বাঙালীর বিয়ে মানে মহা ধুমধাম একরাশ হুল্লোড়ের জমায়েত। দেখতে দেখতে কখন বিয়ের শুভক্ষন এসে হাজির হয় অনেকেটের পান না। অথচ বিয়ের যাবতীয় কর্মকান্ড সুচারু ও নির্বিঘ্নে গুছিয়ে সাজানো একদম মাস্ট। এর জন্য সঠিক প্ল্যানিং ও উদ্যোগ জরুরী।
সেখানে যেন বরের আংটি থেকে কনের বেনারসী বা তত্ত্বের খুঁটিনাটি জিনিস কিছুই বাদ না যায় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। এইভাবে সঠিক পরিকল্পনা করে সীমিত বাজেটে কিভাবে বিয়ে স্মরণীয় করবেন সেই পথে এক কদম এগিয়ে দেবে আজ দাশবাস।
সাবধানের মার নেই
সময় থাকতে কেনাকাটি সেরে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ বিয়ের এত জিনিসপত্র কেনাকাটার থাকে যে হাতে সময় নিয়ে শুরু না করলে সমস্ত কিছু মনে করে সময়মতো কেনা চাপ হয়ে যায়।
বৌভাত এর ডিজাইনার ড্রেস হোক কি বিয়েতে বেনারসী কমপক্ষে দু মাস আগে কিনে রাখুন। এতে চাপমুক্ত থাকা যায় সাথে যদি শেষ মুহূর্তে ম্যাচিং সমস্যা হয় সেটাও ঠিক করে নেয়া যায়।
গয়নাগাটি আগেভাগে কিনে রাখুন। পরে দাম বেড়ে যেতে পারে আর তা ছাড়াও আগে থেকে কিনলে এস্টিমেট করতে সুবিধে।
বরের ড্রেস,আংটি ও পারলে আত্মীয়স্বজন দের জামাকাপড় লিস্ট করে কিনে রাখতে পারেন। সাথে কসমেটিকস বা অন্যান্য উপহার ও কিনতে পারেন তবে শেষ মুহূর্তের জন্য দুশ্চিন্তা করতে হয়না।
খাওয়া দাওয়া
নিমন্ত্রিতদের কাছে বিয়েবাড়ির মূল আকর্ষণই হলো ভুরিভোজ। তাই সেদিকে খেয়াল সবার আগে রাখতে হবে।
আগের জমানার থেকে এখন খাবার রুচি ও পছন্দের তালিকায় অনেক বদল এসেছে। সেই মতো নিজেদের মেনু এডজাস্ট করে নিতে হবে।
বর্তমানে মেনুতে নতুন স্বাদের কি কি পদ এর আমদানি হয়েছে সেটা নিজের ক্যাটারারকে জানিয়ে দিন। অর্ডার দেবার আগে বাজারমূল্য বুঝে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
আমিষ ও নিরামিষ সেকশন আলাদা রাখুন। তাতে অনেকের সুবিধে হবে।বিশেষত যারা পুরোপুরি ভেজ তাদের পক্ষে কল্যাণকর হবে।
ডেজার্ট এ ফল ও লো ক্যালোরি সুইট রাখুন এতে খরচ কমবে সাথে অতিথিদের মাঝে জনপ্রিয় ও হবে।
ব্যবস্থাপনা:
আগেকারদিনে আত্মীয়স্বজনরাই বিয়ের ডেট ফাইনাল থেকে কন্যাবিদায় সব সামলে দিতেন। সেই ট্রেন্ড ফিরিয়ে আনুন।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার পেছনে অকারণ অর্থ অপচয় করবেন না।বাড়ির সদস্য ও আত্মীয়দের মধ্যে টিম বানান ও দায়িত্ব ভাগ করে দিন।
হিসেব নিকেশ রাখা,অতিথি আপ্যায়ন বা টুকিটাকি ফরমাইসি ইত্যাদির আয়োজনে তাদের সামিল করুন ও আপনার চাহিদা জানিয়ে দিন। তারা নিজেদের কাজ মনে করেই যত্ন নিয়ে সবকিছু দেখভাল করবে।
বন্ধুদের হেল্প:
কথায় আছে বিপদের দিনে যে পাশে এসে দাঁড়ায় সেই প্রকৃত বন্ধু। এখানে আনন্দের দিনে বন্ধুমহলের সাহায্য নিন।
তাদের চেনাপরিচিতদের থেকে বিউটি আর্টিস্ট,মেকআপ এর প্রয়োজন সামগ্রী বা বাজার দোকানের নানা খুঁটিনাটি দোকানের সন্ধান বা যোগাযোগ থাকলে আপনার খরচ ও কমবে সাথে কোয়ালিটি ও ভালো পাবেন।
গয়নার ট্রিক:
দেখুন মেয়েদের বিয়ের গয়না সাধারণত বাপের বাড়ি থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে দেয়া হয়। তাই এই বিষয়ে আলাদা করে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করবেন না।
তাছাড়া ঠাকুমা দিদিমা যুগের সেইসব ক্লাসিক ডিজাইন এর গয়না আজকাল পাওয়া যায়না। এবং সেগুলোর একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
তবু যদি কিনতে হয় তবে ধনতেরস বা দিওয়ালির সময় যখন সোনা রুপোর গয়নার উপর ছাড় দেয় তখন কিনবেন তাতে সাশ্রয় হবে এবং লেটেস্ট মডেল ও পাবেন।
অনলাইন কার্ড:
বর্তমানে রিলেশন শুরু ও বিয়ের দেখাশোনা অব্দি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও অনলাইন ম্যাট্রিমনিতে হচ্ছে তবে বিয়ের নেমন্তন্ন কেন হবেনা শুনি?
আমন্ত্রিতদের লিস্ট এ দেখুন যাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করা সম্ভব নয় বা যাদের সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই তাদের ডাকতে অনলাইন ডিজিটাল কার্ডের সাহায্য নিন। সেটা হোয়াটসআপ ও মেলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন।ট্রান্সপোর্ট ও ট্রাভেল এর এক্সপেন্স এর হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
কার্ডের হার্ডকপিতেও বেশি ডেকোরেশন করবেন না। রেগুলার নিন তাতে খরচ বাঁচবে।
সাজসজ্জা:
বিয়ের স্টেজ বা ছাদনাতলা যাইহোক না কেন দেখবেন বেশি ব্যয়বহুল উপাদান হলো ফুল ও আলো।
চেষ্টা করুন টাটকা ফুলের পরিবর্তে প্লাস্টিক এর ফুলের ব্যবহার করতে তবে সেগুলো যেন মানানসই হয় দেখে নেবেন।
বর ও বউ যেখানে বসবে সেখানে সৌখিন ও টেকনিক্যাল ভাবে ডেকোরেট করবেন। পেপার কাটিং,বেলুন ও উডেন কাটাউট ব্যবহার করতে পারেন।
আলোকসজ্জায় এলইডি বাল্ব এবং লো ইলেকট্রিক কনজিউম করে এমন আলো লাগান। সারা এলাকা আলোয় না মুড়ে বুদ্ধি করে বিশেষ বিশেষ স্থান এ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলো ইউজ করে দেখতে পারেন।
পকেটের ভার কমানোর জন্য মাথায় রাখুন এগুলো:
জামাকাপড় কেনার জন্য সেলের সময় নির্বাচন করুন। স্টক নতুন আসে দোকানে উপরি পাওনা সস্তা প্রাইস।
ব্র্যান্ডেড জিনিস না কিনে লোকাল মার্কেট থেকে কিনুন। এতে অনেকটাই সুবিধেজনক অবস্থায় থাকবেন। আর লোকাল মার্কেটেও কিন্তু অনেক ভালো জিনিস পাওয়া যায়।
স্থানীয় মানুষদের সাপোর্ট রাখুন। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে ও কোনো বিপত্তি হলেও তারাই এগিয়ে আসবেন।
বিয়ের জন্য হল বা লজ বাড়ির কাছাকাছি দেখে রাখুন। আগে থেকে কথা বলে রাখুন। এতে বুকিং ও জিনিসপত্র নেওয়া আসা করতে সুবিধে হবে।
গাড়ির ডেকোরেশনে যথাসম্ভব খরচা কমাতে পারেন। সাথে ডিজে ও ব্যান্ড বাজা এসব এর পেছনে হিসেব করে চলুন।
ওয়েডিং ফটোগ্রাফার এর পেছনে গাদা গাদা টাকা খরচা করার কোনো মানে হয়না। নিজের পরিচিতর মধ্যে খোঁজ করুন ডিএসএলআর ধারী অনেক ওস্তাদ মেয়ে যাবেন। বোনাস হিসেবে প্রিওয়েডিং শুট ও করে নিতে পারেন।
বিয়ের পরদিনই বৌভাত করুন। এতে ১টা দিনের সমস্ত খরচ বেঁচে যায়।
ছুটির দিন দেখে বিয়ের ডেট ফাইনাল করুন যাতে সবাই যোগদান করতে পারেন বিয়েতে।
অফসিজনে বিয়ে করুন। শীতকাল এড়িয়ে চলুন কারণ ওইসময় সবচেয়ে বেশি বিয়ে হয় তাই সরঞ্জাম এর দাম ও আকাশছোঁয়া হয় ওইসময়।
চাইলে বর ও কনের ড্রেস ও প্রসাধন ভাড়া পাওয়া যায়। যারা এগুলো মাত্র একবার ব্যবহার করতে চান এবং এর কখনো ইউজ করবেন না ঠিক করেছেন তারা ভেবে দেখতে পারেন।