বয়স এখন চল্লিশের ঘরে, তবুও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার একটি ছবি আসলে ছেলে থেকে বুড়ো সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। হোক ওয়েস্টার্ন, দেশী, ফরমাল বা ক্যাজুয়াল লুক, নিজের রূপের জাদুতে বাজিমাত না করে কখনো ছাড়েন না তিনি। কেউ কেউ তো রসিকতার ছলে বলেই ফেলেন যে কয়েক জেনারেশন পার হয়ে যাবে তবু তার যৌবন এক জায়গায় আটকে থাকবে।
কথা বলছিলাম বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান সম্পর্কে। বাংলাদেশ ও ভারতে সমানভাবে ব্যস্ত এই অভিনেত্রীর রূপে সবাই ক্রাশড। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই নায়িকার রূপের রহস্য কিন্তু খুব সাধারণ। আজকের আয়োজনে থাকছে জয়া আহসানের স্কিন কেয়ার টিপস। কিভাবে ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে সুন্দর ও ফিট রাখেন তা ইতোমধ্যেই ভক্তদের মাঝে শেয়ার করেছেন তিনি।
রূপচর্চায় কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেন জয়া?
রূপচর্চায় কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেন, সে প্রশ্নের জবাবে জয়া জানান তিনি হারবাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। কারণ হারবাল প্রসাধনী সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর আগে দুই-তিনটি নাইট কেয়ার ক্রিম ব্যবহার করেন মুখে। কখনো কখনো নারকেল তেলও মুখে মাখেন।
আমরা সাধারণত নারকেল তেল খুব একটা পছন্দ করিনা চিটচিটে অনুভূতির জন্য। কিন্তু জয়া আহসান এই তেল ভীষণ পছন্দ করেন। মুখ ও চুল মসৃণ রাখতে এই তেল ব্যবহার করতে তিনি কখনো ভুলেন না। এমনকি মাথায় তেল নিয়েও অবলীলায় শুট করেন। তিনি অতিরিক্ত মেকআপ কখনোই করেন না। হালকা মেকআপে নিজেকে স্নিগ্ধ ও সুন্দর দেখাতে ভালোবাসেন।
এমনিতে ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের বেসের সাথে ফেস পাউডারের হালকা টাচআপ করেন। এটুকু বাদে তিনি আর কোন প্রসাধনী ব্যবহার তেমন করেন না। আর শুটিংয়ে সবসময় মেকআপ কিট সাথে করে নিয়ে যান। প্রফেশনাল মেকআপে ব্যবহার করেন ম্যাক ও ক্রিয়োলানের কম্বিনেশন। অনেক সময় ববি ব্রাউন দিয়েও বেস মেকআপ করে থাকেন তিনি। ম্যাক, শিসিডো, আরবান ডিকে তার পছন্দের লিপস্টিক ব্র্যান্ড।
এছাড়াও ভক্তদের জন্য তিনি কিছু বিউটি টিপস শেয়ার করেছেন। মাসে এক-দুইবার ত্বকে চন্দন আর গোলাপজলের ফেসমাস্ক ব্যবহারে তিনি ত্বককে কোমল রাখেন। তাঁর মতে, পুষ্টিকর খাবার আর প্রচুর পানি পান হচ্ছে সব ঋতুতে স্কিন ঠিক রাখার আসল মন্ত্র। জয়া আহসানের মেকআপ টিপস সম্পর্কে জানতে চান? জেনে নিন সিম্পল কিন্তু গর্জিয়াস মেকআপের কৌশল। পরিষ্কার ত্বকে প্রথমে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরে স্কিন টোন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। এরপরে সারা মুখে ও গলায় কমপ্যাক্ট লাগানোর পালা।
চোখজোড়ায় স্মোকি লুক আনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ওয়াইন ও উড রঙের শেডের মিশেল, ব্রাশ করে নিন ভ্রু-র নিচের অংশে। চোখের পাতায় হালকা বেইজ রঙের শ্যাডো অ্যাপ্লাই করুন। ভ্রুজোড়া মোটা করে এঁকে কাজল ও মাস্কারা লাগিয়ে নিন। চোখ সাজানোর পরে চেহারার বাকি অংশ সাজিয়ে ফেলুন মানানসই ব্লাশার দিয়ে। ঠোঁটে লাগাতে পারেন ডুয়াল টোনড শেডের লিপস্টিক। সবশেষে হাইলাইটারের ব্যবহার চেহারায় এনে দিবে কমপ্লিমেন্টারি লুক।
নিয়ম মাফিক ব্যায়ামে নিজেকে সুন্দর রাখাঃ
সবচেয়ে বড় কথা হল, তিনি শুধুমাত্র ব্যায়াম করেই নিজের চেহারার উজ্জ্বলতা ধরে রেখেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের চেহারা ন্যাচারালি গ্লো ও রিফ্রেশড থাকে। এবং তিনিও এভাবেই নিজের চিরযৌবনা রূপ ধরে রাখতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, শরীরচর্চা তাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। প্রতিনিয়ত শরীরচর্চার কারণে জয়াকে আলাদা করে ফেসপ্যাক বা ফেসিয়াল ব্যবহার করতে হয় না।
রূপচর্চা নিয়ে খুব একটা মাথা না ঘামালেও জয়া সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন নিজের স্বাস্থ্য ও ন্যাচারাল বিউটি ধরে রাখার জন্য। এর জন্য তিনি আশ্রয় নেন কারিনা কাপুরের ডায়েটিশিয়ান রুজুতা দিবাকরের। রুজুতার লেখা বইতে আছে কেন এবং কিভাবে শরীর ও মনের সুস্থতা ফিজিক্যালি ফিট থাকার জন্য জরুরি। সেই টিপস ফলো করার কারণে চল্লিশোর্ধ্ব জয়া এখনো চঞ্চল তরুণীর মতোই ছিপছিপে গড়নের।
আগে অনেক ব্যায়াম করলেও এখন কাজের চাপে ব্যায়াম করার খুব একটা সময় পান না। কিন্তু তবুও তার ফিগার যথেষ্ট টোনড আছে। তিনি জানান, এখন হালকা ব্যায়াম করলেই চলে। যখনই সুযোগ পান তখনই ব্যায়াম সেরে ফেলেন। ব্যায়াম তার এতটাই প্রিয়। এই কাজটা করলে যে কারো চেহারায় বাড়তি উজ্জ্বলতা আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অনেক রকমের ব্যায়ামের মধ্যে অ্যারোবিকস তার ভীষণ পছন্দের। প্রতিদিন গুণে গুণে ৪৫ মিনিট অ্যারোবিকস তার করা চাই-ই চাই। আর বাড়িতে ব্যায়াম করার চাইতে জিমে গিয়ে সবার সাথে ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন জয়া। কলকাতায় কাজ থাকলে নিজস্ব প্রশিক্ষকের সাহায্যে স্ট্রেচিং করেন জয়া। আর বিদেশে গেলে ব্যায়াম সম্ভব না হলেও প্রচুর হাঁটেন তিনি।
জয়ার খাদ্যাভাস কিন্তু ইন্টারেস্টিং!
খাওয়াদাওয়া নিয়ে জয়ার কোন বাছবিচার বা হিসাব নেই। তিনি খেতে খুব ভালোবাসেন, যা সামনে থাকে তাই খান। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার হোক বা কোরিয়ান, চাইনিজ বা মেক্সিকান ফুড, সবেতেই তার রুচি আছে। নতুন রেঁস্তোরা মানে সেখানকার খাবার খেয়ে দেখতেই হবে – এমন কোন ব্যাপার তার মধ্যে নেই।
ছোটবেলা থেকেই তেতো খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে জয়ার। নানীর হাত ধরে তেতো খাবারের প্রতি ভালোবাসা এখনও অটুট আছে। তেতো খাবারের কারণে তার ত্বক ও শরীর দুটোই ভালো থাকে৷ শুধু জয়া আহসান বলে কথা না, ডায়েটিশিয়ানরাও করলার রস বা সমজাতীয় তেতো খাবারকে ডায়বেটিস প্রতিরোধ বা ওজন কমানোর একটি উপায় হিসেবে সাজেস্ট করে থাকেন।
আগেই বলেছি জয়া খেতে খুব ভালোবাসেন। অন্যান্য সেলিব্রেটিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তারা ভাত কম খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু জয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো। ভাত ছাড়া তার চলেই চলে না, দই-পান্তা ও ডিমভাজি দিয়ে ভাত জয়ার প্রিয় খাবারদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকায় থাকলে নিজের বাগানের সবজি দিয়ে দুপুরে আয়েশ করে ভাত খান। আর যদি মাঝেমধ্যে ভারী খাবার খেতে ইচ্ছা হয় তখন মাকে বললেই হয়ে যায়।
ডায়েট প্ল্যানের ব্যাপারে জয়া বরাবরই উদাসীন। তার নির্দিষ্ট কোন খাওয়ার রুটিন থাকেনা। এমনিতে স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করলেও বিপত্তি বাধে শুটিংয়ের সময়। কাজের চাপের কারণে যখন মানসিক চাপ তৈরি হয়, তখন তিনি পেটভরে ভাত খেতে না পারলে তার মাথা কাজ করে না, আর শুট ঠিকভাবে করতে পারেন না।
শুটিং সেটে দুপুরে তার জন্য আলাদা খাবার বরাদ্দ থাকলেও সবাই যা খায় তিনিও তাই খান। সকালে দুধ-চা না খেলে সারাদিনই তার পানসে যায়। কিন্তু সেটে দুধ-চা সহজে পান না তিনি। সেটে সকালের নাশতায় সিদ্ধ ডিম, কচুরি, জিলাপি খেয়ে দিব্যি শুট করতে থাকেন।
তবে ইদানীং সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে রাতের খাবার সেরে ফেলেন। আর প্রতিদিনের খাবারে সরভর্তি দুধ থাকেই, এর কোন পরিবর্তন হয় না। প্রতিদিন তিনি আট ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করেন। শুট থাকলে ছয় ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না। তখন ক্লান্তিবোধের কারণে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করেন।
নিজেকে ফিট রাখতে কোন দুইটি কাজ করা অত্যাবশ্যক?
সবসময় নিজেকে আকর্ষণীয় রাখার জন্য জয়া আহসান দুইটি মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একটি হচ্ছে প্রতিদিন ব্যায়াম, অন্যটি হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম।
ব্যায়ামে মেদ ঝরে চেহারায় আসবে বাড়তি উজ্জ্বলতা, ফিগার হবে স্লিম, এবং ত্বক দেখাবে ফরেভার ইয়াং। এবং প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমে মস্তিষ্ক থাকবে পরিষ্কার, শরীর ও মন দুটোই থাকবে ঝরঝরে।
শেষ কথা
সকল সৌন্দর্যপ্রেমী নারী জয়া আহসানের মাত্র এই দুইটি টিপস দিয়ে হয়ে উঠতে পারেন জয়ার মতো লাবণ্যময়ী। হাজার হাজার বিউটি টিপস ফলো করার চাইতে সহজ কিছু কাজ করে নিজের শরীর ঠিক রাখা সম্ভব। স্বয়ং জয়া যদি সাধারণ হয়েও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে আপনি কেন পারবেন না?