Most-Popular

বাড়ির টবে লঙ্কা চাষ করুন সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করুন

কেমন লাগবে যদি খেতে বসার আগে গাছ থেকে একটা লঙ্কা পেড়ে আনা যায়? সেই লঙ্কার স্বাদই কিন্তু আলাদা। আর লঙ্কা যেহেতু সারা বছর হয়, তাই লঙ্কা বাড়িতে সহজেই আপনারা ফলাতে পারবেন। শুধু জানতে হবে ঠিক পদ্ধতি আর সেই পদ্ধতি মেনে গাছ পুঁততে হবে স্টেপ বাই স্টেপ।

কেমন মাটি দরকার?

সাধারণ যে কোনও মাটি দিয়েই লঙ্কা ভালো করে চাষ করা যায়। তবে আমরা বিশেষ একটা মাটি তৈরি করব। মাটি এইভাবে তৈরি করলে লঙ্কার ফলন খুব ভালো হবে। এর জন্য এক ভাগ নেব বাগানের সাধারণ মাটি। এর সঙ্গে মেশাবো এক ভাগ ভার্মিকম্পোজ বা কেঁচো সার। ভার্মিকম্পোজ না পেলে এক বছরের পুরনো গোবর বা পচা পাতা সার হিসেবে মিশিয়ে নিতে পারেন। এর সঙ্গে নেবেন নদীর বালি মাটি এক ভাগ। এই সব ধরণের মাটি বা সার কিন্তু ভালো কোনও নার্সারিতে পেয়ে যাবেন। এবার এই মিশ্রিত মাটি ওই স্টোনচিপের বেডিং-এর ওপর চেপে চেপে দিন। এতে মাটির মধ্যে থাকা এয়ার চলে যাবে।

বীজ প্রস্তুত

আপনার বাড়ির লঙ্কা দিয়েই বীজ প্রস্তুত হয়ে যাবে। বাড়িতে আনা পাকা লঙ্কা রোদে কয়েক দিন শুকিয়ে তার থেকে বীজ বের করে নিন। এই বীজ খবরের কাগজে মুড়ে একটি এয়ার টাইট পাত্রে রাখুন। ভালো করে শুকিয়ে না নিলে কিন্তু বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। বীজে যাতে ফাঙ্গাস না আসে তার জন্য বীজে অল্প হলুদ গুঁড়ো আর না হলে কাঠের গুঁড়ো মিশিয়ে এয়ার টাইট পাত্রে রাখতে পারেন। পাত্রটিকে অন্ধকার কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে নয় এমন জায়গায় রাখুন।

এবার প্লস্টিকের যে চায়ের কাপ হয় তা নিয়ে সেটির মধ্যে ছিদ্র করে নিন। এর মধ্যে উপরে যেভাবে মাটি তৈরি করতে বলা আছে সেই ভাবে মাটি তৈরি করে দিয়ে দিন। এবার এক একটি কাপে দু’টি করে বীজ দিন। এবার ওপর দিয়ে আবার মাটি চাপা দিন আর হাল্কা হাতে চেপে দিন। অল্প জল দিন আর ২৫ দিন মতো অপেক্ষা করুন। অল্প অল্প জল কিন্তু রোজ দিতে থাকুন।

টব প্রস্তুত করুন

লঙ্কার জন্য কীরকম টব দরকার? অবশ্যই খুব ছোট টব না। মোটামুটি মাঝারি ধরণের টব সবথেকে ভালো। আর মাটির টবই যে নিতে হবে তার কোনও মানে নেই। প্লাস্টিকের টব, বাড়িতে ব্যবহার করা কোনও পাত্র এই সবেও লঙ্কাগাছ খুব ভালো হবে।

শুধু পাত্রটি যেন খুব ছোট না হয়। টব কিনলে এমনিতেই তার নিচে ছোট ছিদ্র থাকবে। আপনারা বাড়ির পাত্র নিলে নিচে একটা ছোট ছিদ্র করে নেবেন ড্রিল মেশিন দিয়ে। এটি টবের জল নিকাশির জন্য।

এবার টবে মাটি দেওয়ার পালা। তবে মাটি দেওয়ার আগে একটা বেডিং করে নিতে হবে। তার জন্য আগে মাটির যে কোনও পাত্রে ছোট ভাঙা অংশ নিন। দেখবেন ভাঙা অংশের এক দিন একটু ঢেউ খেলানো আছে। সেই দিকটা নিচের দিকে রেখে ওই ছিদ্রর উপর দিয়ে দিন।

সেই ভাঙা টুকরো অল্প স্টোনচিপ দিয়ে ঢেকে দিন। এবার এই স্টোনচিপের উপর বাড়ি তৈরি করার সময় যে বালি ব্যবহার করা হয়, তা অল্প দিয়ে স্টোনচিপ ঢেকে দিন। এর ফলে জলের সঙ্গে ছিদ্র দিয়ে মাটি ধুয়ে বেরিয়ে যাবে না। আর টবে জল জমার সমস্যাও থাকবে না।

বীজ বপনের পদ্ধতি

উপরে যেভাবে বলা আছে ঠিক সেইভাবে টব আর মাটি তৈরি করে সেই মাটি ভরতে ভরতে টবের খানিক ওপরে আনুন। এবার ওই প্লাস্টিকের কাপ থেকে চারা বের করে সেটি টবে বসিয়ে দিন। চারার চারপাশ সুন্দর করে মাটি দিয়ে ভরে দিন আর জল দিন। এবার টবে গাছ বড় হওয়ার পালা।

কোথায় রাখবেন?

লঙ্কা গাছের জন্য সম্পূর্ণ সূর্যের আলো খুব দরকার। তাই যে জায়গায় অনেক আলো আসে সেইরকম জায়গায় এই লঙ্কার টব রেখে দিন। আবার সরাসরি সূর্যের আলোয় রাখতে না পারলেও ক্ষতি নেই। অল্প ছায়া আছে এমন জায়গায় রাখলেও লঙ্কা গাছ ভালো হবে। তাই ফ্ল্যাটে ব্যালকনির মধ্যে অনায়াসেই লঙ্কা গাছ করা যায়।

পরিচর্যা করবেন কীভাবে?

ভালো ফলন পাওয়ার জন্য কিন্তু ভালো করে পরিচর্যাও করতে হবে। লঙ্কা গাছকে উপযুক্ত খাদ্য দিতে হবে। প্রত্যেক ১৫ দিন অন্তর এক চামচ ইউরিয়া, এক চামচ পটাশ আর এক চামচ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে মাটির চারদিকে দিয়ে জল দিয়ে দিন।

গাছের বড় হওয়াও তো দরকার। আর তার জন্য গাছের দরকার ভিটামিন। আপনারা যে কোনও সারের দোকানে যাবেন আর সেখানে গিয়ে বলবেন গাছের জন্য ভিটামিন লিকুইড দিতে। কেনার সময়ে দেখে নেবেন তাতে গ্রোথ রেগুলেটর কথাটা আছে কিনা।

এবার এই লিকুইড ৩০ ফোঁটা মতো এক লিটার জলে মিশিয়ে সেই জল দশ দিন অন্তর অন্তর গাছে স্প্রে করুন। এতে গাছ বেশ ভালো ভাবে বেড়ে উঠবে আর শুকিয়েও যাবে না।

রোগ থেকে বাঁচাতে

সজীব গাছ যখন তখন রোগ তো হবেই। লঙ্কা গাছের সবচেয়ে বড় রোগ হল পাতা কুঁকড়ে যাওয়া। এর সঙ্গে ফুল ঝরে যাওয়াও কমন সমস্যা। কিন্তু রোগ আছে যখন সমাধানও আছে।

ওষুধের নাম হল রোগোটপ্লাস আর ক্যারিনা। এই দুটোই বা যে কোনও একটা এক লিটার জলে ৩০ ফোঁটা করে মিশিয়ে গাছে দশ দিন অন্তর স্প্রে করুন। গাছে পোকা হওয়া বা পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার সমস্যা হবে না।

ব্যস, লঙ্কা এবার আপনার পাতে গাছ থেকে যাওয়ার জন্য রেডি। যত রকমের পারুন লঙ্কা লাগান। উপরের পদ্ধতি মানলে, কথা দিচ্ছি, একটা গাছেই এতো লঙ্কা হবে যে খেয়ে শেষ করতে পারবেন না।

অভীক সরকার

View Comments

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago