হালফিলে টেলি মার্কেটিং যুগের এক দান হলো দারুন কর্মসংস্থান। এটার জনপ্রিয় ঠিকানা হলো কলসেন্টারে জব। বর্তমান প্রজন্মের বেশীরভাগ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের চাহিদা হলো নিজে স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং পার্টটাইম উপার্জন করে হাতখরচ সামাল দেওয়া।
একদিকে সরকারি চাকরী যেভাবে সীমিত ও তীব্র প্রতিযোগিতা পূর্ণ হয়ে উঠেছে সেখানে প্রাইভেট চাকরীর রমরমা ক্রমশই বাড়ছে। সেই জায়গায় কল সেন্টারে চাকরী জীবিকাধরণের এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে বলা চলে।
এখানে কাজ করলে এই চাকরির অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে কর্পোরেট সেক্টরে কাজে জব এক্সপিরিয়েন্স হিসেবেও দেখানো যায়। তো এই প্রেক্ষিত মাথায় আজ আমরা কল সেন্টার ঠিক কি? সেখানে কাজের ক্ষেত্রই বা কেমন? সুযোগ সুবিধা ও কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন সেটা জানানোর চেষ্টা করবো।
কল সেন্টার আদতে কি?
প্রধানত এটা হচ্ছে টেলি যোগাযোগ কেন্দ্র যেখানে কল রিসিভ ও ট্রান্সমিট এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
এই প্রতিষ্ঠানে কোন প্রোডাক্ট এর সরবরাহ, তথ্য যোগান, বিপণন ও গ্রাহকদের সেবা প্রদান করা হয়।
কলার মার্কেটিং, সিকিউরিটি সার্ভিস প্রভাইডিং, ফান্ড গঠন, ঋণ সংগ্রহ বা বাজার অনুসন্ধানের কাজেও কল সেন্টার প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে।
কাজের প্রকৃতি:
কল সেন্টারে আসলে কি কাজ করতে হয় এটা নিয়ে অনেকেরই জিজ্ঞাস্য থাকে এবং ধোঁয়াশা ও কাজ করে।
কল সেন্টারে মূলত কম্পিউটার নির্ভর কাজ যেখানে মেন ওয়ার্ক স্টেশন এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয় হেডসেট এর সাথে। একদিকে থাকেন এজেন্ট ও অন্যদিকে গ্রাহক।
কলের দুটো দিক রয়েছে। একটিকে বলে ইন বাউন্ড কল যেখানে গ্রাহক তার অভিযোগ ও জিজ্ঞাসা ব্যক্ত করেন।
আরেকটাকে বলে আউট বাউন্ড কল যেটায় এজেন্টকে পন্য ক্রয় বিক্রয় নিয়ে গ্রাহক এর সাথে কথা বলতে হয়।
কল সেন্টারে কাজ দুটি প্রকারে হয়। একটি হল ডোমেস্টিক যেখানে সাধারণত রাজ্য বা দেশীয় স্তরে কাজ হয়ে থাকে। অন্যটি আন্তর্জাতিক স্তরে যেখানে বিদেশের ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিতে হয়। এটির কাজ বিজনেস আউটসোর্সিং।
যোগ্যতা:
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এর যোগ্যতাতেই এর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিশেষত কলেজে ও ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছাত্রছাত্রীরাই এর জন্য আবেদন করে থাকেন।
কাজের জন্য কম্পিউটারে বেসিক জ্ঞান থাকা দরকার এবং টাইপিং এর স্কিল ও দেখা হয় কারণ ডাটা এন্ট্রির নানা কাজে লাগানো হয়।
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় দখল থাকা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
এই কাজ ধৈর্য ও কমিউনিকেশন দক্ষতার উপর বেশি জোর দেয়।
উত্তর দেওয়া ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া করার দক্ষতা দেখা হয়। উচ্চারণ স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়।
চাহিদা অনুযায়ী সিভি বাছাই করা হয় এবং ভয়েস টেস্ট আর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়।
আবেদন কোথায় করবেন:
কল সেন্টার কোম্পানিগুলি তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে বা তাদের পোর্টালে গিয়ে আবেদন করতে পারেন।
মেলে সিভি পাঠাতে পারেন দরকার পড়লে।
নৌকরি ডট কম বা কুইকার এর সাইটে একাউন্ট ওপেন করে সিভি আপলোড করতে পারেন। অনেক কাজের অফার আসবে।
সুবিধা :
কল সেন্টারে ঘন্টা অনুযায়ী বেতন নির্ধারিত হয়।পার্টটাইম শিফটে ৫-৬ ঘন্টার কাজ থাকে।অন্যদিকে ফুলটাইমে সেটা আট থেকে ন ঘন্টা হয়।
প্রতিষ্ঠানের গুণমানের উপর অবশ্য বেতনের তারতম্য ঘটে।
ছুটি পাবেন সপ্তাহে একটি বা দুটি।ওভারটাইম করলে তার জন্য অতিরিক্ত বেতন থাকবে।
পদ ভিত্তিক প্রমোশন থাকে যেখানে আপনি টিম লিডার বা কাস্টমার কেয়ার এক্সজিকিউটিভ পদেও উন্নীত হতে পারেন।
অভিনব পরিবেশ,কাজে বৈচিত্র্য ও মেলামেশার পরিধি অনেক বেড়ে যায়।
কি কি কোর্স করতে পারেন এই চাকরী পেতে:
বাংলা ভাষায় যারা দক্ষ তারা তো এগিয়ে থাকবেনই কিন্তু যদি বিদেশি সংযোগে কাজ করতে হয় তবে ইংরেজ টাও সমান ভাবে কার্যকরী।
সেই জন্য স্পোকেন ইংলিশ এর ক্লাস করতে পারেন সেখানের ডিপ্লোমা কাজে আসতে পারে।
এর জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল বা রামকৃষ্ণ মিশন কালচারাল ট্রেনিং নিতেই পারেন।
ইন্টারভিউ টিপস:
যে প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতে যাচ্ছেন তার ব্যাপারে খোঁজ নিন। সেটা ব্যাংকিং, কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস না মোবাইল নেটওয়ার্ক না ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সেটা খুঁটিয়ে জানুন।
তাদের বর্তমান অবস্থা,পণ্যের চাহিদা, কর্মীদের পরিবেশ ওয়েবসাইট জেনে জান। কারণ এই প্রাথমিক জিনিস জিজ্ঞাসা করা হতে পারে।
সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর যেমন হবি বা কেন এই জবে আসতে চান এই বিষয় গুলো ক্লিয়ার হয়ে যান। সুবিধে হবে।
মক ইন্টারভিউ দিন বন্ধুদের সাথে। এতে ভুলত্রুটি ধরা পড়বে ও জড়তা কাটাতে সাহায্য করবে।
সঠিক অঙ্গভঙ্গি ও পোশাকপরিচ্ছদের শালীনতা বজায় রেখে পরীক্ষা দিতে যান। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আপনার মার্জিত রুচি দেখে ইন্টার্ভিউয়ার প্লিজড হবেন।
নির্দিষ্টদিনে সমস্ত ডকুমেন্টস ও সঠিক সময়ে উপস্থিত হন কারণ নিয়মানুবর্তিতা একটা ভাইটাল জিনিস এইসব ক্ষেত্রে।
আত্মবিশ্বাসী হোন তবেই নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পরিবর্তন আসবে।আশাবাদী থাকুন কারণ এই ফিল্ডে ফ্রেশারদেরই বেশি সুযোগ দেওয়া হয় থাকে।