কাঁচকলা আমাদের একটা অত্যন্ত পরিচিত সবজি। সবজি হিসেবে কাঁচকলার উপকারিতাও প্রচণ্ড। যে সমস্ত মেয়েদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকে, ডাক্তাররা তাদের কাঁচকলা খাবার পরামর্শ দেন। কারণ কাঁচকলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এছাড়া কাঁচকলায় ভিটামিন বি-৬ ও থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সহায়তা করে। কাঁচকলা আমাদের বাড়তি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
কাঁচকলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও থাকে। যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও কাঁচকলার আরও নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে, যার ফলে কাঁচকলা আপনার ডায়েট চার্টে অবশ্যই থাকা উচিত। যেকোনো জিনিস সেদ্ধ করে খেলেই তার পুষ্টিগুণ শরীরে বেশী প্রবেশ করে। ডাক্তাররাও অনেকসময় কাঁচকলা সেদ্ধ করে ভাতের সঙ্গে নিয়ম করে খাবার পরামর্শ দেন।
সেদ্ধ সবজি খাওয়া উপকারী বটে, কিন্তু তা সবসময় আমাদের ভালো লাগে না। অথচ কাঁচকলার মতো উপকারী সবজি খাওয়াটাও খুবই দরকারি। তাই আসুন, আজ জেনে নেওয়া যাক কাঁচকলার মুখরোচক এবং সহজ কিছু রেসিপি।
কাঁচকলার মশলা
উপকরণ:
কাঁচকলা ২ টিআলু
১ টি টুকরো করে কাটা
লাল লঙ্কা গুঁড়ো ১ চামচ
আদাবাটা ২ চামচ
পেঁয়াজ বাটা ১ টা মাঝারি
রসুনবাটা ১ চামচ
টোম্যাটো ১ টা মাঝারি
কুচি করে কাটা
জিরে ছোট ১ চামচ
গোটা গরম মশলা ফোড়ন হিসেবে দেওয়ার মতো
ধনে গুঁড়ো ছোট ১ চামচ
জিরে গুঁড়ো ছোট ১ চামচ
সরষের তেল
নুন, হলুদ গুঁড়ো
প্রণালী:
প্রথমে কাঁচকলার খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর গোল গোল করে খানিকটা মোটা করে স্লাইস কাটুন। একটি পাত্রে খানিকটা জল নিয়ে তাতে সামান্য নুন দিয়ে কাঁচকলাটি সেদ্ধ করতে বসান।
অর্ধেক সেদ্ধ হলে জল ঝরিয়ে রেখে দিন। এবার কড়ায় বেশ খানিকটা সরষের তেল দিন। আলুর টুকরোগুলিকে হালকা বাদামী করে ভেজে তুলুন। সেদ্ধ কাঁচকলার টুকরোগুলিও হালকা করে ভেজে নিন। এবার তেল গরম করে তাতে জিরে ও গরম মশলার ফোড়ন দিন। রসুনবাটা দিন। খানিকটা নেড়ে এবার পেঁয়াজ বাটাটা দিয়ে দিন। পেঁয়াজ বাটা খানিক কষা হয়ে গেলে তাতে আদাবাটা ও টোম্যাটোর কুচিগুলো দিন। ভালো করে কষতে থাকুন।
এরপর হলুদ, ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো ও লাল লঙ্কার গুঁড়ো ও নুন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে কষাতে থাকুন যতক্ষণ না তেল বের হতে শুরু করে (স্বাদ ঠিক করার জন্য ইচ্ছে হলে অল্প চিনিও দিতে পারেন। তবে যদি আপনার রান্নায় চিনি খাবার অভ্যেস থাকে, তাহলেই চিনি দিন)।
এরপর ওতে কাঁচকলা ও আলুর টুকরোগুলি দিয়ে আরও ভালো করে কষুন। তলা যাতে না লেগে যায়, তার খেয়াল রাখবেন। তলা লেগে যাবে মনে হলে অল্প করে জল দিয়ে আবারও কষবেন। ভালো করে মশলা কষা হলে জল দিয়ে হালকা আঁচে খানিকক্ষণ চাপা দিয়ে রেখে দিন।
যতটা গ্রেভি রাখবেন ঠিক করে বাকি জলটা মরিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন কাঁচকলা ও আলুর মধ্যে যেন ভালো করে রস ঢোকে। এবার তৈরি কাঁচকলার মশলা। গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
কাঁচকলার কোফতা
উপকরণ:
কোফতার জন্য কাঁচকলা ২ টি
মাঝারি আলু ১ টি সেদ্ধ করা
আলু ১ টিটুকরো করে কাটা
১ চামচ আদাবাটা
১/২ চামচ জিরেভাজার গুঁড়ো
কাঁচালঙ্কা মিহি করে কুচোনো ১ টি
নুন পরিমাণ মতো
আঁট করার জন্য সামান্য বেসন
গ্রেভির জন্য:
আলু ১ টি টুকরো করে কাটা
২ চামচ আদাবাটা
পেঁয়াজ বাটা ১ টি মাঝারি
টোম্যাটো পিউরি ১ টি
কাঁচালঙ্কা ১ টি
শুকনো লঙ্কা ১ টি
গরম মশলা ফোড়ন দেবার জন্য
জিরে ১ চামচ
তেজপাতা ১ টি
ধনে গুঁড়ো ১ চামচ
জিরে গুঁড়ো ১ চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো ১ চামচ
ঘি ২ চামচ
সরষের তেল
হলুদ, নুন
চিনি প্রয়োজন হলে
প্রণালী:
প্রথমে কাঁচকলার খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন ও একটি পাত্রে জল নিয়ে, তাতে অল্প নুন ও কাঁচকলার টুকরোগুলি দিয়ে সেদ্ধ করতে বসান। সেদ্ধ হয়ে গেলে কাঁচকলা ও সেদ্ধ আলু ও অল্প বেসন, পরিমাণ মতো নুন, আদাবাটা, জিরেভাজার গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে ভালো করে আঁট করে মাখুন। এরপর গোল গোল বলের মতো করে কোফতাগুলো গড়ে রাখুন।
একটি কড়ায় সরষের তেল গরম করে তাতে কোফতাগুলো সাবধানে ডুবো তেলে ভেজে রাখুন। আলুর টুকরোগুলিও হালকা বাদামী করে ভেজে রাখুন। এবার অন্য একটি কড়ায় তেল ও ঘি অর্ধেক করে মিশিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, গরম মশলা ও জিরে ফোড়ন দিন।
ফোড়ন পুড়ে যাবার আগে তাতে পেঁয়াজ বাটা দিয়ে ভালো করে কষান। পেঁয়াজ বাদামী হতে শুরু করলে আদাবাটা ও টোম্যাটো পিউরি দিয়ে ভালো করে কষতে থাকুন। অল্প পরে কাঁচালঙ্কা ও নুন দিন। স্বাদের জন্য অল্প চিনিও দিতে পারেন।
এবার ওতে ধনে ও জিরের গুঁড়ো দিন, অল্প গরম মশলার গুঁড়োও দিন ও ভালো করে কষতে থাকুন যতক্ষণ না তেল বের হতে শুরু করে। খেয়াল রাখবেন তলা যেন না লেগে যায়। তেল বের হতে শুরু করলে আলুর ভেজে রাখা টুকরোগুলো ও কাঁচকলার কোফতাগুলো গিয়ে হালকা হাতে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে জল দিয়ে দিন।
কোফতা ও আলুর টুকরোগুলোর মধ্যে যাতে রস ঢোকে সে খেয়াল রাখবেন। এরপর যতটা গ্রেভি রাখবেন ঠিক করে নামিয়ে নিন। একটা পাত্রে তরকারিটা ঢেলে ওপরে গরম মশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন কাঁচকলার কোফতার তরকারি। গরম ভাত বা রুটি দিয়ে খেতে পারেন।
কাঁচকলার খোসা বাটা
যেকোনো সবজির পুষ্টিগুণ সবথেকে বেশী উপস্থিত থাকে নাকি তার খোসাতে। তাই কাঁচকলার খোসা কিন্তু কখনও ফেলে দেবেন না। ওগুলো দিয়েও সুস্বাদু তরকারি বানানো যেতে পারে যা খুব পুষ্টিকরও বটে। কাঁচকলার খোসা দিয়েও যে তরকারি হতে পারে, ভেবে অবাক হচ্ছেন তো? দেখে নেওয়া যাক কাঁচকলার খোসা দিয়ে তৈরি সহজ সুন্দর একটি রেসিপি।
উপকরণ:
২ টি কাঁচকলার ছাড়ানো খোসা
কালোজিরে ১ চামচ
কাঁচালঙ্কা ২ টি বা তার বেশী (আপনি যেরকম ঝাল খেতে পছন্দ করবেন) সরষের তেল
নুন
প্রয়োজন হলে চিনি অল্প
প্রণালী:
প্রথমে কাঁচকলার খোসাকে একটা পাত্রে নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এরপর সেদ্ধ খোসা শিলে বেটে নিন। শিলে বাটার অসুবিধে থাকলে মিক্সিতেও মিহি করে বেটে নিতে পারেন।
এবার কড়ায় সরষের তেল গরম করে তাতে কালোজিরে ও কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিন। এরপর ওতে কাঁচকলার খোসা বাটা দিয়ে অল্পও নেড়ে নুন ও সামান্য চিনি দিন।
ভালো করে শুকনো করে নেড়ে নিয়ে নামিয়ে নিলেই তৈরি কাঁচকলার খোসা বাটা। গরম ভাতের সাথে ঝাল ঝাল কাঁচকলার খোসা বাটা খেয়ে দেখুন। দেখবেন এটা মেখেই এক থালা ভাত খেয়ে নিচ্ছেন।
তাহলে আজ কাঁচকলার সহজ অথচ মুখরোচক কয়েকটি রেসিপি জেনে নেওয়া গেল। বাড়িতে রান্না করে দেখুন, দেখবেন জমে গেছে।