পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল, আমাদের শরীরেও ৭০%ই জল অর্থাৎ জলই জীবন। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, দূষিত পদার্থের অপসারণ, পরিপাক, বিপাক, সংবহন, হাড় ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এর কাজ বজায় রাখতে সাহায্য করে জল।
সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে জলের ভূমিকা তো অপরিহার্যই। কিন্তু বয়স ও ওজন অনুযায়ী শরীরে জলীয় অংশের ভারসাম্য কিভাবে বজায় রাখবেন। আসুন জেনেনি।
জল পানের পরিমান:
- বেশীরভাগ আম আদমির মতে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মোটামুটি দৈনিক ৮-১০গ্লাস জল পান করা উচিত। কিন্তু অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম জল খান কেউ আবার ঢকঢক করে সারাদিন জল খেয়েই যান।
- শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৩লিটার জল পান করা উচিত।
- নিজের ওজন জানুন। যা ওজন হবে সেই সংখ্যাকে ৩০দিয়ে ভাগ করুন। ভাগফল যা দাঁড়াবে তত লিটার জল দৈনিক পান করা উচিত। যেমন আপনার ওজন ৬০কেজি হলে আপনার ২ লিটার জল ডেলি খাওয়া উচিত।
- এছাড়াও আপনার শরীরের সচলতা, পরিশ্রম কতটা করছেন বা অনেকসময় জলবায়ুর উপরেও জল খাবার পরিমান নির্ভর করে। যেমন ওয়ার্ক আউট করে ঘাম ঝরানোর পর তেষ্টা বাড়বেই। এইসময় কমপক্ষে ৫০০মিলি জল পান করা উচিত।
জল নিয়ে থাকা কিছু ভুল ধারণা:
- আসলে জল আমরা কখনোই মেপে খাইনা। গড়পড়তা মানুষের মধ্যে জল নিয়ে অজ্ঞতা ও মিথ কাজ করে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোনো জিনিসই শরীরে গেলে তাতে ক্ষতিই হয়।
- অনেকেই ভাবেন সারাদিন গাদা গাদা জল খেলেই সব রোগ গায়েব হয়ে যাবে। কিন্তু একজন নিরোগ মানুষ বারবার জল খেলে তার শরীরে কিডনী ও লিভারের পরিশ্রুতকরনের কাজে নানা বিঘ্ন ঘটে।
- অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে গটগট করে দু গ্লাস জল খেয়ে নেন, এতে নাকি শরীরের চনমনে ভাব বাড়বে। কিন্তু আদতে এর কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
- আবার লুজ মোশনের সময় অনেকে জল বন্ধ করে দেন খাওয়া যাতে আবার বাথরুম বেশি না ছুটতে হয়। কিন্তু এতে শরীর হয়ে যায় ডিহাইড্রেটেড।
জানার মধ্যে অজানা জল:
- গ্লাস মেপেই জল খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু আপনার অজান্তে যে কত কত জল আপনার শরীরে প্রবেশ করছে সেটাও জানুন।
- প্রতি কঠিন খাবারেই জল থাকে। ফলমূল, সব্জি সবেতেই জল আছে। তরমুজ, শসা ও স্ট্রবেরীর মধ্যে ৯০% ই জল থাকে। মানুষের মোট জল চাহিদার ২০% আসে কঠিন খাদ্যবস্তু থেকেই। তাই জল চাহিদার অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়।
- এছাড়াও জুস, কফি, চা, কোলড্রিঙ্ক ইত্যাদির থেকেও আমরা নিত্যনৈমিত্তিক হারে জল গ্রহণ করেই থাকি। তাই জলের অনুপাতের দিকটা লক্ষ রেখে চলুন।
জলের নিয়ন্ত্রক:
- কিডনীর অসুখে ভুগলে তখন চিকিৎসকরা তার নির্দিষ্ট জল গ্রহণের বিধি বেঁধে দেন। যখন কিডনীতে জল ঠিকঠাক প্রবেশ করতে পারেনা, তখন জল কম খেতে বলা হয় রোগীকে। আবার শরীর থেকে জল অতিরিক্ত হারে বেরিয়ে গেলে তখন কিডনিকে ফ্লুইড দিতে বেশি করে জল খেতে বলেন নেফ্রোলজিস্টরা।
- হার্টের অসুখের ক্ষেত্রেও এনজিওপ্লাস্টি বা কার্ডিয়াক স্ট্রোক হলে হার্ট এর পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায় তখন বেশি করে জল খেতে বলা হয়। তাই চিকিৎসক এর পরামর্শ ব্যতীত দৈনিক জলগ্রহনের পরিমাণের তারতম্য করা ঠিক না।
- ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় মায়েদের জল তেষ্টা বেড়ে যায়। সেই সময় জৈবনিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে জল ও জুস বেশি করে খেতে হয়। কারণ শরীর থেকে ফ্লুইড লস হয়। গর্ভাবস্থায় ও বেশি করে জল খাওয়া উচিত।
- জলবায়ুর কারণেও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে কাজ করলে জলের চাহিদা বেড়ে যায়। দৈহিক পরিশ্রম বেশি করলে ঘাম হয় ও জলের সঞ্চয় কমে যায়। তাই নুন, লেবু, চিনির শরবত, ডাবের জল বা রসালো ফল সবই খাওয়া অভ্যাস করুন। প্রস্রাব এর বর্ণ হলুদ ধারণ করলেও এর সংকেত পেয়ে যাবেন যে শরীর চাইছে জল।
- সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো শরীরই ইঙ্গিতে জানান দেবে তার জলের ঘাটতি আছে কিনা। প্রাকৃতিক উপায়েই তা অনুভব করে তা মেনে চলুন ও সুস্থ থাকুন।