স্বাস্থ্য

ঠাণ্ডায় শ্বাসের সমস্যা? মেনে চলুন ঘরোয়া টিপস নিশ্বাস নিন প্রাণ খুলে

শহরের বুকে শৈত্যপ্রবাহের দাপট বাড়তেই জবুথবু ভাব জাপটে ধরেছে বাঙালিকে। কিন্তু, তার সাথে ঘরে ঘরে বাড়তে শুরু করেছে সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা লাগা। উত্তুরে হাওয়ার প্রভাবে একদিকে যেমন দ্রুত পারদের অবনমন চলছে, তেমনি এই শীতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রধান টার্গেট হয় শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ।

করোনা মহামারীর জন্য আমরা মোটামুটি জানি যে রেসপিরেটরি সমস্যা কেমন হয়ে থাকে। সেই সাথে যারা এলার্জি,এজমা ও হাঁপানির মতো রোগে ভোগেন তাঁরাও এর কোপে আরো নাজেহাল হয়ে পড়েন। সুতরাং,পরের বার ঠান্ডা লেগে গেলে যদি শ্বাসকষ্টে পড়েন তবে তড়িঘড়ি ডাক্তার এর চেম্বার ছোটার আগে আমাদের সাজেস্ট করা ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করুন ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলুন।

উপসর্গ ও লক্ষণ চিহ্নিতকরণঃ

ঠান্ডা লেগে যদি আপনার শ্বাস নিতে জটিলতা তৈরি হয় তবে মনে রাখবেন তার প্রধান কারণই হলো শ্লেষ্মা বা মিউকাস। যেগুলো আমাদের নাসারন্ধ্র পথ ও গলার অংশ জুড়ে তাদের আক্রমণ শানায়। এগুলো নানা উপসর্গ থেকে সুনিশ্চিত করা যায়।

  • শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
  • দমবন্ধ ভাব এর অনুভূতি।
  • ফুসফুসে এলভিওলাই এ অক্সিজেন এর অভাব এর ফিলিং।
  • শ্বাসনালীর সঙ্কোচন ও প্রদাহ।
  • দুর্বলতা।
  • অনিয়মিত শ্বাসক্রিয়া।

প্রতিকারঃ

হার্বাল কম্বাইন্ড চাঃ

ঠান্ডা কাটাতে চা এর নিদান চলে আসছে অনেক যুগ ধরেই। হরেক রকম ফ্লেভার ও মশলার চা এর কথা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। তবে আমরা আপনাকে একটা নতুন কৌশল বলবো যেটার প্রয়োগ ম্যাজিকতুল্য।

একটা পাত্রে জল নিয়ে তাতে এক ইঞ্চি পরিমাণ আদার স্লাইস ও কয়েকটা পুদিনা পাতা যোগ করে ফোটান। জল মরে এলে তাতে মেশান ১ টেবিলচামচ মধু। এবার মিশ্রণটা ফিল্টার করে গ্লাস এ ঢেলে ঈষৎ উষ্ণ অবস্থায় ঢকঢক দিন। এতে করে কফ জমবে না ও তরল হয়ে বেরিয়ে যাবে যাতে তা শ্বাস কার্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবেনা।

ভাপঃ

যেকোনো প্রতিকূলতা কে জয় করতে গেলে তার কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত করা উচিত। তাই এখানে নাকই হলো সেই মূল স্থান। সেটাকে রিফ্রেশ রাখতে গেলে ভাব এর জুড়ি আর কি আছে! জল ফুটিয়ে মাঝারি মুখ ওয়ালা পাত্রে রেখে মাথায় তোয়ালে দিয়ে পাত্র সমেত ঢেঁকে ভাপ টানুন ১০-১৫মিনিট। চাইলে এতে ক্যামমাইল বা ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করতে পারেন। নুন ও হলুদ দিয়ে গার্গেল ও করতে পারেন এটিও বন্ধ নাক খুলতে কার্যকরী।

গোলমরিচ ও মধুঃ

হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন বাড়িতে থাকা এই দুটি জিনিস কিন্তু আপনার নাকের বন্ধ তালার চাবি খুলে দিতে পারে। ৮-১০টা গোলমরিচ ক্রাশ করে জলে গুলে নিন ও তাতে দিন ১ টেবিলচামচ মধু। এবার আভেনে গরম করে নিন তরলটা। ছাঁকনিতে ছেঁকে পান করুন। বসা গলা ও উঠে দাঁড়াবে।

উঁচু বালিশ এর ব্যবহারঃ

রাত্রে ঘুমোনোর সময় শ্বাস নিতে সমস্যা হলে উঁচু বালিশ এর ব্যবহার করুন। মাথা উচ্চ স্থানে রেখে শুলে গলার স্পেস বেড়ে যায় ও শ্বাস সঠিক উপায়ে যেতে ও বেরোতে পারে।

প্রাণায়ামঃ

কপালভাতি, অনুলোম-বিলোম এর মত শ্বাস এর ব্যায়ামগুলো করলে শ্বাস-নালী দিয়ে বায়ু চলাচলের পথ প্রশস্ত হয়, রক্তপ্রবাহ এ ভারসাম্য তৈরি হয়, শ্বাসযন্ত্রের প্রসারণ ঘটে। এটি নিয়মিত করলে সর্দি-কাশি কাছে ঘেঁষবে না ও টনসিল এর ব্যাধি থেকেও মুক্ত থাকবেন।

দারুচিনি ও লেবুঃ

গরম জলে দারুচিনি ফুটিয়ে নিয়ে তাতে খানিক লেবু চিপড়ে সকালবেলা খালি পেটে পান করলে অব্যর্থ ফল মেলে। এই পানীয়ে থাকা এন্টি-ইনফ্লেমেটোরি ও এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ শরীর থেকে টক্সিন বার করে দেয় ও সাইনাস কে আরাম দেয়। গলার ফোলা গ্ল্যান্ডকে কমিয়ে দেয় ও শ্বাস এর যাবতীয় সমস্যা লাঘব করে।

জবর জড়িবুটিঃ

জড়িবুটির ব্যবহার আমাদের ঘরোয়া যত্নে ও টোটকায় প্রাচীন সময় থেকেই চলে আসছে। তবে এগুলো আপনি পেয়ে যাবেন আপনার হাতের নাগালেই। জোয়ান, তুলসী, আদা প্রতিটি এক টেবিলচামচ ও গুড় হাফ টেবিলচামচ পরিমাণ নিয়ে নরম আঁচে জলে ফুটিয়ে সেটা ছেঁকে পান করুন। এই দ্রবণ ফুসফুসের পেশী নমনীয় করে শ্বাস নিতে হেল্প করে।

সুস্থ ব্রিদিং এর পাসওয়ার্ডঃ

  • চেষ্টা করুন যাতে ঠান্ডা না লাগে কারণ বাঁশ না থাকলে বাঁশি ও বাজবে না। কিছু সতর্কতা ও সেফটি মেজার্স মেনে চললে অনেকটাই ভালো থাকবেন।
  • ঘরের মেঝে, আসবাব ভালো করে নিয়মিত ভাবে সাফ করুন। কাচাকাচি রেগুলার করলে ভালো হয়। পরিছন্নতা ও হাইজিন কিন্তু শ্বাস নেয়ার মূল শর্ত।
  • গরম জলে স্নান করুন। বুকে কষ্ট হলে বা গাঢ় কফ জমলে সর্ষের তেলের সাথে কালো জিরে দিয়ে ফুটিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে পায়ে,হাতে ও বুকে ম্যাসাজ করতে পারেন।
  • ধুলোবালি,ধোঁয়া,ঝুল-কালি থেকে যতটা পারেন দূরে থাকুন।
  • ধূমপান ও এলকোহল জাতীয় পানীয় বর্জন করুন।
  • আইসক্রিম,কোল্ড ড্রিঙ্কস ও এলার্জি হয় এরকম খাবার থেকে সরে আসুন।
  • মানসিক উৎকণ্ঠা, প্রেসার কম নিন ও ইতিবাচক থাকার প্রভূত চেষ্টা করুন।
  • মাস্ক বেশিক্ষন পরে থাকতে কষ্ট হলে তার বিকল্প হিসেবে ফেসশিল্ড ব্যবহার করতে পারেন। চেষ্টা করুন ক্রাউড বা ভিড়ভাট্টা যতটা এড়িয়ে যাওয়া যায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন নিউট্রিশনাল খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন। মেনুতে দই, মরসুমি ফল, সবুজ শাক সবজি রাখুন যাতে প্রো-বায়টিক উপাদান,ভিটামিন-সি,ভিটামিন-ডি,বি-১২,বি-২,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য এন্টি-অক্সিডেন্ট এ সমৃদ্ধ থাকে।
Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago