ইন্টারনেটে ফোরজি আসার সাথে পাল্লা দিয়ে যার রমরমা বেড়েছে তা হলো অনলাইনে ভিডিও দেখা। আর এখন ভিডিও মানেই ইউটিউব। শিক্ষা, খেলা, সংবাদ, প্রযুক্তি, রান্না, বেড়ানো, বিনোদন সহ সবকিছুই ইউটিউবের কল্যানে দেখা সম্ভব সবসময়।
ইউটিউব এখন লোকজনের আত্মপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম এবং স্বাধীন কেরিয়ার চয়েসের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার মূল কারণ এর অনলাইনে পণ্যের প্রচার ও নানা পরিষেবার মার্কেটিং।
একজন সফল ইউটিউব ভিডিও ব্লগার হতে গেলে অর্থাৎ চ্যানেলে হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার ও ভিউস পেতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও টার্গেট নিয়ে এগোতে হবে। সেই কাজের শুরু করার দিশা দেখাবো আমরা আজকের প্রতিবেদনে।
চ্যানেল যেভাবে খুলবেন স্টেপ বাই স্টেপ:
- ব্রাউজারে গিয়ে ইউটিউব ডট কম এ যান এবং ডান দিকে থ্রি ডট এ ক্লিক করে সাইন ইন করুন। এতে আপনার ইমেইল এর ঠিকানা দিতে হবে।
- পরবর্তী ধাপে চ্যানেল আইকনে প্রেস করে মাই চ্যানেলে গেলে Use Youtube As বলে একটি বক্স আসবে। সেখানে চ্যানেল এর যে নাম দিতে চান সেটা দিন। তবে খেয়াল রাখবেন সেটা হতে হবে দুটি শব্দের মধ্যে।
- দুটি শব্দের বেশি যদি চ্যানেল এর নাম হয় তবে use a business or other name এই অপশন এ ক্লিক করে পছন্দের চ্যানেল এর নাম দিন। এরপর create channel এ সাবমিট করলেই আপনার চ্যানেল তৈরি হয়ে যাবে।
- এরপর ডান দিকে create a video or post option এ ক্লিক করলে ভিডিও আপলোড বা লাইভ যাবার বিকল্প অপশন পাবেন। এখান থেকে ভিডিও পোস্ট করতে পারবেন। ভিডিও এর শিডিউল ও ঠিক করতে পারবেন।
- মাই চ্যানেল অপশন থেকে customise channel এ গিয়ে চ্যানেল আইকন ও আর্ট যোগ করতে পারেন। চ্যানেল এর ট্রেইলার ও দিতে পারেন। প্লে লিস্ট নির্বাচন ও করতে পারবেন এখানে।
- Status & feature অপশন থেকে মোবাইল নাম্বার দিয়ে চ্যানেল ভেরিফিকেশন করিয়ে নিতে পারেন।
- About এ ক্লিক করে চ্যানেল ডিস্ক্রিপসন, ইমেইল, লোকেশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার নানা লিঙ্ক এর হদিশ দিয়ে রাখতে পারেন।
ভিডিও ব্লগার এর নানা দিক যেভাবে তুলে ধরতে পারেন:
ভিডিও ব্লগিং বলতে মূলত নিজেকে সবার সামনে প্রকাশ করে ও নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের কার্যক্রম রেকর্ড করে কন্টেন্ট বানানো।
ভিডিও ব্লগিং:
- এটি বর্তমানে সেরা জনপ্রিয় ট্রেন্ড। বিশ্বে এখন সফল ইউটিউবারদের কাজই হলো নিজেদের দৈনন্দিন কাজের ঘটনা এডিট করে আপলোড করা। এই তালিকায় শোয়েব আখতার থেকে হ্যারল্ড বোল্ডার সবাই রয়েছেন।
- এর জন্য চারপাশে যা ঘটছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে, মজা করে ক্যামেরার লেন্সে উপস্থাপন করতে হয়। দরকার লাগে সঠিক প্রকাশভঙ্গি, স্পষ্টভাসিতা ও অভিনয় দক্ষতা।
- নিজের অভিব্যক্তি, নিরপেক্ষ মতামত, বন্ধুদের সাথে কথা বলা, যেকোনো এক্টিভিটি বা রিভিউ দেওয়া সবকিছুই হতে পারে কন্টেন্ট। কেসি নিস্টেট বা পৌল লগানদের সাবস্ক্রাইবার এভাবেই ছাড়িয়েছে দশ মিলিয়ন।
ওয়েব সিরিজ:
- যদি আপনি গল্প বলাতে পারদর্শী হন তবে সিরিজ তৈরি করতে পারেন। কমেডি শো, টক শো, স্কিট বা ডকুমেন্টারি যা খুশি বানাতে পারেন।
- চাহিদা আছে এমন নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করুন। দর্শকদের রুচির খেয়াল রাখুন। মোবাইল ক্যামেরাই হতে পারে আপনার রেকর্ড করার যন্ত্র।
- ভুবন বাম বা ক্যারি মিনাটি বা আমাদের বাংলার বং গাই এইভাবেই বিখ্যাত হয়েছেন কিন্তু।
অনলাইন গেমিং:
- অনলাইন গেমিং এ পাবজি বা জিটিএ এর মত গেম গুলি অনলাইনে খেলার জনপ্রিয়তা খুবই বাড়ছে বর্তমানে।
- পিউডিপাই এর গেম খেলার লাইভ স্ট্রিম দেখতে ভিড় জমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। বর্তমানে ইটুটিউবে তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
- এটির জন্য দরকার জুতসই গেমিং কমেন্টারি ও অভিনব আইডিয়া দিয়ে গেম টিকে খেলা। কারণ এমনি গেম খেললে তা বোরিং লাগবে এবং কেউ দেখবেনা।
- লাইভ স্ট্রিমিং এর জন্য চাই ব্রডকাস্টিং সফটওয়্যার ও খেলার জন্য দরকার এক্স বক্স বা প্লে স্টেশন।
প্রশিক্ষণ:
- আপনি কোন বিষয়ে ডেডিকেটেটড হলে সেটা ইউটিউবে প্রশিক্ষণ দান করতে পারেন। টিউটোরিয়াল এর কদর এখন খুব বেশি।
- আপনি সম্মান ও টাকা উভয়ই অর্জন করতে পারেন এভাবে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, স্বাস্থ্য, রূপচর্চা বা মোটিভেশন ভিডিও যা কিছু শেখাতে পারেন। আনএকাডেমী বা সন্দীপ মাহেশ্বরী এই কারণেই নাম করেছেন।
ভ্রমণ অভিজ্ঞতা:
- ট্রাভেলিং যদি আপনার প্যাশন হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করার সাথে তা আপলোড করুন ইউটিউবে।
- দর্শকরা আপনার অভিজ্ঞতা ও দর্শনীয় স্থান ঘরে বসে দেখতে ব্যাকুল। যেখানে যাবেন সেখানকার দ্রষ্টব্য জায়গা ঘুরিয়ে দেখান, বর্ণনা দিন ও তথ্যমূলক ভিডিও বানান।
কি কি বিষয় মাথায় রাখবেন:
- নিজের কাজের প্রতি আস্থা, কাজে মনোযোগ ও ইতিবাচক হওয়া খুবই দরকার।
- যদি খালি ভিউস ও টাকা কামানোর জন্য এই পথে পা বাড়ান তবে কিছুদিন পরই হতাশ হবেন ও কন্টেন্ট অভাবে ভুগবেন।
- তাই প্যাশন ও নিজস্ব ভালোলাগা জরুরি। কারেন্টের ট্রেন্ড ফলো করে ভিডিও বানান যাতে লোকের আগ্রহ থাকে। এমন টপিক বাছুন যা লোকে হামেশাই সার্চ করে।
- ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এসইও(SEO) যেটার ব্যাপারে অনেকেই অনভিজ্ঞ।
- যার পুরো নাম সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। যার দ্বারা আপনি আপনার চ্যানেলে ট্রাফিক বাড়াতে পারেন।
- কি ওয়ার্ড রিসার্চ করে ভিডিও ক্যাপশন দিন ও আকর্ষণীয় থাম্বনেল বানান। সেটার জন্য ইউটিউব এ অনেক টিউটোরিয়াল ভিডিও আছে দেখে নিতে পারেন।
- শুধু ভিডিও পোস্ট করলেই হলোনা সেটার প্রচার করুন নিজের ফেসবুক টুইটার জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। বন্ধুবান্ধবদের দিয়েও তার প্রচার সারুন।
- সবসময়ই স্বতন্ত্র ও নিজস্ব টপিকের উপর ক্রিয়েটিভ ভিডিও বানান। তাতে আপনার ট্যালেন্ট আলাদা করে চোখে পড়বে সবার।
- ভিডিও এর কোয়ালিটির উপর জোর দিন। রেজোলিউশন যাতে ৭২০পি থাকে সেটা দেখুন।
- সাথে এডিটিং এর সময় ভালো এফেক্টস ও অডিও ফাইল যোগ করতে ভুলবেন না।
- ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। যেটা অনেকেই ভুল করেন। ধৈর্য ধরুন। রাতারাতি কেউ সাফল্য পায়না।
- ভিউ না হলেও হতাশ না হয়ে নিজের কাজ করতে থাকুন। সপ্তাহে ৩-৪ টি ভিডিও পোস্ট করতে থাকুন। সফল হবেনই। শুভকামনা রইলো।