ধর্ম ও সংস্কৃতি

রানী পদ্মাবতীর জহরব্রত কি কাল্পনিক গল্পকথা না কি ঐতিহাসিক ভাবে সত্য ঘটনা

বাংলা সাহিত্যে ‘পদ্মাবতী’ কাব্য মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। এটি মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি আলাওলের রচিত। ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের অনুবাদ কাব্য হল পদ্মাবতী। মূল গ্রন্থ ‘পদুমাবৎ’ এর লেখক হলেন মালিক মুহম্মদ জায়সী। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে জায়সী ‘পদুমাবৎ’ কাব্য রচনা করেন। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১০০ বছর পর আরাকান রাজ্যের বৌদ্ধ রাজা অমাত্য মাগন ঠাকুরের নির্দেশে কবি আলাওল জায়সীর  ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের অনুবাদ করেন। রাজপুত রাজা রতন সিং ও রানী পদ্মাবতীর কাহিনীকে সুন্দর ভাবে অপূর্ব এক প্রেমকাহিনীর মোড়কে উভয় কবিগণ কাব্যের রূপ দিয়েছেন।

 

 

 

 

 

 

 

রানী পদ্মাবতীর কাহিনী সত্যি না কাল্পনিক তা নিয়ে নানান মতামত রয়েছে। বলা হয় রানী নিজের আত্মসন্মান রক্ষার জন্য জহরব্রত করেছিলেন। যেখানে অগ্নিকুণ্ডে আত্মহুতি দিয়েছিলেন। ইতিহাসে স্পষ্ট করে কোথাও রানী পদ্মাবতীর জহরব্রতর কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু এই ঘটনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যায় না। জহরব্রতর ঘটনা সত্যি না কাল্পনিক তা দেখার আগে আমরা জেনেনি কে এই রানী পদ্মাবতী?

চিতরের রাজা রতন সিংহের রানী ছিলেন পদ্মাবতী। সিংহলের রাজকুমারী পদ্মাবতী বিয়ের পর চিতরের রানী হন। নাম বদলে হয় পদ্মিনী। এই পদ্মাবতী  ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে রাজা রতন সিংহ  প্রথমা স্ত্রী নাগমতির অমত মান্য না করে পদ্মাবতীকে বিবাহ করে রানী বানিয়ে চিতরে নিয়ে আসেন।

রাজা রতন সিংহ সংস্কৃতি মনস্ক ছিলেন। তার রাজসভায় গুণী মানুষদের স্বসন্মানে বিভিন্ন পদে রাখা হত। তেমনি একজন ছিলেন রাঘব চেতন। তিনি ছিলেন সভার বংশীবাদক। তার নামে  বহু  অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল যার সত্যতা প্রমাণিত হয়। ফলে রাঘব চেতন রাজা রতন সিংহ দ্বারা রাজসভা থেকে বহিষ্কৃত হন। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রাঘব চেতন দিল্লীর বাদশা আলাউদ্দীন খিলজির কাছে গিয়ে নানান ছল করেন। বাদশাকে রানী পদ্মাবতীর রূপবর্ণনা শুনিয়ে মুগ্ধ করেন। বাদশা এতটাই মুগ্ধ হয়ে যান যে রানীকে পাওয়ার আশায় চিতরের উদ্দেশ্যে রহনা দেন।

 

 

 

 

 

 

 

রানীকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ঘটার পর অবশেষে বাদশা রানীকে পাওয়ার তীব্র বাসনা নিয়ে চিতর আক্রমণ করেন। রাজা রতন সিংহকে হত্যা করেন। কিন্তু রানী পদ্মাবতী নিজের আত্মসন্মান রক্ষা করেন  নিজেকে অগ্নিকুণ্ডে আত্মহুতি দিয়ে। রাজপুত নারীদের কাছে এই আত্মহুতি জহরব্রত নামে পরিচিত। রাজপুত রমণীরা নিজের সন্মান রক্ষা করতে আত্মহননে ভয় পান না।

 

 

 

 

 

 

 

ইতিহাসে আলাউদ্দীন খিলজির চিতর আক্রমণের কাহিনী থাকলেও রানী পদ্মাবতীর কোন উল্লেখ নেই। সেইসময়কার ইতিহাস রচয়িতাদের কোন গ্রন্থে পদ্মাবতীর বা তার জহরব্রতর কোন কথা লেখা নেই। খিলজির আক্রমণের কথা থাকলেও তা কেন? কি কারণে আক্রমণ হয়েছিল স্পষ্ট ভাবে বলা নেই। তবে সব সময় সব ঘটনা ইতিহাসের পাতায় নেই মানে যে তা একেবারে অসত্য তা বলা যায় না। পদ্মাবতীর কাহিনীর সত্যতা বিচার আজ প্রায় অসম্ভব। তবে জায়সী বা আলাওলের লেখা পরলে মনে হয় কোথাও কাব্যের মধ্যে এক অজানা ইতিহাস লুকিয়ে আছে কবিতার মোড়কে।

 

Nandini Mukherjee

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago