দুধের তৈরি খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো দই। দুধকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে জমিয়ে দই তৈরি করা হয়। দই তৈরির ইতিহাস প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বের। পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে দুধের চেয়েও দই অনেক বেশি সুপরিচিত।
এছাড়াও দই মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরে ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। দইয়ে থাকা ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাঁড়ের ক্ষয় রোধ করে। দই রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করে, ওজন কমায়, হজম ক্ষমতা বাড়ায়। বলা হয় – দই খেলে নাকি পেট ঠান্ডা থাকে।
সে কারনেই হয়ত বদহজম, গ্যাস, পেপটিক আলসার বা পেটের নানান সমস্যায় ডাক্তাররা ঔষধ হিসেবে দই খেতে বলেন। সাধারণ ঠান্ডা, জ্বর কিংবা সর্দি, কাশিও ভালো হয়ে যায় দই খেলে। বৈশাখের প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোক ঠেকাতেও দইয়ের জুড়ি নেই। শুধু তাই নয়, দই ত্বককে সতেজ রাখে। রূপচর্চায়ও দই ব্যবহৃত হয়। দই শরীরের টক্সিন জাতীয় পদার্থ কমিয়ে দেয়, ফলে এটি শরীরকে সুস্থ রাখে ও ত্বককে বুড়িয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে।
দুধে রয়েছে ল্যাক্টোজ নামের এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগেরিকাস ব্যাক্টেরিয়ার ক্রিয়ায় এই ল্যাক্টোজ কার্বোহাইড্রেট থেকে ল্যাক্টিক এসিডে রূপান্তরিত হয়, অর্থাৎ দুধ জমে দইয়ে পরিণত হয়। তাছাড়া দইয়ে যে আমরা দুধের বা ননীর সুন্দর একটা গন্ধ পাই সেটাও স্ট্রেপ্টোকক্কাস থার্মোফাইলাস নামের এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার জন্য পেয়ে থাকি।
কয়েকটি গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে যে এই ল্যাক্টোব্যাসিলাস ও স্ট্রেপ্টোকক্কাস নামের ব্যাক্টেরিয়া দুটি মানুষের দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ তৈরিতে বাধা প্রদান করে। তো সে হিসেবে দই আপনার শরীরকে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে।
সাধারণত দুধ জমিয়ে আমরা দই তৈরি করি। সেক্ষেত্রে তাতে দুধের গন্ধ বা ফ্লেভারটাই থাকে। ইদানিং অনেকেই দই নানান রকম ফ্লেভারে কিংবা সিজনাল ফলের সাথে খেতে পছন্দ করেন। তেমনি একটি হচ্ছে মজাদার ফ্লেভার হচ্ছে আম।
আম দিয়ে তৈরি করা যায় আমের মিষ্টি দই। পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলের রাজা আম, সেই আম দিয়েই যদি হয় পছন্দের দই – তাহলে তো আর কথাই নেই। আজ চলুন জেনে নেই কিভাবে তৈরি করবেন আমের মিষ্টি দই।
পাকা আম ছোট ছোট টুকরো করে কেটে আমের বড়া থেকে আলাদা করে নিন। ছোট ছোট টুকরোগুলোকে হাতে কচলে নিন। এবারে চিকন চালনি দিয়ে আমটা চেলে নিন যেন টুকরো টুকরো অংশ না থেকে যায় এবং শ্বাস থেকে সুন্দর মতন রস বের হয়ে আসে।
একটি পাত্রে দুধ নিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। দুধ মোটামুটি ৯০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রায় ২০ মিনিট সময় ধরে জ্বাল করুন। দুধে যেন একটুও পানি না থাকে। দুধ ফুটে জ্বাল হয়ে এলে তাতে পরিমানমত চিনি, লবন ও সামান্য একটু এলাচ গুড়া দুধে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। চিনি গলে দুধ ফুটে ঘন হয়ে এলে চুলা নিভিয়ে দিন।
দুধ একটু ঠান্ডা হয়ে ৪০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বা এর কাছাকাছি এলে যে পাত্রে দই বসাতে চান সেই পাত্রে ঢেলে নিন। তাপমাত্রার বিষয়টা আপনি আঙ্গুল দিয়েই মাপতে পারবেন। আঙ্গুল ডুবাতে পারবেন এরকম গরম থাকতে থাকতেই এই ঘন দুধে আগেই চেলে রাখা আমের রসটা এবং সামান্য একটু টকদই মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়াতে থাকুন। ভালোভাবে জ্বাল করার পর দুধের পরিমান যদি আধা লিটারের মত হয়ে থাকে, তবে তাতে এক চা চামচ পরিমান টকদই মেশালেই হবে।
দুধের সাথে টকদই আর আমের রস যেন ভালোভাবে মিশে যায়। এই টকদই হচ্ছে দই বসার মূল কারণ বা উপাদান। যদি টকদই ভালোভাবে না মেশে তাহলে কিন্তু দই ঠিকমত বসবে না। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, দই কখনোই সিলভারের বা স্টিলের বা কোনো ধরনের ধাতব পাত্রে বসাবেন না। তাতে দইয়ে কেমন যেন একটু তিতা ভাব চলে আসে। ধাতব পাত্রে দুধ জ্বাল করে নিয়ে কাঁচের বা প্লাস্টিকের পাত্রে দই বসাবেন। তাতে দই বসবেও সুন্দর হয়ে, আর কোনো তিতা ভাবও আসবে না।
এবারে পাত্রটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রুম টেম্পারেচারে প্রায় পাঁচ থেকে সাত ঘন্টার মত রেখে দিন। বারবার ঢাকনা খুলে দেখতে যাবেন না বা নাড়াবেন না। এতে দই জমাট বাধতে দেরি হবে। ঠান্ডার দিন হলে বা প্রয়োজন পরলে কম্বল বা টাওয়েল জাতীয় মোটা কাপড়ে হালকা ভাপ দিয়ে ঢাকনার চারপাশে শক্ত করে পেচিয়ে দিন। এতে করে দুধ জমে ঘন দইয়ে পরিণত হবে।
জমাট বেধে যাওয়া দইয়ের উপরে ছোট ছোট আমের টুকরো রেখে দইয়ের পাত্রটি কয়েক ঘন্টার জন্য রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। ঘন্টাখানেক পর রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে এবার টেস্ট করুন ঠান্ডা ঠান্ডা আমের মিষ্টি দই।
যদি এই দই বেশিদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষন করুন।
ঘরে তৈরি এই দই থেকে সামান্য দই বীজ হিসেবে রেখে দিয়ে পরবর্তীতে আপনি আবারও দই তৈরি করতে পারবেন।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…