কথায় বলে ‘পেহেলে দর্শনধারী, ফের গুণবিচারী’। যুগ যতই আধুনিক হোক না কেন আজও যে কোনো মানুষের রূপই সবার আগে বিচার করা হয় আর এই রূপ বিচার করা হয় চুল দেখে। লম্বা ও ঘন চুলের মধ্যেই নারীর প্রকৃত সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে।
তাই সৌন্দর্যসচেতন প্রত্যেকটি নারীই চান তাদের যেন লম্বা ঘন চুল হয়, কিন্তু চাইলেই কি সব হয়? অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ঘন কেশ অকালে ঝরে পড়ছে, কারণ চুলের গোড়া মজবুত নয়, তাই ঝরে ঝরে পড়ছে চুল, এক্ষেত্রে উপায়? না চিন্তার কিছু নেই, উপায় রয়েছে হাতের কাছেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করতে কিছু মানুষ বিভিন্ন রকম বাজারজাত তেল ব্যবহার করে থাকেন ও পার্লারে গিয়ে নানান রকম ট্রিটমেন্ট করান। তবে বাজারজাত যে কোন উপাদানেই যেমন কেমিক্যাল থাকে, তেমনি পার্লারে গিয়ে চুলের ট্রিটমেন্ট করালেও চুল অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই কারণ গুলির জন্য অনেক মানুষ আবার নিজেরাই ঘরোয়া বিভিন্ন রকম উপাদান দিয়ে তেল তৈরি করে নেন ও ঘরোয়া বিভিন্ন রকম টিপস ফলো করে থাকেন।
এতে যেমন কোনোরকম কেমিক্যাল থাকবে না, তেমনি চুল ও তার উপযুক্ত পুষ্টি পাবে। আগেকার দিনের ঠাকুমা, দিদিমারা এই ভাবেই বাড়িতেই তেল তৈরি করে নিতেন। চলুন আজকে আপনাদের বলবো সেই ১১টি ঘরোয়া পদ্ধতির কথা যেগুলো ব্যবহার করলে চুল শক্ত ও মজবুত হবে গোড়া থেকে।
পুষ্টির কারণে, বংশগত কারণে, হরমোনজনিত কারণে, চুল অকালে ঝরে পড়ে। তবে ঘরোয়া এই দশটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হবে।
পেঁয়াজের তেল ঘরে বানানোর জন্য তিনটে পেঁয়াজ ও চার কোয়া রসুনকে কুচিয়ে নিয়ে নিন। এরপর গ্যাসে একটা পাত্র নিয়ে তাতে নারকেল তেল দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি গুলি দিয়ে দিন। একটা চামচ নিয়ে ততক্ষণ নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না পেঁয়াজের রং বাদামী হচ্ছে। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর নামিয়ে নিন। পেঁয়াজের এই তেলটি এইবার মাথায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন ও তারপর ঘন্টাখানেকের জন্য রেখে দিয়ে পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
এই তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা চুলকে শক্ত মজবুত করতে ও অকালে চুল ঝরে পড়া কমাতে সাহায্য করে। যে কোন দোকানেই এই তেলটি পেয়ে যাবেন। এই তেলের নিয়মিত ব্যবহার চুলের ঘনত্ব বাড়াতে যথেষ্ট কার্যকরী। যেদিন শ্যাম্পু করবেন তার আগের দিন রাতে ক্যাস্টর অয়েলের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন ১৫-২০ মিনিট ধরে। এরপর দিন সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
অকালে চুল ঝরে পড়া রোধ করতে ভীষণভাবে কার্যকরী আমন্ড অয়েল। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এই তেল গরম করে চুলে ১৫ -২০ মিনিট ধরে ম্যাসেজ করার পর ঘণ্টাখানেক রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে উপকার পাবেন।
চুল ঘন করার জন্য এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি তৈরি করবার জন্য একটি ডিমের মধ্যে থেকে সাদা কুসুমের অংশটি বার করে নিন তার সাথে এক চামচ মধু ও অলিভ অয়েল দিয়ে মিশিয়ে প্যাকটি তৈরি করুন। তারপর এটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ১৫- ২০ মিনিট মতো। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটির ব্যবহার অকালে চুল ঝরে পরা যেমন কমাবে তেমনি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
আদার রস চুলকে পুষ্টি যোগায় ভেতর থেকে, ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়। তাই যাদের অকালে চুল ঝরে পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা বাড়িতে একটি আদাকে থেঁতো করে তার রস চুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন।
এই তেল চুলের রুক্ষতা যেমন দূর করবে তেমনি চুলের গোড়া মজবুত করবে ফলে অকালে চুল ঝরে পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই তেল তৈরি করতে প্রথমে আমলকির বীজ ছাড়িয়ে সেটিকে পিষে রস বার করে নিতে হবে তারপর তার সাথে দুই চামচ নারকেল তেল, কেশর পাতার রস দিয়ে ভালোমতো মিশ্রণটি গ্যাসে চাপিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি যখন হালকা গরম থাকবে তখন সেটিকে মাথায় ম্যাসেজ করতে হবে। সপ্তাহে তিন থেকে চারবার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
জবা ফুলের তেল তৈরি করবার জন্য একটি পাত্রে নারকেল তেল দিয়ে সেটি গ্যাসের মধ্যে ফুটতে দিন। এইবার নারকেল তেল গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে জবা ফুলের কুঁড়ি দিয়ে দিন ও ১০ মিনিট মতো ফুটিয়ে নিন। এরপর একটি পাত্র ঢাকা দিয়ে রাখুন, যাতে তেলটির মধ্যে কোন কিছু নোংরা না পরে। তেলটি ঠান্ডা হয়ে গেলে স্ক্যাল্পে মেসেজ করুন। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করতে পারেন আবার জবা ফুলের তেল একবারে অনেকটা তৈরি করে রাখতে পারেন তাহলে রোজ অল্প অল্প করে ম্যাসেজ করতে পারবেন।
বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ লাগাতে পারেন, সেই অ্যালোভেরা গাছের থেকে জেলটা বের করে নারকেল তেলের সাথে গরম করে নিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসেজ করলে অকালে চুল ঝরা কমে যাবে। রাত্রে শোওয়ার আগে ম্যাসেজ করে সারারাত রেখে সকালে স্নান করার সময় শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার করতে পারেন তাহলে উপকার পাবেন।
অলিভ অয়েল চুলের জন্য ভীষণ কার্যকরী একটি তেল, এটি যেমন চুলকে শক্ত ও মজবুত করবে, তেমনি এই তেলের নিয়মিত ব্যবহার চুলে প্রাকৃতিক ভাবে একটি গ্লো সৃষ্টি করবে। একটি পাত্রে অলিভ অয়েল একটু আমন্ড অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন। আরো ভালো উপকার পেতে এটি একটি উষ্ণ গরম করে নিয়ে তারপর চুলে লাগাতে পারেন।
চুলে মেথি তেল ব্যবহার করতে পারেন। মেথির তেল বানানোর জন্য এক চা-চামচ মেথি ও এক কাপ পরিমান নারকেল তেল লাগবে। একটি পাত্রে নারকেল তেল ও মেথি নিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে ততক্ষণ অবধি যতক্ষণ না মেথির রং গাঢ় হয়ে ওঠে। এরপর এই তেল ঠান্ডা হয়ে গেলে মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসেজ করুন ও ঘণ্টাখানেক রেখে ধুয়ে ফেলুন।
চুল ঝরে পড়া আটকাতে সব থেকে সহজ একটি টিপস হলো নারকেল তেল গরম করে মাথার স্ক্যাল্পে মেসেজ করা, এটি যেমন সহজ তেমনি এটি আপনি যেকোন সময় করতে পারেন। নারকেল তেল সবার বাড়িতেই থাকে তাই এটির জন্য যেমন সে রকম কোনো ঝামেলা নেই, তেমনি এটি রোজই ব্যবহার করতে পারবেন।
উপরিউক্ত ১১টি উপায় মেনে চললে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হবে এবং অকালে চুল ঝরে পরার হাত থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…