এই ৬টি বিউটি টিপস স্কিনের সম্পূর্ণ যত্ন নিতে ট্রাই করুন
আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় এবং সেনসেটিভ অংশ হচ্ছে স্কিন বা ত্বক। বাইরের ধুলোবালি, সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি ও আরো নানান সমস্যা থেকে ক্ষতির হাত থেকে আমাদের দূরে রাখে স্কিন। তাই স্কিনের যত্ন নেওয়াটা খুবই জরুরি।
স্কিনের যত্ন নিতে অনেকেই অনেক কিছু সাজেস্ট করেন। এই ক্রিম, সেই ট্রিটমেন্ট করিয়ে টাকা নষ্ট করেন। নানান রকম স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলেন। আদতে পয়সা গেলেও ঠিকমত স্কিনের যত্ন নেওয়াটা আর হয়ে ওঠে না। অথচ সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই আপনি স্কিনের সম্পূর্ণ যত্ন নিতে পারেন।
এমন কিছু বিউটি টিপস যা নিশ্চিত করবে স্কিনের যত্নঃ
১. স্ক্রাবিং খুবই জরুরিঃ
আমাদের স্কিনে জমে থাকা ময়লা এবং মরা চামড়া পরিষ্কার করার জন্য স্ক্রাবিং খুবই জরুরি। চামড়ার ট্যান দূর করে স্কিনের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে এবং স্কিনকে এক্সোফোলিয়েট করতে নিয়মিত বিরতিতে স্ক্রাবিং করা উচিত। এতে করে স্কিনে পোরসের উপস্থিতি এবং অয়েলি ভাবটাও অনেক কমে আসবে। এমন নয় যে শুধু ফেসেই স্ক্রাব করা উচিত। ফেসের পাশাপাশি হাত, পা, ঘাড়, গলায়ও স্ক্রাব করা উচিত।
ঘরে বসেই স্ক্রাবিং করার জন্য আপনি বেছে নিতে পারেন চালের গুড়া কিংবা চিনি। দুটোই প্রাকৃতিক স্ক্রাবার। এছাড়াও কফি কিংবা বেকিং সোডাও স্ক্রাবার হিসেবে বেশ ভালো। স্ক্রাবিংয়ের সময় এসব উপাদানের সাথে যে কোনো ফলের রস মিশিয়ে নিন, এটি আপনার স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে ড্রাই স্কিনে চালের গুড়া দিয়ে স্ক্রাব না করাই উত্তম।
কখনোই খুব জোরে ঘষে এবং চোখের চারপাশে স্ক্রাবিং করবেন না। আলতো হাতে স্ক্রাবিং করুন। ব্রণ থাকলে খুব সাবধানে স্ক্রাবিং করুন। স্ক্রাবিং যত কম সময় করা যায় ততই স্কিনের জন্য ভালো। মাসে দুই থেকে তিনবারের বেশি স্কিনে স্ক্রাব ইউজ করবেন না।
২. নিয়মিত উপটান ব্যবহার করা জরুরিঃ
স্কিনের রোদে পোড়া ভাব, ব্রণের দাগ, মেছতার দাগ, বয়সের ছাপ, রিঙ্কেলস, চোখের আশেপাশের ডার্ক সার্কেলস, হাঁটু ও কনুইয়ের মরা চামড়া ও দাগ দূর করতে নিয়মিত উপটান ব্যবহার করা জরুরি। এটি স্কিনের রুক্ষতা, শুষ্কতা, নির্জীবতা দূর করে স্কিনকে করে তোলে আরো মসৃণ, কোমল ও লাবণ্যময়। ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই তৈরি করতে পারবেন উপটান।
পরিমানমত বেসন ও হলুদ গুড়া একসাথে মিশিয়ে নিন। এর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে পাতলা পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে, হাতে, পায়ে, ঘাড়, গলায় লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে এই পেস্টটি একদিন পরপর ব্যবহার করুন। যেহেতু এই উপটানের সবকটি উপাদানই প্রাকৃতিক, তাই নেই কোনো রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার ভয়।
৩. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনঃ
ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। স্কিন ভালো রাখতে ময়েশ্চারাইজার ইউজ করা খুবই জরুরি। বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে স্কিনের যে কোনো রকম ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ময়েশ্চারাইজার। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ইউজ করা চাই। সাধারণত আধা ভেজা স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ইউজ করা উচিত।
স্নান বা গোসলের সময় আমাদের স্কিন আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। তাই গোসলের পরপরই আধাভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ইউজ করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সেই সাথে রাতে ঘুমানোর আগেও ময়েশ্চারাইজার ইউজ করতে হবে। এতে দীর্ঘক্ষণ স্কিনে থেকে ময়েশ্চারাইজার স্কিনকে সারিয়ে তোলার সুযোগ পায়।
৪. স্কিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুনঃ
বাইরে যাবার আগে এবং রান্নাঘরে চুলার তাপে কাজ করার আগে স্কিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিনে থাকা উপাদান সমূহ আপনার স্কিনকে সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি, বাইরের ধুলো-ময়লা ও চুলার আগুনের তাপ থেকে রক্ষা করবে। স্কিনকে ব্লেমিশেজ, ফাইন লাইনস, বলিরেখা ও মেছতা থেকে বাচাতেও সানস্ক্রিনের ভূমিকা রয়েছে।
এটি স্কিন ক্যান্সার থেকে ত্বককে প্রোটেক্ট করে। হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করে। সাধারণত বাইরে যাবার দশ মিনিট আগেই সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেয়া ভালো। মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন স্কিনের জন্য বিশেষ উপকারী। ট্যানিং ও সানবার্ন থেকে রক্ষা পেতে সানস্ক্রিন ব্যবহারের বিকল্প নেই। তাই শরীরের খোলা অংশে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৫. ডাবল ক্লিনজিং করুনঃ
সব সময় স্কিন পরিষ্কার রাখুন। বাইরে থেকে এসে প্রয়োজন বোধে ডাবল ক্লিনজিং করুন। আমরা নিয়মিত যেসব সানস্ক্রিন বা মেকআপ ইউজ করি সেসবের কিছু কিছু আছে যা স্বাভাবিক পানি কিংবা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেললেই উঠে যায় না। বরং ত্বকে লেগে থেকে অয়লিনেস বাড়িয়ে দেয়। স্কিন থেকে এসব দূর করতে দরকার ডাবল ক্লিনজিং।
এতে করে স্কিনে থাকা ধুলো-ময়লা, অতিরিক্ত অয়েল এবং মেকআপ উঠে যাবে খুব সহজেই। নিয়মিত ডাবল ক্লিনজিং করলে স্কিনে ব্রণের আগমন কমে আসবে, স্কিনের পোরসগুলো বন্ধ হবে না এবং ফ্রেশ দেখাবে। দিনে অন্তত একবার ডাবল ক্লিনজিং করা অবশ্যই জরুরি। ফেসের পাশাপাশি হাত, পা, ঘাড়, গলাতেও ডাবল ক্লিনজিং করা উচিত।
৬. খাদ্যাভাস ঠিক করুনঃ
তেলে ভাজা, ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকসসহ ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করুন। প্রচুর পানি পান করুন। দিনে কম করে হলেও দুই লিটার পানি অবশ্যই পান করুন। পানি আপনার স্কিনকে আর্দ্র রাখবে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
এতে করে স্কিন দীপ্তিময় হয়ে উঠবে। সেই সাথে প্রতিদিন অন্তত আট ঘন্টা ঘুমিয়ে নেবার চেষ্টা করুন। এতে করে স্কিনে ক্লান্তির ভাব থাকবে না। শরীরে ক্লান্তি থাকলে স্কিনও বুড়িয়ে যায় দ্রুতই। তাই অবশ্যই এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন।