ধর্ম ও সংস্কৃতি

কালীঘাটের মন্দিরের গল্পকথা

কালীঘাটের মন্দিরটি ৫১ টি শক্তি পিঠের মধ্যে অন্যতম একটি শক্তি পিঠ। কথিত আছে মহাদেব যখন দক্ষ কন্যা, দেবী সতীর মৃত শরীরকে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন, তখন পৃথিবী ধংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ভগবান বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবী সতীর দেহকে খন্ড বিখন্ড করে দিয়ে ছিলেন। দেহাংশগুলি যেখানে গিয়ে পরে সেগুলি একেকটি শক্তি পিঠে পরিণত হয়। এই রকমই একটি শক্তি পিঠ হলো কালীঘাট মন্দির। যেখানে দেবীর ডান পায়ের আঙ্গুল পড়েছিল বলে লোকমুখে কথিত আছে আসুন জেনে নেওয়া যাক এই মন্দির সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য।

ব্রাহ্মণের গল্প

কালীঘাটের মন্দিরটি হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত। এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মন্দির। এখানে দেবী কালির অর্চনা করা হয়। এই মন্দির স্থাপন সম্পর্কিত নানা তথ্য লোকমুখে শোনা যায়। কথিত আছে এক  ব্রাহ্মণ হুগলি (ভাগীরথী )নদীর তীরে সাধনা করার সময় নদীর থেকে আসা অলৌকিক আলো দেখে আকৃষ্ট হন , কাছে গিয়ে তিনি আঙুলের আকারের পাথর খুঁজে পান সেটি তিনি তুলে নিয়ে আসেন এবং পূজা করা শুরু করেন।

রায়চৌধুরীদের গল্প 

আবার লোকমুখে অন্য একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, সাবর্ণ চৌধুরী পরিবারের সন্তোষ রায়চৌধুরী একদিন হুগলি নদীতে ভ্রমণকালে অলোকিক আলো দেখে আকৃষ্ট হন এবং সেখানে গিয়ে তিনি একইরকম ভাবে আঙুলের আকারের পাথর খুঁজে পান। সেটিকে তুলে নিয়ে তিনি একটি ছোট মন্দির স্থাপন করেন। বর্তমানে এই মন্দির কালীঘাট মন্দির নাম পরিচিত। প্রথমে মন্দিরটি একটি কুঁড়েঘরের মতো ছিল। পরে সেটিকে বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। মন্দিরটি সন্তোষ রায়চৌধরী বানানো শুরু করেছিলেন ১৭৯৯ সালে তার মৃত্যুর পর তার নাতি রাজীব লোচন রায়চৌধুরী ১৮০৯ সালে মন্দিরের কাজ সম্পন্ন করেন।

মন্দির 

বর্তমান মন্দির টি ৬ টি ভাগে বিভক্ত-ষষ্ঠী তলা ,নাট মন্দির ,জোড় বাংলা, হারকাঠ তলা ,রাধা কৃষ্ণ মন্দির এবং কুন্ড পুকুর।

বর্তমানে যে মূর্তিটিকে পুজো করা হয় সেটি কষ্টি পাথরের তৈরী এবং সোনা ও রূপ দিয়ে কাজ করা। ২০১৬ সালে প্রায় ৪০ বছর পর দেবীর জিভটিকে পাল্টানো হয়। বর্তমান জিভটি প্রায় ২ কিলো ১৯১ গ্রাম রুপোর ওপর ৫৫৮ গ্রাম সোনা দিয়ে মোড়া। দেবীর খড়গটি পাল্টে একটি দু কেজি ওজনের সোনার খড়গ দেবীরহাতে স্থাপন করা হয়েছে।

লোকমুখে সোনা যায় আগে এই মন্দিরে নিয়মিত মায়ের চরণে বলি দেওয়া হতো। বর্তমানে বিশেষ বিশেষ দিনেই এই বলি দেওয়া হয়। প্রতিবছর একটি নির্ধারিত দিনে দেবীকে স্নান করানো হয় যা স্নানযাত্রা নাম পরিচিত।

এই মন্দিরটি  অত্যন্ত জাগ্রত। প্রায় প্রতি দিনই এখানে শতাধিক পুণ্যার্থীর আগমন হয়। বলা হয়ে থাকে   এই মন্দিরের দশনার্থীরা কেউই খালি হাতে ফেরত যায় না। মা কালী সবারই মনস্কামনা পূর্ণ করেন। দেশের নানা জায়গা থেকে মায়ের মন্দির দেখতে ও পুজো দিতে বহুলোক সারা বছর ধরে আসেন। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপুজো, দীপান্বিতা কালীপূজোর দিন প্রচুর লোক মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। কলকাতা মহানগরীর একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থানএই কালীঘাটের মন্দির।

অন্বেষা দত্ত লাহিড়ী

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

3 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

3 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

3 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

3 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

3 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

3 বছর ago