দাঁড়ান, হেডলাইনটা পড়েই ভুরু কুঁচকে পরের আর্টিকেলে চলে যাবেন না। ভাবতেই পারেন এ আবার কিসব বোগাস কথা! জানি, সেলফি তোলা নিয়ে আমাদের হিড়িকের শেষ নেই। নানান পোজে সেলফি তুলে ফেসবুকে হিরো হতে তো সবাই চায়। আজকাল তো আবার ফোনও বেরিয়ে গেছে সেলফি-এক্সপার্ট। কিন্তু, এতকিছুর মধ্যে একবার ভাবুন তো, কেন ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন সেলফি তোলাকে মানসিক রোগের সঙ্গে তুলনা করেছেন! ভাবুন কেন ভারতে সেলফির জন্য মৃত্যুর হার সবথেকে বেশি! না, আপনাদের ভয় পাওয়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। শুধু আপনাদের সচেতন করতেই আজ কিছু ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
দিল্লির ‘ইন্দ্রপ্রস্থ ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন’ ও ‘কারনেগি মেলন ইউনিভার্সিটি’র এক স্টাডি, নাম ‘মি, মাইসেলফ অ্যান্ড মাই কিলফিঃ ক্যারেক্টারাইজিং অ্যান্ড প্রিভেন্টিং সেলফি ডেথ’ বলছে মার্চ ২০১৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ভারতে সবচেয়ে বেশি সেলফি’র জন্য মৃত্যু হয়। আর, বিশ্বের ১২৭ জন যদি সেলফির কারণে মারা যান, তাহলে তার মধ্যে ৭৬ জনই ভারতের। ভাবুন খালি! খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, এই এক বছর আগেরই।
২০১৬ সালের জুন মাসে কানপুরে বৃষ্টির মধ্যে গঙ্গার ধারে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা যান প্রায় সাত জন। জুলাইতে এক তরুণী অ্যাথলেট জলে পড়ে মারা যান, নাম পূজা কুমারী। এক পুকুরের ধারে সেলফি তুলতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যান ও সাঁতার না জানার জন্য তলিয়ে যান। আরেকজন কুস্তিগিরও সেলফি তুলতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যান। মুম্বাইতে আরব সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে ভেসে যান তিনজন, তাদের বাঁচাতে গিয়ে আবার একজন যুবক।
এবারে আসি এই বছরের ঘটনায়। ১৪ জানুয়ারী দিল্লির পূর্ব রেললাইনে ট্রেন লাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে যান একদল কিশোর। তাদের মধ্যে দু’জন তাড়াতাড়ি সেলফি তুলে ফিরে আসতে পারেনি। ট্রেন চলে এসেছিল। তারা সরে আরেকটি লাইনে গেলে উল্টোদিক থেকেও ট্রেন চলে আসে। ফলে দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে মারা যায় তারা।
মার্চ মাসের পাঞ্জাবের ঘটনা তো আরও মারাত্মক। পাঠানকোটে পনেরো বছরের এক ছেলে তার বাবার গুলিভরা বন্দুক কপালে তাক করে সেলফি তুলতে যায়। মোবাইলে ক্লিক না করে ভুল করে ট্রিগার চিপে দেয়, ফল অবধারিত মৃত্যু। জুলাই মাসে আবার সমুদ্রের ধারে ঘটল সেলফির জন্য মৃত্যুর ঘটনা। পৃথী পিসে একটা বড় ঢেউকে ব্যাকগ্রাউন্ডে নিয়ে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, বড় ঢেউ আসার পর তাকে আর ছবি তুলতে হল না, ভাসিয়ে নিয়ে গেল ঢেউ তাকে।
তবে সবচেয়ে অমানবিক ঘটনাটি ঘটে বেঙ্গালুরুতে ২৫ সেপ্টেম্বর। সেখানে একদল কিশোর যায় কলেজ সূত্রে আউটিং-এ। কর্নাটকের রামানাগরা জেলার কনকপুরার রামাগগোন্ডলু বেট্টাতে এক পুকুরে সবাই স্নান করতে নামে। তখনই বিশ্বাস জি নামে তাদেরই এক বন্ধু ডুবে যেতে থাকলেও তাদের কোনো হুঁশ ছিল না ও তারা মত্ত ছিল সেলফি তোলায়। ছেলেটি মারা যায় শেষ পর্যন্ত।
এই বছরেরই অগষ্ট মাসের ঘটনা। খড়গপুর আইআইটি’র নৌবিদ্যা ও সমুদ্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়দীপ ভট্টাচার্য ছেলেকে নিয়ে সেলফি তুলে যান আর খাদানে পা পিছলে পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয়। ছুটির দিনে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি একটু গ্রামীন এলাকায় যান, গন্তব্য ঘোলঘেরিয়া। সেখানেই আশেপাশে অনেক মোরাম আর পাথরের খাদান আছে। বর্ষায় জলে টইটুম্বুর হয়ে ছিল সেগুলো। সেখানেই দুই বছরের মেয়ে শিরিন আর চার বছরের ছেলে উড়ানকে নিয়ে সেলফি তুলতে যান তিনি। পা পিছলে খাদানে পড়ে যান তারপর ছেলেকে নিয়ে। ছেলেকে বাঁচানো গেলেও হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
এই বছরে ১৩ এপ্রিল আবার এই রাজ্য দেখল সেলফির বলি। ঘটনা হাওড়ার লিলুয়ার। হাওড়া-ব্যান্ডেল লোকালে করে বেলুড়ের দিকে যাচ্ছিল পাঁচ বন্ধু। আসলে তারা ফিরছিল তারকেশ্বর থেকে। এই সময় মত্ত অবস্থায় থাকায় তারা চলন্ত ট্রেনের গেটে ঝুলে সেলফি তুলতে যায়। ট্রেন লিলুয়া স্টেশন ছাড়লে একজনের হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়। তখন সে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফোন খুঁজতে ও তাকে বাঁচাতে অন্যান্য বন্ধুরা দৌড়াতে থাকে। তখন হাওড়া-গোঘাট লাইনের ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় আরও তিনজনের।
আপনার পরিবারের কাছে আপনি সত্যিই হিরো। তারা আপনার মুখ চেয়েই আছে। তাদের সময় দিন আগে বেশি করে। ফেসবুকে গুচ্ছের লাইক পেয়ে কি লাভ যদি শেষ অবধি মানুষটাই না থাকে। তাই বলছি, সেলফি তুলুন, কিন্তু সাবধানে, মত্ত না হয়ে। আর এমনিতেও মুম্বই পুলিশ, কর্ণাটক পুলিশ অনেক জায়গাকে ‘নো সেলফি জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার সব রাজ্যকে ও ‘আরকিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’কে সারা ভারত জুড়ে প্রতি রাজ্যের এই স্থানগুলি চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেন। আমরা কি পারি না আরেকটু সচেতন হয়ে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে ও মৃত্যুর হিসাবে নয়, সুন্দর ও নান্দনিক সেলফির জন্মদাতা হিসাবে ভারতকে তুলে ধরতে! উত্তর আছে আপনাদেরই হাতে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…