১৯১৯ সালের ১লা মে জন্ম হয়েছিল এক অসামান্য প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের। যার গান আমাদের জীবনের প্রতিটি অনুভূতির সাথে যুক্ত। প্রেম,ভালোবাসা,স্নেহ,ভক্তি,বন্ধুত্ব,উন্মাদনা সবরকম অনুভূতির প্রকাশই আমরা তার গাওয়া গানগুলির মধ্যে পেয়ে থাকি। তার গান আপামর দেশবাসীর মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিল। শুধু দেশ বললে ভুল হবে তিনি সমগ্র বিশ্বের কাছে পরিচিত। তার নাম প্রবোধ চন্দ্র দে, যিনি আমাদের কাছে মান্না দে নাম পরিচিত। তার প্রতিভার কোনো সীমা ছিল না। কাওয়ালি ,গজল ,ক্লাসিকাল,সেমিক্লাসিক্যাল,আধুনিক,রবীন্দ্র সঙ্গীত,এমনকি রক এন্ড রোল সবরকম গানেই তিনি আমাদের মন জয় করেছিলেন। শুধু বাংলায় নয় তিনি হিন্দি মারাঠি ভোজপুরি, পাঞ্জাবি,ওড়িয়া,সিন্ধি,নেপালি,আসামী,কোঙ্কনি,গুজরাটি ,মাগধী ,মালায়ালম ,ইত্যাদি ভাষায় ও গান গেয়েছেন।
মান্না দে যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই পরিবারেইর এক জন সংগীতজ্ঞ ছিলেন।সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণ চন্দ্র দে। এনার সাহচর্যে মান্না দে বড়ো হয়ে ওঠেন, সঙ্গীতের প্রথম হাতে খড়ি ও এনার কাছেই হয়েছিল। বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াকালীন পর পর তিন বার তিনি ইন্টার কলেজ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪২ সালে মান্না দে তার কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে এর সাথে মুম্বই চলে আসেন।এখান থেকেই তার কর্ম জীবন শুরু হয়। কর্ম জীবন শুরু হলেও সঙ্গীত শিক্ষা চলতে থাকে উস্তাদ আমান আলী খান এবং উস্তাদ আব্দুল রহমান খান এর কাছে।
১৯৪৩ সালে কৃষ্ণ চন্দ্র দে এর নির্দেশনায় ‘তাম্মানা’ ছবিতে তিনি প্রথম গান করেন। তার গান সেই সময় এতো জনপ্রিয় হয় যে তিনি ১৯৫০ সালে শচীন দেব বর্মনের নির্দেশনায় ‘মশাল’ ছবিতে একক গান গাওয়ার সুযোগ পান। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। একের পর এক বাংলা ও হিন্দি এমনকি মারাঠি ছবিতেও তিনি গান গাওয়া শুরু করেন,শুধু তাই নয় এর সাথে সাথে তিনি সঙ্গীত পরিচালনার ও কাজ করেন। তার গাওয়া এবং নির্দেশনায় সবকটি গান বিশাল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি ৩বার জাতীয় পুরস্কার পান এছাড়া তিনি অজস্র সম্মান পেয়েছেন তার কাজের জন্য। ২০০৫ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করেন। ২০০৭ সালে তিনি দাদা সাহেব ফালকে সম্মান পান। ২০১১ সালে রাজ্য সকার তাকে বঙ্গ বিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে। ১৯১৩ সালের ২৪শে অক্টোবর এই অসামান্য প্রতিভাশালী ব্যাক্তিত্বের মৃত্যু হয়।
মান্না দে এর গান আমাদের সবরকম অনুভূতির সাথে জড়িত। আজকের জেনারেশন ও যেকোনো রকম আবেগকে বোঝাতে তার গান গেয়ে থাকে। যদি তার বাংলা গান গুলোকে নিয়ে আমরা একটু গভীরে যাই তাহলে দেখবো তার গাওয়া গান আমাদের অনুভূতিগুলোকে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আসুন না এই রকম কয়েকটি গান নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
মান্না দের নাম মনে পড়লেই আমার মনে কিন্তু প্রথম যে গান টি আসে তা হলো” কফি হাউস এর সেই আড্ডা টা আজ আর নেই। আজ আর নেই”আড্ডা নামক বস্তুটি বাঙালীর বড়ো প্রিয়।
ছোট হোক বড়ো হোক কিংবা বুড়ো হোক আড্ডা না হলে বাঙালী হয়ে ওঠা যাই না। কফি হাউস গানটি সেই আড্ডা প্রিয় বাঙালীর কথাই বলে। কফি হাউস ইন্টেলেক্চুয়াল রোমান্টিক বাঙালীর পীঠস্থান বললে বোধহয় ভুল কিছু বলা হবে না। চারমিনার ঠোঁঠে ,আর গলায় রাজনীতি,বিষ্ণু দে,যামিনী রায়,রবীন্দ্র নাথ ,এই নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছে এখানে অনেকেই। কত কবি ,লেখক,প্রেমিক রসদ খুঁজে পেয়ে এসেছে এই কফি হাউস এর আড্ডায়। গান টিতে এরকমই প্রেম বিরহ ,হতাশা প্রাপ্তি, সখ্যতা এইসব কিছু মিলিয়ে কোথায় যেন আমরা বার বার নিজেদের এই গানটিতে খুঁজে পাই।
ফুটবল প্রীতি বরাবরই বাঙালীর মনে ঘর করে এসেছে। মোহন বাগান আর ইস্ট বেঙ্গল কে ভালো খেলে, এই তর্কের বোধহয় কোনো শেষ নেই। ফুটবুল প্রিয় বাঙালীর জন্যই বোধয় মান্না দে গেয়েছিলেন “সব খেলার সেরা বাঙালীর তুমি ফুটবল ” ।
বাঙালির ফুটবল প্রীতি যত দিন থাকবে ততদিন এই গানটি ও আমাদের মনে থেকে যাবে।
“যদি প্রেম দিলে না প্রাণে “এই প্রেম বস্তুটি ছাড়া বঙ্গ সন্তান অসম্পূর্ণ। প্রেমের কথা আসলেই আমার মনে হয় সকলের মনে মান্না দে এর গাওয়া” হয়তো তোমারি জন্য হয়েছি প্রেমে যে বন্য”এই গানটি মনে পরে। কত প্রেমিক যে তার প্রেমিকাকে এই গানটি গেয়ে শুনিয়েছে তা হয়তো গুনে শেষ করা যাবেনা। তবে তার ফলাফল যে সবসময় মধুর হয়েছে এমনটি নয়। কিন্তু এমন রোমান্টিক বাংলা গান আমার মনে হয় খুব কমই আছে।
“সে আমার ছোট বোন বড়ো আদরের ছোট বোন”এই গানটি আজ ও আমাদের চোখে জল এনে দেয়। স্নেহ,মায়া মমতা ভালোবাসার এক অসামান্য মেলবন্ধন এই গানটি। ভাই এবং বোনের এমন ভালোবাসার গল্প এমন মধুর ভাবে কোথায় শুনেছি আমরা বলতে পারেন? কত শিল্পীর জীবন হয়তো এভাবেই থেমে গিয়েছে। গানটির পরিণতি করুন হলেও গানটি আজ আমাদের মনে দাগ কাটে।
কোনো মন্দিরে যখন আমরা যাই তখন আমরা একটি গান প্রায় বাজতে শুনে থাকি। দূর্গা পুজো বা কালী পুজোর সময় প্যান্ডেলে এই গানটি প্রায়ই শোনা যায়।মনে পড়ছে কি গান টি?”আমায় একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি ”
আমাদের মনের শ্রদ্ধা ভক্তি যেন মান্না দে এর এই গানটির মধ্যে আমরা অনুভব করতে পারি। তাই কখনো কোনো এই গানটিও আমাদের চোখে জল এনে দেয়।
মান্না দে অসামান্য একজন সুরকার গীতিকার এবং গায়ক ছিলেন। তার সব গানের কথা হয়তো বলা হলো না। হয়তো বলে শেষ ও করা যাবে না কারণ এতটাই বিশাল তার গানের পরিধি। তবুও এই গানগুলি যেন আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমাদের সব অনুভূতি আর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এইটুকু বলেই আজ লেখা শেষ করছি।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…