যতই দামী তেল, শ্যাম্পু লাগান কিছুতেই চুলে যেন প্রাণ নেই। যতই সুন্দর করে স্টাইল করা হোক কিচ্ছুক্ষণ পর আবার প্যাচপাচে। সেই সুন্দর মসৃণতা চকচকে ভাব আসছে না? যেমনটা সেলিব্রেটিদের হয়? তাহলে আপনার চুল চায় হেয়ার স্প্রের স্পর্শ।
যতই ভালো করে চুল সেট করা হোক না কেন গরমে, রোদে, ঘামে চুল হয়ে যায় উসকো খুসকো। আর ঠিক এখানেই কাজে আসে হেয়ার স্প্রে। পার্লারে গিয়ে হেয়ার স্টাইল করলে দেখবেন ওখানে হেয়ার স্প্রে দেওয়া হয়। চুল এতে অনেকক্ষণ সেট থাকে। তেমনই আপনার রোজের কেশসজ্জাতেও চাই হেয়ার স্প্রে। এটা চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং আনে মসৃণতা। চুলকে ঘন রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের স্বাভাবিক লুককেও বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এই হেয়ার স্প্রের অনেক নাম অনেক ধরণ। যেমন সেটিং স্প্রে, ফিনিশিং স্প্রে, হোল্ডিং স্প্রে, হেয়ার মিস্ট ইত্যাদি। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা আপনার জন্য?
চুলকে কিরকম রাখতে চান মানে স্টাইলের ওপর নির্ভর করছে ধরণ। এই ধরণগুলোকে আমরা বলতে পারি হোল্ড। দৈনন্দিন কাজের জন্য লাইট কোন স্প্রে বা ফ্লেক্সিবল হোল্ড হেয়ার স্প্রে চলবে। কারণ রোজের ক্ষেত্রে আমরা হেভি কিছু স্টাইল করি না। তবে চুল খুলে রাখলেও উসকো খুসকো হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এই স্প্রে কাজ দেবে। চুল সেট থাকবে।
চুল ড্রাই বা ফ্রিজি হলে মিডিয়াম হোল্ড স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। চুলে বাউন্সি লুক চাইলে রোলার দিয়ে চুল বাউন্সি করে এই স্প্রে দিয়ে দিন। বা পনিটেল করেও দেওয়া যায়। এতে চুল অনেকক্ষণ সেট থাকে। উসকো খুসকো হবে না।
আবার চুলে হেভি কোন স্টাইল করলে যেটা অনেকক্ষণ ধরে রাখতে হবে, সেক্ষেত্রে স্ট্রং হোল্ড স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। স্টাইলকে অনেকক্ষণ সুন্দর রাখতে। এছাড়াও বুস্ট হোল্ড স্প্রে হয় নির্জীব চুলে প্রাণ ফেরাতে। বাজার থেকে কেনার সময় পড়ে নিয়ে কিনবেন। আপনার চুলের দরকার অনুযায়ী। মোটামুটি একটা ধারণা নিশ্চয়ই পেয়ে গেছেন স্প্রের ধরণ সম্পর্কে। বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন হেয়ার স্প্রে।
এ তো গেল বাজার থেকে কেনার সময় কীভাবে বুঝে কিনবেন। কিন্তু সবসময় তো বাজারের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ভালো নয়। আবার বাজেটও তো দেখতে হবে। সেক্ষেত্রে বাড়িতেই বানিয়ে নিন না। প্রাকৃতিক উপাদানে কোন ক্ষতি তো হবেই না বরং উপকার পাবেন যথেষ্ট। কিন্তু কীভাবে বানাবেন?
হেয়ার স্প্রে বানাতে এসেন্সিয়াল ওয়েলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে সহজেই পেয়ে যাবেন এসেনশিয়াল ওয়েল।
এরকমই ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল ওয়েল কিনে নিন। একটি পাত্রে দুই কাপ গোলাপজল নিন। এতে দশ ফোঁটা মত ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল ওয়েল মিশিয়ে নিন।ভালো করে ঝাঁকিয়ে দুটো মিশিয়ে নিন। ব্যাস রেডি ল্যাভেন্ডার স্প্রে। মাঝে মধ্যেই চুলে স্প্রে করতে থাকুন এটি। দেখবেন চুলে জট পড়বে না সহজে।
এক গ্লাস জল নিন। এতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস মেশান। এটা এবার একটু গরম করে নিন। জল ঠাণ্ডা হলে এতে বেকিং পাউডার আধচামচ এবং রোজমেরি এসেনশিয়াল ওয়েল মেশান একচামচ।
ভালো করে ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে নিন। তারপর জলটা ছেঁকে নিয়ে একটা স্প্রে বোতলে ভরে নিন। রেডি স্প্রে। শুধু ব্যবহারের আগে ঝাঁকিয়ে নেবেন।
অ্যালোভেরার গুণ তো আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। ত্বকের সাথে সাথে চুলের জন্যও ম্যাজিক উপাদান অ্যালোভেরা। হাতের কাছে অ্যালোভেরা হেয়ার স্প্রে থাকলে আর কিছু লাগবে না চুল ভালো রাখতে। এই স্প্রে চুলকে করবে মসৃণ সাথে খুশকির সমস্যাও অনেকটা কমবে।
যতটা পরিমাণ স্প্রে করতে চান সেই অনুযায়ী জল নিন। যেমন এককাপ জলে ১চামচ অ্যালোভেরা জেল মেশান। চাইলে এর সাথে ৫ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল ওয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এটা যখন খুশি স্প্রে করতে থাকুন। বিশেষ করে ভিজে বা হালকা শুকনো চুলে স্প্রে করলে আরও ভালো। চুল রুক্ষ অনুভব করলেই এই স্প্রে দিন।
মেথি যে চুলের জন্য কতটা উপকার তা আমরা সকলেই জানি। তাই চুলের সমস্যা দূর করতে এবং ড্যামেজ থেকে চুলকে দূরে রাখতে এই স্প্রে ভালো ফল দেবে।
২ থেকে তিন চামচ মেথি সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন সকালে জলটা দেখবেন হলুদ হয়ে গেছে। এবার এটা স্প্রে বোতলে ভরে স্প্রে করতে থাকুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ব্যবহার করুণ এই স্প্রে। ব্যাস তাতেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
আদাও কিন্তু চুলের জন্য দারুণ উপকারী একটি উপাদান। আদার স্প্রে করতে কিছুটা আদা নিয়ে নিন। এর রস করে নিন। এবার ২চামচ এই রসের সাথে এক কাপ জল মেশান। স্প্রে বোতলে ভরে ভালো ঝাঁকিয়ে স্প্রে করুণ চুলে। সপ্তাহে দুদিন এটা স্প্রে করলেই চুলের গ্রোথ বাড়বে। চুল ভাঙার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। চুল চকচকেও হবে।
চুল খুব অয়েলি প্যাচপ্যাচে? তাহলে ব্যবহার করুণ এই স্প্রে। এটা অতিরিক্ত তেল কন্ট্রোল করার পাশাপাশি চুলকে ফ্রেশ রাখবে এবং ড্যামেজ থেকেও দূরে রাখবে। বাড়িতে গোলাপজল নেই? তাতে কি নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন। লাগবে শুধু গোলাপের পাপড়ি। একটি পাত্রে ৪ থেকে ৫ কাপ জল নিন। এতে বেশ অনেকটা গোলাপের পাপড়ি দিন। ভালো করে একদম অল্প আঁচে মিনিট ২০ ফোটান। তারপর ঠাণ্ডা হয়ে এলে স্প্রে বোতলে ভরে স্প্রে করতে থাকুন।
তবে স্প্রে ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে যেমন, স্প্রে দূর থেকে করা উচিৎ। মানে মাথার থেকে দূরে বোতল সরিয়ে নিয়ে। আবার পার্লারের স্টাইলিং স্প্রে ব্যবহারের পড়ে শ্যাম্পু করে নেওয়া উচিৎ। তবে এই ঘরোয়া স্প্রে গুলোর ক্ষেত্রে তা একেবারেই নয়। এগুলো যখন খুশি ব্যবহার করা যায়। তবে স্নানের আগে করলে কয়েকঘণ্টা আগে করুণ। আর আদা ও মেথির স্প্রে সপ্তাহে দুইদিন করলেই যথেষ্ট। চুলে সমস্যা বেশি থাকলে একদিন ছাড়া ছাড়া স্প্রে করতে পারেন।
তাহলে দেখলেন তো হেয়ার স্প্রে তৈরি করা কত সহজ? এই প্রতিটা স্প্রেই খুব উপকারী। এবার পছন্দমত হেয়ার স্প্রে বাড়িতে তৈরি করে নিন আর চুলকে করে তুলুন আকর্ষণীয়।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…