স্বাস্থ্য

গোজি বেরির নানা উপকারিতা ও এর ব্যবহার

কথায় বলে খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল। শীতের মরশুমে শাক-সবজির আনাগোনা বেড়েই যায় সবার বাড়িতে, কিন্ত ফলকেও অবহেলা তো করা যায় না। তাই না বলুন? কারণ, ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে তরতাজা করে শরীরকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দান করতে এর সমতুল্য কিছু হয় না।

আজ আপনাদের তাই পরিচয় করাতে চলেছি এমন এক আশ্চর্য ফলের যা স্বাদে যেমন
অনন্য, তেমনি পুষ্টিগুণেও সমান সমৃদ্ধ। এই ফলের নাম হলো – গোজি বেরি। হ্যাঁ গুজ
বেরির সাথে নামের মিল থাকলেও এই গোজি বেরি কিন্তু একদমই আলাদা। এর সাথে আপনি আপনার ডায়েট ও লাইফস্টাইলকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা দিতে পারেন। কিভাবে? চলুন দেরি না করে বিশদে জেনে নিই।

গোজি বেরির ইতিহাস

ফলের জগতে অসম্ভব হারে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে গোজি বেরির। মূলত তিব্বত থেকে এটির জন্ম। সেখানে একে “সুখের ফল” বলেও ডাকা হয়ে থাকে কারণ এটি খেলে তারা মন ভালো থাকে বলে দাবি করে থাকে।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, এটি নাকি প্রায় ২০০০বছর আগে জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ও সেই সময় থেকেই মানুষ এর ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে তিব্বত, নেপাল ও হিমালয়ের পার্বত্য-প্রদেশে এটির চাষ দ্রুতহারে বাড়ছে।

কারণটা অবশ্যই ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য। ব্লু বেরি, ক্রানবেরির সাথে এই গোজি বেরি বর্তমানে একপ্রকার ফুড গ্রোসারি ও অনলাইনে তার দাপট বিস্তার করছে স্বাস্থ্যকর গুণের জন্যই।

গোজি বেরি নিয়ে টুকিটাকিঃ

গোজি বেরি নিয়ে একঝলকে দেখে নেয়া যাক কিছু আকর্ষণীয় তথ্য যেগুলো আপনাকেও হতবাক করতে বাধ্য।

  • গোজি বেরির অন্য নাম উলফ্ বেরি। হ্যাঁ যার মনে হলো নেকড়ে। কিন্তু এমন নাম কেন? তার জন্য জানতে হবে গোজি বেরির বিজ্ঞান সম্মত নাম – লাইসিয়াম বারবারাম। লাইসিয়াম শব্দটি গ্রিক শব্দ “লাইসিন” থেকে এসেছে যার অর্থ হলো নেকড়ে বাঘ।
  • চীনা প্রবাদে বলা হয়েছে, গোজিবেরির জুস পান করলে নাকি পূর্ণযৌবন লাভ হয়। এটি নিয়মিত পান করলে বুড়ো বয়স কাছে ঘেঁষতে পারে না বলেই তাঁরা বিশ্বাস করেন।
  • চিনে এখন এই গাছের প্রাচুর্য দেখা যায়। চীন দেশ থেকেই মূলত এটির সাপ্লাই সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে করা হয়ে থাকে। এটির গাছ গুল্ম জাতীয় হয়ে থাকে।
  • বহু প্রাচীন ও আদিকাল থেকে এর প্রচলন চলে আসার কারণ হিসেবে বলা যায় এর ঔষধিজাত গুণ যা আসলে হলো এন্টিঅক্সিডেন্ট। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস থেকে উচ্চ রক্তচাপ এমনকি চোখে ছানি পড়ার মতো রোগের বিনাশ করে।

গোজি বেরি দেখতে কেমন?

  • গোজি বেরি উজ্জ্বল লাল বর্ণের ডিম্বাকৃতির শেপের দেখতে হয়। এর আকার লাল চেরির মতোই হয়ে থাকে। স্বাদে এটি টক ও মিষ্টির মিলিত ফ্লেভার দিয়ে থাকে।
  • এটিকে বাজারে ড্রাই,পাউডার বা কাঁচা ফর্মে পাওয়া যায় এবং সেই অবস্থা তেই খাওয়া যায় ঠিক কিসমিসের মতো।
  • গোজি বেরিকে এখন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নেবার চল ও বেড়েছে। এছাড়াও এটিকে হার্বাল চা ও ওয়াইনেও মেশানো হচ্ছে টেস্ট ও কার্যকারিতা বাড়াবার জন্য। তাই গোজি বেরিকে সুপারফুড আখ্যা দেয়া হয়।

পুষ্টিমূল্যঃ

গোজি বেরিকে পুষ্টিগুণের খাজানা বলা যেতেই পারে। এটির প্রতি বাইটে এতটা পরিমাণে উচ্চ নিউট্রিয়েন্ট আমাদের দেহে প্রবেশ করে তা জানলে অবাক হতে হয়। রোগ থেকে রিকভারি স্টেজে বা এক্সারসাইজ এর পর শরীরের জরুরি চাহিদা মেটাতে এটির বিকল্প বোধহয় কমই আছে।
প্রতি ২৮ গ্রাম এর হিসেবে ভিটামিন ও খনিজ পরিমাণ নীচে দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি – ৯৮গ্রাম
  • প্রোটিন – ৪ গ্রাম
  • ফ্যাট – ০.১ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট – ২১.৬ গ্রাম
  • ফাইবার – ৩.৬ গ্রাম
  • চিনি – ২১.৮ গ্রাম
  • আয়রন – দৈনিক মূল্যে ১১%
  • ভিটামিন এ – দৈনিক মূল্যে ৫১%
  • ভিটামিন সি – দৈনিক মূল্যে ১৫%
  • পটাশিয়াম- দৈনিক মূল্যে ২১%
  • জিঙ্ক – দৈনিক মূল্যে ১৫%
  • দেখতেই পাচ্ছেন এত স্বল্প পরিমাণ সেবনেই আপনার দেহের কতটা লাভ হচ্ছে হেলথ বেনিফিট অনুযায়ী। এতে থাকা লোহা বা আয়রণ আমাদের প্রাণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে অক্সিজেন পরিবহন এ সহায়তা করে।
  • যার ফলে রক্তে থাকা লোহিতকনিকা বা হিমোগ্লোবিন সতেজ হয়ে ওঠে ও রক্তচলাচল এর হার দ্রুতভাবে বাড়ে। মাংসপেশি ও বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ করার এফিসিয়েন্সি ও অনেকাংশে বাড়তে দেখা গেছে এর জন্য।
  • ভিটামিন এ ও সি অন্যদিকে শরীরের দিকে ধেয়ে আসা নানা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগজীবাণুর ক্ষতিকর আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষাকবচ প্রদান করে।
  • এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক থেকে ফ্রি রাদিকেল মুক্ত করে সেল ড্যামেজ প্রতিহত করতে সাহায্য করে। একটি আমেরিকান গবেষণা জানাচ্ছে যে ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া মেরামত করতে এটির জুড়ি নেই।
  • পাশাপাশি ত্বক থেকে পলিউশনজনিত, এপিডার্মিস ক্ষয় ইত্যাদি ট্রমা, সর্বোপরি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ত্বকে আরাম দেয়। ত্বকের প্রদাহ এমনকি ক্যান্সার ও হৃদরোগ সারাতেও ডাক্তাররা পর্যন্ত এটিকে রেকমেন্ড করছেন উপযোগী প্রমানসহ।

কেন ডায়াটিশিয়ানদের পছন্দের লিস্টে গোজি বেরি?

এলিসন হর্নবী একজন আমেরিকান ডায়াটিশিয়ান। সম্প্রতি হেলদি লিভিং নিয়ে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে এসে তিনি বলেছেন যে গোজিবেরিতে প্রাপ্ত এক্সট্রাক্ট গ্র্যানুউল গুলো অনেক সহজ যৌগ দিয়ে নির্মিত যা কিনা সহজপাচ্য ও বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য সমন্বিত।

তাই রোজকার ডায়েটে গোজিবেরিকে অন্তর্ভুক্ত করলে আখেরে একটা ব্যালেন্সড ও আদর্শ রুটিন তৈরি হয়ে যায়। কমসময়ে আমাদের শরীরে অনেক ভাইটামিন ও মিনারেল যাবার পথ প্রশস্ত হয়ে ওঠে।

গোজি বেরি কিভাবে যোগ করবেন ডায়েট প্ল্যানে?

  • আমরা যারা ডায়েট করি তারা ভালোভাবেই জানি যে রেগুলার কার্ব বা প্রোটিন এর থেকে ফল থেকে আসা ফ্রুকটজ আমাদের গঠন ও শরীরচর্চার জন্য কতখানি অনুকূল। গোজিবেরি কিন্তু আপনার ব্যায়াম ও খাবারে রাশ টানাকে ভালোভাবে কমপ্লিমেন্ট করতে পারে। শুধু তাইই নয় এটি অনেক জরুরি খাবারের অভাব ও পূরণ করতে সাহায্য করবে।
  • আগেকার দিনে রাইস কোনজী, আমন্ড জেলি, টনিক স্যুপ এ গোজি বেরি মিশিয়ে দেবার প্রচলন ছিল। এখন রকমারি খাদ্যে গোজিবেরি দেয়া হচ্ছে।
  • স্মুদি, ওটমিল,দই,স্যালাড,প্যাটি বা গ্রিল্ড স্যান্ডুইচ অথবা ডেজার্ট আইটেমে আপনি গোজি বেরি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেকোনো রেসিপিতে দেবার আগে গরম জলে অবশ্যই ফুটিয়ে নেবেন মনে করে।
  • এটা ওয়ার্ক আউট এর পরে বা অফিস ব্রেকে স্ন্যাক হিসেবেও নেওয়া যেতে পারে। যথেষ্ট রিফ্রেশিং ফিল দেবে আপনাকে।
  • জুস বা ড্রাই ফরম্যাট এ আপনি বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। অফলাইন ফুড স্টোরে না পাওয়া গেলে আমাজন,ফ্লিপকার্ট এর মত অনলাইন ইকমার্স ওয়েবসাইট থেকেও অর্ডার করে নিতে পারেন। কেনার আগে অর্গানিক,ন্যাচারাল না প্রসেসড সেটা দেখে নেবেন কারণ সেই অনুপাতে দাম ও কোয়ালিটি পাল্টায়।

বেরির এক্স ফ্যাক্টরঃ

  • গোজি বেরিতে এমন কিছু মাল্টিডাইমেনশনাল বস্তু রয়েছে যা এটিকে অন্যান্য খাবারের চাইতে আলাদা জায়গা করে দেয়।
  • এতে থাকা জিক্সান্থিন এ রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চোখের রেটিনা ও লেন্সকে সময়ের সাথে সাথে ড্যামেজ এর হাত থেকে রক্ষা করে। চোখে ম্যাকুলার অবনমন প্রতিরোধ করে ও পিগমেন্টেশন বাড়ায়।
  • এতে আছে বেটা-ক্যারোটিন যা হাড়, চোখ,কোষ-কলার বৃদ্ধির জন্য আবশ্যক। এছাড়াও নানা শারীরবৃত্তীয় কাজে এটি সহায়তা করে থাকে।
  • পলিস্যাকারাইড গোজি বেরির অন্যতম উপাদান। যা আপনার ডায়েটে ফাইবার এর ঘাটতি মিটিয়ে দেবে। ইম্যুনিটি বুস্ট করার ক্ষেত্রেও এটি বড় ভূমিকা নেয়।

গবেষণা যা বলছেঃ

  • গোজিবেরির মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কথা আগেই বলেছি। ২০১৬ এর গবেষণা বলছে এর অক্সিজেন রেডিকেল শোষণ করার ক্ষমতা ৩,২৯০। এই স্কোরে পিছিয়ে আছে অন্যান্য ফল যেমন- কলা(৭৯৫) ও আপেল (২,৮২৮)। এই রেটিং যে ফলে যত বেশি থাকে সেগুলো আমাদের শরীরে তত বেশি বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন বের করে দিতে সমর্থ হয়।
  • ইঁদুর নিয়ে করা গোজি বেরির সম্প্রতি একটি পরীক্ষায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। গোজি বেরি খাবার ফলে ইঁদুর এর শুক্রাণুর গতিশীলতা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ও উত্তেজনা হ্রাস পেয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই অনুমান করা হচ্ছে যে এটি বন্ধ্যাত্ব রোধে ঔষধ তৈরির কাজেও লাগানো হতে পারে। যৌনক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভায়াগ্রার পরিবর্তে এটি ব্যবহার এর পরিকল্পনা ও রয়েছে অনেকের মাথায়।

গোজি বেরির নানাবিধ উপকারিতাঃ

ত্বকের বার্ধক্য নাশকঃ

  • যারা রূপচর্চা করেও বয়স ঢাকতে পারছেন না বা প্রসাধন এর আশ্রয় নিয়েও ব্যর্থ তাদের কাছে আশার আলো হতে পারে গোজিবেরি। এটি আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল অবস্থা উপহার দেয়। DNA সংশ্লেষ করে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না।
  • এর মধ্যে থাকা এন্টি এজিং প্রপার্টিজ ত্বককে ইতিবাচক রূপ দেয়। এটি ফ্রি রেডিকেল মুক্ত করে ও ত্বকের কোলাজেন ভাঙতে দেয় না। এমনকি এটাও প্রমাণিত যে এটি ত্বকের ক্যানসার এর ঝুঁকি অব্দি হ্রাস করে।

উদ্বেগ কমায়ঃ

  • লকডাউন পরবর্তী জীবনে ডিপ্রেশন ও হাইপারটেনশন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়েছে। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। মানসিক অবসাদ, কাজের ক্লান্তি বা হতাশার প্রভাবগুলি বিরুদ্ধে এই বেরির উপকারী উপাদান কাজ করে থাকে।
  • এটি একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে উৎফুল্লতা বাড়ায়, তেমনি অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতা ধ্বংস করে মনস্তাত্ত্বিক আনন্দ প্রদান করে।

চোখের এনার্জি বুস্টারঃ

  • চোখের মণি, চোখে হারানো ইত্যাদি সোহাগ করে আমরা বলি আমাদের কাছে চোখের গুরুত্ব কতখানি তা মেলে ধরার জন্যই। বেরিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টস ইউভি রশ্মি যা সূর্য থেকে আসে, সেটার মোকাবিলা করে। পাশাপাশি চোখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
  • টানা ৯০দিন গোজিবেরি জুস পান করার ফলে চোখের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। রেটিনা থেকে গ্যাংলিয়ন সেল নষ্ট করতেও এটি এগিয়ে এসেছে যা চোখের গ্লুকোমা রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর পর যে আপনার নয়নে হাজার ওয়াট এর বাতির ছটা বিকিরিত হবে সেটা বলাই বাহুল্য।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ

  • উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ভিটামিন সি, ক্যারটিনয়েড এন্টি ক্যান্সার গতিবিধির জন্য প্রখ্যাত। টেস্টটিউব স্টাডিতে দেখা গেছে যে, গোজিবেরি ক্যানসার সেল এর প্রসারিত ভাবকে সঙ্কুচিতই কেবল করেনা বরং তাকে নির্মূল করতেও সক্ষম।
  • এই ক্ষমতাকে সামনে রেখেই ক্যান্সার সরানোর জন্য ইমুনো থেরাপিতে একে ব্যবহার করা হচ্ছে। শরীরে হওয়া ক্যানসার টিউমার এর বৃদ্ধির গতি শ্লথ করতে দেয়। ক্যান্সার এর সাইটোকাইনিন জনিত প্রদাহকে প্রশমিত করার পর ক্ষতিকারক পদার্থ বাইরে নিষ্কাশিত করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ

  • গবেষণায় এই বেরির একটি অলৌকিক ক্ষমতার কথা উঠে এসেছে তা হলো প্রতিদিন অন্তত ২০গ্রাম পরিমাণ গোজিবেরি একমাস যাবৎ গ্রহণ করার পর  দেহে ট্রাইগ্লিসারওয়েড এর পরিমাণ স্বাভাবিক হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে হার্ট হয়েছে চাঙ্গা।
  • পলিস্যাকারাইড থাকার জন্য এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে তো রাখেই রাখে তা ছাড়াও পাকস্থলীর সক্রিয়তা বাড়িয়ে তোলে। হজমশক্তি আগের চেয়ে উন্নত করে।

ওজন কমায়ঃ

  • লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এ স্থান পাওয়ায় এটি সহজেই ব্লাড সুগার কন্ট্রোল করে খিদে বাড়াতে সাহায্য করে। সমগ্র শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এটি যথেষ্ট উপযোগী হয়।  
  • এর মধ্যে থাকা ফাইবার মেটাবলিক রেট উন্নত করে ক্যালোরি বার্ন করাতে বেশি বেশি হেল্পফুল। রক্তচলাচল উন্নত করে এনার্জি নিয়ে আসে, ফলে ওজন কমতে দেরি লাগেনা। তাই যদি আপনার টার্গেট হয় জিরো ফিগার সাথে এটিকে সঙ্গী করতেই পারেন।

শর্করার ভারসাম্যঃ

  • টাইপ টু ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে গোজিবেরির পারফরম্যান্স সত্যি নজরকাড়া রয়েছে আপাতত। রক্তে HDL এর মাত্রা বাড়িয়ে এটি ইনসুলিন রেগুলেট করে।
  • ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমায় এবং মাংসপেশি থেকে গ্লুকোজ তৈরির যে গ্লাইকোজেনলাইসিস প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রুগীদের জন্য এটি সুখবর নিয়ে আসবে সন্দেহ নেই। তারা ইচ্ছে মতো এটি গ্রহণ করে দেখতে পারেন। মিষ্টির বিকল্প হিসেবে মন্দ লাগবে না।

ফুসফুসের স্বাস্থ্যঃ

  • বর্তমান প্যান্ডেমিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ফুসফুস এর প্রেক্ষিতে এই বেরির কার্যকারিতা সত্যি চোখে পড়ার মতোই। শ্বাসনালীর সজীবতা ও তার কাজকে বহুগুণে ত্বরান্বিত করতে এটি অনবদ্য।
  • ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টের রোগগুলোর নিরাময়ের ক্ষেত্রেও এটি সম্ভাব্যরূপে বৈধ ঔষধি বলে গৃহীত হচ্ছে। ফুসফুস এর রোগের ক্ষেত্রে এটি তার সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে।

অনিদ্রা দূর করেঃ

মনের নেতিবাচক আবেগ নিউট্রিলাইজ করতে এটির অবদান এর কথা আগেই বলেছি।কিন্তু এবার বলবো এর নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার  সরানোর কথা। ব্রেনের নানা ম্যাল ফাংশন ঠিক করতে এটি অগ্রণী।

কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ও পালস রেট উন্নত করে মনে এক প্রশান্তির অনুভূতি নিয়ে আসে ফলে রাতে ঘুম হয় গাঢ়। ফলে মন সংযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও কাজে লাগে। এটি লিম্ফোসাইট কণিকা তৈরি করতেও ওস্তাদ যেটা ফ্যাগসাইটেসিস পদ্ধতিতে জীবাণু নষ্ট করে শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়।

কাদের জন্য এই বেরি বর্জনীয়?

  • সাধারণত এই বেরি খাওয়ায় কোনোরকম বিধি নিষেধ নেই। যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই এটা গ্রহণ করতে পারেন। ব্যালেন্স ডায়েটে সহজে ফিট হয়ে যায় বলে একে সবাই ভালোবেসে ফেলেন চট করে কিন্তু কারোর বেরির প্রতি এলার্জি থাকলে একদম নেবেন না।
  • যদি রাশ, ইচিং ও বমি ফিল আসে বুঝে নেবেন আপনার এলার্জি রয়েছে।
  • যারা রক্ত তরল রাখার জন্য ওষুধ খান ও উচ্চরক্তচাপ এর রুগীরা এই বেরি থেকে দূরে থাকবেন কারণ তারা যে ওষুধ খান সেই ওষুধের সাথে এই বেরির রাসায়নিক বিক্রিয়া করে।
  • আপনার যদি সুগার লেভেল অতিরিক্ত হাই হয়ে থাকে তাহলেও এই বেরি গ্রহণ করবেন না।

সর্বোপরি, এই অজানা বেরির ইতিবৃত্ত পড়ে নিশ্চয়ই আপনাদের মজা লেগেছে এবং অনেকেই হয়তো ইন্টারনেটে সার্চ করে ঘুরেও এসে গিয়েছেন। তবে সঠিকভাবে চিন্তা ভাবনা করেই ও নিজের চাহিদা উপলব্ধি করে ডায়েটে বেরির অবস্থান নির্দিষ্ট করুন।

Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago