দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, আনন্দের উৎসব, আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে মিলিত হওয়ার উৎসব। দেবী দুর্গা তাঁর সন্তান সন্ততি সমেত ৫ দিনের জন্য স্বর্গ থেকে মর্তে আসেন। এই ক দিন সকলেই সবকিছু ভুলে শুধু আনন্দে মেতে ওঠেন। নতুন জামাকাপড় ,পুজো প্যান্ডেলে নতুন নতুন প্রেম ,ভালোভালো খাওয়া দাওয়া ,নানারকমের অনুষ্ঠান ,আলোর রোশনাই সবমিলিয়ে ৫ দিন একেবারে জমজমাট।কলকাতা ও দুর্গাপুজো এই দুইয়ের সমাহার আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। সর্বজনীন পুজোর সাথে সাথে কতগুলি বিখ্যাত বনেদি পুজো কলকাতার পুজোর আকর্ষণ কে আরো বাড়িয়ে তোলে। এরকমই ৫ টি বিখ্যাত বনেদি বাড়ির পুজোর গল্প আজ আমাদের আলোচ্য।
সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো কলকাতার সবথেকে পুরোনো পারিবারিক পুজো। জমিদার লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার প্রথম আটচালার দুর্গা প্রতিমার পুজো শুরু করেন স্ত্রী ভগবতী দেবীর ইচ্ছেয় ১৬১০ সালে। এই পরিবার মোট ৮ টি আলাদা আলাদা প্রতিমার পুজো করে থাকেন।এই প্রতিমা কিছুটা লাল রঙের বা হালকা সোনালী রঙের হয়ে থাকে। দশমহাবিদ্যা দ্বারা প্রভাবিত মা দুর্গার বিভিন্ন রূপের পূজা করা হয়। অসুরের রং সবুজ রঙের হয়। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গা পূজা বিদ্যাপতি রচিত দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী তে উক্ত নিয়ম বা রীতি মেনে সম্পন্ন হয়। প্রথমে এই পুজোটি বড়িশার জমিদার বাড়িতে চণ্ডীমণ্ডপ এ হতো। পরবর্তী কালে সকলেই যাতে এই পুজোর অংশ হয়ে উঠতে পারে সেই কারণে মোট আটটি পুজো শুরু করা হয়।
এর মধ্যে শুধু বরিশাতেই ৬ টি পুজো হয়। সেগুলি যথাক্রমে আটচালা বাড়ি পুজো ,বড় বাড়ি পুজো ,বেনাকি বাড়ি পুজো ,মেজো বাড়ি পুজো ,কালীকিঙ্কর ভবন পুজো এবং মাঝের বাড়ি পুজো। বড়িশাতেই মোট এই আটটি পুজো সম্পন্ন হয়। সপ্তম পুজো টি হয় বিরাটি তে বিরতি বাড়ি পুজো এবং অষ্টম পুজোটি নিমতা তে নিমতা পাঠানপুর বাড়ি পুজো নামে প্রসিদ্ধ। এই পরিবারের দূর্গা পুজো যেরকম রীতি মেনে সম্পন্ন হয় তাতে যোগিনী এবং উপদেবতারাও মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমী তে পূজিত হন। শাক্ত -শৈব -এবং বৈষ্ণব এই তিন ধারার ই প্রভাব এই পুজোয় দেখা যায় সেই জন্য এই পুজোর মহিমা বাকি সব পুজোর থেকে আলাদা। প্রতি বছরই সমস্ত রকম নিয়মানুবর্তিতা মেনে এই পুজোটি সম্পন্ন হয়।
কলকাতার অন্যতম আরেকটি প্রসিদ্ধ পারিবারিক দুর্গা পুজো হলো শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গা পুজো। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ উদ দৌল্লা র বিরুদ্ধে ব্রিটিশের জয় কে উদযাপন করতে প্রথম বার এই দুর্গাপুজো শুরু হয়। প্রথম পুজোটি রাজা নবকৃষ্ণ দেব নির্মিত বড় রাজ বাড়িতেই সম্পন্ন হয়েছিল। তবে এখন বড় রাজবাড়ী এবং ছোট রাজবাড়ী দুটি স্থানেই এই পুজো সম্পন্ন হয়। প্রতিবছর এই পরিবারের প্রায় সমস্ত সদস্য দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর সময় একত্রিত হন। প্রথম বার পুজোর সময় বিশেষ অতিথি হিসাবে লর্ড ক্লাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংস নিমন্ত্রিত ছিলেন। রামকৃষ্ণ দেব ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদি আরো বহু শ্রদ্ধেয় ব্যত্তিত্বের উপস্থিতি এই পুজোর মাহাত্ম্য কে বাড়িয়ে তুলেছে।
এই রাজবাড়িতে আগে পুজোর ৫ দিন দেশের ভিন্ন নৃত্য ও সংগীত শিল্পীরা এসে তাদের শিল্পের প্রদর্শন করতেন। সারারাত নাচ ও গানে এই রাজবাড়ী মেতে উঠতো।কথিত আছে দেবী দুর্গাও এই গান শুনতে আসতেন। তবে এখন এই নাচ ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।প্রতি বছরই বহু মানুষ এই রাজবাড়িতে আসেন এবং দেবী মায়ের দর্শন করেন।
কলকাতার আরেকটি প্রসিদ্ধ পারিবারিক এবং পুরোনো দুর্গা পুজো হলো ভবানীপুর মল্লিক বাড়ির দুর্গা পুজো। এই পুজো শুরু হয় বহু বছর আগে নবাব হুসেন শাহের আমলে তবে কলকাতায় এই পুজো শুরু হয় ১৯২৫ সালে। জন্মাষ্টমীর পর থেকেই প্রতি বছর দেবী প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। একচালা ও ডাকের সাজের প্রতিমার পুজো করা হয়ে থাকে। এই পুজো যে দুটি ভিন্ন স্থানে সম্পন্ন হয় তা হলো দূর্গা দালান এবং অন্নপূর্ণা দালান।
মল্লিক পরিবার বৈষ্ণৱ মতে দীক্ষিত তাই প্রাণী বলি কোনো দিনই এই পুজোর অংশ হয়নি। পুজোর কদিন এই কারণেই সমস্ত সদস্যরাই নিরামিষ আহার করেন। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের পরই আমিষ খাবার খাওয়া হয়। এই পরিবারের মহিলারাই পুজোর সমস্ত কাজ করেন এবং সবাই কে খাবার বা ভোগ পরিবেশন করে থাকেন। প্রতি বছর ই পরিবারের সমস্ত সদস্যরাই এই পুজোয় মিলিত হন। কলকাতার বহু বিখ্যাত মানুষ এবং বিদেশ থেকেও অনেকে এই পুজো দেখতে আসেন। দশমীতে সিঁদুর খেলা এবং বিজয়া দশমীতে অষ্টদূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ এই পরিবারের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য দুটি রীতি।
বিডন স্ট্রীট নিবাসী রাম দুলাল দে ১৭৭০ সালে নিজের বসত বাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজো করেন ,পরবর্তী কালে তার দুই সন্তান আশুতোষ দে এবং প্রমথ নাথ দে যারা আমাদের কাছে ছাতুবাবু ও লাটুবাবু নামে বিশেষ পরিচিত ,এই পুজোর ধারাকে প্রচলিত করে। এই পুজো ও অনেক দিনের পুরোনো। এর বিশেষ আকর্ষণ এর প্রতিমা।এই প্রতিমার চালচিত্রে দেবী দুর্গার দুই সখি জয়া ও বিজয়া বর্তমান। এছাড়া চালচিত্র্রে মহাদেব ,ভগবান রাম এবং হনুমান এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এছাড়া আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো দেবী সরস্বতী ও দেবী লক্ষ্মী র হাতে বীণা ও চালের পাত্র থাকে না। শুধু আশীর্বাদ করার জন্য হাত ওঠানো থাকে। এই পরিবারে দেবী মায়ের উদ্দেশ্য সবজি বলিদান করা হতো যা আজ ও পালন করা হয়ে থাকে।
১৭২০ সালে হরিনাথ মুখার্জী দুর্গা পুজো শুরু করেন। কথিত আছে হরিনাথ মুখার্জী র প্রপিতামহ স্বপ্নে দেবী দর্শন করেন। তাঁরই ইচ্ছায় হরিনাথ মুখার্জী এই পুজো শুরু করেন। এই পরিবার বরাবর ই শক্তিসাধনায় দীক্ষিত। বসতবাড়ির ঠকুরদালানে এই পুজো প্রতিবছর সম্পন্ন হয়। ঠাকুর দালানের শোভা আজ এই পরিবারের প্রতিপত্তি ও সৌখিনতার সাক্ষ্য বহন করে। পুরো ঠাকুর দালান টি নানা রঙের ফুল এর কারুকার্য করা।এই ঠাকুর দালানের শোভা এবং পুজো দেখার জন্য প্রতিবছর বহু ভক্তের সমাগম হয়।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…