ইলিশ মাছ, নাম শুনলেই জিভে জল আসবেই। গরম ভাত ও তার সঙ্গে ইলিশ মাছ, তা সে ভাজাই হোক বা সর্ষে ইলিশ হোক বা ইলিশের পাতুরি, এর থেকে উপাদেয় খাবার আর কিছুই হতে পারে না।
বর্ষাকালে সাধারণত এই মাছটি পাওয়া যায়। তবে আজকাল বছরের সব সময় কম বেশি পেয়েই যাবেন এই মাছ বাজারে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমারে নদীতে এই মাছ পাওয়া যায়। ইলিশ মাছ সাধারণত বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। এই মাছটিকে জলের রুপোলি শস্য বলা হয়ে থাকে।
ইলিশ মাছ বিভিন্ন দেশে খাওয়া প্রচলিত থাকলেও এই মাছটি বাঙালীদের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রচলিত। খাদ্যরসিক বাঙালীর ইলিশ প্রীতির কথা নতুন করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। ইলিশ মাছের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ বাঙালীর রন্ধনের দ্বারাই সম্ভব। ভাপা ইলিশ, দই ইলিশ, ইলিশ মাছ ভাজা, ইলিশ মাছের ঝোল, ইলিশ পাতুরি ,আরো কত কি আছে বাঙালীর রন্ধন প্রণালীতে। এইরকমই তিনটি সেরা ইলিশ মাছের রেসিপি নিয়ে আজকের আলোচনা।
১. ইলিশ মাছের পাতুরি
উপকরণঃ
ইলিশ মাছ ৪ টুকরো
সর্ষে বাটা পরিমান মতো
কাঁচা লঙ্কা ৫টি ৬ টি
সর্ষের তেল
হলুদ গুঁড়ো
লবন স্বাদ অনুযায়ী
কলাপাতা
সূতো (কলাপাতা মোড়ার জন্য)
প্রণালীঃ
প্রথমে একটি পাত্রে পরিমান মতো সর্ষে বাটা, পরিমান মতো তেল, লবন, হলুদ ও অল্প কিছু লঙ্কা কুঁচি দিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিন।
একটি পাত্রে ইলিশের সাথে এই মিশ্রণটি ভালো করে মাখিয়ে নিন।
এবার পাত্রটিকে ২০ মিনিট ঢেকে রাখুন। কলাপাতাটিকে চারটি বড়ো টুকরো করে কেটে নিন। এমন ভাবে কাটুন যাতে প্রতি টুকরো দিয়ে ইলিশ মাছের টুকরোগুলোকে মোড়ানো যেতে পারে।
কলাপাতাগুলোকে আগুনের তাপে রাখতে হবে যাতে ও গুলি নরম হয়ে যায় এবং সহজেই মোড়ানো যায়।
এবার একটি কলাপাতার টুকরো নিন, তাতে ভালো করে তেল মাখিয়ে নিন। এবার তাতে আগে থেকে সর্ষে দিয়ে মাখিয়ে রাখা একটি ইলিশ মাছের টুকরো রাখুন।
এরপরে একটি বা দুটি কাঁচা লঙ্কা চিরে রেখে দিন। এবার কলাপাতাটিকে ভালো করে মুড়িয়ে সুতো বেঁধে নিন। একই ভাবে বাকি মাছের টুকরো গুলিকে কলাপাতায় মুড়িয়ে নিন।
একটি তাওয়া, বা পাত্র গ্যাসে গরম করে নিন এরপর তাতে অল্প সর্ষের তেল দিয়ে এক একটি করে কলাপাতায় মোড়ানো ইলিশ রাখুন। এবার তাওয়া বা পাত্রটি ঢেকে দিন। এবার অল্প আঁচে রান্না হতে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা সরিয়ে কলাপাতা মোড়া অবস্থায় ইলিশগুলিকে উল্টে দেখুন।
যদি একদিক কালো হয়ে যায় তবে তা উল্টে দিন। আবার ঢেকে দিন। আরও পাঁচ মিনিট রান্না হতে দিন। গ্যাস বন্ধ করুন।
প্রথমে মাছের টুকরোগুলিকে হালকা করে জলে ধুয়ে নিন। এরপর অল্প হলুদ ও লবন দিয়ে ম্যারিনেট করে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে ইলিশ মাছ গুলি হালকা করে ভেজে নিন। এবার একই তেলে বেগুন ও আলু অল্প লবন দিয়ে ভাঁজতে থাকুন।
পরিমান মতো হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো ও জিরা গুঁড়ো ও ৩ -৪ চামচ জল দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। যখন বেগুন ও আলু ভালো করে ভাজা হবে তখন এই মিশ্রণটি কড়াইতে ঢেলে দিন। মিশ্রণটি আলু ও বেগুনের সাথে ভালো করে নেড়ে চেড়ে মিশিয়ে দিন।
যখন দেখবেন এই সবজিগুলো থেকে তেল আলাদা হয়ে আসছে তখন পরিমান মতো জল ও লবনা দিয়ে মিশিয়ে নিন।
এরপর আগে থেকে ভেজে রাখা ইলিশ মাছের টুকরোগুলি কড়াইতে ঢেলে দিন। কড়াইটি ঢেকে দিন। গ্যাসের আঁচ কম করে দিন।
যতক্ষন না আলু ও বেগুন নরম হচ্ছে ততক্ষন ঢেকে রাখুন।
মোটামুটি ১৫ মিনিট পর রান্না হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
এবার একটি আলাদা পাত্রে তেল গরম করুন। তেল গরম হয়ে গেলে তাতে কাঁচা লঙ্কা এবং কালোজিরা দিয়ে রান্না করা ইলিশ মাছ ঝোল সমেত এই গরম পাত্রটিতে খুব সাবধানে ঢেলে দিন।
একচামচ খোসা ছাড়ানো সর্ষে বাটা দিন ও আরো ৫ মিনিট ফুটতে দিন। লবন স্বাদমতো হলে গ্যাস বন্ধ করুন।
প্রথমে মাছের টুকরোগুলিকে অল্প জল দিয়ে হালকা করে পরিষ্কার করে নিন। এবার টক দই এর মধ্যে সামান্য চিনি দিয়ে দইটিকে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। একটি পাত্রে ফেটানো দই, পরিমান মতো সর্ষে বাটা, লবন, হলুদ ও তেল দিয়ে ভালো করে মিশ্রণ বানিয়ে নিন।
ইলিশ মাছ এই মিশ্রণটি দিয়ে ভালো করে ম্যারিনেট করে নিন। ১০ মিনিট ম্যারিনেট করার পর একটি স্টিলের বা লোহার বাটিতে অল্প করে তেল মাখিয়ে নিয়ে ম্যারিনেট করা মাছগুলি রাখুন।
এবার তাতে কাঁচালঙ্কা ৪ থেকে ৫ টি চিরে রেখে দিন।
একটি পাত্র নিয়ে তাতে কিছুটা জল ঢালুন। এমন একটি পাত্র বাছুন যাতে ওই ইলিশ মাছ সমেত বাটিটি জলের মধ্যে বসানো যায়। এবার ভালো করে ঢেকে তার ওপর কিছু ভারী জিনিস চাপা দিয়ে দিন যাতে জলের ধাক্কায় সেটি পরে না যা যায়।
বাটি সমেত জল ভরা পাত্রটি গ্যাসে বসিয়ে দিন। গ্যাসের আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার বাটিটি জল ভরা পাত্র থেকে সরিয়ে নিন। আপনার দই ইলিশ ভাঁপা তৈরী।