গৃহ ও জীবনযাপন

রান্না সুস্বাদু করতে মেনে চলুন ঠাকুমার দেওয়া টিপস

অনেক সময়ে আপনি শুনে থাকবেন অনেকে বলেন, এই রান্নাটা না ঠিক আমার ঠাকুমার মতো হল না। বিশেষ করে সেটা যদি হয় কোনও ট্র্যাডিশনাল বাঙালি রান্না, তাহলে তো কথাই নেই।

ঠাকুমার-দিদিমার সঙ্গে সেখানে টেক্কা দেওয়া মানেই গো-হারান হেরে যাওয়া। কিন্তু আমাদের দিদিমা-ঠাকুমারা কী এমন দিতেন রান্নায়, যাতে রান্না এতো ভালো হত? কীভাবে করতেন তাঁরা রান্না! তাঁদের ম্যাজিক আজ রইল আপনাদের জন্য।

১. বেসিক পদ্ধতি মানা

আমাদের ঠাকুমারা বেসিক পদ্ধতি মেনে চলতেন রান্নায়। আমাদের মতো তাঁরাও কিন্তু রান্নায় নতুনত্ব আনতে জানতেন। কিন্তু সেই নতুনত্ব কখনই বেসিক ভুলে নয়। যেমন, আজকের দিনে আমরা ছানার তরকারি করতে হলে ছানা কেটে হাত দিয়ে চিপে জল ঝরিয়ে নেব। সময় বাঁচে এতে।

এই কাজটাই তাঁরা করতেন অন্য ভাবে। অনেক সময়ে ঠাকুমারা ছানা কাটতেন দুধে আগের রাখা ছানার জল দিয়ে। আর ছানা হওয়ার পর সেটি হাত দিয়ে না চিপে একটা সাদা পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে নিয়ে মুড়ে রেখে দিতেন। এতে জল ছানা থেকে ঝরে যেত। দুটো খুব সাধারণ জিনিস করতেন, কিন্তু এতেই ছানা হত নরম আর সুস্বাদু। করে দেখুন একদিন।

২. মাংসে অপরিসীম ধৈর্য

জানি, আজকের দিনে আমাদের সময় নেই। কিন্তু যেদিন ছুটির দিন থাকে, সেই দিনই না হয় এই সময় লাগার রান্নাগুলো করুন। একটা উদাহরণ দিই। আমরা পাঁঠার মাংস করি প্রেসার কুকারে দিয়ে। এতে মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়।

আমাদের ঠাকুমার হাতের পাঁঠার মাংস আমাদের মুখে লেগে আছে কারণ সেখানে প্রেসার কুকার ছিল না। আমাদের ঠাকুমারা মাংস করতেন শুধু কড়াইতে সময় নিয়ে নাড়তে নাড়তে। কড়াইতে করলে আস্তে আস্তে মাংস থেকে কোলাজেন ভেঙে ঝোলে মেশে, আর এতেই মাংসের স্বাদ খোলে।

৩. রুটির জন্য দুধ

আমরা রুটি অনেক চেষ্টা করি নরম করতে। কিন্তু কিছুতেই দেখি নরম হয় না। ময়দার রুটি করলেই কয়েক ঘণ্টা পর দেখি তা শক্ত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে কি করার? আটা বা ময়দা মাখুন গরম জল দিয়ে। আর তার সঙ্গে নিয়ে নিন দুধ অল্প। তারপর মেখে ২০ মিনিট মতো ঢাকা দিয়ে রেখে দিন। এর পর রুটি করে দেখুন। রুটি নরম হতে বাধ্য।

৪. গ্রেভি পাতলা হলে?

এই সমস্যার মধ্যে আমরা অনেক সময়েই পড়ি। তখন কী করবেন? গ্রেভি পাতলা হলে গ্যাস পুড়িয়ে ঝোল টানানোর চেষ্টা করবেন না। এর চেয়েও স্মার্ট উপায় আছে। একটু আলু সেদ্ধ করুন। এই সেদ্ধ আলু চটকে সেটা ঝোলে দিয়ে দিন। তারপর খানিক নাড়লেই দেখবেন ঝোল ঘন হয়ে গেছে।

আগেকার দিনে তো কর্নফ্লাওয়ার ছিল না। ঠাকুমারা এভাবেই ম্যানেজ দিতেন। অনেক সময়ে ঝোলে অল্প ময়দা গুলে দিলেও ঝোল ঘন হয়ে যায়।

৫. দুধের সংরক্ষণ

অনেকের বাড়িতে ফ্রিজ হয়তো এখনও নেই। তাঁরা কী দুধ রাখবেন না বেশি দিন? আগেকার দিনে ঠাকুমারাও তো দুধ ফ্রিজ ছাড়াই ভালো রাখতেন। তাঁরা আসলে দুধে সবুজ এলাচ দিয়ে দিতেন। এতে দুধ আর কেটে যায় না। আর এলাচের স্বাদে দুধ খেতেও বেশ লাগে। তবে হ্যাঁ, এই পদ্ধতিতে কিন্তু খুব বেশি হলে পরের দিন দুধ রাখতে পারেন, তার বেশি নয়।

৬. হালুয়ার টেকনিক

সুজির হালুয়া আমরা সবাই খাই এখন। কিন্তু ঠিক ভাবে বানান কী? মনে হয় না। আসলে সুজির হালুয়ার জন্য আগে সুজি ঘি দিয়ে ভালো করে ভাজতে হয়। আর তার সঙ্গে বানাতে হবে চিনির সিরাপ।

চিনি হবে সুজির সমান পরিমাণে আর জল হবে সুজির তিন গুণ। এবার সিরাপ হয়ে গেলে তাতে অল্প অল্প করে সুজি মেশান। এরপর কাজু, কিশমিশ যা দেওয়ার দিন। এই হল সুজির হালুয়া বা পারফেক্ট মোহনভোগের রেসিপি।

৭. কড়মড়ে ধোঁকা

ধোঁকার ডালনা বাঙালি বাড়ির অতি পরিচিত রেসিপি। কিন্তু অনেকেই বলেন ধোঁকা নাকি ভেঙে যায় ঝোলে দিলেই। ক্রিস্পি আর থাকে না। এক্ষেত্রে ঠাকুমারা কি করতেন বলি। তাঁরা যখন ধোঁকা তৈরি করতেন, তখন ডাল বাটার সময়ে অল্প বড়ি দিয়ে দিতেন। এই বড়ির জন্যই কিন্তু ধোঁকা কড়মড়ে হত। আর ধোঁকার জন্য ডাল কখনই মিহি করে বাটতে নেই। এই দুটি জিনিসেই ধোঁকা হয় কড়মড়ে আর ঝোলে দিলেও ভেঙে যায় না।

৮. হাতের ব্যবহার

আজকাল আমরা হাত দিয়ে কোনও কিছু মাখি না। ব্যাটারের জন্য, মিক্সিং করার জন্য কিছু না কিছু আছেই। কিন্তু আমাদের ঠাকুমারা হাত দিয়ে সব করতেন। ব্যাটার মাখতেন হাতে, মাংস ম্যারিনেট করতেন হাতে। এতে রান্নার স্বাদ ভালো খোলে। চামচ দিয়ে ম্যারিনেট করলে বা ব্যাটার মাখলে সেটা সব জিনিসে ভালো করে লাগে না। তাই স্বাদও ভালো আসে না। তাই হাত ব্যবহার করুন।

৯. বাটা মশলা

আজকাল তো সব পেস্ট কিনতে পাওয়া যায়। ঠাকুমারা কিন্তু ফ্রেশ জিনিস বেটে রান্না করতেন। গুঁড়ো জিনিস রান্নায় দিতেন না। তাই রান্নার রঙ আর স্বাদ হত অনন্য। আর ফ্রেশ জিনিস বলে স্বাস্থ্য থাকত ভালো, তেলতেলে রান্না খেলেও।

সবচেয়ে বড় কথা, ঠাকুমা দিদিমারা অনেক ভালোবাসা নিয়ে রান্না করতেন। ভালোবাসা দিয়ে রান্না করুন, দেখবেন রান্নার স্বাদ এমনিতেই খুলে যাবে।

অভীক সরকার

View Comments

  • একদম ঠিক বলেছেন। তবে এখুনও অনেকে এই নিয়ম মেনে রান্না করেন। যেমন আমি।

  • একদমই খাঁটি কথা। রান্নায় অনেকখানি ভালোবাসা লাগে। আর তাতেই রান্নার স্বাদ বেড়ে যায়।।

  • আমার বাবা বলতেন , একটা খাবার সুস্বাদু করার জন‍্য একটা বিশেষ মশলার দরকার পড়ে । ঐ মশলা শুক্তো থেকে চাটনি , সব কিছুতেই মেশাতে হবে প্রাণ খুলে ।
    অবশ‍্য আজকাল সেই মশলা পাওয়াটাই বড় ভাগ‍্যের ব‍্যাপার । আসলে এই ব‍্যাস্ততার যুগে কে আর খোঁজাখুঁজি করে সেটার ।
    যদি আপনার কাছে একটু বেঁচে থাকে সেই মশলা , তাহলে কড়াই চাপিয়েই ঢেলে দেবেন সবটা চোখ বন্ধ করে ভালবাসা নামক সেই মশলা ।
    দেখবেন কি সুস্বাদু সেই খাবার !!

    • আহা কি দামি কথা বলতেন মেসোমশাই। প্রণাম জানাই আপনাদের দুজনকেই। দাশবাস পরিবারের থেকে আপনাদের ভালো ও সুস্থ্য থাকা কামনা করি। ভালোবাসা নেবেন।

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago