Most-Popular

বৈবাহিক জীবনে ইগোর সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

জীবনের সুখে ও দুঃখে একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়েই শুরু হয় দাম্পত্য জীবনের পথ চলা। একই ছাদের তলায় বসবাস,পরস্পরের সাথে বোঝাপড়া ও মানিয়ে নেওয়া – সবকিছুর মূলে থাকে বৈবাহিক সম্পর্কের বিশ্বাস।

এরই মধ্যে কখন যে স্বার্থ-সংঘাত ও ইগোর লড়াই সংসারের কাঠামোতে ঘুন ধরিয়ে তার সর্বনাশ করে তা বুঝে উঠতে দেরি হয়ে যায় অনেকটাই। পরস্পরের প্রতি বিতৃষ্ণা এগিয়ে নিয়ে যায় ভাঙনের দিকে। এই ইগোর ভুত তাড়িয়ে সম্পর্ককে বিচ্ছেদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন আপনারা দুজনই। কিভাবে? স্ক্রল করে পড়ে ফেলুন তবে।

ইগো প্রবলেম এর কারণ:

  • ইগো বলতে অহং কেই বোঝানো হয়ে থাকে। যেটার উৎস হয় অন্যকে দমন করে তার জীবনধারা বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়ার ইচ্ছের মাধ্যমে।
  • অনেকক্ষেত্রে অন্যের ইচ্ছে না জেনেই তার উপর জোর করে অনেককিছু চাপিয়ে দেওয়াও হয়।
  • বিয়েকে বেশিরভাগই জীবনের একটা অংশ হিসেবে দেখেন। বড্ড বেশি ক্যাজুয়াল এপ্রোচ এর মনোভাব পোষণ করেন এটা নিয়ে।
  • সংসার রক্ষার ভার যে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই। দুটি তরী সমানতালে না চললে যে গন্তব্যে পৌঁছনো যাবেনা এটাও মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। দায়িত্ব থেকে পালিয়ে অন্যকে অকারণ দোষারোপ করায় ইগো।
  • ইগো দ্বৈত সত্তা সৃষ্টি করে। কেমন করে? ধরুন যে মানুষটি অফিসে প্রচন্ড হেল্পফুল এবং মিশুকে তিনিই বাড়ি ফিরলে স্ত্রীর সামনে ধরেন অগ্নিমূর্তি ও খিটখিটে মেজাজ। ইগো এখানে নিরাপত্তা হীনতার দিকটিই তুলে ধরে। কারণ আমাদের সমাজে শেখানো হয় স্ত্রীকে মাথায় তুলবেনা। তার মিশুকে স্বভাবের পরিচয় পেলে হয়তো স্ত্রী তাকে আর মান্য করবে না এই ধারণা চেপে বসে।
  • অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা মনোভাব এর ফলে অনেকসময় স্বামী/স্ত্রী একে অন্যের সম্মানের পরোয়া করেন না। নিজেদের চাহিদা ও শো অফ এর কারণে নিত্য বিবাদ ও ছোট বিষয় নিয়ে ইস্যু তৈরি হয়।

ইগোর হাত থেকে মুক্তির উপায়:

নিজের প্রশংসা বন্ধ করুন:

  • নিজের বড়াই করে বা নিজের গুন জাহির করা সবসময় ভালো ইম্প্রেসন তৈরি করে না। এটা আপনার ইগোকে বুস্ট করে মাত্র। নিজেকে ওভারকনফিডেন্ট করে তোলে।
  • এর ফল হয় ইগো ক্ল্যাশ। যদি আপনার স্বভাব থাকে নিজের সাফল্য বা এচিভমেন্ট নিয়ে বলার তবে সতর্ক থাকুন।

পার্টনার কে হেয় করা বন্ধ করুন:

  • মনে রাখুন একটা শান্তিপূর্ণ ঘর তখনই গড়ে ওঠে যখন স্বামী-স্ত্রী যৌথ অংশীদারিত্ব গ্রহণ করে। আর ইগো সবসময়ই বিদ্বেষ, হিংসা, অভিমান, বিচারবোধের অভাবকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে।
  • তাই পার্টনারকে বন্ধু ও আত্মীয় পরিজনের সামনে সম্মান এর সাথে ট্রিট করুন। তিনি আপত্তিজনক কথা বললেও প্রতিক্রিয়া দেবেন না। আড়ালে ডেকে এনে বুঝিয়ে বলুন।
  • এতে দুজনের সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর থাকবে কারণ ভালোবাসার ভীতই হলো ভালোবাসা, সম্মান ও আস্থা।

পার্টনারকে কমপ্লিমেন্ট দিন :

  • একজন সমালোচক হওয়ার চেয়েও একজন বুদ্ধিমান হওয়া কিন্তু ভাইটাল।কারণ যেখানে একটা খারাপ বা কটু মন্তব্য আপনাদের মধ্যে তিক্ততা আনতে পারে।
  • তাই সময়ে অসময়ে সাথীর কাজকে এপ্রিসিয়েট করতে শিখুন। তাকে উপলব্ধি করান যে আপনার সুখ ও সাফল্যের পেছনে তার অবদানই সবচেয়ে বেশি। এটি ইতিবাচক বার্তা দেয়।

একে অন্যের দুর্বলতা বোঝা :

  • ইগোর লড়াই থামাবার সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হলো একে অন্যের দুর্বলতা বোঝা।
  • প্রত্যেকের কিছু না কিছু দুর্বলতা আছে। সেটা চিহ্নিত করুন। সেটাকে তার ত্রুটি বলে ভাববেন না যেন।
  • এতে দুজনের মতের অমিল হলে মানিয়ে নিয়ে দুজনের ওপিনিয়নকে সম্মান করতে পারবেন। অপরকে জাজ করার ভুল করবেন না।
  • পার্টনার এর ব্যক্তিত্ব বোঝার ও তার আস্থা অর্জনের পথ সুগম হবে।

অদৃশ্য দেয়াল ভাঙুন :

  • আমরা একে অন্যের উপরে শর্তারোপ করে মানসিক দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলি নিজেদেরই অজান্তে। এর ফলে কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়।
  • সন্তানের ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকান ও বৃদ্ধ বাবা-মা এর যত্নের জন্যে ও নিজেদের মধ্যে সহনশীলতা ও ধৈর্য্য নিয়ে আলোচনা করুন আর এই অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে দিন।
  • ভাবুন নিজেদের চাওয়া পাওয়া কি সবকিছুর উর্ধে?যার হাত ধরে জীবনের সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ নিয়েছিলেন এবার কি তার সাথেই যুদ্ধ করবেন?
  • মিলিত ভাবে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন। সদিচ্ছা থাকলে উপায় ঠিক বেরিয়ে আসবে।

সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাটান :

  • নিজের লুক হোক বা পেশাগত স্বীকৃতি ইত্যাদি নিয়ে নিজের পার্টনারের উপর কর্তৃত্ব দেখাবেন না। নিজের শ্রেষ্টত্ব এর ভান করা বন্ধ করুন।
  • এতে দুজনের সমতা ও একতার বোধ গড়ে ওঠে। দুজনেই খোলামেলা ভাবে সবকিছু শেয়ার করতে পারেন।
  • ভুল করলে স্বীকার করুন অকপটে। অপরাধবোধে ভুগবেন না বা ইগো আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকবেন না। ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে লজ্জা নেই। এটা আপনার ভ্যালু বাড়িয়ে দেবে তার চোখে।

কোয়ালিটি টাইম কাটান :

  • সম্পর্কে ফাটল ধরার অন্যতম কারণ যোগাযোগ এর অভাব।তাই কোয়ালিটি টাইম কাটানো আন্ডারস্ট্যান্ডিং সুদৃঢ় করে ও নিজেদের স্পেস দেয়।
  • বাড়ি থেকে বেরোলে যেন ঘরে ফেরার তাড়া টা কাজ করে সেই বোধ আনুন।পার্টি বা অন্য কাজে সময় অপচয় না করে সেটা সঙ্গীকে দিন। কারণ তিনি সেটা ডিজার্ভ করেন। এটা ইগো তো নির্মূল করবেই এবং সম্পর্ক কে করবে সজীব।
Biswarup Parichha

View Comments

  • খুব সুন্দর খুবই ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনা দেরকে অনেকেই এই রকম একটা অনুভূতি পেয়ে নিজেকে ধ্ণ্য মনে করবে । উৎ সাহ পাবেন জিবনে এগিইয়ে চলার পথে ! বলেই মনে করি আরো ভালো ভালো লিখবেন ,
    ধ্ণ্যবাদ আপনাদের

    • আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago