আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় দেখে আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন এ আবার কি আজব উপদ্রব? চিরটা কাল শুনে এসছেন সুস্থ থাকতে বেশী করে জল খান, হোমরাচোমরা ডাক্তার থেকে শুরু করে তাবত ডায়েটিশিয়ান পর্যন্ত আপনাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে বেশী করে জল খাবার কোনো বিকল্প নেই। জল আসলে ম্যাজিক—জল খান আর ক্লিয়ার স্কিন পান, পান ফ্রেশ লুক আর অনেক অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি—এ সবই আপনার জানা। আপনিও তাই এতদিন ধরে মনের সুখে জল খেয়ে এসছেন, আশ মিটিয়ে। কিন্তু জল খাবারও যে হরেক বিপদ আছে, বা থাকতে পারে, তা নিশ্চয়ই আপনি জানেন না? আছে আছে—জল খাবারও কিন্তু নানা বিপদ-আপদ আছে। আসুন না, তার কয়েকটা দেখে নিই।
আজ্ঞে হ্যাঁ। এই আপ্তবাক্যটা তো ছোট থেকে শুনে আমরা সব্বাই বড় হই। আমাদের শরীরের প্রায় ২/৩ অংশ বা ৬৬ শতাংশই জল! রক্তের প্রধান উপাদান যে জল সে তো জানেনই। কিন্তু আমাদের শরীর যে সমস্ত কোষ দিয়ে তৈরি তারও অন্যতম প্রধান উপাদান কিন্তু জল। যথার্থ অর্থেই তাই জলই আমাদের জীবন বটে! শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নিয়ম করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল খেতে হয়। আর যদি নিয়ম করে জল না খান? জল যদি কম খান তাহলে? তাহলেই দেখা দেবে ডিহাইড্রেশন।
জল কম খেলে আমাদের শরীরে যে অস্বস্তি হয়, তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় আমরা বলি ডিহাইড্রেশন। আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান উপাদান যেহেতু জল, তাই জল না খেলে অনেক সমস্যাই হতে পারে। জল কম খেলে শরীরের ফ্লুয়িড শুকিয়ে যায়। ফলে আপনিও শুকিয়ে যেতে পারেন। ঠোঁট, মুখ শুকিয়ে যাওয়া তো আছেই। তাছাড়া জল কম খেলে ত্বকও শুকিয়ে খটখটে হয়ে যায়। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা আপনাকে যে মোলায়েম ভাব দিত, তাও গায়েব হয়ে যাবে। ভাবুন তো কি বিশ্রী ব্যাপারটাই না হবে! চোখে জলের উৎপাদনও কম হবে, ফলে কান্নাও পাবে না সহজে!
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে আপনি যে জল কম খাচ্ছেন, তা বোঝার সবথেকে সহজ উপায় হল আপনার টয়লেটের রঙ দেখা। টয়লেট যদি গাঢ় রঙের হয়, বা টয়লেট করতে গিয়ে জ্বালা করে, তাহলেই কিন্তু সমস্যা। বুঝবেন জল কম খাচ্ছেন।
জল কম খেলে আপনি কিন্তু ঝিমন্ত মুরগি হয়ে যেতে পারেন। কারণ আপনি যখন ডিহাইড্রেটেড হয়ে যান, তখন আপনার রক্ত ঘন হয়ে যায়, সে সময় রক্ত সঞ্চালনের জন্য আপনার হার্টকে আরও বেশী করে পরিশ্রম করতে হয়। আর এই বিপুল পরিশ্রমের ফলে আপনার শরীর সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে দেখবেন সারাক্ষন যেন আপনার ঘুমিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। তাছাড়া জল কম খেলে আপনার কোষে জলের যোগান কম পড়বে। ফলে দেখবেন কোষের দেওয়াল আস্তে আস্তে মোটা হয়ে যাচ্ছে। আর সেইজন্য আপনিও মোটা হচ্ছেন। তাছাড়া ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা তো আছেই। জল কম খেলে এমনকি আপনার মাথাও ধরতে পারে।
জল কম খেলে কি কি হয় শুনে কি এবার আপনি পড়িমরি করে জল খেতে ছুটলেন নাকি? ধীরে বন্ধু ধীরে! জল কম খেলে বিপদ তো জানলেন, কিন্তু জল বেশী খেলেও যে বিপদ সেটা শুনে যান! ২০০৭ সালের ঘটনা। এক রেডিও স্টেশনে ‘কে কত জল খেতে পারে’ প্রতিযোগিতায় এক প্রতিযোগী তিন ঘণ্টায় নাকি ৬ লিটার জল খেয়ে ফেলেছিলেন! তারপর? অসহ্য মাথা ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশনে’ তাঁর মৃত্যু হয়! বুঝেই দেখুন তাহলে, সামান্য জল খেয়েও মানুষ মরে যেতে পারে!
জল বেশী খেলে এই দাঁতভাঙ্গা রোগটাই কিন্তু আপনার হতে পারে। সোডিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরের বিভিন্ন কাজকে তা নিয়ন্ত্রণ করে। জল বেশী খেলে আপনার রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। ফলে মাথা ঝিমঝিম, বমিভাব, অতিরিক্ত টয়লেট হওয়া ইত্যাদি নানা জিনিস হতে পারে। তাছাড়া সোডিয়ামের মাত্রা নেমে গেলে আপনার শরীর ভুলভাল জিনিস কাজ করবে, যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে! এটাই হল হাইপোন্যাট্রিমিয়া।
জল বেশী খেলে রক্তের পরিমাণ বাড়ে। ওই অতিরিক্ত রক্ত কিন্তু আপনার হার্ট যখন পাম্প করে, তখন তার ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। সুখে থাকতে ভূতে কিলোনোর তো কোনো মানেই হয় না, বলুন? তাছাড়া জল বেশী খেলে আপনার শরীরের কোষও কিন্তু ফুলে যেতে পারে, যার ফলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
যতই প্রাণপণ জল খান না কেন, এটা কিন্তু জেনে রাখুন, আপনার কিডনি ঘণ্টায় আধ লিটার জল মূত্র আকারে বাইরে বের করতে পারে। আপনি যদি কিডনির ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত জল খেয়ে নেন, তাহলে কিন্তু তা গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিডনির কাজেরও ক্ষতি করতে পারে!
ডাক্তাররা মোটামুটি দু থেকে তিন লিটার জল প্রতিদিন খেতে বলেন। সুস্থ থাকার জন্য ওটাই যথেষ্ট। তার বেশী বা কম জল খাওয়া আপনার অভ্যেস থাকলে তাকে পালটান। সুস্থ শরীরকে ব্যাতিব্যস্ত করে তোলার তো কোনো অর্থই হয় না, তাই না?
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…