নারী শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ভ্যাজাইনা বা যোনিপথ। এটিকে বলা হয় শরীরের ‘ইনার ক্যানাল’, আর ভালভা হচ্ছে ভ্যাজাইনার বাইরের এলাকা যেটা ক্লিটোরিস, ক্লিটোরাল হুড, ল্যাবিয়ার সমন্বয়ে গঠিত। ভ্যাজাইনা নিজে নিজেই পরিষ্কার হলেও ভালভার পরিচ্ছন্নতার জন্য ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করার দরকার হয়।
বাজারের ইন্টিমেট ওয়াশ ভালভা থেকে দুর্গন্ধ, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ইনফেকশন দূর করার জন্য ভালো। কিন্তু সেগুলো ভ্যাজাইনার পিএইচ ব্যালেন্স (৩.৮ – ৪.৫) নষ্ট করে ফেলে, যা একটি বড় কারণ এসব প্রোডাক্ট ব্যবহার না করার জন্য। তাই এবার ঘরেই বানিয়ে ফেলুন ইন্টিমেট ওয়াশ, যা সম্পূর্ণ নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত, এবং রেগুলার ভ্যাজাইনাল কেয়ারের জন্য উপযুক্ত। আজকের পর্বে থাকছে হোমমেইড ইন্টিমেট ওয়াশ নিয়ে বিস্তারিত।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নিব কিভাবে ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে। এটি প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের পর অথবা গোসলের সময় ব্যবহার করা যায়। অল্প পরিমাণে হাতে নিয়ে যোনিপথের বাইরের এলাকায় অর্থাৎ ভালভায় আলতো করে মাসাজ করতে হবে।
মাসাজ করার সময়ে সামনে থেকে পিছনে যেতে হবে, কিন্তু পায়ুপথের ধারেকাছে যাওয়া যাবেনা। পায়ুপথের জীবাণু যোনিপথ ও ভালভার জন্য বিপজ্জনক। আর ইন্টিমেট ওয়াশ যেন ভ্যাজাইনার ভিতরে না ঢুকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
মাসাজের পরে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর আলতো করে চেপে চেপে মুছে ফেলতে হবে৷ ইন্টিমেট ওয়াশ প্রতিদিন একবার বা দুইবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ঘন ঘন বা একদম কম ব্যবহার না করে সপ্তাহে একবার বা দুইবার করলে ভালো হয়।
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মৃদু আঁচে ৫ মিনিট জ্বাল দিন। রুম টেম্পারেচারে মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। এরপরে কাচের জারে এয়ারটাইট করে ঠান্ডা, শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুন। সঠিকভাবে সংরক্ষণে ৩০ দিন পর্যন্ত ভালো এবং ব্যবহারের উপযোগী থাকবে। সপ্তাহে একবারের বেশি এটি ব্যবহার করবেন না।
লেবু পাতায় আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅ্যালার্জিক প্রোপার্টিজ, যেগুলো পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রেখে ইন্টিমেট এরিয়া যত্নের সাথে পরিষ্কার করে। ল্যাবিয়াতে (ভ্যাজাইনাল লিপস) কোনরকম স্কিন ডিসকালারেশন থাকলে তাও ঠিক হয়ে যাবে কয়েকবার ব্যবহারে। তাছাড়া লেবু পাতার ব্যবহার ল্যাবিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে রিফ্রেশড রাখে।
ঈস্ট ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস দূর করতে টি ট্রি অয়েল চমৎকার ভূমিকা পালন করে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান ২৪-৪৮ ঘন্টার ভিতরেই রোগের উপশম করে। টি ট্রি-র বদলে ক্যামোমাইল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঈস্ট ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা জেলটা বের করে এর সাথে টকদই ও মধু মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। ভ্যাজাইনায় লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন, এরপরে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। বাড়তি মিশ্রণ ফ্রিজে রেখে দিন, ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ভালো হয়।
অ্যালোভেরা জেলে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনোল ব্যাকটেরিয়া দূর করে ভ্যাজাইনাল স্কিনকে রক্ষা করে। তাছাড়া এটি ইন্টিমেট এরিয়ায় বাজে গন্ধ হওয়া থেকেও আটকায়৷ প্রোবায়োটিকে পরিপূর্ণ টকদই ঈস্ট ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়। এর সাথে খাঁটি মধুর যোগে ঈস্ট ইনফেকশনের লক্ষণ বা ইনফেকশনজাতীয় সমস্যা ৮৮% কমে যায়।
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ১০ সেকেন্ড গরম করুন, যাতে নারিকেল তেল সম্পূর্ণ গলে যায়। তারপর ঠান্ডা করে মাইক্রোওয়েভ-সেফ বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে তেল জমে গেলে পুনরায় গরম করা যাবে তাহলে। ৩-৪ মাস নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। সপ্তাহে একবার বা সর্বোচ্চ দুইবার ব্যবহার করবেন।
অর্গানিক নারিকেল তেলে এমন কিছু থাকে যা ল্যাবিয়ার ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এবং ফাঙ্গাসকে ধ্বংস করে। পাশাপাশি এর ভিটামিন ই ল্যাবিয়াকে নরম এবং কোমল রাখে। ক্যালেন্ডুলা অয়েল ল্যাবিয়া বা ইনার থাই-তে একজিমা বা সোরিয়াসিস থাকলে সেটা সারিয়ে তোলে। এই তেল স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে।
উপকরণ দু’টি একসাথে মিশিয়ে ভ্যাজাইনায় ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপরে ভালো করে ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে মুছে ফেলুন।
নারিকেল তেল ও টি ট্রি তেল দুটোতেই আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রোপার্টিজ। এগুলো ভ্যাজাইনাতে ঈস্ট ইনফেকশনের সংক্রমণ কমায়।
সব উপকরণ দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে ভ্যাজাইনায় পরিমাণমতো লাগিয়ে ২০ মিনিট বসে থাকুন। এরপরে অবশ্যই পরিষ্কার, স্বাভাবিক পানিতে জায়গাটি ধুয়ে নিবেন। বাকি মিশ্রণ এয়ারটাইট করে সংরক্ষণ করুন। ৪-৫ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিবার ব্যবহারের আগে ঝাঁকিয়ে নিবেন। সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার না করলেই ভালো।
বেকিং সোডা ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখতে এবং হারিয়ে যাওয়া পিএইচ লেভেল পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ঈস্ট ইনফেকশন, দুর্গন্ধ, চুলকানি, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি প্রশমিত করে। হোয়াইট ভিনেগারের অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদানও ভ্যাজাইনায় বাজে গন্ধ তৈরি হওয়া আটকায়।
রসুন, পুদিনাপাতা, আদা পাউডার একসাথে বেটে একটি মসৃণ পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপরে মিশ্রণটি ১ কাপ পানিতে মেশান। ৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন, এরপরে ছেঁকে পানিটা ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। তবে সাবধান, ভ্যাজাইনায় র্যাশ থাকলে বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন অবস্থায় থাকলে এই হারবাল ওয়াশ ব্যবহার করবেন না।
রসুন, পুদিনা, এবং আদায় প্রচুর পরিমাণে সালফার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে৷ এগুলো ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করে ভ্যাজাইনায় বাজে গন্ধ হওয়া আটকায়।
সব একসাথে মিশিয়ে স্বচ্ছ ডিসপেনসার বোতলে ভরে নিন। বানানোর ২৪ ঘন্টা পরে অথবা চাইলে সাথে সাথেই ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের পূর্বে বোতল ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিবেন। রেগুলার ইন্টিমেট ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। রুম টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করলে মিশ্রণ ২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
গোলাপজলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইনফেকশন ঠিক করে, ইরিটেশন কমায়, স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে। ল্যাভেন্ডার অয়েল ভ্যাজাইনাল স্কিনে সুদিং ইফেক্ট এনে দেয় এবং ইরিটেশন কমায়। এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দুর্গন্ধও কমায়। রোজমেরি তেল ভ্যাজাইনাতে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি করে। আর উইচ হ্যাজেলে আছে ট্যানিন, যা ব্যাকটেরিয়া দমন করে, চুলকানি কমায়, হেমোরয়েড এবং পোস্টপার্টাম সোয়েলিং সারাতে সাহায্য করে।
প্রথমে ক্যামোমাইল টি ব্যাগ পানিতে ফুটিয়ে নিন এবং ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপরে আমন্ড অয়েল আর ফ্রাঙ্কিনসেন্স অয়েল এক এক করে মেশান। পুরোপুরি ঠান্ডা করে কাচের কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন। ১ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে, সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
ক্যামোমাইল ইমিউনিটি বাড়ায়, মাংসপেশির খিঁচুনি কমায়, স্ট্রেস কমায়, স্কিনকে উজ্জ্বল রাখে। এই অনন্য উপাদান ল্যাবিয়ার কোষ এবং টিস্যু পুনরুজ্জীবিত করে। ফ্রাঙ্কিনসেন্স জার্ম এবং ব্যাকটেরিয়া দমন করার জন্য অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসাবে কাজ করে। আমন্ড অয়েলে আছে ভিটামিন এ এবং ই, যা ল্যাবিয়াকে ময়েশ্চারাইজ এবং রোগ থেকে রক্ষা করে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…