স্বাস্থ্য

তীব্র গরমের জ্বালা থেকে ঠাণ্ডা থাকতে কি কি করনীয়

বৈশাখ মাস শুরু আজ থেকে। এর মধ্যেই আবহাওয়া জানান দিচ্ছে গরমের তীব্রতা কতটা হতে পারে এইবছর। আর গরম মানেই শরীর গরম হয়ে হাজারো সমস্যা লেগেই থাকে। তাই সেই তীব্র গরমের জন্য তৈরি রাখুন নিজেকে। কি কি করবেন রইল তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

কি কি কারণে বাড়তে পারে শরীরের তাপমাত্রা

বিভিন্ন কারণেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। যেমন অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় অনেকক্ষণ কাজ করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। খুব বেশী তেল ঝাল যুক্ত মশলা যুক্ত খাবার খেলেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আবার বেশী অ্যালকোহল খেলেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শরীরে পরিমিত জলের অভাবে ঘটলেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

খাওয়াদাওয়া

শীতে যা খুশি খাওয়া গেলেও গরমে তো টা একদমই চলে না। গরমে খাবার অবশ্যই বুঝে খেতে হবে। কারণ শরীর ঠাণ্ডা রাখতে খাবার কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে রোজের খাবারে কি কি রাখবেন?  

ডাবের জল

গরমকাল মানেই ডাবের জল কিন্তু মাস্ট। তাই গ্রীষ্মকাল জুড়ে এর চাহিদাও থাকে তুঙ্গে। হবে নাই বা কেন, শরীর ঠাণ্ডা রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। তাই গরম লাগলে কোল্ড ড্রিঙ্কের বদলে ডাবের জল খান। এটিই সবচেয়ে বেশী উপকারী শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে।

পুদিনা

গরমে পুদিনা কতটা উপকার সেটা তো সবাই জানেন। তাই পুদিনার সরবত খেতে পারেন দারুণ পেট ঠাণ্ডা হবে। লেবুর সরবতেও পুদিনা দিয়ে খেতে পারেন। মোটকথা গরমে ডায়েটে মাঝে মধ্যেই পুদিনা রাখতে হবে।

টকদই

গরমে যদি রোজ শেষ পাতে টকদই একটু রাখতে পারেন তাহলে তো কোন কথাই নেই। টকদই যেমনই খাবার হজম করিয়ে দেবে, তেমনই শরীর ঠাণ্ডা রাখতেও উপকারী। বাড়িতে পাতা টকদই খুব উপকার। শুধু শরীরের জন্য নয়, স্কিনও থাকবে উজ্জ্বল।

প্রতিদিন বেশী করে জল

এটার গুরুত্ব নিশ্চয়ই আলাদা করে বোঝাবার দরকার নেই। শরীর ঘেমে শরীর থেকে জল অনেকটাই বেড়িয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত জল না খেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়বে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে রাস্তাঘাটে হিটস্ট্রোক, শুধু তাই নয় আরও অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। কারণ জল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বেশী করে তিন চার লিটার জল প্রতিদিন খান।

লাউ

সবজীর মধ্যে লাউয়ের কথা আলাদা করে বলতেই হচ্ছে। কারণ গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে লাউ হল ম্যান অব দ্যা ম্যাচের মত। লাউ শরীরের জলের পরিমাণ ঠিক তো রাখেই, সাথে শরীর ঠাণ্ডাও করে। পাতে তো লাউ রাখতেই হবে। আরও ভালো হয় যদি লাউয়ের রস খেতে পারেন। জানি সেটা খাওয়া খুবই কষ্টের, কিন্তু খেতে পারলে শরীর তো ভালো থাকবেই সাথে আপনার স্কিন ও চকচক করবে।

 অন্যান্য শাকসবজি

লাউ ছাড়াও গরমের অন্যান্য শাকসবজি রোজ বেশী করে খেতে হবে। বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি। যেমন ঝিঙে, পটল, উচ্ছে ইত্যাদি।

ফল

গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে গ্রীষ্মকালীন সব ফলই উপকার। তাই রোজ কোন না কোন ফল খান। বিশেষ করে তরমুজ, শসা, পাকা পেঁপে, আম খুবই উপকার। তবে অন্যান্য ফলের সাথে শসাকে রোজের সাথী করে নিন। কারণ শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এটা খুব সাহায্য করবে। খাবার হজমে দারুণ উপকারী। আর গরমে তো হজমের সমস্যা লেগেই থাকে।  সাথে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশী করে খান। এটা বেশ কার্যকরী। বেশী করে লেবু ও লেবুর সরবত খান।

অন্যান্য টিপস

তাহলে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা বুঝলেন তো? একদম হালকা খাবার এবং প্রতিদিন ফল শাকসবজি। ও অবশ্যই বেশী করে জল। কিন্তু সাথে আরও কিছু টিপস মাথায় রাখা জরুরী। 

হালকা জামাকাপড় পড়ুন

গরমে সবসময় হালকা সুতির পোশাক পড়ুন। টাইট জামাকাপড় পড়ার দিন শেষ। এবার ঢিলেঢালা জামা পড়ুন যাতে হাওয়া চলাচল করতে পারে। রঙের ব্যাপারেও সচেতন হন হালকা রঙের পোশাক পড়ুন।

ঠাণ্ডা জলে পা ডুবিয়ে রাখুন

বাড়ি ফিরেই ঠাণ্ডা জল খাবার বদলে ঠাণ্ডা জলে পা ডুবিয়ে রাখুন। মানে একটি গামলায় ঠাণ্ডা জল নিন। তাতে কয়েকটুকরো বরফ দিন। এই জলে কিচ্ছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখুন। দেখবেন কতটা ফ্রেশ লাগবে।

একান্তই ঠাণ্ডা জল খাবার ইচ্ছা হলে কিচ্ছুক্ষণ পর খান। কারণ রোদ থেকে এসে শরীরের তাপমাত্রা বেশী থাকে। আর হঠাৎ করে ঠাণ্ডা জলের কারণে শরীরে তাপমাত্রার তারতম্য হয় যা থেকে শরীর খারাপ হতে পারে।

ঝাল মশলাদার খাবার একদম নয়

লক্ষ্য করে দেখেছেন কি তেল ঝাল যুক্ত খাবার বেশী খেলে গরম বেশী লাগে? হ্যাঁ কারণ এইসব খাবার বেশী খেলে শরীর গরম হয়ে যায়। আর গরমে শরীর বেশী গরম করে লাভ নেই। তাই এইসব খাবার থেকে বিরত থাকুন। একদম হালকা খাবার সেদ্ধ খাবার খান।

রোদ থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে বাঁচান

অতিরিক্ত রোদে কাজ করা করা যতটা সম্ভব কমাতে হবে। একান্তই কাজ থাকলে, সঙ্গে ছাতা, সানগ্লাস স্কার্ফ রাখতে ভুলবেন না। তবে শুধু মুখে সানস্ক্রীন মাখলে চলবে না। চোখকেও রোদের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে হবে। তাই রোদচশমা কিন্তু মাস্ট।  

অ্যালকোহল কমান

এর আগেই দেখলাম অ্যালকোহল সেবনে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই এটি অবশ্যই কমিয়ে দিতে হবে। সাথে ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা কফি কমাতে হবে।

ভোরবেলা ব্যায়াম

শরীর ফিট রাখতে ব্যায়ামতো অবশ্যই করতে হবে। ভোরবেলা বা সন্ধ্যাবেলা করে নিন। মাঝের সময়ে গরম বেশী থাকে ওইসময়ে ব্যায়াম না করাই ভালো। তবে এটা সারাবছরই করতে পারলে ভালো। কারণ বরাবরই শরীরচর্চার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় ভোরবেলা। একান্তই সময় না পেলে সন্ধ্যাবেলা করতে পারেন।

হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কি করনীয়

গরমে রাস্তায় হঠাৎ শরীর অসুস্থ হবার কারণ হল শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশী হয়ে যাওয়া এবং শরীরে জলের পরিমাণ কমে আসা। তাই শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে অবশ্যই বেশী করে জল খান। ব্যাগে রাখুন জলের বোতল।

হঠাৎ কারুর শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে কি করবেন? শরীর খারাপ হলে দরকার শরীরের তাপমাত্রা কমানো। তাই সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা জায়গায় গাছের ছাওয়ায় যান। কিচ্ছুক্ষণ পর শরীর ঠিক হয়ে গেলে ভালো নাহলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তিকে শুইয়ে দিয়ে তার পা কিছুটা ওপর দিকে তুলে ধরুন। ঠাণ্ডা জল খাওয়ান বেশী করে। এছাড়াও মুখে চোখে জলের ঝাপটা দিন। ঘাড়ে গলায় দিন। ঠাণ্ডা জলে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছে দেওয়া যেতে পারে। তাতেও শরীর ঠিক না হলে, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

সুস্মিতা দাস ঘোষ

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago