি-ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখে। আর এই ব্যাপারটাই সবার থেকে তোরাকে আলাদা করে দিয়েছিল। তোরার হাসি, এলোমেলো চুল, কথা বলা সবই দেখতে দেখতে কখন যে এগুলোর সাথে বাবাই জড়িয়ে ফেলেছিল নিজের ভালোলাগাগুলোকে সে বুঝতেই পারেনি। আর বাবাই চাইলেও এই ফিলিংসগুলোকে দূরে সরাতে পারছিল না। কারণ বাবাই ভাবতেই পারেনি ক্লাসে এসে ও এমন কাউকে পাবে যার কাছে একদম নিশ্চিন্তে মনের জমানো সব ইমোশন একেবারে ঢেলে দেওয়া যায়। আবার এদিকে ওকে বলতেও পারছিল না, তার দরকার তোরার মত একজন বন্ধুর।

অবশেষে একদিন বন্ধুত্বের প্রস্তাবটা দিয়েই দেয় বাবাই। বাবাই এতো সুন্দরভাবে প্রকৃত বন্ধুর মত তার পাশে থাকতো, কথা বলতে শুরু করে ছিল, তোরাও কখন যেন তার না বলা ইমোশনগুলো ওকে বলে হালকা হতো। ক্লাসে যদিও বাবাই তার লেকচারার। কিন্তু ক্লাসের বাইরে কখন যেন দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেণ্ড হয়ে গেছে। বাবাইও ছিল ভীষণ ফ্র্যাঙ্ক। নিজে খুব বড় পরিবারের ছেলে। এতো ভালো পোজিশনে চাকরী করছে। কিন্তু তাও মনে একটুও অহংকার নেই। ক্লাসের সবার সাথে এতো সুন্দরভাবে মিশতো। নিজে যা শিখেছে সবটুকু অন্যকে বিলিয়ে দিত। সবাইকে শেখাতে চাইত। ভীষণ হেল্পফুল। খুব হাসিখুশি। তাই ট্রেনিং শেষে ওর চলে যাবার সময়ে ক্লাসের সবার বেশ মনখারাপ হয়ে গেছিল।

ট্রেনিং এর সময়সীমা শেষ। ততদিনে বাবাই আর তোরার ফ্রেণ্ডশিপ আরও গাঢ় হয়ে গেছে। কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারে না। কিন্তু এই ব্যাপারটা বেশী পাত্তা দেয়নি তোরা। কারণ তখন বাবাইয়ের জীবনে ছিল অন্য একজন। যদিও তার সাথে বাবাইয়ের সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না। বাবাইও বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল সেই সম্পর্ক থেকে। সেইসব কথাই সে মন খুলে শেয়ার করেছিল তোরার সাথে। কিন্তু আজ শেষদিন। কাল বাবাই ফিরে যাবে তার নিজের শহর দুর্গাপুরে। কারণ, ওখানে সে আরও ভালো চাকরী পেয়েছে, যেতে তো হবেই। ক্লাসের সবারও ও খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল। তাই সবাই ওর জন্য একটা ছোট্ট সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। তোরাও ছিল। অনুষ্ঠানের শেষে সবার বাড়ি ফেরার পালা। তোরাও ফিরে যাবে তার বাড়ি আর বাবাইও ফিরে যাবে তার নিজের শহরে। ওই শেষ মুহূর্তটাতে কিছু বলতে চাইল তোরাকে।

বাবাইঃ তোমার মত বন্ধু পেয়ে খুব ভালো লাগলো।

তোরাঃ আমারও।

বাবাইঃ তোরা, একটা কথা বলব?

তোরা বাবাই এর মুখের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে।

বাবাইঃ তোরা আমার তোমাকে খুব ভাললেগে গেছে, আমি তোমায়…… মানে…

তোরা হাসলো।

বাবাইঃ আমি কিন্তু মাঝে মাঝে আসব কলকাতায়। তখন দেখা করবে? আর আমি কিন্তু ফোন করব। কথা বলবে তো?

তোরা হেসে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল, যেন হাসির আড়ালে ছিল একরাশ মনখারাপ, যেটা দেখাতে চায় না বাবাইকে। ওটাই ছিল ওদের শেষ দেখা।

বাবাই বাড়ি ফিরে প্রথম প্রথম তোরার সাথে ফোনে কথা হলেও, তারপর বাবাইয়ের ফোন, মেসেজ সবই কমতে থাকল। এদিকে বাড়তে থাকল তোরার অপেক্ষা। তারপর বাবাইয়ের ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেল। তোরার ভাবলো হয়তো বাবাই তার নিজের জীবন নিয়ে খুব ব্যস্ত। বা হয়তো ব্যস্ত তার সেই জীবনসঙ্গীকে নিয়ে যার কথা বলেছিল। এখন হয়তো আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে ওর জীবনে। যার সাথে কোনো কথা শেয়ার না করে মন উসখুস করতো, কি করে হঠাৎ ভুলে গেল তাকে? ও কি নেহাতই আমার বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েছিল? নাকি ও আমায় সত্যি সত্যি……… এরম হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে আসতো তোরার মন জুড়ে। কিন্তু তখন উত্তর দেওয়ার জন্য বাবাই ছিল না। প্রতিদিন ফোনের দিকে তাকিয়ে সেই অপেক্ষা করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে গেছিল। যদি একবার ফোন করে বাবাই তাহলে বলবো…………

বাবাই চলে যাবার পর বুঝতে পেরেছিল, আসলে ঠিক কতটা জায়গা জুড়ে ছিল বাবাই ওর মনে। কিন্তু এখন আর কোথাও নেই বাবাই। এটা মেনে নেওয়াটা তোরার কাছে মারাত্মক কষ্টের হয়ে উঠেছিল। কারণ বাবাইয়ের সাথে সে সকাল থেকে রাত অবধি তার জীবনের সব কথা শেয়ার করতো। ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধুই চলে গেছে অনেক দূরে। চাইলেও দেখার উপায় নেই, মনের এই ইমোশনগুলো শেয়ার করার কোনো উপায় নেই। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল অনেক দূরে। তাই কত কত কথা জমে যাচ্ছে মনে। আর কি বলতে পারবে বাবাইকে। বাবাই কি আর আসবে? তোরা খুব ইমোশনাল ছিল, তাই সে বাবাইকে নিজে থেকে কিছুই বলে নি। কিন্তু তোরার বিশ্বাস ছিল বাবাই নিশ্চয়ই একদিন আসবেই তার কাছে। আর এই অপেক্ষাতেই মাসের পর মাস কেটে যেতে থাকল। আর এই একাকীত্বটা ক্রমশ গ্রাস করছিল তোরাকে। একটু একটু মনের সব পজিটিভিটি গ্রাস করে নিয়েছিল। আসলে বাবাই যেন তোরার হাসিটাও ওর সাথে নিয়ে চলে গেছিল।

হঠাৎ একদিন ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো। বাবাই ছাড়া তোরাকে আর কেউ মেসেজ করতো না। দেখলো সত্যি সেই চেনা নম্বর। কেমন আছ? আমি আসছি তোমার কাছে। আসবে না? তোরা থমকে দাঁড়ালো। বিশ্বাসই করতে পারছিল না, হঠাৎ এতদিন পর আবার……

এতদিন পর আবার বাবাই আসছে তার কাছে। সেই হাসি, সেই চোখ এ সবই যেন ছিল শুধু তারই জন্য। সামনে এসে দাঁড়াতেই, মনের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নিজের হারানো জীবনটা ফিরে এসেছে আবার। আর সেই জীবনের নাম কখন যে বাবাই হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি তোরাও। বাবাইও তোরার থেকে চোখ সরাতেই পারছে না। এতদিন পর যেন কত সুন্দরী হয়ে গেছে তোরা। অনেক কিছু বলার আছে দুজন দুজনকে।

বাবাইঃ আমার খুব ইচ্ছা করতো তোরা তোমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু তোমার কাছে যাবার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিল।

তোরাঃ ওই মেয়েটি? যার কথা শুনেছিলাম তাই তো?

বাবাইঃ বিশ্বাস কর ওর সাথে অনেকদিন আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। এটা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু……… ভাবলাম আর কোন বাধা নেই তাই তোমার সামনে এসে সবকিছু বলব। আসলে ও আমার জন্য ছিল না। কারণ তুমি তো ছিলে আমার জন্য। তোমার কি মন খারাপ করতো আমার জন্য?

তোরাঃ আপনি বুঝতে পারবেন না আমার মনখারাপ!

বাবাইঃ হ্যাঁ বুঝব। আমি এসে গেছি। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে তোরা। আই লাভ ইউ। কিন্তু তুমি আমায় এখনো আপনি বলবে?

তোরা ছল ছল চোখে হাসতে লাগলো। কতদিন পর আবার প্রাণ খুলে হাসছে। কখনও ভাবতেই পারেনি বাবাই আবার ফিরে আসবে তার জীবনে। হয়তো দুজনের ভালোবাসাই দুজনকে টেনে এনেছিল আবার। হাসতে হাসতে দেখল বাবাই কখন যেন ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলেছে। যেন আর কোনোদিন ছাড়বে না তোরাকে। তোরাও শক্ত করে বাবাইএর হাতটা ধরে বলল, ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে’।

 

সুস্মিতা দাস ঘোষ

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago