সারাদিনের ব্যস্ততা ও খাটনির পর রাত্রির শান্তির ঘুম অমৃততুল্য কিন্তু আপনার কর্তাবাবুর একটি বিরক্তিকর অভ্যাসের ফলে আপনার আরামের দফারফা হয়। ভুক্তভুগী মাত্রেই জানেন, যে নাক ডাকানোর মতো অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর সমস্যা কতটা ভয়াবহ!
আপনাকে হয়তো এর জন্য প্রায়শই পাশের ঘরে আশ্রয় নিতে হয় এবং সেটাই এখন অপনার জীবনে রোজকার রুটিন। এবার থেকে হয়রানি ভোগ না করে বা সঙ্গীর উপর চটে না গিয়ে জেনে নিন এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির সহজ কতগুলি উপায়।
নাকের গর্জন আসলে কি?
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের শ্বাসনালী অপেক্ষাকৃত সরু হয়ে থাকে ফলে সেখানে বাতাস যাতায়াত এর পথ সংকীর্ণ হয়। ঘুমের সময় নাকের রন্ধ্রপথ শিথিল হয়ে থাকে ও তাতে মিউকাস এর পর্দা সঞ্চিত হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস নাক ও গলার মাংসপেশিতে বারংবার স্পন্দিত ও কম্পিত হয় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যার জন্য নাক ডাকার শব্দ উৎপন্ন হয়। একে ডাক্তারি পরিভাষায় স্লিপ এপনিয়া বলা হয়ে থাকে।
অতএব বুঝতেই পারছেন আপনার স্বামী ইচ্ছাকৃত ভাবে এই কাজ করেন না, বরং নাক ডাকার প্রভাবে মাথার অংশে আঘাত লেগে স্মৃতি ঝাপসা হবার আশঙ্কা তৈরি হয় তাই এর সাথে আপোস না করে ঘরোয়া উপায় চেষ্টা করুন নিজেকে ও নিজের হাসবেন্ড এর জন্য।
উপায়:
১) প্রাণায়াম:
অনুলোম-বিলোম ও কপালভাতির মতো প্রাণায়াম গুলো নিয়মিত চর্চা করলে ফুসফুসে বায়ু চলাচলের জায়গা প্রশস্ত হয়। শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় আর রক্তপ্রবাহে ভারসাম্য আসে। ফলে নাক ডাকা কম হয়।
২) শোয়ার অভ্যাস:
ঘুমোনোর পজিশনের গন্ডগোলের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাক ডাকতে দেখা যায়। সেটা শুধরে নিলে চট করে সমাধান পাওয়া যায়।
চিৎ হয়ে শোবেন না, চিৎ হয়ে শুলে জিভ তালুতে লেগে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে নাক ডাকার সম্ভাবনা থাকে। গলার পেশীর ও আলগা হবার সুযোগ তৈরি হয় যেটা নাক ডাকার সুবিধে করে। তাই কাত হয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করুন এবং বালিশ যতটা সম্ভব উঁচু করে মাথা দিন। বালিশ হতে হবে শক্ত ও পাতলা।
৩) মুখের ব্যায়াম:
থাইরয়েড এর সমস্যা, গ্রোথ হরমনের আধিক্য জনিত কারণেও নাক অনেকে ডাকেন। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে লেসার থেরাপি করানো শ্রেয়। তবে নাকের বাঁকা হাড় ও সাইনাস অঞ্চলে প্রদাহের কারণে বা বড় টনসিল গ্রন্থির কারণেও অনেকে নাক ডেকে থাকেন। এর জন্য মুখের ব্যায়াম করলে সুফল পাওয়া যায়।
জোরে জোরে লাগাতার ৫মিনিট ধরে ভাওয়েল সাউন্ড গুলি অর্থাৎ AEIOU গুলি উচ্চারণ করুন।
জিহ্বা উল্টো করে বেঁকিয়ে মিনিট খানেক ধরে রেখে আবার নর্মাল পজিশনে ফিরিয়ে আনুন। এভাবে ২-৩ বার দিনে রিপিট করতে পারেন।
মুখ বন্ধ করে ঠোঁট কাঁপাতে পারেন ৩০ সেকেন্ড অব্দি।
মুখ হাঁ করে খুলে আলজিহ্বা উপর নীচে নামানোর চেষ্টা করুন এতে কণ্ঠনালীর সংকোচন ভাব কেটে যায়।
জিহ্বা চোয়াল অব্দি প্রসারিত করে ঠোঁটের ডাইনে ও বাইনে সরাতে পারেন মিনিট খানেক ধরে। এই টোটকা গুলো ট্রাই করে দেখুন উপকার পাবেনই।
৪) নেশা বর্জন:
নাক ডাকানোর আরেক সর্বনাশা কারণ হলো নেশা করা। ধূমপান করলে ধোঁয়া নাক ও গলার মেমব্রেন এর ক্ষতি করে। জিহ্বার পেছনের পেশী ফুলে যায় আর নাক ডাকানোর চান্স ও।
এলকোহল গলার মাংসপেশির নমনীয়তা হ্রাস করে দেয় ফলে মুখগহ্বরের ভেতরের অংশ ঠিকভাবে খুলতে ও বন্ধ হতে সমস্যা হয় যার পরিণতি হয় বিচ্ছিরি শব্দের ঘুমের বারোটা বাজানো।
৫) নাকের দাওয়াই:
অনেকেই বলবেন যে সমস্যার শিকড়ে গিয়ে সল্যুশন বার করতে। অনলাইনে নাক এর জন্য নস্ট্রিল ক্লিপ রয়েছে তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী সুষ্ঠু সমাধান নয়।
বন্ধ নাক নাক ডাকতে সাহায্য করে। সেই জন্য স্বামী ঘুমোনোর আগে নাকের তালা খুলিয়ে নিন। ঘুমোনোর আগে গরম জলে স্নান করলে কাজ দেয় ভালোই। তাতেও কাজ না হলে নোজ ড্রপ দিতে পারেন। সারাদিন জল খেতে হবে এতে করে নাক হাইড্রেটেড থাকে।
৬) শোবার ঘর:
নাক ডাকানোর প্রধান একটি শর্ত হিসেবে যে ঘরে শুচ্ছেন সেটাও প্রভাব ফেলে। বিছানা স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে পরিচ্ছন্ন রাখুন ও ধুলোবালি মুক্ত করুন নয়তো সেগুলো নাকে প্রবেশ করতে পারে।
শুষ্ক পরিবেশ শ্বাস এর সমস্যা সৃষ্টি করে তাই বাড়ির ভেতর আর্দ্র রাখতে হিউমিডিফায়ার লাগাতে পারেন।
৭) ওজন হ্রাস:
ওজন বেশি হলে পাল্লা দিয়ে নাক ডাকানোর প্রবণতা বাড়ে। ফ্যাট টিস্যু নাকের পেশী শিথিল করে ফেলে ফলে ব্রিদিং ডিসঅর্ডার দেখা দেয়। হেলদি ডায়েট ও এক্সারসাইজ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন তাতে নাক ডাকানোর ব্যাধি ও হবে কাবু।
ঈষৎ উষ্ণ গরম জলে এলাচ গুঁড়ো দিয়ে খেলে বা আপেলের জুস সেবন করলেও নাক ডাকানো কমে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।