ক্যাপসিকাম, বেল পেপার, মিষ্টি মরিচ, সিমলা মরিচ – অনেক নামেই ডাকা যায় একে। সারা বিশ্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি এটি। নামে মরিচ থাকলেও আসলে এটি এক ধরনের সবজি। আমাদের দেশের প্রচলিত সবজি না হলেও বর্তমানে এর চাহিদা বাড়ছে। মাছ, মাংস, সালাদ, পিজ্জা, বার্গার – অনেক খাবারেই রয়েছে ক্যাপসিকামের ব্যবহার।
পুষ্টিমানের দিক থেকেও ক্যাপসিকাম অনেক উন্নত একটি সবজি। ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। ১০০ গ্রামের একটি ক্যাপসিকামে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, ৪ দশমিক ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম চর্বি, ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৩৭০ আইইউ ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। এছাড়া সামান্য পরিমাণ ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি৬, থায়ামিন, লেবোফ্লেবিস ও ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
খনিজ উপাদানের মধ্যে ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, আয়রন ৩৮০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৭৫ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম রয়েছে ক্যাপসিকামে। এছাড়াও সামান্য পরিমানে জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ফ্লোরাইড পাওয়া যায়। ক্যাপসিকামের অনেক গুণাগুণের মধ্যে একটি হচ্ছে – এটি শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে সংযুক্ত হতে বাধা দেয়, অর্থাৎ শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
আমাদের দেশের সুপার শপগুলোতে পাওয়া যায় এই ক্যাপসিকাম। অনেকেই চেনেন, কিন্তু দামের কারনে এর স্বাদ নিতে পারেন না। তবে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু এই সবজি চলে আসতে পারে আপনার হাতের নাগালে। আপনার বেলকনি অথবা ছাদের টবে সহজেই ক্যাপসিকাম ফলিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন খুব সহজেই। আসুন জেনে নেই কিভাবে করবেন টবে ক্যাপসিকাম চাষ।
ক্যাপসিকামের বীজ বপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। তবে বর্তমানে ঘরোয়াভাবে বার মাসই এটি উৎপাদন করা সম্ভব। সাধারনত ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬০-২৫০সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬০- ২১০সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না।
California Wonder, Tender Bell (F1) এবং Yolow Wonder – সাধারনত এই জাতগুলোর ক্যাপসিকাম বাংলাদেশে চাষ করা হয়। প্রতি বছর এসব জাতের ক্যাপসিকামের বীজ আমদানি করতে হয়। তবে আমাদের দেশে California Wonder এর বীজ উৎপাদন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
মাটি তৈরিঃ বেলে দোআঁশ মাটি অথবা দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত। গাছ লাগানো অথবা বীজ বপনের পূর্বে মাটি ঝুরঝুরে করে নিন হয় এবং জৈব সার মিশিয়ে নিন। এটি গাছের বৃদ্ধির জন্য জরুরি। খেয়াল রাখবেন মাটিতে যেন ইটের টুকরা, আগাছা, ময়লা – এসব না থাকে।
ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য বাজার থেকে কেনা ক্যাপসিকাম থেকেই বীজ সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আবার বাজারে আলাদাভাবে ক্যাপসিকামের প্যাকেটজাত বীজ কিনতেও পাওয়া যায়। সেগুলোও আনতে পারেন। ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে চাইলে অবশ্যই পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন।
বীজ বা চারা সংগ্রহ করার পর ছিদ্রযুক্ত একটি টব বা কন্টেইনার নিন। কন্টেইনার বা টব যে পাত্রই ব্যবহার করবেন, তাতে অবশ্যই অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নয়ত পানি জমে গাছের গোড়া পঁচে যাবে।
সাধারনত এক মাস বয়সী চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত। ক্যাপসিকাম চাষের জন্য প্রচুর আলো, বাতাস ও প্রখর কিন্তু তাপহীন রোদ উপকারী। তীব্র রোদে চারার ক্ষতি হয়। তাই তাপ কম থাকা অবস্থায় চারা রোপণ করা উচিত। সকালে রোদ ওঠার আগে অথবা বিকেলে রোদের তেজ কমে গেলে চার রোপণ করুন। চারা রোপণের পর নিয়মিত পানি দিন, যেন মাটি শুকিয়ে না যায়।
বীজ দিয়ে ক্যাপসিকাম গাছ করতে চাইলে প্রথমে বীজগুলোকে প্রায় বারোো ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর মাটি একটু খুচিয়ে বুনে দিন। বোনার পরে আর্দ্রতার জন্য প্রয়োজন অনুসারে ঝাঁঝরি দিয়ে অল্প পরিমান পানি দিন। বীজ গজাতে সাধারনত তিন থেকে চার দিনের মত সময় লাগে। চারা ছোট অবস্থায় ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন যাতে প্রখর সূর্যালোক বা ঝড়-বৃষ্টিতে চারার ক্ষতি না হয়। চারা একটু বড় হলে শক্ত করে খুঁটি দিয়ে দিন। এতে চারা হেলে পড়ে যাবে না, ভেঙ্গে যাবার ভয় কম থাকবে। গোড়ায় আগাছা থাকলে সেগুলো তুলে ফেলুন। তবে আগাছা তুলতে গিয়ে গাছের শিকড় নষ্ট করে ফেলবেন না।
প্রায়শই ক্যাপসিকাম গাছে নানান ধরনের পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। এদের মধ্যে আছে মিলিবাগ, ছোট শামুক, জাবপোকা, থ্রিপস পোকা, লাল মাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি। এসবের আক্রমনে ভয় পাবার কিছুই নেই। গাছে কোনো রোগ বা পোকার আক্রমণ ঘটলে কীটনাশক ব্যবহার করুন। বাজারের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে না চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করুন। নিয়মিত গাছে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে করুন। লেবুর খোসা, ডিমের খোসা, চা পাতা গুড়ো করে গাছের গোড়ায় দিন। টবের মাটিতে হলুদ গুড়ো বা নিম পাতা গুড়ো ছিটিয়ে দিতে পারেন। এগুলো আপনার গাছকে বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করবে।
চারার বয়স তিন মাস হলেই ক্যাপসিকাম চারা ফল দিতে শুরু করে। ক্যাপসিকাম চারা মোটামুটি তিন থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত ফসল দেয়। সাধারণত ক্যাপসিকাম সবুজ রঙের থাকতেই পরিপক্ক হয়ে যায়, অর্থাৎ তুলে ফেলার উপযোগী হয়। বেশি পরিপক্ক হলে ক্যাপসিকাম লালচে রঙের হয়ে যায়। ক্যাপসিকাম দীর্ঘদিনের জন্য সংগ্রহ করতে চাইলে সংগ্রহের সময় প্রত্যেকটা ক্যাপসিকামে বোঁটা রেখে দিবেন এবং ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষন করবেন।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…