Personal Care

চুল পড়া বন্ধ করার আয়ুর্বেদিক টিপস

প্রতিদিন চুল পড়া তেমন আতঙ্কের কোন বিষয় না। চিন্তার বিষয় হবে তখনই যখন চুল পড়তে পড়তে মাথা একেবারে টাকের দশা। আর আধুনিক সব প্রোডাক্ট ব্যবহারেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। চুল পড়া বন্ধ করার আয়ুর্বেদিক টিপস জানা থাকলে করতে হবে না আর দুশ্চিন্তা, ঝরবে না আর চুল। আজকের আর্টিকেলে জেনে নিন সেই জাদুকরী আয়ুর্বেদিক টিপস সম্পর্কে।

আমলকিঃ

চুল পড়া বন্ধ করার আয়ুর্বেদিক উপায়গুলোর মধ্যে সবার আগে আসবে আমলকি। এটি চুলের বৃদ্ধি ও সতেজতার জন্যও সমানভাবে উপকারী। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা চুলকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয় এবং স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আবার এর পর্যাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিড হেয়ার ফলিকলকে সতেজ রাখে। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চুলকে করে ঝলমলে। নিয়মিত আমলকির রস পান এবং আমলা অয়েল ব্যবহারের পাশাপাশি হেয়ার ফল কমাতে আমলকির বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। 

  • পরিমাণমতো আমলা পাউডার, হেনা পাউডার, এবং টকদই একসাথে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে দুই ঘন্টা রেখে দিন। এরপরে শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। 
  • আমলকির রস আর লেবুর রস দুটোই ১ টেবিল চামচ করে নিন। এরপর দুটি উপকরণ মিশিয়ে ভালো করে চুলে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন, এই টোটকা আপনার চুলের গোড়া শক্ত করবে।
  • আমলা পাউডার আর লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ঘন একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবারে পেস্টটি স্ক্যাল্পে আর চুলে ঘষে ঘষে লাগান। এরপরে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে এক ঘন্টা মাথা ঢেকে রাখুন। তারপর শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। 

নিমপাতাঃ

নিমপাতার আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ আমাদের সবারই জানা। এটি চুল ঝরে যাওয়া কমায় এবং চুলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। এই পাতা স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের গোড়া শক্ত করে। মাঝে মাঝে মাথার ত্বকে এমন কিছু চর্মরোগ বা সংক্রমণ হয় যার কারণে চুল পড়ার হার অস্বাভাবিক হয়ে যায়। খুশকি, উঁকুন, খোসপাঁচড়া, রুক্ষ স্ক্যাল্প ইত্যাদি অকালে মাথা টাক হওয়ার জন্য দায়ী। নিমপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান স্ক্যাল্পে হওয়া ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আপনি নিমপাতা বেটে বা পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

চার কাপ পরিমাণ পানিতে এক মুঠো নিমপাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর পানিটা ঠান্ডা করে এতে পুরো মাথা (বিশেষ করে স্ক্যাল্পে যেন ভালো করে পৌঁছায়) ভিজিয়ে নিন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পরে নিমের পানি মাথায় ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন এই পানি ব্যবহারে স্ক্যাল্পের ইনফেকশন কমে যাবে।

তাজা নিম পাতা মোটামুটি মিহি করে বেটে সামান্য পরিমাণে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। বড় তোয়ালে দিয়ে পুরো মাথা জড়িয়ে এক ঘন্টা রেখে দিন। এরপরে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

মেথিঃ

মেথিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া আটকায়, চুলের বৃদ্ধি ঘটায়, এবং চুল করে ঘন কালো। দৈনিক ৫০-১০০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক, কিন্তু যখনই দেখবেন এই পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, তখনই মেথি ব্যবহার করবেন। এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো মেথি দানা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ভেজা মেথি বেটে পেস্ট তৈরি করে চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিবেন। চল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পানি দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিবেন। সপ্তাহে তিনদিন এভাবে ব্যবহার করবেন, যদি প্রতিদিন করে টানা এক মাস ব্যবহার করেন তাহলে পেয়ে যাবেন মাথা ভর্তি কাঙ্ক্ষিত চুল।

শিকাকাইঃ

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, কে, এবং ডি তে ভরপুর শিকাকাই চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। তার সাথে সাথে এটি চুলের তেল-ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলে। শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে পরিচিত এই উপাদানটি স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল অটুট রাখে।

  • চুলের দৈর্ঘ্য বুঝে পরিমাণমতো শিকাকাই পাউডার নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে গোসলের সময়ে শ্যাম্পুর পরিবর্তে এই ভেজা পাউডার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন শ্যাম্পুর মতো করে। একদিন পর পর এভাবে ব্যবহার করবেন, পার্থক্যটা চোখে পড়বে খুব তাড়াতাড়ি।
  • শিকাকাইয়ের কোয়া রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিন, তারপর এটি মেশিনে গুঁড়া করে নিন। এখান থেকে ২ চা চামচ গুঁড়া এক বোতল নারিকেল তেলে মিশিয়ে ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে ১৫ দিন রেখে দিন। নির্দিষ্ট সময়ের পরে বোতলটি ঝাঁকিয়ে মাথায় তেল মাসাজ করুন। সপ্তাহে দুই বার এভাবে শিকাকাই মেশানো তেল ব্যবহার করবেন।

অ্যালোভেরাঃ

অ্যালোভেরার এনজাইম চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷ এর অ্যালকেলাইন প্রোপার্টিজ স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে। বহু গুণে গুণান্বিত অ্যালোভেরা ব্যবহারে চুল পড়া এবং তালু অস্বাভাবিক ফাঁকা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল স্ক্যাল্পে মাখিয়ে ২-৩ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানিতে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন-চারবার এভাবে ব্যবহার করবেন ভালো ফল পাওয়ার জন্য। 

পেঁয়াজঃ

চুল ঝরে পড়া রোধের জন্য সবচাইতে সহজ আয়ুর্বেদিক উপায় হচ্ছে পেঁয়াজ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং সালফার। এটি হেয়ার ফলিকলের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং স্ক্যাল্পে বাসা বাঁধা জীবাণু ও ইনফেকশনকে ধ্বংস করে। ফলে চুল পড়া কমে যায় অল্প কয়েকদিনেই। একটি পেঁয়াজ থেকে রস বের করে সেটা সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পরে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই-তিনবার মাথায় পেঁয়াজের রস লাগাতে হবে। 

ভৃঙ্গরাজঃ

ভৃঙ্গরাজ শুধু মাথা ঠান্ডা রাখে না, এটি নতুন চুল গজাতে ও চুল ঘন করতেও সাহায্য করে। কয়েকটি ভৃঙ্গরাজ পাতা রোদে শুকিয়ে নারিকেল তেলের বোতলে ডুবিয়ে রাখুন। এরপরে তেলটা দুইদিন রোদে রাখুন, তেল আস্তে আস্তে হালকা সবুজ হয়ে যাবে। এই তেল রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্যাল্পে ও চুলে মাসাজ করে নিন, সকালে চুল ধুয়ে ফেলবেন। 

রিঠাঃ

চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের ঘনত্ব ঠিক রাখতে মাথায় রিঠা ব্যবহার করতে পারেন৷ শিকাকাইয়ের মতো রিঠাও স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল ঠিক রাখে৷ কয়েকটি রিঠা ফল সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সিদ্ধ করে নিবেন। ঠান্ডা করে শ্যাম্পুর মতো করে ব্যবহার করবেন শ্যাম্পুর পরিবর্তে। প্রথমে অর্ধেক রিঠা মাথায় ৫ মিনিট ধরে মাসাজ করুন। এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে বাকি রিঠা একইভাবে ব্যবহার করুন। একদিন পর পর রিঠা এভাবে ব্যবহার করবেন। 

কেশরাজঃ

কেশরাজ চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল ঘন করে, এবং টাক হওয়া আটকায়। আপনি কেশরাজের তেল ব্যবহার করতে পারেন অথবা কেশরাজের পাতা বেটে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে শুকনো কেশরাজ সারারাত ভিজিয়ে মাথায় ঘষতে পারেন। সপ্তাহে দুই-তিনবার মাথায় কেশরাজ ব্যবহার করবেন।

আফরোজ হেলাল

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago