বর্তমানে যেদিকেই চোখ পড়ে সেদিকেই কেবল ঝলমলে স্ট্রেট চুলের বাহার চোখে পড়ে। বিগত কয়েক বছরে এই হেয়ার স্ট্রেটনিং তথা রিবন্ডিং খুবই ট্রেন্ডি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু চোখে না পড়লেও ন্যুডলসের মতো কোঁকড়ানো চুলেরও কিন্তু কদর কম নয়।
বলি অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওত কিন্তু তাঁর প্রাকৃতিক কোঁকড়ানো চুল নিয়েই বলিউডে পা রেখেছিলেন। তাই কোঁকড়ানো চুলকে একেবারে হেলাফেলা করা উচিত নয়। অনেকই এমন আছেন যাঁরা কোকড়ানো চুলের অধিকারী। প্রাকৃতিক কার্লের কিন্তু একটা আলাদা মাধুর্য রয়েছে। কিন্তু তাদের চুলের সমস্যা অনেক। বিশেষত কোঁকড়ানো চুলের পাশাপাশি তেলতেলে স্ক্যাল্প যাদের, তাদের সমস্যাটা সত্যিই খুব কঠিন। তবে সুন্দর জিনিসকে সুন্দর রাখতে একটু তো যত্নশীল হতেই হবে।
কোঁকড়ানো চুলের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন কেন?
- একেবারে নুডলসের মতো কোঁকড়ানো চুল সাধারণত শুষ্ক হয়ে থাকে।
- স্বাভাবিকভাবে চুলের গোড়ায় যে তেল তৈরি হয়, তা চুলের ডগা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না।
- এরফলে চুল হয় রুক্ষ-শুষ্ক প্রাণহীন এবং চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত তেল জমে বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।
- তাই কোঁকড়ানো চুলের অধিকারী যারা তাদের জন্য রইল চুলের যত্ন নিতে কয়েকটি সহজ ঘরোয়া সমাধান।
১) ডিমের কুসুমঃ
- ডিমের কুসুমের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ দই, আধ চা চামচ নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন।
- এই প্যাকটি সারা চুলে লাগিয়ে ২ ঘণ্টা রেখে দিয়ে।
- ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। চুল ধুয়ে ফেলুন।
- এই প্যাক চুলের গোড়ার তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে রুক্ষ-শুষ্ক কোঁকড়ানো চুলকে নরম করে তুলতে সাহায্য করে।
- সপ্তাহে এটি ২ বার করে অন্তন ব্যবহার করুন।
২) শিকাকাইঃ
- কোঁকড়ানো চুলে জট পড়াটা খুব স্বাভাবিক এবং কোঁকড়ানো চুলে জট পড়েও বেশি।
- এই অবস্থায় টেনে টেনে জট ছাড়াতে গিয়ে একসঙ্গে মুঠো মুঠো চুল উঠে যায়।
- কোঁকড়ানো চুলের গোড়া শক্ত করতে শিকাকাই খুবই কার্যকরী।
- এর জন্য শিকাকাই গুঁড়ো করে নিয়ে তার সঙ্গে নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিয়ে তা চুলের গোড়ায় মাসাজ করুন।
- এতে চুলের গোড়া হবে মজবুত। সপ্তাহে তিনবার করে এটি অ্যাপ্লাই করা যাবে।
৩) অ্যালোভেরা জেলঃ
- চুলের গোড়ায় জমা তেল দূর করে চুলকে সফট ও সিল্কি করতে ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা জেল।
- এর জন্য ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ৩ টেবিল চামচ দই এবং ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে একটা হেয়ার প্যাক বানিয়ে নিন।
- আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক কোঁকড়ানো চুলের যত্নে খুবই কার্যকর।
- সপ্তাহে তিনবার করে এটি অ্যাপ্লাই করা যাবে।
৪) জবাফুলঃ
- চুলের সৌন্দর্যে জবা ফুলের গুণ সর্বজন স্বীকৃত। কোঁকড়ানো চুলকে সফট বানাতে কয়েকটা জবা ফুল রোদে শুকিয়ে ভাল করে গুঁড়ো করে নিন।
- এবার সেই পাউডার নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে তা স্ক্যাল্পে সরাসরি অ্যাপ্লাই করুন।
- ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাসাজ করে শ্যাম্পু করে নিন।
- সপ্তাহে এটি ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করা যেতে পারে এই প্যাকটি।
৫) মধু
- কোঁকড়ানো চুল যাদের তাঁদের স্ক্যাল্পের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে মাথায় মাসাজ করুন মধু ও নারকেল তেলের মিশ্রণ।
- এতে আপনার সমস্যার সমাধান হবে চুটকিতে।
- এটি ভালো করে আধ ঘণ্টা ম্যাসাজ করে রেখে দিন।
- ২ ঘণ্টা পর ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন।
- সপ্তাহে দুবার করে এটি ব্যবহার করুন।
কোঁকড়ানো চুলের যত্ন নিতে আরও কয়েকটি টিপস-
- কোঁকড়ানো চুলে শ্যাম্পু করার ক্ষেত্রে কড়া (বেশি ক্ষারযুক্ত) শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।
- কোঁকড়ানো চুল কখনওই গরম জলে ধোবেন না, বিশেষজ্ঞরা কোকড়ানো চুল ঠান্ডা জলেই ধোয়ার পরামর্শ দেন। তাঁদের কথায় ঠান্ডা জলে কোঁকড়ানো চুলে শ্যাম্পু করলে সেই চুল দেখতে আরও উজ্জ্বল হয়।
- কোঁকড়ানো চুল ধুয়ে টাওয়াল দিয়ে ঘসে ঘসে চুল ধোবেন না। এতে চুল ভঙ্গুর হয়ে উঠতে পারে। গেঞ্জি জাতীয় কাপর দিয়ে আলতো হাতে চুল শুকনো করুন।
- কোকড়া চুলের অধিকারী যারা, তারা চুলের গোড়া সবসময় হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।
- রাতে শোওয়ার সময়ে যদি সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করেন তাহলে চুল কম পড়বে।