বাচ্চাদের ছোট থেকেই ভালো স্বভাবের পাঠ কি ভাবে দেবেন?
একজন শিশু তার জীবনের মূল্যবোধ এবং জীবন শিক্ষার পাঠ প্রথম লাভ করে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে। ছোট থেকে বড় হওয়ার পর্যায়ে তারা বাবা-মাকেই নিজের আদর্শ বলে মানে।
সেক্ষেত্রে বাবা-মায়েরও কর্তব্য সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে একজন ভদ্র-নম্র, সংবেদনশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একজন মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। এর জন্য শিশুদের কয়েকটি সহজ পাঠ দেওয়া বাবা-মায়ের অবশ্য কর্তব্য।
১) ভাগ করলে আনন্দ বাড়ে
যেসব দম্পতির একটি সন্তান বিশেষত তাদের এই পাঠ দেওয়া খুবই জরুরী।
যেকোনও জিনিস, তা সে খাবার হোক বা খেলনা বা অন্য কোনও জিনিস, অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার শিক্ষা দেওয়া খুবই জরুরী।
ভাগ করলে আনন্দ বাড়ে, এই পাঠেই শিক্ষিত করে তুলুন আপনার সন্তানকে।
এছাড়াও মনের আবেগ, অনুভূতি, ভালোলাগা, খারাপলাগা সবটাই ভাগ করতে শেখান তাকে।
এতে করে তার মানসিক বিকাশের পথ আরও সুগম হবে।
২) সকলকে সমান মনে করা
শিশু একটু বড় হয়ে যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন এই পাঠ দেওয়া বিশেষ জরুরী।
ক্লাসরুমে একসঙ্গে অনেক শিশুই পড়াশোনা করে। মা-বাবা হিসাবে আপনার উচিত শিশুর মন থেকে বৈষম্যের প্রবণতা দূর করা।
একজন প্রতিদিন ভালো টিফিন আনে, আর একজনের সেরকম খাবার আনতে পারে না- এইসব বিষয়ে কাউকে বিচার করার মানসিকতা যদি আপনার সন্তানের তৈরি হয় তাহলে তা ভাঙার দায়িত্ব আপনারই।
নিরপেক্ষভাবে সে যাতে সকলের সঙ্গে মেশে সেই শিক্ষা দিন আপনার শিশুকে।
৩) দুর্বলতায় হাসি ঠাট্টা না করা
অনেকসময় এমন হয় যে শিশুরা খেলার ছলেই অন্য শিশু (বিশেষত বন্ধুর) সমালোচনা করে থাকে।
কিন্তু বাবা-মা হিসাবে আপনাদের দায়িত্ব হবে তাকে এটা বোঝানো যে সমালোচনা কারওর মনে আঘাতও দিতে পারে।
হতে পারে তার কোনও বন্ধু কথা বলার সময় একটু থেমে থেমে কথা বলে, বা হতে পারে কেউ পেন্সিল বা খাতা হারিয়ে ফেলে খুব কাঁদছে। কারোর এইধরণের দুর্বলতা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা যে ভাল মানুষের কাজ নয় এই শিক্ষাই তাদের দিন।
৪) বড়দের সন্মান করা
বাড়িতে বয়ঃজ্যেষ্ঠ (দাদু-ঠাকুমা, জেঠু, কাকু, দাদা-দিদি) কেউ থাকলে তাঁদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, কীরকম আচরণ করতে হবে, সেই শিক্ষা দিন আপনার শিশুকে।
এই যেমন ধরুন বড়দের কোনও খারাপ কথা না বলা, তাঁদের মুখে মুখে তর্ক না করা, তাঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করা ইত্যাদি।
কোনও ভুল করলে তাকে বকাবকি না করে খেলার ছলেই এসবের পাঠ দিন।
কেউ বিপদে পড়লে বাড়িতে সাধারণত ছোটদের আড়াল করার একটা প্রবণতা রয়েছে।
কিন্তু ছোট-খাটো সমস্যায় আপনার শিশুকে এগিয়ে দিন সাহায্য করতে। এই যেমন ধরুন কারওর ব্যথা লাগলে তার হাত দিয়ে ওষুধটা এগিয়ে দেওয়া বা স্কুলের কোনও বন্ধুর বিপদে আপদে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি শিক্ষা একজন শিশুকে ছোট থেকেই দেওয়া উচিত। তাহলে বড় হলেও অন্যের বিপদে-আপদে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে খুব সহজেই।
৬) কুঅভ্যাস ত্যাগ করা
ছোট শিশুদের মধ্যে অনেক সময়ে বিভিন্ন কু-অভ্যাসের প্রবণতা চোখে পড়ে। যেমন দাঁত দিয়ে নখ কাটা, নাকে আঙুল দেওয়া, অন্যকে উত্যক্ত করে মজা নেওয়া ইত্যাদি নানারকমের কুঅভ্যাস যদি নজরে পড়ে তাহলে অবিলম্বে এই বিষয়ে আপনার শিশুর সঙ্গে কথা বলুন।
তবে তা কখনওই বকাবকির মাধ্যমে নয়।
বরং এগুলির ফলে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে, বা এমন করলে বন্ধুরা খারাপ বলবে এইভাবে শিশুকে বোঝান, তাহলে সে অবশ্যই বুঝবেন।
৭) নারী-পুরুষ সমান সমান
ছোট থেকে শিশুর মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়, একটা কৌতুহল জাগে। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বিষয়ে তার কৌতুহল নিবারণ করার দায়িত্ব একজন বাবা-মায়েরই।
তাই বাবা-মায়ের উচিত নারী বা পুরুষের ব্যাখ্যায় না গিয়ে, সকলকে সমান চোখে দেখা। ‘তুমি ছেলে তুমি সব পারো’, ‘মেয়েরা দুর্বল ওদের দ্বারা কিছু হয় না’, ‘তুমি মেয়ে তোমার এইসব করা মানায় না’, ‘ছেলে হয়ে মেয়েদের মতো কাঁদছ কেন’ – এইধরণের কথা কিন্তু আপনার সন্তানের মনে অনেক গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই এসবের কথা না বলে ভালো কথা তাকে শেখান। তাতে সে নারী পুরুষের বৈষম্যে না গিয়ে বরং তাদের সমান চোখে দেখার মানসিকতা পাবে।