নারীর সৌন্দর্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মেকআপ। মেকআপ একদিকে যেমন চেহারায় নতুনত্ব আনে, অন্যদিকে সৃষ্টি করে নানাবিধ ত্বকের সমস্যা। ত্বকের সমস্যাসহ কিছু নির্দিষ্ট সময়ে মেকআপ ছাড়া থাকলে ত্বক থাকবে সুন্দর ও ঝলমলে।
সাজতে কে না ভালোবাসে? প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, হাইলাইটার, ক্রিম, ব্লাশ-অন ইত্যাদি ছাড়া মেকআপ যেন অসম্পূর্ণ। মোহনীয় লুকের জাদুতে সবাইকে মাত করতে পারলেও স্কিনের বেহাল দশা ঠেকানো খুব মুশকিল। প্রতিদিন মেকআপ ব্যবহার করতে করতে একসময় দেখবেন মেকআপ স্কিনে ঠিকমত বসছে না। আবার মেকআপ করলেও চেহারায় কেমন একটা কালচে ছোপ পড়ে যাচ্ছে।
মেকআপে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে এটা ছাড়া দেখতেও বাজে লাগবে। কিন্তু স্কিনকে স্বস্তির নিশ্বাস দিতে চাইলে আপনাকে মেকআপ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে স্কিনকে ঠিক রাখা সম্ভব। আবার স্কিনে সমস্যা থাকলেও মেকআপ এড়িয়ে যাবেন শতভাগ।
আজকে আমি জানাব স্কিনের কি কি সমস্যায় মেকআপ থেকে দূরে থাকা ভালো এবং কোন কোন সময়ে মেকআপ করা উচিত না।
স্কিনের সমস্যায় মেকআপ অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মত। মেকআপ থেকেই স্কিনের বেশিরভাগ সমস্যা হয়। আবার আক্রান্ত স্কিনের উপর এক চিমটি ফেস পাউডার বা এক ফোঁটা ফাউন্ডেশন স্কিনের চূড়ান্ত ক্ষতি করতে যথেষ্ট। এখন আমরা জানব স্কিনের কোন কোন সমস্যায় মেকআপ একদমই বর্জন করা উচিত।
আপনার মুখে অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা থাকলে মেকআপ করার কথা চিন্তাও করতে যাবেন না। যাদের মুখে সারাবছরই ব্রণ উৎপাত করতে থাকে তাদের জন্য এই অবস্থায় মেকআপ করা আরো বিপজ্জনক হবে। আমরা এক্ষেত্রে যে ভুলটা প্রায়ই করে থাকি, সেটা হল ব্রণ ঢাকার জন্য আরো বেশি করে মেকআপ করি।
এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা কাজ। কম হোক বা বেশি, ব্রণের উপর কেমিক্যাল পড়লেই সেটা উল্টো স্কিনের সর্বনাশ ঘটিয়ে ছাড়ে, ব্রণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। আবার অপরিষ্কার মেকআপ ব্রাশ বা বিউটি ব্লেন্ডার মুখে ব্রণ ছড়িয়ে দেয়। কাজেই সবসময় চেষ্টা করবেন ব্রাশ বা ব্লেন্ডার ঠিকঠাকমতো ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে।
সবার স্কিন একরকম হয় না। কারো ঋতু পরিবর্তনের সময় বা মেকআপ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, বা হরমোনাল সমস্যা থেকে স্কিন প্রবলেম দেখা দিতে পারে। যদি আপনি আপনার স্কিনের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারি ট্রিটমেন্টের অধীনে থাকেন, তাহলে এই সময়টায় মেকআপ করবেন না। কারণ একজন স্কিন স্পেশালিস্ট আপনার স্কিনের ধরণ বুঝে প্রোডাক্ট রেকমেন্ড করবেন।
এখন সেই আহত চেহারার উপর যদি আপনি ডাক্তারের রেকোমেন্ডেড প্রোডাক্ট আর মেকআপ দুটোই প্রয়োগ করতে যান, নিশ্চিত বিপদ ডেকে আনবেন। ক্যান্সারের ঝুঁকিও হতে পারে। কাজেই ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে মেকআপ থেকে দূরে থাকাই ভাল।
যন্ত্রণাদায়ক ব্রণ বা স্কিন ট্রিটমেন্ট ছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মেকআপ থেকে দূরে থাকা উচিত।
রাতে ঘুমের সময়টাতে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে পুরো শরীর বিশ্রামে থাকে, সেই সাথে স্কিনও। এই বিশ্রামের সময়টায় কোনমতেই মেকআপ করবেন না। ত্বককে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয়ার জন্য চেষ্টা করবেন কেমিক্যালবিহীন ঘুম দিতে। অনেকে আবার নাইট কেয়ার ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ কারণ না থাকলে নাইট ক্রিমের ব্যবহারও পারলে বন্ধ করে দিন।
জিমে এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করার সময় ঘাম ঝরে, তেল নিঃসরণ হয়। নিঃসরিত এই বর্জ্যের সাথে প্রসাধনী সামগ্রী মিশে গেলে কি অবস্থাটা হবে শুধু ভাবুন একবার। তেল বা ঘামের সাথে কেমিক্যাল মিশে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবে, ছোট ছোট গুটি বা ব্রণ তৈরি হবে ত্বকে, ত্বকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। সুতরাং শরীরচর্চা করার সময় বা আগে প্রসাধনী এড়িয়ে যাবেন সবসময়।
পানিতে নামলে স্বাভাবিকভাবেই মেকআপ ধুয়ে যায়। নদী বা পুকুরের পানিতে মেকআপ করা ত্বক নিয়ে নামলে কোন ঝুঁকি নেই। কিন্তু সুইমিং পুলের পানিতে মেকআপ মুখে নিয়ে নামলে ঝুঁকি আছে। কারণ পুলের পানিতে থাকা ক্লোরিন মেকআপ করা এবং মেকআপবিহীন চেহারার জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর।
এমনিতে সাধারণ ত্বক ক্লোরিনের সংস্পর্শে আসলে চুলকানি হয়, জ্বালা করে, র্যাশও উঠতে পারে৷ আর মেকআপের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়া হলে পরিমাণ আরো ভয়াবহ হয়। কাজেই সুইমিং পুলে নামার আগে কখনোই মেকআপ করবেন না।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতের জন্য উপযোগী প্রসাধনী বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু কথা হচ্ছে, সবসময় কি সেগুলো ব্যবহার করতেই হবে? অতিরিক্ত গরম বা শীতের সময় শরীর বাইরের তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য রীতিমত যুদ্ধ করে৷ তার উপর প্রসাধনী ব্যবহার মানেই বাড়তি আরেকটি চাপ। এসময় যদি আপনি মেকআপ করাটা একটু কমান তাহলে ভাল হয়। আরো ভাল হয় যদি আপনি এই সময়গুলোতে বাইরে যাওয়া কমিয়ে দেন। তাহলে মেকআপ করা নিয়েও চিন্তা করা লাগলো না, ত্বকের উপর চাপও পড়লো না।
নিয়মিত প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। ত্বকের অক্সিজেন সরবরাহ অটুট থাকলে ত্বক তার যৌবন ধরে রাখবে বহুদিন। তাই স্কিনের সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুইদিন সমস্ত প্রসাধনীকে না বলুন এবং প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ারের দিকে মনোযোগ দিন।
মেকআপ করলে চেহারা সুন্দর দেখায় ঠিকই কিন্তু মেকআপকেই সৌন্দর্যের মূল উৎস ধরলে ভুল করবেন। সুন্দর করে মেকআপ করাটা একটা আর্ট বটে, তবে অতিরিক্ত সাজগোজ কখনোই ভাল নয়। আপনাকে আপনার স্কিনের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন না করলে মেকআপই আপনার চেহারার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে মেকআপ করুন। সপ্তাহে নিয়মিত প্রাকৃতিকভাবে স্কিনের যত্ন নিন। আর ত্বকের যেকোন সমস্যায় বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না যেন। ভাল লাগলে লেখাটি শেয়ার করুন, ধন্যবাদ।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…