আপনার পাকস্থলী নয়, বরং আপনার মাথাই আপনার শরীরকে বলে দেয় ঠিক কখন বমি করতে হবে। কি অবাক হলেন? তাহলে আরো জানুন আমাদের মাথার মধ্যে রয়েছে কেমোরিসেপ্টর ট্রিগার জোন (CTZ) যা টক্সিনকে চিহ্নিত করে বমির সংকেত দেয়।
বমি শরীরের অপাচ্য খাবার ও দূষিত পদার্থের উদ্গমন ছাড়া আর কিছুই না। যা আমাদের দেহের অভ্যন্তরের একটি অত্যন্ত সাধারণ প্রক্রিয়া যার দ্বারা শরীর নিজের সিস্টেমকে বিশোধন করে মাত্র। অনেকসময় বমি না হলেও আমাদের বমি বমি ভাব কিন্তু অনুভূত হয়েই থাকে যা যথেষ্ট অস্বস্তিকর এবং বিরক্তির কারণ বটে। ফুড পয়জনিং, মোশন সিকনেস, হ্যাংওভার ইত্যাদির কারণে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা ঔষধ গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত কারণেও বমি ভাবের উদ্রেক হতে পারে। বাসে, ট্রেনে আপনার হলিডে ট্রিপকেও মাটি করতে এই বমি ভাবের জুড়ি মেলা ভার। যার ফলে আপনাকে ছুটিতে গিয়েও ব্যাজার মুখেই কাটাতে হতে পারে গোটা দিন। চলুন জেনে নিই ঠিক কি কি ঘরোয়া পদ্ধতির সাহায্য নেবেন এই বমি ভাব দূর করতে।
১) আদায় রাখুন বিশ্বাস
- বমিভাব যদি চেপে বসে, সেক্ষেত্রে রান্নাঘরের এই উপকরণটি কিন্তু আপনার কাছে সঞ্জীবনী।
- আদা কুচিয়ে চিবোতে পারেন বা জলের সাথে আদার রস মিশিয়েও পান করতে পারেন।
- আদার উগ্র ঝাঁঝ বমির ভাবকে তৎক্ষণাৎ দূর করে দেবে।
২) লেবু হোক লাভার
- ভ্রমণকালে বমিভাব দূর করতে ভ্রমনসঙ্গী হিসেবে বাছুন লেবুকে।
- টক জাতীয় জিনিস এমনিতেই অম্বল ভাবকে কাটিয়ে দিতে ওস্তাদ।
- তাই বমিভাব অনুভব করলেই লেবুরস পান করলে তা বমিভাব তো কাটাবেই বরং লেবুর ভিটামিন সি সহ অন্যান্য খনিজ উপাদান আপনার দুর্বলতা কাটিয়ে আপনাকে করে তুলবে তরতাজা।
- লেবু শুকলেও অনেক সময় ভালোই কাজ দেয়।
৩) শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি
- শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করেও ফল পেতে পারেন হাতে নাতে।
- প্রথমে বুকভর্তি লম্বা শ্বাস নিন নাকে। এরপর তা কিছুসময় ধরে রাখুন শরীরে। তারপর মুখ দিয়ে তা আস্তে আস্তে ছাড়ুন।
- এটি আপনার নার্ভাস সিস্টেমকে স্থিরতা দিয়ে আপনার উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।
৪) কব্জির অ্যাকুপ্রেশার
- চাইনিজ এই কৌশলও চেষ্টা করে দেখতে পারেন খুব ই উপকারী।
- এখানে আপনাকে তর্জনীর সোজাসুজি কব্জির অংশে তিনটি আঙ্গুল দ্বারা ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে ২-৩বার ম্যাসাজ করতে হবে।
- এই প্রক্রিয়া কিছুবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। ১০ মিনিট পর দেখবেন বমি ভাব একেবারে নেই।
৫) তরল আধিক্য বাড়ান
- জলই জীবন। যদি আপনি বমিভাব প্রবন হন হবে শরীরকে জলশূন্য কখনোই করবেন না।
- জলের সাথে সাথে আদা চা, পুদিনা চা, লেমনেড এর যোগান শরীরকে দিতে থাকুন।
- এই অভ্যাসের মধ্যে থাকলে শরীরে জলের ঘারতি কখনই হবে না ফলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা দূরে থাকতে পারবেন।
৬) অ্যারোমাথেরাপি’র কামাল
- ২০১৪ এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে লেমন অয়েল শোঁকা গর্ভাবস্থা জনিত বমিভাব কাটাতে কার্যকরী।
- এর জন্য পেপারমিন্ট, ল্যাভেন্ডার বা লবঙ্গের তেল বোতলে নিয়ে তার উপরিভাগে ছিদ্র করে সেই ঘ্রাণ নিলে তা বমিভাবে উপশম দেয়।
- যারা সন্তান সম্ভাবা তাদের জন্য এটি খুবই হেল্পফুল। এই সময় নানা কারনে বমি ভাব দেখা দেয় থেকে থেকেই।
- এর থেকে নিজেকে বাঁচাতে এটি অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
৭) দারুচিনি যখন দিলদার
- দারুচিনি অনেকেই মুখে রাখতে পছন্দ করেন মুখের গন্ধ দূর করার জন্য।
- কিন্তু এর ঝাঁঝালো গন্ধ বমিভাব চট করে দূর করে দেয়।
- তবে যদি কারো অসুবিধে থাকে তবে জলে সেদ্ধ করে সেই ঈষৎ উষ্ণ জল ধীরে ধীরে পান করলেও তা পাকস্থলীকে আরাম দেবে এবং সাথে ব্যাকটেরিয়া ও ধ্বংস করবে।
৮) পুদিনা/মৌরি
৯) ক্রাকার্স
- পেডিয়াট্রিসিএনদের মতে, নোনতা স্বাদের ক্রাকার জাতীয় বিস্কুট যদি খালি পেটে খাওয়া যায় তাতেও বমি ভাব দূর হয়।
- দূরপাল্লার জার্নিতে তাই এক প্যাকেট বিস্কুট হাতের কাছে রাখলে কিন্তু মন্দ নয়।
১০) খেয়াল রাখার বিষয়
- ট্রেন বা বাসে গাড়ির উল্টো দিকে মুখ করে বসবেন না, মাথা ঘোরানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
- বমি পেলে জানালার ধারে সিট দেখে বসবেন।
- মনকে শান্ত রাখুন ও রিলাক্স থাকার জন্য গান ও শুনতে পারেন।
আর উপরে দেওয়া উপায়ের মধ্যে কোন জিনিসে যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে তাহলে তা ব্যবহার করবেন না ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া।