২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটা বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় দিন। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে এই দিনটি আমরা অর্জন করেছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাঙলা ভাষা ও বাঙালির স্বীকৃতি প্রাপ্তির দিন এটাই। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা ও দেশভাগের মাধ্যমে মূল পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের জন্ম, সেখান থেকে ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এই সবই একটি সুতোয় গাঁথা। আসুন, দেখে নেওয়া যাক দিনগুলো ঠিক কেমন ছিল।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগেই ভবিষ্যৎ পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.এম হলের সাহিত্য সম্মেলনে বাঙলাকে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিলে ডঃ মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তীব্র প্রতিবাদ জানান। ইতিমধ্যে ঘটে যায় দেশভাগ। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করে পোস্টকার্ড, রেলের টিকিট সবেতেই বাংলার বদলে উর্দু ও ইংরেজি ব্যবহার শুরু করেন। এভাবে চাপানউতোর চলতেই থাকে।
আসলে আমরা সবাই জানি যে আধিপত্যকে আরও মজবুত করতে হলে যাদের ওপর আধিপত্য কায়েমের ইচ্ছা তাদের সংস্কৃতি থেকে তাদের দূরে সরিয়ে আনতে হয়। ইংরেজরাও আমাদের সঙ্গে এটাই করেছিল। পাকিস্তানের দমনমূলক ও আগ্রাসী নীতিরই একটি অংশ ছিল এই বাঙলা ভাষার বিরোধিতা। বাঙালিকে বাঙলা ভাষা থেকে সরিয়ে তাকে সার্বিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা হয়েছিল ভাষা আন্দোলন ছিল তারই প্রতিবাদ। পরের বছর ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙলাকে পরিষদের ভাষা করার দাবি জানালে তা নস্যাৎ হয়। ১১ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ২১ মার্চ ঢাকার বিশাল জনসভায় মোহম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এই একই ঘোষণা তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে করেন তখন ছাত্ররা ‘ নো ’, ‘ নো ’ বলে ওঠে। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট, হরতাল পালিত হয়। বিক্ষোভ শুরু হয় সর্বত্র।
এভাবেই চলে আসে ১৯৫২ সাল। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ১০,০০০ ছাত্রছাত্রী এক বিরাট মিছিল করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ও ২১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ওইদিন সকাল ১০টায় গাজীউল হকের সভাপতিত্বে সভা করে ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল শুরু করে। পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে ৩ ছাত্রসহ ৪ জন নিহত, ১৭ জন আহত, ৫২ জন গ্রেফতার হয়। নিহত হন আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, রফিক আহমদ। পরদিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে চলে মিলিটারির নিরস্ত্র জনতার ওপর বেপরোয়া গুলি চালানো। শুধু তাই নয়, লাশগুলোর কোন হদিস মেলে নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবে সেই সময়ে আন্দোলন থামানো গেলেও তা বন্ধ হয়ে যায়নি। ১৯৫৬ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও আইয়ুব খানের সামরিক সরকার তা বাতিল করে দেয়।
বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন তাঁর প্রবন্ধে যে বাঙালির বাহুবল নেই।
তাঁর এই আক্ষেপের খানিকটা জবাব সেদিন দিতে পেরেছিল বাঙালি। বাঙালি ভাষা আন্দোলনের সূত্রেই প্রথম এতো ব্যাপকভাবে তার শক্তি দেখালো। এই শক্তি দেখানোর সুযোগ না হলে হয়তো পরবর্তী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আসতেই পারত না। ভাষা আন্দোলন বাঙালির মনে যে স্বকীয়তা ও সমগ্রতার বোধ নিয়ে এসেছিল তা-ই তাকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যায়। এইজন্যই ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান রেডিয়তে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান আমরা বলতে পারি শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাদেশ নামকরণের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ নামটার মধ্যেই বাংলার প্রতি যে আবেগ তা প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭১ সাল থেকে লাগাতার হরতাল শুরু হয়। ৪ মার্চ রেডিও পাকিস্তানের পরিবর্তে ঢাকা বেতার কেন্দ্র গঠিত হয়। ২৫ মার্চ শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ঘোষণা ‘ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র চাই ’। শুরু হয় সংগ্রাম। সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা আমরা জানতে পারি জাহানারা ইমামের লেখা থেকে যিনি শহিদের মা। তরুণ ছেলেদের ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হত। তারপর অকথ্য অত্যাচার চলত নগ্ন করে। মেয়েদের ওপরেও চলেছিল পাশবিক অত্যাচার, ধর্ষণ। লাশ খুঁজে পাওয়া যেত না। বাড়ির পর বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে চলেছিল উদ্বাস্তুদের হাহাকার। মুজিবের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দেয় পাকিস্তান সরকার। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। এরপরই ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটি ও শহিদ দিবস হিসাবে পালনের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান অমর একুশে পদক।
এভাবেই একুশের হাত ধরে একাত্তরে বাঙালির যে উত্তরণ হয়েছিল তাকে বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি জানান ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…