ভাবছেন নাকি, এ আবার কি মহা ফ্যাসাদে পড়লাম রে বাবা! সাত সাতটা জিনিস যা আপনার জীবনে যদি আসে কখনও, তাহলে ফেলতেও পারবেন না, ওগরাতেও পারবেন না! জাস্ট কথাটি না বলে খপাৎ করে গিলে নিতে হবে? না জানি সে কেমন ঘোরতর ভয়াবহ জিনিস! এও আবার হয় নাকি? হয় হয়। এ আজব দুনিয়ায় সবই হয়। থাক বাবা। আর বেশী ভ্যানতাড়া করব না। শেষে কৌতূহলে আপনার পেটের ভেতর গুড়গুড় করতে থাকবে। তাই এবার শুনেই নিন সেই আজব সাতটি জিনিসের নাম।
আজ্ঞে হ্যাঁ। ‘মনু স্মৃতি’। হিন্দুরা কিন্তু এই ‘মনু স্মৃতি’কে দিব্যি মান্য টান্য করেন। ‘মনু স্মৃতি’ যে সে জিনিস নয়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দুধর্মের যাবতীয় আচারবিধির দায়িত্ব তার ওপরই। তা এহেন ‘মনু স্মৃতি’রই একটি শ্লোকে আছে নাকি সে কথা। ‘স্ত্রীয় রত্নায়াথো বিদ্যা ধর্ম শৌচম সুভাষিতম বিবিধানি চ শিল্পানি সমাদেয়ানি সর্বথ’। অর্থাৎ আপনার জীবনের কোনো পর্যায়ে যদি কোনোভাবে, হতে পারে অচেনা কোনো লোকের কাছ থেকে, বা অন্য কোনো উপায়ে যদি সোনাদানা, জ্ঞান, ধর্ম, পবিত্রতা বা শুচিতা, উপদেশ, কোনো শিল্পদ্রব্য আর নারী পান, তাহলে তা ফেলে দেবেন না। যেন তেন প্রকারেণ নিয়েই ছাড়বেন।
এটা অবশ্য শুধু মনুর যুগের লোকজনই মানতেন না। এখনও এই কথাটি এক্কেবারে খাঁটি সত্য কথা। মনুর যুগে না-হয় রাজা-রাজড়া বা দেব-দেবীর আশীর্বাদে স্বর্গ থেকে ধনরত্ন বর্ষিত হতো। সে ছিল সত্যযুগ বা ত্রেতাযুগ। এখন ঘোর কলি। সে রাজাও নেই যার হাত দিয়ে মুঠো মুঠো মোহর গলবে, আর সেই দেব-দেবীতে আমার-আপনার ভক্তিও নেই। এখন টাকা আছে। টাকা উপায়ের হাজারো উপায়ও আছে। কেউ ঘুষ-টুশ দিচ্ছে নাকি? আরে ভাই। লজ্জা কীসের? মনু বলেছেন, নিয়েই ফেলুন না। শুধু চোখ-কান খোলা রাখবেন। আর টাকা তো টাকাই। সে সাদাই হোক। আর কালো!
হুম। এটা একটু সিরিয়াস জিনিস বটে। জ্ঞান। ছোটবেলায় পড়েছিলেন তো ‘জ্ঞানই পরম সত্য’ মার্কা বাণী? ইতিহাস বইতে পড়েও তো ছেন, যে জ্ঞানের জন্য সক্রেটিস, গ্যালিলিও কিই না করেছিলেন! নানা, বালাই ষাট। আপনাকে আমরা অদ্দুর যেতে বলছি না। আপনি জ্ঞানের জন্য প্রাণ বিসর্জন করলে কলিকালের আর বাকি রইলো টা কি? তবে হ্যাঁ। একটা কথা বলব, ছোট্ট পরামর্শ। জানেনই তো পুরনো চাল ভাতে বাড়ার মতো জ্ঞানও রাখলে বাড়ে। আর জ্ঞানের কোনো শেষও নেই। যে যাই করে ফেলুক না কেন, আপনার জ্ঞান কিন্তু আপনারই থাকবে। তাই গোটা জীবনটা পড়ে আছে। বিনা টেনশনে জ্ঞানলাভ করতে থাকুন। ভগবান আপনার মঙ্গল করবেন।
এই ধর্ম মানে মনু অবশ্য রিলিজিয়ন বলেন নি। তাঁর কাছে এই ধর্ম মানে ছিল মানুষের ভেতরকার ধর্ম। যাকে খাঁটি বাংলায় বলে মানবধর্ম বা মানুষ হয়ে ওঠার ধর্ম। তা যেখানেই পারবেন না কেন, এই জিনিসটি ছাড়বেন না। যথার্থ মানুষ হবার ধর্মকে অবিশ্যি ছাড়াও যায় না। আর স্বয়ং গান্ধারীই যখন অতো বড় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ছেলেকে বাদ দিয়ে ধর্মের পক্ষে ছিলেন, তখন আপনি তো কোন ছাড়!
পবিত্রতা বিষয়টাও একটু গুরুগম্ভীর জিনিস। এই পবিত্রতাও বাইরে থেকে আসে না। এ পবিত্রতাও মানুষের ভেতরকার ব্যাপার। দেখবেন এক একজনকে দেখলেই কেমন পবিত্র-শান্ত-শুদ্ধ ভাব জাগে না মনে? এ হচ্ছে তাই। তো এই পবিত্র পবিত্র ভাবটি ছাড়বেন না। ধরে রাখুন। অভ্যেস করুন ‘পবিত্র পবিত্র’ থাকার। দেখবেন কেমন একটা ‘সেন্ট লাইক’ ফিলিংস হচ্ছে!
ফ্রিয়ের বলে একে আবার অন্য জিনিসের মতো হেলাফেলা করবেন না। এ যে সে ফ্রি নয়। এ হল খাস উপদেশ। টাটকা তাজা, এক্কেবারে হাতে গরম। অন্য লোকের থেকে পেলে নিয়েই দেখুন না। এর মতো পরম সম্পদ আর হয় নাকি? কে জানে, জমাতে জমাতে আপনিও হয়তো একদিন উপদেশের আস্ত একটা বোঝা বানিয়ে ফেললেন!
ভালো ভালো দামী জিনিস দিয়ে নিজের ঘর সাজানোর তাল করছেন নাকি? এই তো সুযোগ। উপহার দিন। উপহার নিনও। আর সেই তালিকায় যদি ঘর সাজানোর ভালোমন্দ শিল্পদ্রব্য থাকে? ব্যাস। লুফে নেবেন জাস্ট। আর যাই হোক, মনুর কথায় আপনার ভালো ভালো শিল্পদ্রব্যের অমন শখটি পূর্ণ হয়ে গেল—একি কম কথা?
কি, শেষ ওভারে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলেন তো মনুর ট্যালেন্ট দেখে? আজ্ঞে আপনি ভুল শোনেননি। উনি কিন্তু নারীর কথাই বলেছেন। শুনুন কথা। যেখানে, যেভাবে, যে অবস্থাতেই মেয়ে পাবেন না কেন, সোজা নাকি তুলে নেবেন। তা মনুর দোষ নেই। সেকালে সের’মই ব্যাপার ছিল কিনা! আর মেয়েদের কবেই বা কে পাত্তা দিয়েছে! ভাবলে অবাক হবেন মনুর যুগে মেয়েদের নেহাতই বস্তু বলে ভাবা হতো! রাজ্য, সোনাদানা জয় করার পাশাপাশি সেকালে রাজারা মেয়েদেরও জয় করতেন! নয়তো কি আর মনু তাঁর এই পাওয়ার তালিকায় মেয়েদের রাখতেন? সে যাইহোক, আপনি কিন্তু আবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে মেয়ে দেখলেই তুলে নেবেন না। এতে আপনারই বিপদ। হাজার হোক। এটা তো কলিকাল!
তাহলে মনুর অবাক লিস্টের ব্যাপার-স্যাপার দেখে কেমন লাগলো? আপডেটেড বলতে হবে কিন্তু মনুমশাইকে। কেমন দিব্য মাথা খাটিয়ে বের করেছেন! দেরী না করে আপনি দেখুন তো কোনটায় কোনটায় টিক মার্ক দেবেন? আর জানান ‘দাশবাস’কে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…
View Comments
সাতটি জিনিস কি?
যে লেখায় আপনি কমেন্ট করেছেন ওতে বলা আছে।