প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা: প্রতি মাসে নিশ্চিত ৭.৪০% পান
৬০ বছরে রিটায়ার করা মানেই অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া! পরিবারের বোঝা হয়ে এক কোণে বসে থাকা! না, সেই দিন আর নেই। এখন রিটায়ার করার পরেও আপনি আপনার নিজের সঞ্চয়ের বলেই মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন। আপনার সুদীর্ঘ চাকরি জীবনের পর নিশ্চিন্ত অবসরের আনন্দ উপভোগ করার সুবিধে করে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা।
প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা কী?
প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা বা পিএমভিভিওয়াই শুধুমাত্র বয়স্কদের জন্য তৈরি হওয়া একটি স্কিম। আপনি রিটায়ার করার পর বা ৬০ বছর হয়ে গেলে এই স্কিম আপনি চালু করতে পারেন। এখানে আপনাকে নির্দিষ্ট হারে পেনশন দেওয়া হবে। এই স্কিমে প্রতি মাসে টাকা জমা করার কোনও ব্যাপার নেই।
আপনাকে একসঙ্গে এককালীন একটি টাকা জমা করতে হবে। তার বিনিময়ে টাকার পরিমাণ অনুযায়ী আপনি পেনশন পেতে পারেন। ২০১৭ সালে এটি চালু হয়। এই স্কিম করা যাবে লাইফ ইনসিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা এলআইসি-র মাধ্যমে। ২০১৭ সালে এই স্কিম চালু করা হয় ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ ফিনান্স বা অর্থ দফতরের মাধ্যমে।
কী বলছে এই স্কিম?
প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনা প্রতি মাসে আপনাকে সুনিশ্চিত পেনশন দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে। এই স্কিম এই বছরের ৩১ মার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই স্কিমের মেয়াদ আবার ৩১ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছে।
১০ বছরের জন্য আপনাকে একটি বড় মাপের টাকা জমা করতে হবে। মানে আপনি টাকাটি জমা করবেন যে বছর, সেই বছর ধরে ১০ বছর পর্যন্ত টাকা খাটবে। প্রতি মাসে আপনি ৭.৪% আর বছরের হিসেবে ৭.৬৬% ধরে আপনি টাকা পাবেন।
আপনার টাকা জমা রাখার পরিমাণের ওপর নির্ভর করছে আপনি কত টাকা পেনশন পেতে পারেন।
পেনশন আপনি পেতে পারেন প্রতি মাসে, তিন মাস অন্তর, ছ’মাস অন্তর বা প্রতি বছর, যা আপনি নির্বাচন করবেন।
টাকার পরিমাণ দেখে নেওয়া যাক
এই স্কিমে একজন সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা জমা করতে পারেন। যদি আপনি বছরের হিসেবে টাকা চান, তাহলে আপনাকে কম করে রাখতে হবে ১,৫৬,৬৫৮ টাকা। এই ক্ষেত্রে আপনি বছরে আবেন ১২০০০ টাকা। আর সবচেয়ে বেশি আপনি জমা করতে পারেন ১৪,৪৯,০৮৬ টাকা। এই ক্ষেত্রে আপনি পাবেন বছরে ১,১১,০০০ টাকা।
আপনি যদি হাফ-ইয়ারলি বা ছয় মাস অন্তর হিসেবে টাকা পেতে চান, তাহলে আপনি কম করে রাখবেন ১,৫৯,৫৭৪ টাকা। এক্ষেত্রে আপনি পাবেন ৬০০০ টাকা। আর সবচেয়ে বেশি রাখতে পারেন ১৪,৭৬,০৬৪ টাকা। এক্ষেত্রে আপনি পাবেন ৫৫,৫০০ টাকা।
তিন মাস অন্তর টাকা পেতে চাইলে আপনি কম পক্ষে রাখবেন ১,৬১,০৭৪ টাকা। আপনি পাবেন ৩০০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি আপনি এক্ষেত্রে রাখতে পারেন ১৪,৮৯,৯৩৩ টাকা। আর আপনি পাবেন ২৭,৭৫০ টাকা।
প্রতি মাসে আপনি টাকা পেতে চাইলে রাখবেন কম পক্ষে ১,৬২,১৬২ টাকা। আপনি প্রতি মাসে পেনশন পাবেন ১০০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি টাকা জমা রাখবেন ১৫,০০,০০০ টাকা। আর আপনি মাসে মাসে পাবেন ৯২৫০ টাকা।
এই স্কিমের বিশেষ দিকগুলি এক নজরে
৬০ বছর বয়স হলেই আপনি এই স্কিম চালু করতে পারবেন। বয়সের ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই।
অনলাইন বা অফলাইন, যে কোনও ভাবেই এই স্কিম চালু করা যেতে পারে।
আধার কার্ড এক্ষেত্রে আপনার লাগবেই যদি আপনি এই স্কিমের সুবিধে পেতে চান।
২০২০-২১ আর্থিক বছরের জন্য আপনি ৭.৪০% হিসেবে টাকা পাবেন। সবচেয়ে ভালো কথা, এই হার নিশ্চিত, মানে বাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কমবে না। তবে পরের আর্থিক বছরে এই হার কী হবে সেটা আবার পরের আর্থিক বছরে ঠিক হবে। কিন্তু আপনি গড়ে ৭.৪০% পাবেনই এটা বলা যায়।
আর্থিক বছরের শেষে অর্থাৎ এপ্রিলের শুরুতে আপনি টাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এবার আপনার নির্বাচন করা সময় অনুযায়ী আপনি মাসে মাসে, বা তিন মাস অন্তর, ছয় মাস অন্তর বা বছরে টাকাটা পেতে পারেন।
এই স্কিমের টাকা জিএসটি-র আওতার বাইরে থাকবে। মানে কোনও টাকা কাটা যাবে না।
তিনটি পলিসি বছরের পর, মানে আপনি যে বছর স্কিম করছেন তা ধরে তিন বছর পর আপনি জমা রাখার মোট টাকার ৭৫% লোন হিসেবে পেতে পারেন। লোনের ইন্টারেস্টের হার নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবর্তন হতে পারে।
যদি আপনার দরকার হয় হঠাৎ, আপনি টাকা তুলেও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি যে টাকা দিয়ে স্কিম চালু করেছিলেন তার ৯৮% টাকা ফেরত পাবেন।
১০ বছর স্কিম চলার পর সাবস্ক্রাইবার সম্পূর্ণ টাকা শেষ পেনশন ইন্সটলমেন্ট সমেত পেয়ে যাবেন।
দশ বছরে স্কিম চলাকালীন সাবস্ক্রাইবার মানে যিনি চালু করেছেন এই স্কিম, তিনি মারা যান তাহলে পুরো টাকাটা, যেটা দিয়ে স্কিম চালু করা হয়েছিল, সেই টাকাটা বেনিফিসিয়ারি, বা যার নাম থাকবে সাবস্ক্রাইবার ছাড়া তিনি পাবেন।
কেন এই স্কিম করবেন?
ষাটোর্ধ মানুষদের জন্য পেনশন ফান্ড বা প্রভিডেন্ট ফান্ড তো রয়েছেই। তাহলে কেন আবার এই স্কিম? নিশ্চয়ই আপনারা এই কথা ভাবছেন। এছাড়াও ফিক্সড ডিপোজিট, মিউচুয়াল ফান্ড, পোস্ট অফিসে টাকা রাখা এই সব অপশন তো রয়েছেই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন। এই সব স্কিমের ক্ষেত্রে কিন্তু সুদের হার বাজারের ওপর নির্ভর করে।
পি.এফ-এর সুদ যে এখন কমছে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আর এফ.ডি বা অন্য ক্ষেত্রেও টাকা আপনি কম পেতে পারেন কারণ সেখানেও সুদ কম-বেশি হতে পারে। আর মিউচুয়াল ফান্ড তো বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। অর্থাৎ, এই সব স্কিমে আপনি নিশ্চিত মূল্য বা নিশ্চিত সুদের হার আশা করতে পারেন না।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বয় বন্দনা যোজনায় সুদের হার নিশ্চিত, গড়ে ৭.৪০% থাকবে ১০ বছর অবধি। আর ৭.৪০% সুদের হার কিন্তু অনেকটাই বেশি অন্য ক্ষেত্রের সুদের থেকে। তাই এই স্কিম করা বেশ লাভজনক।
এবার আর কোনও চিন্তা না করে এই স্কিম চালু করে ফেলুন। রিটায়ার করার সময়ে যে টাকা পাবেন সেটার থেকে কিছু টাকা এই স্কিমে ব্যবহার করুন। আর মাসে মাসে নিশ্চিত টাকা পেয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন।