পুরী গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করেননি এমন বাঙালী বোধহয় সত্যিই বিরল। শুধু বাঙালীদের কাছেই নয়, সমগ্র হিন্দুধর্মের মানুষের কাছেই পুরীর জগন্নাথের মন্দির এক অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। হিন্দুধর্মে জগন্নাথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক দেবতা, নানা কারণে বিখ্যাতও বটে! এতই বিখ্যাত যে গোটা পুরী শহরই নামাঙ্কিত তাঁর নামে জগন্নাথ ধাম। পুরীর অলিতে-গলিতে জগন্নাথদেবকে নিয়ে প্রচলিত নানা কাহিনী-উপকাহিনীর খোঁজ আপনি সহজেই পাবেন। কিন্তু আজ আমরা জেনে নি জগন্নাথ মন্দিরের মূর্তিতে কেন হাত নেই। কী সেই কারণ যার ফলে দেবমূর্তিকে অসম্পূর্ণ রেখেই তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হল, ব্যবস্থা করা হল পুজোর! আর কেনই বা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লো বহুশ্রুত সেই প্রবাদ—‘ঠুঁটো জগন্নাথ’?
হিন্দুধর্মে সাধারণত দেব-দেবীর মূর্তি বানানো হয় পাথর বা ধাতুর সাহায্যে। ব্যাতিক্রম জগন্নাথের মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি তিনটি। কাঠ দিয়ে তৈরি সেগুলি। সেই নির্মাণেও যেন যত্নের বড়ই অভাব। যেন বা তাড়াহুড়ো করে অগোছালো ভাবে শেষ করা হয়েছে সেগুলিকে। কাহিনীটি জেনে নেওয়া যাক। কলিঙ্গ রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর ইচ্ছা হল তাঁর রাজ্যে ভগবান বিষ্ণুর একটি মন্দির বানাবেন। রাজার আদেশ বলে কথা! সেইমতো ব্যবস্থা করা হল সব। কিন্তু মূর্তি বানাতে গিয়ে রাজা পড়লেন মহা সমস্যায়। কেমন রূপ দেবেন প্রিয় দেবতার বিগ্রহকে, তাই নিয়ে ফাঁপরে পড়লেন তিনি। সমস্যার কথা ব্রহ্মাকে জানালে তিনি রাজাকে পরামর্শ দেন ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করে জেনে নিতে যে কেমন হবে তাঁর বিগ্রহ।
ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুর ধ্যান করতে শুরু করলেন। তাঁর কঠিন ধ্যানে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু দেখা দিলেন তাঁকে, জানালেন পুরীর কাছেই সমুদ্রে যে নিমগাছের গুঁড়ি ভেসে আসবে, সেখান থেকেই মূর্তি নির্মাণ করতে হবে তাঁর। বিষ্ণুর কথামতো রাজাতো গেলেন সমুদ্রতীরের সেই স্থানে। সমুদ্রে ভেসে আসা নিমগাছের গুঁড়িকে নিয়ে আসা হল মন্দিরে। রাজার কাছের শিল্পী নিযুক্ত হলেন সেই কাজে—কাঠকে বিগ্রহতে রূপান্তরিত করার কঠিন কাজ শুরু হল। কিন্তু দেখা গেল যতবারই গাছের গুঁড়িটি কাটতে যাওয়া হচ্ছে, ততবারই ভেঙে যাচ্ছে সেটি। রাজা তো পড়লেন মহা চিন্তায়। তাহলে কি তাঁর মন্দির বানানোর স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে?
এমন সময় মুশকিল আসানের মতো তাঁর সামনে আবির্ভূত হলেন এই শিল্পী। ছদ্মবেশী এই শিল্পী আসলে ছিলেন বিশ্বকর্মা। রাজাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি। কিন্তু জানালেন এক শর্ত আছে তাঁর। বন্ধ দরজার অন্তরালে তিনি মূর্তি বানাবেন। সে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ থাকলেও তিনি যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ খোলা যাবে না সে দরজা। আর তাঁর অনুমতি ছাড়া যদি খোলা হয় তবে মূর্তি বানানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বিদায় নেবেন তিনি! রাজা রাজী হলেন। বন্ধ দরজার আড়ালে ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা শুরু করলেন তাঁর কাজ।
কেটে গেল বেশ কিছুদিন। রাজা কৌতূহল চেপে রাখেন প্রাণপণে। এদিকে মূর্তির কাজ কতদূর, সে খবরও আসে না। রাজা বন্ধ দরজার ওপারে কোনো শব্দও শুনতে পান না। ইতিমধ্যে রানী তাঁকে তাগাদা দেন বারবার—বলেন মূর্তির কাজ কদ্দুর তার খোঁজ নিতে। শেষে একদিন রাজা কৌতূহল সামলাতে না পেরে খুলে ফেললেন দ্বার। শর্তভঙ্গ করেছেন রাজা। ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা এবার তাঁর পরিচয় দিলেন রাজাকে। জানালেন স্বয়ং বিষ্ণুর আদেশেই তাঁর মূর্তি নির্মাণের কাজে মর্ত্যে আগমন। কিন্তু রাজা যেহেতু তাঁর শর্ত ভঙ্গ করেছেন, তাই বিশ্বকর্মা আর বানাতে পারেন না সে মূর্তি। রাজার শত উপরোধ-অনুরোধেও টললেন না তিনি। ফিরে গেলেন স্বর্গে। মূর্তির কাজ অসমাপ্ত রেখেই। পদযুগল, কান কিছুই তৈরি হয়নি তখন সে মূর্তির, হাতও অসমাপ্ত!
নিজের অন্যায়ের জন্য প্রবল অনুশোচনায় যখন রাজা বিলাপ করছেন, তখনই স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু হাজির হলেন তাঁর সামনে। জানালেন এই অসমাপ্ত মূর্তিকেই মন্দিরে স্থাপন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে। সেই থেকে জগন্নাথের মন্দিরে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তিতে হাত নেই। অসমাপ্ত মূর্তিতেই পুজো হয়ে চলেছে বছরের পর বছর ধরে।
বিগ্রহে হাত না থাকাকে ঘিরে দ্বিতীয় একটি কাহিনীও প্রচলিত আছে। একদিন বৃন্দাবনের গোপীরা যখন তাঁদের কৃষ্ণপ্রীতির কথা আলোচনা করছিলেন, তখন কৃষ্ণ গোপনে সেগুলি শুনে নেন। গোপীরা সুভদ্রাকে নিয়োগ করেছিলেন তাঁদের আলোচনার গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য। সুভদ্রা এসমস্ত কথা শুনতে শুনতে এতই মুগ্ধ হয়ে যান যে কৃষ্ণ-বলরামকে তিনি খেয়ালই করলেন না। এদিকে গোপীদের কাহিনী শুনে তাঁদের চুল খাড়া হয়ে উঠল, হাত গুটিয়ে এল ও চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো! একারণেই পুরীতে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার ওই প্রকার রূপ। বৈষ্ণবরা এই রূপেই তাঁদের পুজো করে থাকেন।
তাহলে জেনে নেওয়া গেল পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে দেবমূর্তির কেন হাত নেই। এবার চলুন, সামনের ছুটিতে টুক করে পুরী বেড়িয়ে আসার প্ল্যানটা করে ফেলুন। আর হ্যাঁ, জগন্নাথদেবকে ভক্তিভরে প্রণাম জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…