সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন কি যুগের নিয়ম মেনে ঘটে না আমাদের মানুষদের হস্তক্ষেপে? সাবেককালের একান্নবর্তী পরিবার বা জয়েন্ট ফ্যামিলি প্রথা এখন ইতিহাসই বলা চলে।
পরিবার সংকুচিত হতে হতে এখন পরমাণু তুল্য নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি কনসেপ্টে এসে ঠেকেছে। এখানে নিউট্রন, প্রোটন আর ইলেক্ট্রন থুড়ি স্বামী- স্ত্রী ও সন্তান বাদে কারোর ঠাঁই নেই। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে ছুটে চলার মধ্যে এখন লাখ টাকার প্রশ্ন বিয়ের পর কেমন পরিবার বাছবেন? সেটার উত্তর পেয়ে যাবেন লেখা পড়লেই। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার আমরা উভয় দিকেই সত্য তুলে ধরবো।
জয়েন্ট ফ্যামিলির এক ঝলক:
- আগেকার দিনে পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠরা বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে আগলে রাখতেন বাড়ির সবাইকে। কাকু, জেঠু, পিসি ও তাদের ছেলেপুলেরা এক ছাদের তলায় মানুষ হতো।
- প্রেম করতে হতো সেসময় লুকিয়ে চুরিয়ে। ধরা পড়লে ঘোরতর অশান্তি বাঁধত। বেশিরভাগ বিয়ে হতো বাড়ির মতানুসারে।
- পরিবারের যৌথ কাঠামো সামাজিকতা, নৈতিকতা ও চরিত্রের ভীত মজবুত করতো।
- পারস্পরিক সম্পর্ক ও তাদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন এবং একে অপরের যত্ন নেয়ার মানবিক দিকগুলিও রক্ষিত হতো সুন্দর উপায়ে।
- জীবনের নানা সমস্যা বা খারাপ পরিস্থিতিকে সকলে মিলে মোকাবিলা করার একটা শক্তি কাজ করে একান্নবর্তী পরিবারে।
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ভালো দিক:
- এই যুগের মেয়েরা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বেছে নিচ্ছে কারণ এই ফ্যামিলিতে শ্বশুর শাশুড়ির ঝামেলা, তাদের মন জুগিয়ে চলার বায়ানাক্কা বা অশান্তি কোন্দল এসবের মধ্যে পড়তে হয় না।
- ব্যক্তি স্বাধীনতা বিকাশের প্রচুর সুযোগ থাকে। কেউ আপনার অবসর বা ফ্রি টাইম কেড়ে নিতে পারেনা বা আপনার এটিচিউড নিয়ে প্রশ্ন তোলেনা।
- সন্তানদের যত্ন নিতে পারেন স্বতন্ত্রভাবে। সন্তান আপনার সান্নিধ্য পেতে পারে। স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভর হওয়ার শিক্ষা পায়।
- আর্থিক দিক দিয়ে বেশি স্বচ্ছলতা থাকে ও মানিয়ে নেবার কোনো ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়না।
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি যখন ভবিতব্য:
- বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই রোজগেরে এবং সাধারণত ফ্ল্যাট কালচার এ বিশ্বাস রেখে তারা একটি মাত্র সন্তানেই তৃপ্ত হচ্ছেন, সেখানে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির দিকে ঝুঁকে যাবার সম্ভাবনাই বেশি।
- মেয়েরাও অনেকবেশি নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে সচেতন তাই তাদের একান্নবর্তী পরিবারের দায়িত্ব বা হেঁসেলের দায়ভার সামলানো বা একাধিক সন্তান ধারণ এর পথ কঠিন হচ্ছে।
- যেহেতু উভয়ই উপার্জনক্ষম তাই জীবনের পরিকল্পনায় সমানভাবে অংশগ্রহণ করে দুজনের মতামতকে প্রাধান্য দিন তবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন আসবে।
- ধরুন ডিনারের খরচ আপনি দিলেন আর ইন্স্যুরেন্স এর প্রিমিয়াম দিলো সে এবং খরচ ভাগাভাগি করে চলুন।
- মাসের বাজেট একসাথে বসে ঠিক করুন। আলোচনার মাধ্যমে এগোন। সঙ্গীর সাথে বেরিয়ে বাজারহাট সারতে পারেন। হয়তো বেরিয়ে দেখলেন তার দরাদরি করার ক্ষমতা আপনার চাইতে বেশি।
- সেভিংস এর প্ল্যান বানান সুষ্ঠু ভাবে এবং কে কোন খাতে কেমন খরচ করবেন সেটার এস্টিমেট সেরে ফেলুন। হাতখরচ এর ক্ষেত্র সমানভাবে বন্টন করুন।
- দায়িত্ব ভাগ দুজনের মধ্যে সমতা ও ঐক্যের মনোভাব নিয়ে আসে। একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠুন এইভাবে। দুজনের পরিবারের মধ্যে গেট টুগেদার আরেঞ্জ করে সম্পর্কের বুনিয়াদ দৃঢ় করুন। কেউ কাউকে ডমিনেট করার চেষ্টা করবেন না।
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির অসুবিধা:
- নিউক্লিয়ার পরিবারে শিশুর মানসিক মূল্যবোধের বিকাশ ঠিকঠাক গুরুজনের প্রতি অশ্রদ্ধা বা সহবতের অভাববোধ দেখা যায়।
- পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভোগবিলাসপূর্ণ রুচিবোধ ও স্বার্থপর মানসিকতার প্রাধান্য থাকে।
- যান্ত্রিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য মনস্তাত্ত্বিক দুশ্চিন্তা গ্রাস করে। সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে যায়। ডিপ্রেশন এর শিকার হন অনেকেই এভাবে।
- সন্তানদের মধ্যে একাকীত্ব আসে এবং অনলাইন ভার্চুয়াল গেমিং ইত্যাদির প্রতি ঝোঁক বাড়ে যেটা মোটেই কাম্য নয়। আচার-আচরণ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা আসে। হতাশা অব্দি জল গড়াতে পারে।
- জীবনযাপনে অনুশাসন ও শৃঙ্খলার অভাব চোখে পড়ে। জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বাস্তব চেতনা সেভাবে গড়ে উঠতে দেখা যায় না।
সংসারে ম্যাজিক আনার দাশবাস স্পেশাল টিপস:
- একান্নবর্তী পরিবারে গেলে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে প্রতিপক্ষ না ভেবে নিজের আপন করে নিন। তাদের নিজের পার্টনারের অংশ মনে করুন। দেখুন কাউকে আর অপরিচিত মনে হবেনা।
- ইগো বস্তুটিকে নিজের ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেবেন না। মার্জিত ও বিনয়ী হয়ে সবার সাথে কথা বলুন। সম্পর্কের সব তিক্ততার অবসান হবে।
- তুলনা করবেন না কোনোভাবেই। বাপের বাড়ির সাথে শ্বশুরবাড়ির তুল্যমূল্য বিচার করতে বসবেন না। প্রত্যেক পরিবারের নিজস্ব কিছু রীতিনীতি থাকে। সেটাকে যোগ্য সম্মান দিন। এতে খাপ খাইয়ে নিতে সুবিধে হবে।
- ধৈর্য ধরে পরিবারের সবার মন বোঝার চেষ্টা করুন। নিজে থেকে গিয়ে আলাপচারিতা সারুন সকলের সাথে। কেউ এড়িয়ে গেলে মাইন্ড করবেন না। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কখনোই দেবেন না।
- বাড়ির বাচ্চাদের মন জয় করুন। তাদের সাথে মিশে খেলাধুলো, বেড়ানো, গল্প বলা এসব করুন। এতে সবার চোখেই আপনার একটা চকচকে ইমেজ তৈরি হবে।
- বড়দের শ্রদ্ধা ও সঙ্গীর প্রশংসা করুন। অভিযোগ করবেন না কোনো ভাবেই। ছোট ছোট কাজেও উৎসাহ দেখান। নতুন সংসারে চ্যালেঞ্জ নিতে শিখুন এবং সাহসের সাথে ইতিবাচক হয়ে এগিয়ে যান। আপনাদের দাম্পত্য মধুর হোক এই কামনা করছি।