প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং! বিয়ের আগে প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং কেন প্রয়োজন?
বিয়ের অর্থই হলো দুটো জীবনের পবিত্র মেলবন্ধন এবং সামাজিক স্বীকৃতির দ্বারা অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া। কিন্তু বিয়ের পরই যে সম্পর্ক টিকবে এটার নিশ্চয়তা দেওয়া কি যায়? বিয়ে লৌকিক স্বীকৃতি হতে পারে, সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার ঢাল না। তাইতো এখন ডিভোর্স বা বিয়ের পরই ছুটতে হচ্ছে ম্যারেজ কাউন্সেলরদের কাছে।
আমরা বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্তপরীক্ষা ও কুষ্ঠি বিচার করালেও তাদের চাহিদার কম্প্যাটিবিলিটি বুঝতে ভুল করি। যার ফলে বিয়ের পরবর্তীজীবনে সংসারের নানান চড়াই-উৎরাই পেরোতে হোঁচট খেতে হয় দম্পতিদের। এর জন্য দরকার প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং যাতে দাম্পত্য জীবনে কোনোরকম উটকো ঝামেলা এসে না পড়ে। এবার দেখে নিন কেন দরকারি এটি।
সম্পর্কের বনিবনা অটুট রাখতে:
স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং ঠিক না হলে নিত্যদিন ঝগড়া, রাগ, কষ্ট এসে সংসার ছারখার করে দেয়। ফলে দুজনেই হতাশায় ভোগেন।
বিয়ের আগে অনেকেই নিজেকে সঙ্গীর উপযুক্ত করে তার কাছে প্রেজেন্ট করে ফলে তার মনের গভীরে উদ্বেগ বা ভয় বা এক্সট্রিম বিষয়গুলি চাপা থাকে যা কাউন্সেলিং এ প্রকাশ হয়ে পড়ে।
এর ফলে অপ্রীতিকর জিনিস নিয়ে আলোচনা হওয়ায় দুজনেই নিজেদের কমফোর্ট জোন ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে ও ভবিষ্যৎ এর অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য তৈরি থাকতে পারেন।
দাম্পত্য জটের মোকাবিলা করতে:
সমস্যা কখনো বলে কয়ে আসেনা, ঝড়ঝঞ্ঝার মতো উপস্থিত হয়, তাই তার জন্য প্রস্তুত থাকাই শ্রেয়।
সাংসারিক কাজের দায়িত্ব ও তাতে অংশগ্রহণ কার কেমন হবে? কে কোন ভূমিকা নেবে তা নির্দিষ্ট করা যায়।
পেশাগত কারণবশত টাইম শিডিউল নির্ধারণ বা লং ডিস্টেন্স রিলেশন ইত্যাদি দিক সামলানো যায়।
ফলে আপনি অনেক আত্মবিশ্বাসী ও সংশয়হীন হয়ে বিবাহ সূত্রে বাঁধা পড়বেন।
স্তবতার মুখোমুখি হতে:
নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তো বটেই পরিবারের বাকি সদস্যরা যাতে দুজনের মাঝে দেয়াল না হয়ে দাঁড়ায় সেই সংক্রান্ত আলাপ আলোচনার সমাধান সূত্র কাউন্সেলিং বার করে।
ব্যক্তিগত আশা – আকাঙ্খা ও কমিটমেন্টের দিকগুলি নিজের সঙ্গীর কাছে সুস্পষ্ট ভাবে রাখতে পারেন। এতে নিজেদের রুচিবোধের তফাৎ ও মিলগুলি দেখে নিতে পারবেন।
মনের গোপন বিষয়গুলি ও পরিষ্কার হয়ে ওঠে এইভাবে।
একে অপরের মতামত জেনে নিয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে পারবেন।
এইসমস্ত বাস্তবিক দিকের মুখোমুখি করিয়ে বিয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে মানসিক শক্তি ও ইচ্ছেশক্তি দুইই সঞ্চয়ের সুযোগ পাবেন।
ধৈর্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে:
দেখুন ধৈর্য ছাড়া জীবন টেকে না সম্পর্ক তো দুরস্ত। তাই ধৈর্য সহকারে সঙ্গীর কথা শোনা ও রিয়েকশান দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
বিয়ের আগে একই ছাদের তলায় না থাকায় যে যার মতো করে স্বাধীন জীবনধারণ করে। কিন্তু বিয়ের পর জোড়ায় ইনিংস শুরু করলে তখনই যাবতীয় ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেমন সন্তানপালন বা আত্মীয়স্বজন নিয়ে মন কষাকষি শুরু হয়।
এইসময় মাথাগরম, অভিমান খুবই কমন। নিজেদের ধৈর্যের পরীক্ষা দেবার জন্য ইগো বা স্বার্থের সংঘাত গুলি অবগত করতে কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
এতে একে অপরের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হবেন ও অক্ষমতা, অভ্যাস, স্বভাব ইত্যাদির সাথে মানিয়ে নিতে সুবিধে বোধ করবেন।
প্রতারণা এড়াতে:
অনেকক্ষেত্রে প্রেমপর্বে ভুয়োতথ্য দিয়ে বিয়ে করতে দেখা গেছে। পরবর্তী জীবনে যা বয়ে এনেছে অশান্তি, কলহ ও আফসোস। যেমন – ছেলে বললো সে সরকারি চাকরি করে কিন্তু পরে দেখা গেল সে ব্যবসায়ী।
বিয়ের আগে তাই দুপক্ষের আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই আগাম সতর্কতা প্রদানের একজ ও করে কাউন্সেলিং।
তাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সুখময় সংসার পাতার জন্য কাউন্সেলিং এর উপর ভরসা করে দেখতে পারেন।
বিশেষ করে খেয়াল রাখাবেন যে বিষয়গুলি
প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং করানো মানে শুধু আরেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে নয়। প্রেম করে যারা বিয়ে করার কথা ভাবছেন তাদের জন্যও এটা সমান ভাবে জরুরী।
সম্পর্কে অনেক বছর থাকা ও একসাথে সারা জীবন কাটানোর প্ল্যান করা অর্থাৎ বিয়ে দুই এক নয়। তাই সারা জীবনের কথা মাথায় রেখে প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং করান।
বিয়ে নিয়ে মনে কোন রকমের সন্দেহ থাকলে এটি করুন। সংশয় মনে পুষিয়ে রেখে নতুন জীবনের পথ চলা শুরু করবেন না এতে হিতে বিপরীত হবে।
ছেলে মেয়ে উভয়েরই এটা করা উচিত। তবে বিয়ের আগে মেয়েদের অবশ্যই প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং করানো দারকার। কারন নিজের বাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু ছেড়ে তারা নতুন জীবনে পা রাখেন। তাই তাদের এটি সাহায্য করবে ভাবতে ও সুখে সংসার করতে।
প্রি-ম্যারিটাল কাউন্সেলিং এ গিয়ে অনেকসময় দেখা গিয়েছে যে আসলে সেই ব্যাক্তি নিজের জন্য কি চান। যা তাকে জীবনে খুশি রাখতে সাহায্য করে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
কাউন্সেলিং মানেই যে সমস্যা আছে তাই সমাধান দরকার এরকম মনোভাব রাখা ভুল। লাভ হোক বা অ্যারেঞ্জ তারা বিয়ে করতে নিশ্চিত থাকলেও এটি করতে পারেন। এতে পজেটিভ ভাইব আরও বেড়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে।