Personal Care

ঘরোয়াভাবে আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করা কি সম্ভব?

আর্মপিট হেয়ার বা বগলের লোম নিয়ে কমবেশি অনেকেই অস্বস্তিতে থাকি। শেভ করার পরেও দেখা যায় ছোট্ট একটু লোমের অস্তিত্ব থেকেই যাচ্ছে। স্লিভলেস জামা পড়ার কথা তো চিন্তাই করা যায় না। পড়লেও খুব মেপে মেপে হাত নাড়াতে হয়, যদি কেউ বগলের লোম দেখে ফেলে?

বগলে থাকা লোম হাত-পায়ের লোমের মতই স্বাভাবিক জিনিস হলেও সগর্বে দেখানোর মত কোন জিনিস নয়। হাত-পায়ের লোমকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেও বগলের লোমের ক্ষেত্রে কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করে। নায়িকা বা মডেলদের নির্লোম আর্মপিট দেখে প্রায়ই ভাবি, কিভাবে এত নিখুঁত সুন্দর আর্মপিট পাওয়া সম্ভব। বারবার শেভিং করার চাইতে যদি একেবারেই লোম উঠাকে আটকানো যেত তাহলে কত মজা হত, তাই না?

আজকের আর্টিকেলে নিয়ে এসেছি এমনই এক কার্যকরী সমাধান, যা দিয়ে ঘরোয়াভাবে আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করা সম্ভব অনেক কম খরচে এবং সহজে।

ঘরোয়াভাবে আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করা কি সম্ভব?

জ্বি সম্ভব। ঘরোয়াভাবে তৈরি ওয়াক্সিং দিয়ে আপনি সহজেই আপনার আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করতে পারবেন। চিনির ওয়াক্সিং বা ‘সুগারিং’ এক্ষেত্রে দারুণ ফল দিবে। এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি অনেক সময় পর্যন্ত (প্রায় ১ মাসের মত) নির্লোম থাকতে পারবেন৷

আর বগলের মত স্পর্শকাতর জায়গায় কেমিক্যালের চাইতে ঘরোয়া পদ্ধতিই উত্তম। চামড়া পুড়ে যাওয়া বা কালো হয়ে যাওয়ারও কোন চান্স নাই। আর কেমিক্যালের চাইতে এ পদ্ধতিতে ব্যথা তুলনামূলকভাবে কম অনুভূত হয়।

আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করতে হলে কি কি লাগবে?

  • ২৫০ মি.লি/ এক কাপ চিনি
  • ২৫০ মি.লি/ এক কাপ মধু
  • ১৫০ মি.লি./ আধা কাপ লেবুর রস
  • ২৫০ মি.লি/ এক কাপ পানি এই চারটি উপকরণ নিতে হবে।

প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল চিনির সিরা তৈরি করা। একটি সসপ্যানে চিনি আর পানি একসাথে গুলিয়ে তারপর সেটাকে চুলায় বসিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিতে থাকুন। মাঝে একবার বা দুইবার একটু নেড়ে দিবেন। চিনি যতক্ষণ না পর্যন্ত ক্যারামেল হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চুলা থেকে নামাবেন না।

এবারে এই সিরার সাথে লেবুর রস ও মধু মেশাতে হবে। মেশানোর সময় একটু সতর্ক থাকতে হবে কারণ মিশ্রণটি ফুলে উঠে গায়ে পড়তে পারে। ঐ দুটো মেশানোর পর কাঠের চামচ দিয়ে আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন আঠালো হওয়া পর্যন্ত। যদি বেশি আঠালো আর ঘন হয়ে যায় তাহলে এক টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিবেন।

মোটামুটি আঠালো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। এটিকে ফ্রিজে রেখে দিয়েও ঠান্ডা করতে পারেন। এই মিশ্রণ ফ্রিজে রেখে বহুদিন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ব্যবহারের আগে ফ্রিজ থেকে নামিয়ে গরম করে হালকা আঠালো করে নিতে হবে।

এই ওয়াক্সিং কিভাবে ব্যবহার করব?

চিনি-মধু-লেবুর এই ওয়াক্সিং ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ লোম যদি বেশি ছোট বা বেশি মোটা আর বড় হয়, তাহলে এই মিশ্রণ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। আবার যখন ওয়াক্সিং করবেন, তখন তোলার সময় খুব দ্রুত তোলার চেষ্টা করবেন নয়তো অনেক বেশি ব্যথা পাবেন। আর ওয়াক্সিংয়ের আগে ও পরে চামড়ার যত্ন নিলে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনেকটাই উপশম করা সম্ভব।

আর্মপিট হেয়ার তোলার আগে জায়গাটি মুছে একটু বেবি পাউডার ছিটিয়ে দিন৷ এই পাউডার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার আর তেল দ্রুত শুষে নেয়। এরপর মিশ্রণটি হাত বা পাতলা কাঠির সাহায্যে লোমের জায়গায় লাগাবেন। লোমের বিপরীত দিকে টেনে টেনে লাগাতে হবে। চেষ্টা করবেন চামড়া বাঁচিয়ে শুধু লোমের উপর লাগানোর।

একটি পরিষ্কার সুতি বা লিনেন কাপড়ের টুকরা (এক ইঞ্চি পরিমাণ চওড়া) নিয়ে মিশ্রণের উপর ভালভাবে চেপে ধরুন। এভাবে দুই থেকে তিন মিনিট রাখতে হবে, ততক্ষণে মিশ্রণটি শুকিয়ে লোমের সাথে আঠার মত আটকে যাবে। পুরোপুরি শুকিয়ে যাবার পরে কাপড়টি লোমের বিপরীত দিকে জোরে এক টানে খুব দ্রুত তুলে ফেলুন।

সব লোম তোলার পর জায়গাটিতে এক খন্ড বরফের টুকরা দিয়ে ঘষুন, বা স্যাভলন তুলা দিয়ে লাগান। এর কোনটাই না থাকলে আফটার শেভ লোশন বা কুলিং ক্রিমও ব্যবহার করতে পারবেন। ওয়াক্সিং পরবর্তী জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য বরফ বা কুলিং ক্রিম ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক।

স্থায়ীভাবে আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করা কি সম্ভব?

শরীরের স্বাভাবিক কোন বৃদ্ধিকে চিরতরে ধ্বংস করতে চাইলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর্মপিট হেয়ার, শরীরের অন্য কোন লোম, মাথার চুল এগুলো প্রকৃত অর্থে মৃত কোষ। প্রতিটা মৃত কোষ সময়ের সাথে সাথে বেড়ে উঠে শরীরের বাইরে চলে আসে, যা খুবই স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ব্যাপার।

এই সামান্য মৃত কোষের স্থায়ী নির্মূল শরীরের একদম ভিতর ছাড়া সম্ভব না৷ শরীরের ভিতরে অবস্থিত হেয়ার ফলিকলের কারণ চুল বা লোম জন্মে বাইরে চলে আসে। হেয়ার ফলিকলকে একদম ভিতর থেকেই নষ্ট করে স্থায়ীভাবে লোম গজানো বন্ধ করা সম্ভব।

কিন্তু কথা হচ্ছে, স্থায়ী নির্লোমের ব্যাপারটা কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত? হেয়ার ফলিকল গোড়া থেকে নষ্ট করার জন্য সবচাইতে কার্যকরী হচ্ছে লেজার হেয়ার রিমুভাল ট্রিটমেন্ট। এই ট্রিটমেন্ট কিছুটা ব্যয়বহুল, বেশ কয়েকটা সেশন করতে হয়, তাতে ছয়-সাত মাস লেগে যেতে পারে। তাছাড়া লেজার ট্রিটমেন্ট যে সফল হবেই তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।

টুইজিং করে বা ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমেও বগলের লোম তোলা যায়। টুইজিং খুবই যন্ত্রণাদায়ক, চিমটার মত একটা জিনিস দিয়ে লোম টেনে টেনে তুলতে হয়। ইলেক্ট্রোলাইসিসও লেজারের মতই। সোজা কথায়, এই প্রফেশনাল ট্রিটমেন্টগুলো খুব একটা সুবিধার হয় না।

শরীরের ভিতরের ফলিকলকে নষ্ট করতে গেলে শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সবার শরীর এক ধাঁচের না৷ কেউ হয়তো লেজার ট্রিটমেন্টে উপকার পেয়েছে, কেউ হয়তো উপকারের চাইতে অপকারই বেশি পেয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশী নারীদের ত্বক বিদেশি নারীদের ত্বকের মত না। বিদেশি নারীরা শরীরের চর্চা করার যথেষ্ট নিয়ম জানে ও সুযোগ পায়। আর তাদের শারীরিক গঠন বাংলাদেশের মেয়েদের চাইতে অনেক আলাদা।

বাংলাদেশের মত জায়গায় ত্বকের চর্চা মানেই বিশাল ব্যাপার। সবসময় সবার পক্ষে সেটা করাও সম্ভব হয় না। আর কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে সেটাও ঠিক করার চান্স কম। সুতরাং স্থায়ীভাবে আর্মপিট হেয়ার নির্মূল করার চিন্তা না করাই ভাল।

যেটা করা যেতে পারে, সেটা হল ঘরোয়া ওয়াক্সিংয়ের সাহায্যে দীর্ঘসময় পর্যন্ত লোমবৃদ্ধিকে আটকানো। হেয়ার ফলিকল নষ্ট করাও লাগল না, আবার বারবার শেভ করার ঝামেলাও থাকল না৷ সঠিক নিয়মে একবার ওয়াক্সিং করে বেশ অনেকদিন পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকা যাবে।

লোমবৃদ্ধি অস্বাভাবিক হলে কি করব?

বগলের লোম বা শরীরের অন্য যেকোন জায়গায় অস্বাভাবিক লোমবৃদ্ধি হলে তখন অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি ঘরে বানানো ওয়াক্সিং দিয়েও কাজ না হয় তাহলে ডাক্তারি ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে নিয়মিত। ফুল কোর্স কন্টিনিউ না করলে লোমের সমস্যা তখন বিকট আকার ধারণ করতে পারে। অনেকসময় অন্য কোন রোগের ট্রিটমেন্ট থেকেও অস্বাভাবিক লোমবৃদ্ধি হতে পারে। আপনি যদি সম্পূর্ণ সুস্থ ও নিরোগ থাকতে পারেন তবে বেঁচে যাবেন।

শেষ কথা

বগল অনেক স্পর্শকাতর একটি জায়গা। এখানকার লোম অপসারণের ক্ষেত্রে সতর্ক না থাকলে চামড়া পুড়ে যাওয়াসহ আরো নানা ধরণের বিপদের ঝুঁকি আছে। ঘরে বানানো মিশ্রণও বিপজ্জনক হতে পারে যদি তৈরি প্রক্রিয়া ও প্রয়োগে কোন ভুল থাকে। তাছাড়া ব্যবহারের আগে জেনে নিতে হবে চিনি, মধু, লেবুর রসে কোন অ্যালার্জির সমস্যা আছে কিনা।

এই ছিল আর্মপিট হেয়ার নিরসন নিয়ে আজকের আয়োজন। আশা করি লেখাটি আপনাদের কাজে লাগবে। আর্মপিট হেয়ারের ওয়াক্সিং নিয়ে যেকোন জিজ্ঞাসা বা পরামর্শ থাকলে সরাসরি লিখে জানান কমেন্টবক্সে। ব্যবহার করে কেমন ফল পেলেন তাও জানাতে পারেন আমাদেরকে। ভাল লাগলে লেখাটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

আফরোজ হেলাল

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago