অভিনেত্রী রাইমা সেনের স্কিন কেয়ার রুটিন ও বিউটি টিপস
চোখের বালি, মনোরমা সিক্স ফিট আন্ডার, হানিমুন ট্রাভেলস, দ্য জাপানিজ ওয়াইফ খ্যাত রাইমা সেনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলে আজও সবার চোখ কপালে উঠে যায়। কি নেই এই সুন্দরীর? নাম, যশ, খ্যাতি, রূপ, বিদ্যা সব মিলিয়ে এক অনন্য সুন্দরী রাইমা। আজও সবাই রাইমার মাঝে হারানো সুচিত্রা সেনকে ফিরে পান।
মুম্বাই ও কলকাতায় সমান দাপটে চলার পথটা কখনোই মসৃণ ছিলো না। ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে ঝরাতে হয়েছে অনেক ঘাম। কিন্তু এত পরিশ্রমের মাঝেও নিজের স্কিনকে সময় দিতে ভোলেন নি তিনি। একের পর এক সাহসী ফটোশ্যুট আর রোলে নিজের আবেদন তুলে ধরেছেন। করেছেন মিডিয়া তোলপাড়।
রাইমার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক বিধায় রূপচর্চায় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করেন তিনি। মুখে ঘনঘন খড়ি উঠার কারণে ফেসওয়াশ থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস সবেতেই চেষ্টা করেন ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার। তিনি মনে করেন, তরুণ বয়সে ত্বকের প্রতি খুব একটা খেয়াল না রাখলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের যত্ন নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্কিন কেয়ারে তার সঙ্গী হয় অ্যালোভেরা জেল আর গোলাপ জলের মিশ্রণ। এছাড়া একদিন পর একদিন জেসমিনের নির্যাস সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেন। তারপর ত্বকের ধরণ বুঝে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন। আর সপ্তাহে একদিন বেসন আর হলুদের ফেসপ্যাক অথবা অ্যালোভেরা-নারিকেল তেলের ফেসমাস্ক বা মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ব্যহার করেন।
মেকআপ তোলার জন্য রাইমা ব্যবহার করেন বেবি অয়েল বা মেকআপ ওয়াইপস। ২০ দিন পরপর একবার প্রফেশনাল ডিপ-ক্লিন ফেসিয়াল করেন। তিনি মনে করেন, ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করার জন্য ভালো মানের ক্লিনজিং মিল্ক আর টোনারের কোন বিকল্প নেই।
ওয়াইপ দিয়ে মেকআপ তোলার পরে টোনার এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। ফেসওয়াশ একদিন পর একদিন ব্যবহার করলেও টোনার-ময়েশ্চারাইজার প্রতিদিন লাগে। কারণ ওয়াইপ ব্যবহারের পরেও বাড়তি মেকআপটুকু তোলার কাজটা টোনার করে থাকে। আর ময়েশ্চারাইজার শুষ্ক ত্বককে আর্দ্র করার জন্য।
যখন কলকাতার বাইরে কাজের জন্য যান, তখন প্রতি সপ্তাহে একবার মুখে অয়েল মাসাজ করেন তিনি। রূপচর্চায় কোন প্রোডাক্টটি বেশি ব্যবহার করেন – এমন প্রশ্নের জবাবে রাইমা জানালেন বেশ মজার একটি তথ্য। তার ড্রাই স্কিনের জন্য বোরোলিনের চাইতে ভালো ময়েশ্চারাইজার আর পাননি।
মেকআপ প্রোডাক্টের মধ্যে কিয়েল’স-এর টোনার আর ময়েশ্চারাইজার তার বেশি পছন্দের। স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরেকটু মোহনীয় দেখানোর জন্য সবসময় ময়েশ্চারাইজার আর কাজলকে বেছে নেন রাইমা। আর সুগন্ধির মধ্যে পছন্দ শ্যানেলের ৫ নম্বর পারফিউম, এর ক্লাসিক এবং অরিজিনাল সুবাসের জন্য।
কাজল আর লিপবাম এই দুটো জিনিস সবসময় তার ব্যাগে থাকে। তিনি মনে করেন ঠোঁট আর চোখ সুন্দর রাখার জন্য এগুলো বেশ কাজে দেয়। রেড অথবা ন্যুড শেডের লিপস্টিক তার বরাবরই পছন্দ।
কি কি খাবারে নিঁখুত বিউটি পান রাইমা?
শুধু স্কিন কেয়ার বা মেকআপ না, সুন্দর মুখশ্রী অটুট রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার আর শরীরচর্চার দিকেও সমান জোড় দেন রাইমা সেন। চল্লিশের ঘরে বয়স হলেও ডায়েট আর ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে এখনো হাজার পুরুষের ঘুম কাড়তে সক্ষম এই বং বিউটি।
রাইমার স্টানিং লুকের পিছনে মূল রহস্য হচ্ছে যোগব্যায়াম। প্রতিদিন সকালে যোগব্যায়ামের ফলে যেমন তার শরীর তরতাজা থাকে, সারাদিনের জন্য এনার্জি পান, এবং ত্বক থাকে চিরযৌবনা। এছাড়াও মেডিটেশনের দিকেও সমান জোর দেন রাইমা। তার মতে, মনকে শান্ত রাখতে মেডিটেশন জরুরি।
খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে রাইমা যথেষ্ট সচেতন, কখনো তার ডায়েটের নড়চড় হয় না। সপ্তাহে যদি দুইদিন নিয়মমাফিক ডায়েট ভেঙে ভিন্ন কিছু খান, তাও কেবল নামেমাত্র। সাধারণ যা খাবার তাই খান তিনি, আলাদা করে স্পেশাল ডায়েট বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া তার পছন্দ না।
এমনিতেই বাড়ির খাবারই খাওয়া হয়, তবে সন্ধ্যা সাতটার পরে আর কিছু খান না তিনি। মজার ব্যাপার হলো, বংশগতভাবেই রাইমা ভোজনরসিক। খাওয়া শুরু করলে সহজে থামতে পারেননা। দুইবেলা ভাত তো বেশ আগ্রহের সাথেই খান।
• একটি সাক্ষাৎকারে রাইমা সেন জানান যে খাওয়া বেশি হয়ে গেলে সেটা শরীরচর্চার মাধ্যমে ব্যালেন্স করে ফেলেন। কিন্তু যখন বেশি খাওয়ার সুযোগ থাকেনা, তখন হেলদি লাইফস্টাইলে চলার চেষ্টা করেন।
ক্লিনজিং-টোনিং-ময়েশ্চারাইচিংয়ের সাথে সাথে তার সকালটা শুরু হয় শরীরকে ডিটক্সিফাই করার মধ্য দিয়ে। এর জন্য কখনো জোয়ান-ভেজানো পানি, কখনোবা অাপেল সিডার ভিনেগার-আমলকি-হলুদের টনিক, আবার কখনো গমের ঘাসের জুস পান করেন।
An apple a day keeps the doctor away – কথাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন রাইমা সেন। প্রতিদিন একটা আপেল খেতে ভুল হয়না কখনো। এছাড়াও প্রচুর রুই মাছ, ব্রোকলি, পালং শাক খান তিনি। এগুলো খেলে তার স্কিন সবসময় হাইড্রেটেড থাকে এবং শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পান বলে জানান তিনি।
রাইমা সেনের সৌন্দর্যের আরেকটি রহস্য হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান। প্রতিদিন ৪ লিটার পানি পানের মাধ্যমে শরীর ও ত্বককে হাইড্রেটেড রাখেন তিনি। পর্যাপ্ত পানি এবং রাতে মেকআপ মোছার পরে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার – এই দুটি কাজ যে কোন ধরণের ত্বকের জন্য উপযোগী টিপস।
সৌন্দর্যের আরো টুকিটাকি রাইমা বিশ্বাস করেন, মানুষ যা খায় তা-ই তাদের চেহারায় ধরা পড়ে। পুষ্টিকর খাবারে ত্বক ভেতর ও বাহির থেকে সমানভাবে সুন্দর দেখায়৷ আর জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে চেহারা নিষ্প্রাণ দেখায়। তখন অনেক মেকআপের দরকার হয়।
তাই তিনি নিজের স্বাস্থ্য ও ত্বক ফিট রাখার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করেন। চেষ্টা করেন ন্যাচারালি নিজেকে সুন্দর রাখতে, যাতে তাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেকআপের দ্বারস্থ না হতে হয়। সৌন্দর্যের প্রতিযোগীতায় থাকার চাইতে নিজের মতো করে সৌন্দর্যচর্চায় বিশ্বাসী তিনি। এতে স্বকীয়তা হারানোর ভয় থাকেনা।
পূর্বপুরুষেরা সুন্দর ও লাবণ্যময়ী ছিলেন এবং আছেন, রাইমাও এর ব্যতিক্রম নন। মেকআপ ছাড়াও এই শ্যামসুন্দরী যেন নানী সুচিত্রা সেনের প্রতিচ্ছবি। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ত্বকের জন্য কোন প্রোডাক্ট কতোটা কার্যকরী, সে সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান নেই তার। মা মুনমুন সেন তার একমাত্র ভরসা। মায়ের কাছ থেকেই প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছেন কিভাবে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বাছাই করতে হয়।
শেষ কথা
বলিউডের প্রথম টলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের মধ্যে রাইমা সেন অন্যতম। যেকোন রোলই তার কাছে চ্যালেঞ্জিং, চেষ্টা করেন নিজের বেস্টটা দিয়ে নিমার্তা এবং দর্শকের মনজয় করার। অভিনয় হোক বা ফিগার, কোনটাতেই কম্প্রোমাইজ করতে রাজি নন তিনি।
যারা শুষ্ক ত্বক নিয়ে ভুগছেন, রাইমা সেনের স্কিন কেয়ার টিপস ফলো করা শুরু করুন আজ থেকেই। তাতে করে বাজারের প্রোডাক্টের উপর বেশি নির্ভর করতে হবে না। আর ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন ন্যাচারাল বিউটি।