অনেকদিনের সুপ্ত বাসনা মনে, সমস্ত পিছুটান রেখে হঠাৎ করে বেড়িয়ে পড়বো কোন এক অজানার উদ্দেশ্যে। এমন কোন জায়গা যেখানে গণ্ডি নেই বাধন নেই , নেই কোন শাসন। অতঃপর রুকস্যাক গুছিয়ে নেপালের সেই পুরানো ধুলোমাখা জিন্স পরে বেড়িয়ে পড়লাম হিমাচল প্রদেশের পার্বতী উপত্যকার সেই সুন্দর সবুজ আপেলের মায়াভরা গ্রাম কাসলের পথে।
ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের চাকা স্পর্শ করতেই শুরু হয়ে গেল দৌড়াদৌড়ি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম পেরিয়ে যখন রানাপ্রতাপ বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে উপস্থিত হলাম তখন শুনলাম হিমাচল প্রদেশের শেষ বাস বেড়িয়ে গেছে, অগত্যা অপেক্ষা।
বেশ শীত শীত ভাব, বাস ছুটে চলেছে ন্যাশেনাল হাইওয়ে ২১ ধরে। ভোর ৫ টায় শুরু করে প্রায় ১১.৩০ এর সময় পৌঁছলাম চণ্ডীগড়, সেখান থেকে আবার দীর্ঘ ৭-৮ ঘণ্টা পাহাড়ি রাস্তা পেড়িয়ে হিমাচল প্রদেশের ভুনটুর পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেয়েছিল। মানালীগামী যে কোন বাসে চড়লে ভুনটুর যাওয়া যায় সেখান থেকে, কাসল তোষ আর মনিকরনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে। দীর্ঘ বাস যাত্রার ধকলে সেই দিন আমরা ভুনটুরেই রাত কাটালাম। পরেরদিন সকালে হিমাচলের বিখ্যাত সাদা বাস সবুজ বর্ডার দেওয়া, আমরা যাত্রা শুরু করলাম কাসলের উদ্দেশ্যে।
রাস্তা আঁকা বাঁকা পথে এগিয়ে গেছে, পথের মধ্যে মাঝে মাঝেই আপেল গাছ। লোকাল বাসে যাবার সুবিধা একটাই স্থানীয় মানুষদের সাথে একাত্ম হওয়া যায়। বাসের মধ্যে উঠল হিমাচলের প্রধান পোশাক পরা একদল কচিকাঁচার দল। সামনের গ্রামে শিবরাত্রি উপলক্ষে যাত্রাপালা করবে। প্রত্যেকের মধ্যেই যেন খুশির হাওয়া বইছে। শুনলাম মানডিতে শিবরাত্রির বিশাল মেলার আয়োজন হয়েছে। বাসে ওঠা একদল যাত্রী তাদের স্থানীয় ভাষায় গান ধরেছে। দুপাশে আপেলের ক্ষেত, মাথার উপর মুক্ত নীল আকাশ আর তাতে সাদা মেঘের ভেলা আর দুরে খাড়া পাহাড়ের হাতছানি, ভেসে যাচ্ছিলাম বন্ধুত্বের দেশে।
আমরা যখন কাসল পৌঁছলাম তখন প্রায় ১ টা বাজে। বাস থেকে নামতেই শীতল ঠাণ্ডা বাতাস এসে জড়িয়ে ধরল আমার সারা শরীর। অপূর্ব সুন্দর একটা ছোট পাহাড়ি গ্রাম কিন্তু এর আদব কায়দা পুরো বিদেশী কেতায়। প্রচুর বিদেশী পর্যটক এখানে আসে। কাসল থেকে ২১ কিমি দুরত্বেই আছে মালানা গ্রাম সেখানেই পাওয়া যায় বিখ্যাত মালানা ক্রিম অর্থাৎ মালানার মারিজুয়ানা। আগেই শুনেছিলাম কাসল হল আধুনিক হিপিদের পীঠস্থান। বিশেষ করে ইজরায়েল স্পেন রাশিয়ার বহু হিপিরা এখানে আসে। আমার হিপিদের বেশ পছন্দ কারন হিপিদের জগৎটাই একদম স্বতন্ত্র আর আলাদা রহস্যে পূর্ণ।
আগেই শুনেছিলাম কাসলের বিখ্যাত The Evergreen Cafe, Jim Morrison Cafe. আমরা একটা সস্তার হোটেলে জিনিসপত্র রেখে গেলাম The Evergreen Cafe তে খেতে। ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ। এ যেন চলে এসেছি ৭০ দশকের হিপি সম্প্রদায়ের মধ্যে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন একদল বিদেশী সাথে চলছে বব মারলের গান, আলো আধারির মাঝে দেখতে পেলাম দেওয়ালে টাঙ্গানো অসংখ্য ছবি, কাঁচের জানলার বাইরে নীল ধুয়ো মাখা পাহাড়ে সাদা আলপনা।
স্প্যানিশ ডিস নিলাম তাতে দেওয়া দুটো চিকেন কিমার স্যান্ডউইচ, রঙ বেরঙের সব্জির স্যালাড, একটা অমলেট, ফ্রেঞ্ছ ফ্রাই, আর সাথে হট চকলেট। দুটো জার্মান মেয়ের সাথে আলাপ হল ওরা হ্যামবারগ থেকে এসেছে। কাসলে ওদের ১৫ দিন হয়ে গেল কাসলের প্রেমে পড়েছে এই দুই সুন্দরী জার্মান তন্বী। এরপর ওরা যাবে পৃথিবীর এক প্রাচীন শহর বেনারস। ট্রাভেলিং এর একটা দারুন মজা। বহু মানুষ বিভিন্ন দেশ তাদের বিভিন্ন ভাষা বিভিন্ন সংস্কৃতি বিভিন্ন চিন্তাধারার সাথে প্রতিনিয়ত পরিচিত হতে হতে ভাবি আর বিশ্বমানব হতে চেষ্টা করি।
কাসলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুন্দরী পাহাড়ি সবুজ নীলের স্রোতস্বিনী পার্বতী নদী। দুরে বরফ মোড়া পাহাড়ের গায়ে মেঘ জমতে শুরু করেছে। বাঁশের তৈরি ব্রিজ দিয়ে পার্বতী নদী পেরিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করলাম ওপাশের পাহাড়ি গ্রাম ছালালের পথে।
পাইনের ঘন বন, নিস্তব্ধতা, প্রচুর নাম না জানা পাখির মিষ্টি ডাক, হঠাৎ করে গ্রামের এক চিলতে কাঠের ঘর থেকে ভেসে আসা বাচ্চার মিষ্টি হাসি। পাশে নীল সবুজ পার্বতীর উত্তাল গর্জন সব মিলিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে যাচ্ছিলাম ছালাল গ্রামের দিকে। ১.৫ কিলোমিটার পথ আমরা ৩০ মিনিটের আগেই পৌঁছে গেলাম। দেখলাম অনেক অ্যাডভেঞ্চার টিম জঙ্গলের মাঝে নদীর পাশে তাবু খাটিয়ে ক্যাম্প ফায়ারের আয়োজন করছে।
পথে দেখা এক বয়স্ক ব্রিটিশ দম্পতির সাথে সৌজন্য বিনিময় হল চকলেট বিনিময়ের মাধ্যমে। কলকাতায় থাকি শুনে ভদ্রলোক নিজের মাথার টুপি খুলতে খুলতে বললেন, ”I know it is a great city, once the capital of India with lot of historical monuments and also the place of the prince , the Prince of Calcutta Sourav Ganguly.”
যতবারই বিদেশ বিভুইয়ে নিজের প্রানের শহর কলকাতার কথা শুনেছি, গর্ব বোধ হয় এই ভেবে যে আমার প্রিয় ও প্রানের শহর তিলোত্তমা সত্যি মন চুরি করতে পারে। পার্বতী নদীর একদম গায়ে লাগানো একটা ক্যাফেতে ফ্যানা ওঠা ধূমায়িত কফি পান করে আমরা কাসলের পথ ধরলাম।
কাল সকালে মনিকরন হয়ে তোষ গ্রামে পাড়ি দেব। দুদিন কাসলে থেকে কাসলের বোহেমিয়ানার প্রেমে পরে গেছি। রাতে স্বাদ বদলের জন্যে গেলাম Blue Moon Night Cafe তে। এইটা একদম পার্বতী নদীর সামনের জমিতে অবস্থিত। বেশী লোক নেই ক্যাফেতে। দেখলাম কেবল একজন এ একটা টেবিলে বসে ডাইরি লিখছে।
আলাপ হল অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা তরুণী ভ্রমন লেখিকা জেফিনির সাথে। ওর গলায় এক বিষাক্ত সাপের ট্যাটু করা। চোখের মনি সবুজ আর মাথার চুল নীলচে। জেফিনির থেকে জানলাম সে হিমাচল প্রদেশের পার্বতী ভ্যালির উপর ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানাতে চায়। কথায় কথায় চলে এলো গরম গরম হাক্কা চিকেন চাউমিন , টুনা পাস্তা, চিলি মাশরুম আর জেফিনির গ্রিন স্যালাড। চাঁদের আলোয় পার্বতী নদীর ধারে জমে উঠল আমাদের আড্ডা।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…